বখাটে-বখাটেনী

বখাটে-বখাটেনী

-ওই এদিকে আয় তো!
-না আসবো না আপনার কাছে যেতে দেখলেই আমার আপু বকবে।
-আরে না কিছু করবে না তুই এদিকে আয় তো,কিছু বললে বলবি দুলাভাই ডাকছিলো তাই গেছি!
-আমার তো দুলাভাই নাই!
-ওই কে বলছে নাই?এইতো তোর চোখের সামনে জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে আছে তোর দুলাভাই!
-কই কে?
-এইতো আমি!
-ইস শখ কতো! আপু বললে বলতাম!
-ওই তোর আপু কি আমাকে দুলাভাই কইবো নাকি?
-না মানে আপু দুলাভাই বলতে বললে তাই বলতাম কিন্তু আপু বলে….
-কি বলে তোর আপু?
-আপু বলে আপনি একটা বখাটে ছেলে আপনি ডাকলে কখনো সামনে যেতে না!
-তবে দেখাচ্ছি তোর আপুকে?
.
-এই রিমা কে কাকে কি দেখাইবো রে?
-এই সেরেছে!ওই বদমেজাজিটা এসে গেছে!(মনে মনে)
-কিরে তুই আবার এই বখাটেটার ডাকে ওর সামনে এসেছিস?
-না আপু আমি ইচ্ছে করে আসি নি!এই ভাইয়াটাই তো বললো উনি নাকি আমার দুলাভাই তাই আসলাম!
-কিহ!তাই বলে তুই যাকে তাকে দুলাভাই বলবি!
-যাকে তাকে কি?আমি তো শুধু এই ভাইয়াটাকেই….
-আবার মুখে মুখে কথা যা ভাগ বাসায় যা!
-বকছো কেনো যাচ্ছিতো!
-ইস বকবো না তো কি আদর করবো?
-একমাত্র ছোট বোন তা করলেই পারো!
-তুই গেলি!
-ওরে বাবারে!
.
-আর এই যে আপনি!কি সব আজে-বাজে বলছেন আমার ছোট বোনটাকে?
-কই কিছুনাতো!
-কিছুনা মানে?একটু আগে কি বলেছিলেন?
-কি বলেছি?
-আপনি ওর দুলাভাই? আমি আপনার বউ?
-না মানে দুদিন আগে আর পরেতো সেটাই হবে!
-কিহ!
-নাহ কিছুনা!আমি যাই….
-যাই না বলে বলেন পালাই,কাপুরুষ!
-আমি পালাচ্ছি না,আবার আসছি জবাব দিতে,তাহলেই দেখবেন পুরুষ না কাপুরুষ!
-কেমন পুরুষ বুঝেছি!দুই বছর একটা মেয়ের পিছনে ঘুরে কোনোদিন যে ছেলে ভালোবাসি বলতে পারেনি সে আবার পুরুষ!
-ইস আপনি আমার সামনে হাটলে আমার কি দোষ?সময় হলে সব দেখতে পাবে।
-আচ্ছা আচ্ছা দেখা যাবে।
.
আমি হাসিব এতোক্ষন যার সাথে কথা বললাম ও হচ্ছে রিমি দুই বছর ওকে লাইন মারার চেষ্টায় আছি কিন্তু কখনো ভালোবাসি বলা হয় নি।ওর ছোট বোনটাকেও বলে কিনা আমার থেকে দূরে থাকতে!
.
-আপনাকে না বলেছি আমি কলেজে যাবার সময় আমার পেছন পেছন আসবেন না?আজ আবার আসছেন?
-আপনিও তো আজ আবার আমার সামনে সামনে আসছেন।
-মানে?
-কিছুনা!
-আপনাকে একটা কথা বলবো শুনবেন?
-হ্যা,বলুন না!
-আসলে….
-কি…বলুন না!
-আপনি এতো বদমেজাজি কেনো?
-এটাই বলার ছিলো?
-হুম!
-বলা শেষ?
-হুম!
-এখন যান।
-হুম
-কি শুধু হুম হুম করছেন কেনো?
-হুম।
-গেলি এখান থেকে!
-ওমাগো হবু স্বামীকে কেউ তুই বলে?
-হবু স্বামী না ছাই!

-দোস্ত তোর থেকে একটা হেল্প চাই সুমন!
-কি?
-তুইতো জানিস দুই বছর ধরে রিমিকে লাইন মারার চেষ্টায় আছি এভাবে তো আর চলছে না এভার তো কিছু করা লাগে তো কিভাবে বলা যায়!সরাসরিও বলতে ভয় লাগে,ওর যা মেজাজ যদি আবার না করে দেয়!তাই ও আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটা কিভাবে জানবো বিকল্প কোনো সমাধান যদি…..
-আচ্ছা ভাবতে হবে।
-আচ্ছা ভাব ভাব,তারাতারি।
-ভাবছি…
-কিরে পেলি?
-অপেক্ষা…
-কিরে কিছু পেলি?
-আরে চুপ করে আমায় ভাবতে দে না!
-আচ্ছা ঠিকাছে!
-আইডিয়া!
-কি?
-রিমির একটা ছোট বোন আছে না রিমা?এবার দশম শ্রেনীতে পড়ে?
-হুম!
-ওকে বুঝাইয়া ওর সাথে কয়েকদিন প্রেমের নাটক কর,আমার বিশ্বাস এতেই রিমিকে পরখ করা যাবে।
-তোর আইডিয়া ভালো কিন্তু ওতো আমাদের অনেকটা জুনিয়র তার উপর রিমির বোন তো ওকে কিভাবে রাজি করাই?
-হেল্প চেয়ে দেখ রাজি হয় কিনা!
-আচ্ছা!
.
-ওই রিমা এদিকে আয় তো একটু শুনে যা।
-কি ভাইয়া?
-তোর কাছে একটা হেল্প চাই!
-কি?
-আমার সাথে কয়টা দিন প্রেমের নাটক করতে হবে।
-কিন্তু কেনো?
-তুই তো জানিস তোর আপুকে আমি ভালোবাসি কিন্তু তোর আপু আমাকে ভালোবাসে কি না সেটাই যাচাই করে দেখতাম!আচ্ছা তুই কি কখনো আমার বিষয়ে তোর আপুর সাথে কথা বলেছলি?
-হুম বলেছিলাম কিন্তু আপু বলেছিলো আপনি একটা বখাটে আপনার প্রসঙ্গে যেনো আমি কখনো আপুর সাথে কথা না বলি!
-কিন্তু বখাটে বলে কেনো সেটাই তো বুঝলাম না!
-আপনি প্রতিদিন আপুর পিছু নেন তাই!
-ওহ এই ব্যাপার! আচ্ছা তোকে যেটা বলেছি সেটা পারবি?
-আচ্ছা,পারবো।

[পরেরদিন]
-রিমা ফুসকা দোকানে চলো রিমি আসছে,নাটক শুরু হয়ে যাক!লাইট,ক্যামেরা,একশন!
-টক বেশি দিয়েন মামা!
-ঝালটা তাহলে আমিই দিচ্ছি!
-আপনি এলেন কেনো এখানে?
-আপনি আমার বোনকে নিয়ে ফুসকা খাচ্ছেন কেনো?
-আপনার বোন আপনার বাসায় ফুসকা দোকানে আমার গার্লফ্রেন্ড!
-এসবের মানে কি!
-মানে খুব পরিষ্কার!যেটা দেখতে পাচ্ছেন ওটাই মিন করছি!আর আপনার এতো বুঝে কাজ নেই!এখন যান তো!
.
-এই রিমা এই নাও তোমাকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি!
-আচ্ছা হুম।
-এটা কি হলো!
-আমার বোনকে আমি খাইয়ে দিছি এবার ও আমাকে খাইয়ে দিবে!কিরে বোন তুই কি বলিস?
-হ্যা,না,মানে হুম দিবো তো!
-হুম তাহলে ফুসকার বিলটা দিয়ে যাইয়েন!
-কিহ!অর্ডার দিলেন আপনি আর বিল কিনা আমি দিবো?
-হুম,তাই দিতে হবে!
-কি আর করা,বিলটা দিয়েই আসলাম।
.
[তার পরেরদিন]
-হাসিব ভাইয়া আপু আসছে এক্টিং স্টার্ট’!
-গোলাপটা বের করে,রিমা তোমাকে ভালোবাসি হবে কি এই বখাটে ছেলেটার বখাটেনী?
-হাত থেকে ফুলটা ছো মেরে নিয়ে!এহ!হওয়াচ্ছি বখাটেনী!এই তোকে না বলেছি ওর সামনে আসবি না?যা এখান থেকে!
-আপু তুমি কাউকে ভালোবাসো না বলে আমিও কি কাউকে ভালোবাসবো না?
-মানে?
-আমি ওনাকে ভালোবাসি!
-ইস ভালোবাসা!এখনো যার দুধের দাত পড়ে নাই তার আবার ভালোবাসা!যা ভাগ!
-আপু ম্যানেজ করে দেনা,আমি ওনাকেই বিয়ে করবো!
-ওনাকেই বিয়ে করবি মানে?জানিস ও সম্পর্কে তোর কি হয়?
-কি আর হবে বিয়ে করলে আমার স্বামী হবে!
-থাপড়াইয়া দাত ফালাইয়া দিমু যা ভাগ!
-তাহলে তো ভালোই হবে তোমার কথানুযায়ী দুধের দাত পড়ে যাবে আর আমি ওনাকে ভালোবাসতে পারবো!
-এহ!ভালোবাসতে পারবো!ঢং!ও তোর দুলাভাই বুঝেছিস?নট ভালোবাসা বাসি!
-হুম বুঝেছি!এবার দুলাভাই তুমি আপ্পিকে সামলাও আমার কাজ শেষ!
-এই শুন কাজ শেষ মানে!
.
-আসলে মানেটা হচ্ছে আমি আর রিমা যাচাই করছিলাম আপনি আমাকে ভালোবাসেন কি না!
-তো এটা একটা নাটক ছিলো?
-হুম!ছিলোতো!
-এই জন্যই আপনাকে বখাটে বলি,যান আপনার সাথে কথা নাই!
-আচ্ছা যাচ্ছি।
-এই,কোথায় যাচ্ছেন?
-আপনিই তো যেতে বললেন তাই রিমার কাছে যাচ্ছি!
-রিমার কাছে মানে?
-না আমিতো এমনি বলেছিলাম আর কি!
-হুম,এখনো আপনি আপনি করে যাবে নাকি?
-নাহ!
-প্রপোজ করো!
-রিমি ভালোবাসি তোমায়!হবেকি এই বখাটের বখাটেনী!
-হুম!ঠাসসসসস….
-এটা কি হলো?
-আমার পিছনে দুই বছর ধরে ঘুরে আমাকে ভালোবাসি এতো দেরিতে বলে কাঁদানোর জন্য!এতো সময় না নিয়ে আগে বললে কি হতো?
-ঠাসসসসস……
-এটা কিসের জন্য?
-ভালোবাসি যখন জানতেই তাহলে কখনো এসে জিজ্ঞাস করোনি কেনো?আর তোমার প্রেমের ফাদে ফেলে আমাকে প্রতিটা রাত জাগানোর জন্য!আর নিজে ভালোবাসা সত্বেও মেজাজ দেখানোর জন্য!
.
-তুমি জানো যে শাসন করে সে আদরও করে?
-হুম জানি!
-একটু আগে আমাকে মেরেছিলে তো এখন কি করা উচিৎ!
-ওহ বুঝেছি!
-অতঃপর বখাটেণীটা আমার বুকে মুখ লুকালো!আমিও জড়িয়ে ধরলাম পরম ভালোবাসায়!
-দুলাভাই!
-এই কে কে!
-আমি!তোমার শালীকা!
-ওহ তা এখানে কি?
-বোনের সাথে ভাগ বসাইতে আসছি!
-ও তাহলে তো ভালোই বউয়ের সাথে শালী ফ্রি!
-ইস শখ কতো গাছেরও খাইবো আবার তলারও কুড়াইবো!ওই যা ভাগ!তুই ভাগ বসাইবি কেনো?ও শুধু আমার!
-হুম তোরই তো!আমারও তো দুলাভাই!
-হুম তো!
-আমারও তো অধিকার আছে!
-কিহ!
-না মানে ফুসকা খাওয়ার আর কি!সেদিনতো তুই খাইয়ে দিতেই দিলি না!আজ চল দুলাভাই আমাকে খাইয়ে দিবে!
-আমি তোকে খাইয়ে দিবো চল!আর ও খাইয়ে দিবে আমাকে!
-আপু!
-কি?
-তুইনা?
-কি?
– বদমেজাজি,গুন্ডি,বখাটেনী!
-হাহাহাহা,,আর তোর দুলাভাই!
-একটা বখাটে!
-হুম তোকে এতোগুলা ধন্যবাদ!
-কেনো?
-এইযে বখাটেটাকে আমার হতে সাহায্য করাতে!
-আমারও স্বার্থ আছে বস!
-এই মানে কি!
-মানেটা ক্লিয়ার এখন আমার একটা দুলাভাই হইবো আর আমি হবো একমাত্র শালী!তো একমাত্র শালী হিসেবে কিছু ছোট ছোট আবদার তো থাকতেই পারে!যেমনঃ আইস্ক্রীম,ফুসকা এসবের আবদার আর কি!
-ও তাই বলি তুই আমার হবু বরের পকেট খালি করতে বসে আছিস না?সেটা হচ্ছে না!ও আমার বখাটে!আমার পিছনে দুই বছর ঘুরে বখাটে টাইটেল পাইছে!আর তুই কিনা!
-হুম ও তো তোর বখাটে!আমারতো শুধু ট্রিট চাই!
-হুম,,আমার,,শুধু আমার!তোর আবার কিসের ট্রিট?
-এই যে আমি এতো সুন্দর অভিনয় করে বখাটেটাকে তোর করে দিলাম!
-ওরে আমার অভিনেত্রীরে!যা এখান থেকে।
-তুই ট্রিট দিবি?না হলে আমি এখান থেকে যাবোই না!
-আচ্ছা আচ্ছা!এই নাও শালীকা!এবার যাও!
-ধন্যবাদ দুলাভাই,আমার আপুটা একদম হার কিপ্টা!নিজের বোনকে ট্রিট দিতেও…..
-কি বললি তুই?
-কিছুনা!এইবার ভাইয়ের হাতটা ধরো আর প্রশান্ত মনে হাটতে থাকো কিছুটা পথ!
-রিমির হাতটা আমার হাতে ধরিয়ে রিমা চলে গেলো!আমিও হাটছি আনমনে রিমির হাত ধরে!এইতো চলছি বেশ,বলতে না পারা ভালোবাসার দিন শেষ!
চলুক না বখাটে আর বখাটেনীর প্রেমকাহিনী.

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত