অনেকক্ষন ধরে সবাই মুখ গম্ভীর করে বসে আছি। কি হতে যাচ্ছে কিছু বুজতে পারছি না। আমরা সবাই চিন্তিত।
আর আমাদের চিন্তার মূল কারন হলো আমাদের লাভ গুরু!!
ইদানীং গুরুকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। কোথায় যায়, কি করে কিছুই বলে না। রাতে আসে, এসেই রুমে চলে যায়।
আগের মতো আড্ডা দেয়া হয়না। কিছু জিজ্ঞেস করবো তারও সুযোগ নেই।
তাহলে কি আমরা লাভ গুরুকে হারাতে বসেছি?!
নাহ্, এ হতে পারে না। আজকে একটা ফরসালা করতে হবে। গুরুর কি হইছে তা তো জানতেই হবে।
অনেক্ষন অপেক্ষার পর গুরুর আগমন। এদিকে পিচ্ছি মুন্না গুরুকে দেখেই আঁড়াল হওয়ার চেষ্টা করতেছে।
ইদানীং পিচ্ছি মুন্না আর গুরুর মাঝে চোর-পুলিশ খেলা ভালোই চলতেছে। তা দেখে অবশ্য আমরা বিনোদন নিচ্ছি।
যাই হোক, গুরুকে উদ্দেশ্য করে আমি
_গুরু, একটু যদি সময় হয়, আমাদের সাথে বসবেন!?
গুরু_একটু ত্যাড়া আছে রে। বল কি বলবি?!
আমি_আপনাকে ইদানীং পাশে পাইনা। মিস করি আপনাকে। বলবেন কি হইছে আপনার?!
গুরু_আরে তেমন কিছু না, সময় হলে সব বলবো। [একথা বলেই গুরু হাসি দিয়ে উঠে চলে গেলো!!]
গুরুকে আটকানো গেলো না। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। বলে রাখা ভালো গুরু কিন্তু একাই একটা রুমে থাকে।
কারো সাথে রুম শেয়ার করতে রাজি না। আগে মাঝে মধ্যে আমি থাকতাম।
ইদানীং ১৪৪ ধারা জারি হইছে গুরুর রুমে কেউ থাকতে পারবে না। গুরুর হঠাৎ কঠোরতা দেখে আমরা অবাক!!
আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হলো। গুরুর বিষয় নিয়ে তদন্ত কমিঠি গঠন করা। এ কমিঠির প্রদান উপদেষ্টা হলো আমাদের পিচ্ছি মুন্না।
গুরুর কি কারনে এমন পরিবর্তন তা আমাদের খুঁজে বের করে দেয়ার দায়িত্ব পিচ্ছি মুন্নার। দুই দিনের ভীতর ফলাফল জানাতে হবে!!
যেই বলা সেই কাজ। দুই দিনের ভীতর পিচ্ছি মুন্না ফলাফল নিয়ে হাজির।
কিন্তু ফলাফল শুনে আমাদের চোখ কপালে উঠে গেলো। বিশ্বাস’ই হচ্ছে না গুরু এতো বড় নিউজ আমাদের কাছে লুকাবে।
পিচ্ছি মুন্নার ভাস্যমতে….
গুরুর পরিবর্তনের মূল কারন হলো কোন এক রমনী। ইদানীং ফেসবুকে কোন এক রমনীর সাথে গভীর প্রেমে আসক্ত আমাদের গুরু।
কিন্তু মেয়েটাকে এখনো সরাসরি দেখেনি বা ফোনে কথা হয়নি। জাস্ট পিকচার আদান প্রদান করা হইছে।
আর সারা দিন-রাত চ্যাটিং নিয়েই ব্যস্ত। কেয়ারিং শেয়ারিং নাকি ভালোই চলছে।
যাই হোক,
অবশেষে গুরুর একটা গতি হলো এটাই বড় কথা। গুরুকে চমকে দেয়ার জন্য আমরা একটা একটা পার্টির আয়োজন করলাম।
উদ্দেশ্য গুরুর প্রেম।
গুরু পার্টিতে উপস্থিত হওয়ার পর বুজতে পারলো পার্টির মূল কারন কি।
যাই হোক,
পার্টি শেষে সবাই গুরুকে ধরলাম প্রেম কাহিনি বলার জন্য। কেমনে কি হলো জানার আগ্রহ তো থাকবেই!!
অনেক অনুরোধের পর গুরু মুখ খুললো।
গুরু_তোদের বলিনি তার জন্য সরি। আসলে হঠাৎ করেই প্রেমটা হয়ে গেলো। আর বেশিদিন হয়নি আমাদের রিলেশন।
আমি_তো গুরু এখনো দেখা করেননি?
গুরু_এইতো সামনের মাসে ৫ তারিখ দেখা করবো। তখন সব বুজতে পারবি। এখনো কথা বা সরাসরি দেখা হয়নি!!
আমি_পিকচার দেখাবেন না?! ভাবিকে আমরাও একটু দেখি।
গুরু_এখন না। ৫ তারিখে সরাসরি দেখিস!!
যাই হোক, সবাই গুরুকে অভিনন্দন জানালাম।
সেদিনের মতো পার্টি শেষ হলো। এখন সবার অপেক্ষা সেই পাঁচ তারিখের। অবশ্য গুরু আমাদের তো সাথে নিবে এমনটা বুজাই যাচ্ছে।
অবশেষে,
সেই ৫ তারিখ চলে আসলো। সকাল সকাল গুরুর চিল্লা-চিল্লিতে ঘুম ভাঙ্গলো।
গুরু_এই উঠ,সময় হয়ে গেছে। উঠে তারাতারি রেডি হয়ে নে। আমরা এখনই বের হবো!!
ঘুম থেকে উঠেই দেখি গুরু রেডি হয়ে বসে আছে। চুল স্পাইক করা, হাতে ঘড়ি, চোখে চশমা, গায়ে পাঞ্জাবী, এক কথায় অসাধারণ লাগছে গুরুকে।
গুরুর কথায় আমি আর ফরসাল উঠে গেলাম। কিন্তু পিচ্ছি মুন্না উঠবে না। ওর ভালো লাগছে না, তাই ও যাবে না।
অনেক দস্তা-দস্তির পর পিচ্ছি মুন্নাও সাথে যেতে রাজি হলো।
সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হলাম। উদ্দেশ্য কোন এক শফিং মহল। ঐখানেই নাকি দেখা করবে।
সিএনজিতে এক ঘন্টা জার্নি করার পর সেই কাংক্ষিত জায়গায় পৌচালাম।
অনেক সময় ধরে বসে আছি কোন মেয়ের খবর নেই। গুরুকেও চিন্তিত মনে হচ্ছে।
গুরু মেয়েটিকে একের পর এক মেসেজ করে যাচ্ছে কোন রিপলে মেসেজ নেই। অবশ্য মেয়েটি অনলাইনে থাকলে তো রিপলে করবে।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত গুরু আমাদের বসিয়ে রাখছে। কেউ আসা তো দূরের কথা মেসেজ পর্যন্ত সীন করছে না। কাহিনি কি কিছুই বুজতে পারছি না।
অধর্য্য হয়ে সবাই বাসায় চলে আসলাম। গুরুর মুখে তো কোন কথা নেই।
রাতে সবাই আবার জরুরী মিটিং এ বসলাম। উদ্দেশ্য তো গুরুর প্রেম। কিন্তু গুরু আমাদের মাঝে নেই।
এদিকে পিচ্ছি মুন্নারও ভাব গতি ভালো দেখাচ্ছে না। মনে হয় কিছু লুকাচ্ছে।
একটু পর গুরু আসলো। বুজাই যাচ্ছে গুরুর মন অনেক খারাপ।
আমি_গুরু, মেয়েটার খবর কি?! আর মেসেজ দিছে?!
গুরু_দূর, ঐ সাবজেক্ট বাদ দে তো।
আমি_কেন গুরু। কাহিনি কি হইছে?!
গুরু_এই দেখ
একথা বলেই গুরু মোবাইলটা হাতে দিলো। একটি সাদা-কালো আইডির শেষ মেসেজ দেখা যাচ্ছে।
মেসেজটি হলো……
“ভাইয়া,
আমি ক্ষমা চাচ্ছি আপনার সাথে এমন করার জন্য। আসলে আমি কোন মেয়ে না। আমি একটা ছেলে। ছোট ভাই মনে করে ক্ষমা করে দিবেন”
এদিকে পিচ্ছি মুন্না আস্তে আস্তে আঁড়াল হচ্ছে আর মিটমিট করে হাসতেছে। আমাদেরও আর বুঝতে বাকি রইলো না আসল কাহিনি কোথায়।
কিন্তু গুরুর সামনে আপাতত মুখ বন্ধ রাখতে হবে। তা না হলে পিচ্ছি মুন্নার খরব আছে আমাদের সাথেও গুরু কথা বলা বন্ধ করবে!!
অবশেষে গুরু অমূলক একটি বাণী দিয়ে বাহিরে চলে গেলো…..
“শুন বৎস, আর যাই করো, কখনো ফেসবুক লাইফ বিশ্বাস করো না। ফেসবুক মানেই অন্ধকার এক জগৎ।
এখানে ডুকবা, তো পথভ্রষ্ট হবা, আর ধোকা খাবা!!”