কই গেলা??
—- ওরি! ওরি! যেভাবে ডেকেছো আমিতো পুরো ফিদে হয়ে গেলাম।
—- কিন্তু কেনো??
—- আমার আব্বু আমার আম্মুকে এভাবেই আদর করে কাছে ডাকে।
—- তো! তুমিও-তো দু’দিন পর আমার একডজন বাচ্চাকাচ্চার আম্মু হয়ে যাবা।
—- এই দুষ্টু! এভাবে বলোনা-তো।
—- দূর পাগলি। অভ্যাস করতে দাও।
দু’দিন পর ফাহিয়ার সাথে আমার বিয়ে হবে। মেয়েটা মনের সবদিক থেকেই আমার মনের মত। হাতছাড়া করা যাবেনা।
দুপুরবেলা খেয়েদেয়ে শুয়েছিলাম। ভাবলাম ফাহিয়াকে ম্যাসেজ দিই। দু’দিন পরতো মেয়েটাকে বিয়েই করবো। তার সাথে একটু নিজেকে মানিয়ে নিই।
আমাদের কাবিননামাও হয়ে গিয়েছে। বাসায় বিয়ের আনন্দে বিশাল আয়োজন। আমি সবার ছোট ছেলে। শেষ বিয়েটাই আমার হবে।
তাই হয়তো এত আনন্দ উৎসবের আমেজ সবার মনেমনে।
এটা ভেবেই ফাহিয়ার সাথে দুষ্টুমিতে মেতে গেলাম।
—- না। অভ্যাস লাগবেনা। আমার নামটাই-তো কত সুন্দর রেখেছো।
আবার নাম ছাড়া ডাকার অভ্যাস করলে এই নামে আমিই বা নিজেকে মানিয়ে নেবো কি করে??
—- আরে শুনো। যখন দূরে থাকবে! তখন আদর করে বলব “এই শুনছো! কই গেলে” এভাবে।
আর যখন কাছে থাকবে! তখন আমার পছন্দের নাম “ফাহিয়া” বা ‘ফাহি’ বলেই ডাকবো।
মহনা নৌশিন মেয়েটার নাম ছিলো। কিন্তু আমি কাবিননামায় লিখতে বলেছিলাম “ফাহিয়া ফাহি”।
তখন সবাই অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিলো।
আমিও সবাইকে তাক লাগিয়ে পাগলের মত উত্তর দিয়ে বসলাম …
“এতোদিন আপনাদের মেয়ে ছিলো। তাই আপনাদের পছন্দের নামে ডেকেছেন। এখন আমার বউ হবে।
আর আমিও আমার পছন্দের নামেই তাকে ডাকবো।” কথাটা শুনে কাউকে হাসতে না দেখলেও, লজ্জায় পরেছিলাম খুব।
তাই হাস্যকর এই বিষয়টা ফাহিয়ার সাথে আজ বলতে ইচ্ছে করলো।
—- তুমি কি কাবিননামা লিখার সময় পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়েছিলে???
—- কেনো?? এটা কেমন প্রশ্ন করলে তুমি??
—- তোমার নাম দেওয়ার গল্পটা কেউ বলেনি তোমাকে??
—- হ্যা! ইবনাত বলেছে।
—- ইবনাতটা আবার কে??
—- তোমার শালিকা। কেনো ওর নামও কি বদলে দিবা নাকি??
—- আরে নাহ! সবার নাম বদলে দিলে তোমার নাম বদলানোটা কি কোন নতুন বিষয় হবে!
তুমি-তো তখন ধরেই নেবে নাম বদলানো আমার সস্তা অভ্যাস।
—- কি যে বলোনা তুমি! সত্যি তোমার কথা গুলো কেনো জানি খুব ভালো লাগে।
—- এখনতো আমার কথা গুলো ভালো লাগবেই। দেখবে বিয়ের পর আমার দেওয়া ব্যথা গুলোও ভালো লাগবে।
—- তুমি আমায় ব্যথা দেবে??
—- যদি তুমি দাও তবে।
—- আমি-তো তোমার মনে কখনো ব্যথা দেবোনা।
—- আমার কথা বলিনি। আমাকে শত ব্যথা দিও। তবুও তোমাকে কিছু বলবো না।
—- তবে আমি কার মনে ব্যথা দিলে তুমি আমায় ব্যথা দেবে??
—- আমার বাবা মায়ের।
—- সেতো অসম্ভব! পাগল তুমি। আমি তোমার বাবা মায়ের মনে কেনো ব্যথা দেবো!
তাহলেতো বুড়ো বয়সে আমার সন্তানের বউমা আমাকেও ব্যথা দেবে। পৃথিবীর নিয়ম জানোনা??
—- সেতো জানিই। তাইতো আমিও আমার ছেলেদেরকে আমার মতই চাই।
—- নাহ! আমাদের বাবুরা তোমার থেকে আরও ভালো হবে। তোমার মত এতো ফাজিল হতে দেবোনা।
—- আরে নাহ! তা হবেনা। আমার মত ফাজিল না হলে তোমার মত ভদ্র বউ ওদের কপালে মিলবেনা।
ফাজিলদের কপালে ভদ্র বউ মিলে। পৃথিবীর নিয়ম জানোনা??
—- হা…হা…হা… তাইনাকি??
—- এই আমি ফাজিল তা ঠিক! তবে এতোটা ফাজিল না যে আমি মিথ্যে বলবো তোমাকে।
—- আমি জানি তুমি অনেক ভালো। আমার মনে কি ভাবনা আসে জানো??
—- নাহ! জানিনা।
—- কেনো! জানতে চাওনা কি??
—- হুম কেনো নয়! বলো! ….
—- তোমার মত ফাজিলকে কেনো যে জীবনের শুরু থেকে পেলাম না।
—- পেলে কি হতো!
—- প্রতিদিন নামাজের জন্য শাসন করে মসজিদে পাঠাতাম।
তখন আমার উসিলায় তোমার এত গুলো বয়সের জীবনে কাযা করে ফেলা অনেক গুলো নামাজ হয়ত মিস হতোনা।
—- আর কি হতো??
—- তোমাকে মাদ্রাসায় পড়তে বলতাম। তোমাকে কোরান শরিফের হাফেজ হতে বলতাম।
আর রাত্রিবেলা তোমাকে জাগিয়ে দিয়ে বলতাম “আমাকে কোরানশরিফ পড়ে শুনাও।
তুমি অনেক সুন্দর সুরে কোরান পড়তে! আর আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার পাশে বসে কোরান শুনতাম। তোমাকে হাতপাখাতে বাতাস করতাম।
—- আর কি হতো??
—- বিয়ের পর সব বলবো। এখন এসব পেঁচাল রাখো-তো!
—- ওহ তাইতো! বাসর রাতের জন্য কিছু কথা রেখে দাও তবে।
—- হি… হি… হি… ফাজিল একটা।
—- আরে নাহ!
—- কি তাইলে??
—- পাগল একটা বলবা।
—- সব তোমার পছন্দেই হতে হবে নাকি?? নাম ও তোমার পছন্দের! আবার অভিমানে আনন্দ বকাটাও তোমার পছন্দের হতে হবে??
আমার যা ইচ্ছা তাই বলব। ঠিক আছে??
—- আচ্ছা ঠিক আছে তাই ডেকো।
—- এই ফাজিল!
—- কি??
—- আসরের আজান হচ্ছে শুনতে পাচ্ছো??
—- হ্যা! শুনতে পাচ্ছি-তো।
—- এখন ভাল করে অজু করে নামাজ পরতে যাও। আর একটাও ম্যাসেজ দিবানা।
—- আচ্ছা যাচ্ছি তবে।
ফাহিয়ার স্বপ্ন গুলোর কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ আমি। কারণ বর্তমানের মেয়েরা কোরান পড়া হাফেজ স্বামী পাবার স্বপ্ন স্বপ্নেও আশা করেনা।
এদের চাওয়া গুলোও নিতান্তই জঘন্য। ছেলেকে দাড়িওয়ালা হওয়া যাবেনা। গায়ে পাঞ্জাবি পরা যাবেনা।
মাথায় টুপির কথাতো প্রশ্নই আসেনা। এদের কপালও এমনি হয়।
দেখা যায় স্বামি পরকিয়াবাজ। নয়তো নেশাখোর।