-দীপার পাশাপাশি বসে আছি৷ মাথা নিচু করে আসামীর ভঙ্গিতে৷ দীপা ভাবতেই পারছেনা, আমি এমন একটা কাজ কীভাবে করেছি৷ শুধু দীপা নয়, আমি ও আবিষ্কার করতে পারলাম না, এই হঠাৎ সাহস কীভাবে আমার বুকের ভিতর এসেছিল! দীপা কিছুই বলছেনা৷ একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে৷ আর ওর সরু নাকটা একবার ফুলছে আবার সরু হচ্ছে৷ অদ্ভূত সুন্দর দৃশ্যটা আমি আমার চোখের কোণ দ্বারা উপভোগ করছি৷ দীপা হয়তো খুজেঁ পাচ্ছে না কী বলবে আমাকে!”
-বাদাম খাওয়া যেতে পারে এই মূহুর্তে৷ দীপার টাকা দিয়েই কিনতে হবে৷ এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়৷ প্রায়ই মাসের শেষদিকে ওর টাকা দিয়ে বাদাম খাওয়া হয়৷ কারণ এই মূহুর্তে পকেটের অবস্থা বেগতিক৷ একটা পয়সা ও নেই৷ তবে হ্যা টাকা আছে৷ একটা দুই টাকার কচকচে নোট৷ বাদাম কেনার কথা ভাবছি আর দীপার ভাবভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি৷ লক্ষণ মোটেই সুবিধার নয়৷ কিছুক্ষণ আগে দীপার পেছন পেছন আটার মত লেগে থাকা “নীরব” সাহেব কে দেখিয়ে দেখিয়ে যা করেছি দীপার সাথে জোর করে ৷ ঘটনার পর হয়তো, কোনো মেয়েই আমার পাশে বসে থাকতোনা৷ নিতান্তই দীপার সাথে আমার সম্পর্কটা একটু উন্নতমানের বিধায় সে এখনো আমার পাশে বসে আছে৷
নীরবতা ভেঙে বললাম,
-দীপা বাদাম খেতে চাই৷
-তো কিনে খাও৷ আমাকে বলার কি আছে?
-মাসের শেষ টাকা ও শেষ৷ সবই তো বুঝো৷
-তাই বুঝি?! অচেনা মানুষটার সামনেতো চুমু খাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করোনি৷
-জানো দীপা, কিছু জিনিস বলে কয়ে হয়না৷ তখন আমাদের মন যা ভালো বুঝে তাই করি৷
”
বাদাম চিবোতে চিবোতেই বলা শুরু করলাম,
-জানো দীপা, যেদিন ঘুমজড়ানো চোখগুলো কচলাতে কচলাতে প্রথম কলেজে এসেই তোমার গোলগাল মুখ, নাদুস নুদুস গাল আর সরু নাকের মায়াবী চেহারাটা দেখেছিলাম৷ সেদিনেই অনূভূতিটা বুকের মধ্যে হানা দিয়েছিল৷ ভয়ংকর অনূভূতি ছিল৷ যে অনূভূতির সাথে পরিচিতি ছিল না আমার কখনোই৷ মনটা ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলো সেদিন৷ খুব ইচ্ছে করেছিলো তোমাকে গিয়ে বলি, এই মেয়ে তোমার গালগুলো এত গুলুগুলু কেন হু? একটু কম খেতে পারো না? কিন্তু এগুলো দূরে থাক৷ তোমার দিকে তো সেদিন তাকাঁতেই পারছিলাম না৷ কী লজ্জার ব্যাপার ছিলো তাই না? একটা ছেলে হয়ে কোনো মেয়ের দিকে তাকাঁতে লজ্জা পাচ্ছি৷
-হু, তারপর থেকেই অনিয়মিত ছাত্রটা নিয়মিত হয়ে গিয়েছিলো৷ কোনো মেয়েবন্ধু ছিলো না কখনোই৷ কারণ মেয়েদের সাথে কথা বলাতেই আমার একটা জড়তা কাজ করতো৷ আমিতো কিছুতেই মিলাতে পারছিলাম না, কীভাবে তোমার সাথে কথা বলবো? যখন তোমাই নিয়ে কল্পণায় মগ্ন থাকতাম৷ তখন অনেক কিছুই ভেবে রাখতাম তোমাকে বলবো বলে৷ কিন্তু তোমাকে দেখামাত্রই গুলিয়ে ফেলতাম৷ এরই মাঝে একদিন তোমার চোখাচোখি হয়ে গেল৷ সেইদিন নিজেকে আসামী আসামী মনে হয়েছিলো৷
ঠিক সেদিনই ক্লাস শেষে তুমি ডাকলে আমাকে৷ আর রাগী গলায় বললে,
-এই ছেলে! সারাক্ষণ তাকিঁয়ে থাকো কেন আমার দিকে?
-আর আমি আমতা আমতা গলায় নিচের দিকে তাকিঁয়ে বলেছিলাম, ইয়ে মানে আপনার গালগুলো না খুব সুন্দর৷ আপনার দিকে তাকিঁয়ে তাকিঁয়ে আমি কল্পণায় আপনার গালগুলো টেনে দিই৷ আজকের মত সেদিনও আমি নিজেই অবাক হয়েছিলাম আমার সাহস দেখে৷ সেদিন নিজেকে পৃথিবীর একমাত্র সুখী মানুষ মনে করেছিলাম৷ জবাবে তুমি মুচকি হেসেঁ বলেছিলে, টানতে পারো তবে এক শর্তে?
শর্তের কথা শুনেই আমি ড্যাবড্যাব চোখে বলেছিলাম, আমি রাজি! কারণ আমি তো তখন সপ্তসমুদ্র পাড়ি দিতে রাজি ছিলাম তোমার জন্য৷
-তোমার শর্তটা আমার জন্য একটু কঠিনই ছিল বটে৷ তোমার ছবি একেঁ দেওয়া৷ যে ছেলে একটা পেঁপেঁর ছবি আকঁতে গিয়ে একটা রাবার শেষ করে ফেলতো৷ সে ছেলেটাই একদিনের ভিতরে তোমার ছবিটা একেঁ এনেছিল৷ ছবিটা হয়তো খুব বাজে ছিলো৷ ছবিতে তোমার গুলুগুলু গালগুলোকে আমি গোলআলু বানিয়ে ফেলেছিলাম৷ তোমার চিকন নাকটাকে বোচাঁ বানিয়ে দিয়েছিলাম৷ তারপরও তুমি খুশি ছিলে৷ সেদিনই তোমার গালগুলো টানার অধিকার দিয়েছিলে তুমি৷
-এরপর থেকেই তোমার গালটানা টা আমার নিয়মিত রুটিনের মধ্যেই ছিল৷ এখনো রয়েই গেলো৷ দীপা আমি চাইলে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ৮-১০জনের মত তোমাকে ও তুই করে বলতে পারতাম৷ কিন্তু বলিনি৷ কারণ তুমি আমার কাছে ৮-১০জনের মত নয়৷ তুমি আমার স্পেশাল একজন ছিলে৷ জানিনা আমি তোমাকে কতটুকু স্পেশালিটি দিতে পেরেছি৷
কিন্তু একটা কথা কী জানো দীপা? আমি খুব করে চাই তোমাকে৷ সারাজীবনের জন্য পেতে চাই৷
-বোতলটা দাও পানি খাব৷
-এটা আমার পার্সোনাল বোতল৷ কাউকে দিইনা৷
-ও আচ্ছা৷
-নাও ধরো৷ নির্লজ্জের মত চুমু খেয়েছে অপরিচিত লোকের সামনে৷ এখন আবার ভাব নিচ্ছেন উনি৷
ঢক ঢক করে পানি গিলে সৌজন্যতা সূচক ধন্যবাদ টা ও দিলাম না৷ প্রশ্ন করে বসলাম,
-দীপা হবে কী আমার দীপান্বীতা?
-কেন হবো?
-আমি চাই তাই৷
-বাদাম খাওয়ার টাকাইতো নেই বেহায়া একটা৷
-চিন্তা নেই৷ ভালোবাসার জন্য বেহায়া একটা হতে পারি৷ তবে পেট চালাতে বেহায়া হবো না৷ সেই কলেজ থেকে এই অব্দি যেমন আসতে পেরেছি৷ আর কিছুদূর পেরোলেই গন্তব্যে নৌঙর ভেড়াবো৷ যদি তুমি থাকো সাথে৷
– থাকতে পারি৷ তবে শর্ত আছে৷
-কি শর্ত?
-বারেহ! সেদিনতো জিজ্ঞাসা করোনি যে, কী শর্ত? তবে আজ কেন জিজ্ঞাসা করছো? তাহলে কী ভালোবাসা কমে গেলো? সেদিনতো সপ্তসমুদ্র পাড়ি দিতে রাজি ছিলে! তবে আজকে কী একটা পুকুর ও পেরোতে পারবেনা?
-সেদিনতো একাই পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম৷ কিন্তু আজ তোমাকে নিয়ে পাড়ি দিতে চাই৷ তবে একটু সন্দিহানের ভিতরে আছি৷
-কিসের সন্দিহান?
-না মানে তুমি দিন দিন যা মোটা হচ্ছো৷ সেটা নিয়ে একটু সন্দিহানে আছি৷
-হুহ! আজ থেকে খাওয়া বন্ধ আমার৷ না খেয়ে থাকব৷ ওজন কমাবো আর গুলুগুলু গালটাও থাকবেনা৷ তখন কেউ আর চাইলেও টানতে পারবেনা৷
-মোটেই না৷ তোমার গুলুগুলু গালগুলো আর ও গুলুগুলু বানাবো আমি৷ তবে কী রাজি?
-হু বয়েই গেছে৷ আচ্ছা ঐ নীরব সাহেবের কী হবে?
-উনার সামনে যে থেরাপিটা দিয়েছি৷ তারপরেও কী তোমার মনে হয় উনি তোমার পেছনে ঘুরবে?
-কীসের থেরাপি?
-ওহে কন্যা ইহা একটা “চুমু থেরাপি”!৷
দীপা হাসে৷ খিলখিলিয়ে হাসে৷ আমি মুগ্ধ হই প্রতিবার৷
গালগুলো টেনে দিই আলতো করে৷ আবার প্রেমে পড়ি আমি৷
“ভালোথাকুক ভালোবাসাপ্রিয় মানুষগুলো৷ আর সত্যি হোক তাদের স্বপ্নগুলো”৷