ঝুমকো

ঝুমকো

বিয়ের কয়েকদিন পর বরের ফোনে গান শুনতে গিয়ে নিজের বরের সাথে তার পুরনো প্রেমিকার ফোনালাপের রেকর্ডিং গুলো শুনে ফেলে সাদিয়া। মন টা খারাপ হলেও স্বামী যখন বাসায় ফেরে তখন স্বামীকে বলে,
— আপনি না বলেছিলেন, আপনি কারো সাথে প্রেমে জড়ান নি আগে?
— হ্যাঁ বলেছিলাম।
— তাহলে ফোনে ওসব কার সাথে কথা বলে রেকর্ড করে রেখেছেন?
সোহেল ফোনের রেকর্ডিং এর কথা শুনে বিশাল রকমের ধাক্কা খেলো। আয়েশার সাথে ব্রেকআপ করার পর তার দেয়া সমস্ত কিছু আগুনে পুড়িয়েছে। ফোনের রেকর্ড করা কথাগুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলো।
— শুনেই যখন ফেলেছো তখন আর কি বলবো। আর তুমিই বা কি করবে? রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাবে!!!!
— আমি অত সহজে হার মানা মেয়ে নই, বিয়ে যখন আপনার সাথে হয়েছে। না মরা পর্যন্ত এভাবেই থেকে যাবো।
— ও আচ্ছা।
.
সাদিয়া মেয়েটা অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা। লাখে একটা মেয়ে জোটে এমন, যে স্বামীর সবকিছু মাথাপেতে নিতে পারে।
.
বিয়ের কিছুদিন পর সোহেলের সংসারে টানাপোড়েন দেখা দেয়। দিনরাত জুয়ার আড্ডায় মজে নিজের সবকিছু হারায়। তাই বাধ্য হয়ে একদিন বৌ কে রেখে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
.
কোথাও কোন চাকুরী না পেয়ে সোহেল বুঝতে পারে জীবনটা ভীষণ কঠিন। সোহেল রিক্সা চালানো শুরু করে।
.
এদিকে সোহেলের বউ সাদিয়া বেশকিছুদিন স্বামীর ফোন না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে। স্বামী কে ফোন দিয়ে বলে,
— হ্যালো। কেমন আছেন?
— হ্যা ভালো, তুমি?
— হ্যা ভালো আছি। ঢাকায় পৌছেছেন?
— হ্যা পৌছেছি।
— পৌছে ফোন করলেন না যে?
— এমনিতেই।
— কাজ পেয়েছেন?
— হ্যা।
— কি কাজ?
— একটা কোম্পানিতে কাজ পেয়েছি।
— খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো হচ্ছে তো?
— হ্যা, আচ্ছা ফোন রাখো, পরে কথা হবে।
.
বেশকয়েকদিন পর ফোন না পেয়ে সাদিয়া আবার ফোন করলো,
— কেমন আছেন?
— হ্যা ভালো, তুমি?
— হ্যা আছি, আপনি ঢাকায় কি কাজ করেন?
— কেন সেদিন ই তো বললাম একটা কোম্পানিতে কাজ পেয়েছি। খুব ভালো কাজ।
— আপনি মিথ্যাে বলছেন। আপনি ঢাকায় রিক্সা চালান।
সোহেল চমকে উঠলো,
— তুমি কি করে জানলে আমি রিক্সা চালাই? তুমি কই আছো?
— আমার মামাতো ভাই সাবের, ঢাকায় থাকে জানেন? সে আপনাকে দেখে ফেলেছে। আপনাকে ডেকেছিলো কিন্তু শুনতে পাননি হয়তো।
— ও …….. আচ্ছা ফোন রাখি পরে কথা হবে।
.
ঢাকায় যাওয়ার পর সাদিয়া তার বরের খোজখবর রাখতো। সোহেল সাদিয়ার এরকম কেয়ারিং দেখে প্রেমে পড়ে যায়। রিক্সা চালিয়ে কিছু টাকা আলাদা করে জমায় সোহেল। সাদিয়া কে ফোন দিয়ে বলে,
— কেমন আছো সুইট পাখি।
— হুম ভালো, হঠাৎ হাওয়া উল্টো বইছে যে?
— কেন বইতে পারেনা বুঝি?
— হুম পারে তো। তো কেমন আছেন?
— ভালো তুমি?
— হুম অনেক ভালো আছি। খাওয়া দাওয়া হয়েছে?
— হ্যা তোমার?
— হ্যাঁ খেয়েছি।
— এই জানো? গতরাতে স্বপ্ন দেখেছি তুমি মা হয়েছো। সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ের জন্ম দিয়েছো।
— সত্যিই?
— হুম, তো আমার মেয়ের আম্মুর কি কিছু লাগবে?
— হুম।
— কি লাগবে?
— আপনি ঠিকমতো বাসায় পৌছোন।
— আর কিছু লাগবেনা?
— নাহ। আপনি আগে বাসায় পৌছোন ঠিকমতো।
— আমিতো পৌছোবো, কিন্তু কিছু একটা চাইতেই হবে।
— উফফ, এক জোড়া কানের ঝুমকো। আমার খুব ইচ্ছে, এবার ঈদে তোমার হাতে ঝুমকো পরবো।
— আচ্ছা।
.
সোহেল সেদিন জুয়েলারির দোকান ঘুরে ঘুরে বেশ দাম দিয়েই একজোড়া ঝুমকো কিনলো। বৌ কে প্রথম কিছু একটা দেবে। তা যদি মূল্যবান না হয় তাহলে বৌয়ের কাছে সম্মান কমে যাবে।
.
সোনার ঝুমকো নিয়ে সোহেল বাড়ি ফিরছে। পথিমধ্যে অঘটন ঘটে গেলো। সোহেল বাসার কাছাকাছি পৌছে মলম পার্টির খপ্পরে পড়লো। কোনরকম প্রাণে বেচে গেছে। যখন জ্ঞান ফিরলো ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। পকেটের টাকাপয়সা সহ সবকিছু মলমপার্টির প্রতারকগুলো নিয়ে চলে গেছে।
.
সোহেল লজ্জায় বাসায় ফিরতে পারছেনা। বাসায় ফিরে সাদিয়া কে সে কি জবাব দেবে? যে , ঝুমকো চুরি হয়ে গেছে। সাদিয়া হয়তো তার কথা বিশ্বাস করবে না। ভাববে আশা দিয়ে আশাহত করেছে। তাই অনেক রাত হয়ে গেলেও বাসায় ফিরলো না সোহেল। পকেটের ফোনটাও হয়তো নিয়ে গেছে ওরা। একটু পরে ফোনে কল আসলো, রিংটোন বাজছে। সোহেল দেখলো তার ফোনটা সামনে গোপন পকেটে আছে। মলমপার্টির লোকেরা ফোনটা খুজে পায়নি হয়তো।
.
ফোন রিসিভ করে সোহেল বললো,
— হুম বলো।
— আপনি কই? এখনও ফিরছেন না কেন?
সোহেল সাদিয়াকে কিছুতেই বলতে পারলো না সে মলম পার্টির খপ্পরে পড়েছিলো।
— আপনি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরুন।
— আচ্ছা।
.
সোহেল বাসায় ফিরলো। সাদিয়া অত্যান্ত খুশি হয়ে বললো,
— আপনি অনেক ক্লান্ত। ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
— সাদিয়া, একটা কথা বলবো মন খারাপ করবে না তো?
— করবো না বলুন।
— মলমপার্টির খপ্পরে পড়েছিলাম, ঝুমকো গুলো চুরি হয়ে গেছে।
সাদিয়ার মনটা খারাপ হলেও সাদিয়া প্রকাশ করলো না।
— ঝুমকো আমার লাগবেনা, আপনি ফিরে এসেছেন। এতেই আমি অনেক খুশি। আপনি ঠিক থাকলে ওরকম ঝুমকো আরও আসবে।
সাদিয়া সোহেলের বুকে মাথা রাখলো।
.
সত্যিই সোহেল বারবার অবাক হয় সাদিয়া কে দেখে। এমন মেয়ে কি পৃথিবীতে আছে? হুম আছেই তো তার চাক্ষুস প্রমাণ সাদিয়া। সোহেল আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো। ভাগ্য গুনেই এমন বৌ পেয়েছে সে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত