আজকে আমার পবিত্র বিয়ের কাজটা সমাধা হলো।আব্বা- আম্মা চেপে ধরেছিলেন,তাই করতে বাধ্য হয়েছি।তবে নিজের ভালোলাগা মানুষটিকেই জীবনের সাথে জড়িয়েছি।আব্বা-আম্মাকে বলেছিলাম নিজের পছন্দের কথা।তারাই বাকি কাজটা সমাধান করেছেন।
বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে আমার বিয়েটা সমাধা হলো।ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম খুব সুন্দর একটা মেয়েবে জাঁকজমকভাবে সবাইকে সাথে নিয়েই বিয়ে করবো।সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপান্তরিত হয়েছে।
নিজের ঘর আর নিজের থাকলো না।আরেকজন উড়ে এসে জুড়ে বসলো।মাথা থেকে পাগড়ীটা খুলে বিছানায় গিয়ে বসলাম।নিপা এমনিতেই অনেক সুন্দর।আজ আরো বেশি সুন্দর লাগছে।জালানার ফাঁকটুকু দিয়ে কিছুটা আলো ঘরের মেঝেতে এসে পড়েছে।
– কোথায় ছিলে এতক্ষণ? কখন থেকে বিছানায় বসে আছি। (নিপা)
– ছাদে গেছিলাম চাঁদ দেখতে।
– চাঁদ দেখতে নাকি পাশের বাড়ির ঐশিকে দেখতে?
ঐশির কথা শুনে কিছুটা বিব্রত আমি।এই ঔশি মেয়াটাকে নিয়ে নিপার সাথে কয়েকবার বাদানুবাদ হয়েছিলো। তামিম এর জন্য দায়ী।ওই আমাদের ঝগড়া দেখার জন্য নিপাকে ভুলভাল বলেছে।
– কি যে বলো নিপা! সত্যি বলছি আমি ওই মেয়ের সাথে কথা অবধি বলি না।
– তাহলে কি তামিম ভাই মিথ্যা বলেছে আমায়?
– তোমাকে আগেও বলেছি,আজকেও বলছি,তামিম তোমার সাথে মজা করেছে।
এবার কিছুটা চুপ থেকে গেল নিপা।পাঞ্জাবির পকেট থেকে পায়েল দুটো বের করলাম।এই সেই পায়েল! যা আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে কিনেছিলাম।
কিন্তু রেখে দিয়েছিলাম বাসর রাতের জন্য।ইচ্ছা ছিলো নিপাকে বাসর রাতেই পড়াবো।
আমি যখন বেকার ছিলাম তখন নিপা আমার কাছে এক জোড়া পায়েল কিনে চেয়েছিলো।হাতের ঘড়িটা বিক্রি করে কিনেছিলামও বটে।কিন্তু পকেটমার মানিব্যাগসহ হাতিয়ে নিয়ে যায়। তারপর আজ দিতে পারি নি।
জীবনের পরিক্রমায় বদলে গেছে অনেক কিছু। সাথে আমার জীবনও। নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটা আজকে ভালো একটা চাকরি করছে।সংসারের সেই অভাবটা আর বেঁচে নেই।আলহামদুলিল্লাহ,তাকে মেরে ফেলেছি।
আব্বা-আম্মা, তিতলিকে নিয়ে বেশ সুখেই আছি।আজকে যোগ হলো আরো একজন।এভাবেই হয়তো যোগ-বিয়োগ হতে থাকবে আমাদের ছোট্ট পরিবারটার।সময়ের কারনে একদিন আমরাও হয়তো থাকবো না।বিদায় নিবো সুন্দর পৃথিবীর সব মায়া ছেড়ে।
– একি! পায়েল কোথায় পেলে?
– চাকরির প্রথম টাকা দিয়ে কিনেছিলাম।
– তাহলে দাও নি কেন?
– বাসর রাতে পড়াবো বলে।
– তাহলে পড়িয়ে দাও।
পা দুটো এগিয়ে দিলো নিপা।আলতা পড়েছে।আলতা রাঙা পায়ে পায়েল পড়াচ্ছি।বেশ ভালো লাগছে।
মনে মনে জীবনে একটা সংকল্প করেছিলাম।যাকে ভালোবাসবো তাকেই বিয়ে করবো।সেজন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতাম প্রতিনিয়ত। যার ফলশ্রুতিতে হয়তো নিপার মতো মেয়েকে আমার জীবনে তিনি পাঠিয়েছেন।খুব ভালোবাসে মেয়েটা আমাকে।
– মনে আছে নিপা! তুমি একদিন একজোড়া পায়েল কিনে চেয়েছিলে।
– হুম মনে থাকবে না কেন!
– সেদিন নিজের পছন্দের হাতঘড়িটা বিক্রি করে তোমার জন্য পায়েল কিনেছিলাম।
– দাও নি কেন তাহলে?
– আরে পকেটমার মানিব্যাগ সহ সবটা নিয়ে গেছে।
– ওহ
আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নিপার দিকে।কি মিষ্টি দুটো চোখ,কাজল পড়েছে। কপালের চারদিকের আলপনাগুলো তার সৌন্দর্যরূপ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
– এভাবে কি দেখ? (নিপা)
– একজন সুন্দরী রমনীকে দেখি।
– কেন দেখ?
– ভালোবাসি বলে।
– সে কি তোমাকে ভালোবাসে?
– জানি নাহ! তবে আমি তাকে খুব ভালোবাসি।
– তবে তুমি শুনে রাখো, সেই রমনীও তোমাকে পাগলির মতো ভালোবাসে।
নিপার মুখে কথা শুনে ওর উরুর উপরে মাথা রাখলাম।
– এভাবে চিরদিন ভালোবাসবে আমায়?
– কেন বাসবো না।যেদিন থেকে তোমার সাথে আর জীবন জড়িয়েছি সেদিন থেকে আমার আমি তোমাতে ঢুবে গেছি।
– সত্যি তোমার মতো মেয়েকে জীবন সঙ্গীনী হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য।
– আমিও ধন্য তোমার মতো একজন স্বামী পেয়ে।
– পাগলি একটা।
(((পুরোটা কাল্পনিক)))