পেট্রোল লইয় খেলোস,না? তোরে এমন পোড়ান পোড়ামু তোর বাপ তোর চেহারা দেইখা স্ট্রোক কইরা মইরা যাইবো।
“হীরা” স্মাগলিং থেকে শুরু করে ছিনতাই,হত্যা,গুম,অবেধ অস্ত্র আমদানি থেকে শুরু করে সব কিছুই তার নিত্যদিনের কাজ।
১৮ কোটি মানুষের মধ্যে হীরা একজন আলাদা মানুষ।সে ক্রাশের জগতের একজন সত্যিকারের হীরা।
একদিন ছিনতাই করা টাকা-পয়সা,মোবাইল,ব্যাগ,গহন হিসেব করার জন্যে দলবদ্ধভাবে বসেছিলো হীরা।
হঠাতই ছিনতাই করা একটা মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে নজর যায় হীরার।কেনেনা,স্ক্রীনের উপর ভাসছিলো সুন্দরী কোনো এক রমনীর ছবি।
যা হীরার চোখ ও মনকে আকৃষ্ট করে।আর তাই হীরা মোবাইলের স্ক্রীনের উপর ভেসে থাক ছবির মেয়েটার উপর ক্রাশ খেয় যায়।
আর তাই,মোবাইল টা অনে ঘাটাঘাটি করে মেয়েটির নাম্বার বের করে হীরা।অতঃপর কল দেয় মেয়েটিকেঃ
মেয়েঃ হ্যালো
হীরাঃ তুমি অনেক সুন্দর
মেয়েঃ নিশ্চয় বাংলা সিনেমা দেখেন।বাংলা সিনেমার কমন ডায়ালগ।
এইটা বলে কল কেটে দেয় মেয়েটি।আর অপরদিকে হীরা মেয়েটির নামটা ও জানতে পারে না।
কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই মেয়েটির সাথে হীরার অনেক ভাব হয়ে যায়,মেয়েটির নাম জেসি।
দুই মাস পর
অনেক লম্বা সময় কথা বল্র ওরা দুজন।দারুন প্রেম জমে গেছে দুজনের।
হীরা এখন তার খারাপ কাজ করার চাইতে জেসির সাথে কথা বলেই সময় পার করে দেয়।সারাক্ষণ মোবাইলে কথা বলে টাইম পার করে দেয়।
একদিন জেসি গোসল করার জন্যে দুপুর বেলায় বাথরুম এ ঢুকে,আর ঠিক তখনি হীরার কল আসে।
যেহেতু জেসি বাথরুমে ছিলো সেহেতু সে কল এর আওয়াজ পায় নি, আর অন্য রুম থেকে জেসির বড় ভাই কল ধরতে জেসির রুমে আসে।
যে কিন্তু পায়ে হাটতে পারে না।হুইল চেয়ারে বসে থাকতে হয় সারাক্ষণ। নিজের পায়ের উপর দাঁড়াতে পারেনা।
এক বছর আগে,কোন এক বড় সন্ত্রাসী তার এ অবস্থা করে দেয়।
আস্তে আস্তে জাহিদ(জেসির ভাই) জেসির ঘরে আসে,আর ফোন টা হাতে নিয়েই হতভম্ব হয়ে যায়।
কেননা,ফোন এর স্ক্রীণ এ ভাসছিলো হীরার ছবি।এই সেই হীরা, যার সাথে জাহিদ কাজ করতো।
কিন্তু বেঈমানি করার ফলে গুলি করে জাহিদের পা দু’টি কে অচল করে করে হীরা।
আর সেই থেকেই প্রতিশোধ নেওয়ার আশায় অপেক্ষায় আছে জাহিদ।কিন্তু, এ-কি!
জেসির মোবাইল এ হিরার কল দেখে কিছুই বুঝতে পারে না জাহিদ।
এতকিছু ভাবতে ভাবতে হঠাতই জেসি বাথরুম থেক ঘরে ঢুকে,আর দেখে তার ভাইয়ের হাতে তার ফোন।আর তাই চমকে উঠে জেসি।
কেননা,তার ভাই মোবাইল ধরা তো দূরে থাক কোনোদিন রুমে পর্যন্ত আসে না।
জেসিঃ কি হয়েছে ভাইয়া?হঠাত আমার রুমে কেন?
জাহিদঃ এই হীরা কে?তোর সাথে ওর কি সম্পর্ক?
জেসিঃ ভাইয়া তোমাকে একটা ছেলের কথা বলেছিলাম না,ও ই হচ্ছে হীরা।
জাহিদ : হীরা কে,তুই জানিস? আন্ডারওয়ার্ল্ড এর সব থেকে বড় ডন।আমার আজকের এই অবস্থার জন্যে যে দায়ী সেই হচ্ছে এই হীরা।
জেসিঃ ভাইয়ের কাছে হিরার এসব কুকার্য সম্পর্কে জানার পর হীরার প্রতি ক্ষোভ জন্মায় জেসির মনে।আর জন্ম নেয় নতুন জেসির।
মনের মাঝে কেউ যেন চিৎকার করে বলছে,যা প্রতিশোধ নে তার যে তোর ভাইয়ের এই অবস্থা করেছে ।
আর জেসির এই ইমুশন এর সুযোগ নেয় তার ভাই জাহিদ।হীরা কে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করে সে।
আর জেসি জাহিদকে কল দিয়ে বলে ওমুক যায়গায় কাল দেখা করতে।
পরেরদিন যথাসময়ে জেসি চলে আসলেও হীরা একটু পর একটা বাইক নিয়ে আসে।আর কথা বলার আগে একটা সিগারেট ধরায়.
হীরাঃ হীরা,অরিজিনাল হীরা।আমি এই শহরের একমাত্র ডন।আমি না চাইলে, উপর ওয়ালা ছাড়া অন্য কেউ আমাকে মারতে পারবো না।
এই বাংলাদেশের কোন মানুষ নাই যে আমারে মারার কথা ভাবতে পারে।তুমি কি ভাবছিলা, এইখানে পুলিশ আইবো?
হাতকড়া পড়াইয়া নিয়া যাইবো, না? না, এইখানে আইবো আমার আজরাইল।
আজরাইল চিনো? আমার জিবনের আজরাইল হলো তোমার ভাই।ব্যাংক একাউন্টে ২ কোটি টাকা মাইরা দিছিলো।
তাই ওরে শাস্তি দিছিলাম।আর ওই হচ্ছে আমার শত্রু।
জেসিঃ বাহ, সব তো ভালোই জানো দেখছি।সাহসও আছে অনেক।
হীরাঃ এই হীরা, কাউরে ডরায় না, শুধু আসছি তোমারে দেখার লাইগা।কেননা, আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
আর ঠিক সেই মুহুর্তে পেছন থেকে একটা গুলি এসে লাগে হিরার পিঠে।হীরা বুঝতে পারে গুলি জেসি নয়, জেসির ভাই জাহিদ করেছে।
হীরা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জেসির গালে হাত টা রেখে ভালোবাসার স্পর্শ অনুভব করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
আর শেষ হয় অন্যরকম এক ভালোবাসার গল্পের।
হিরার জগত সংসারে সবকিছুই ছিলো অপবিত্র, কিন্তু একটা জিনিস ছিলো পবিত্র ও আসল হীরা, আর সেটি হলো জেসির প্রতি হীরার ভালোবাসা।দৃশ্যায়িত সেই ঘটনার পর হীরা কিন্তু নিভে যায়।
মৃত্যুকে জয় করতে পারলেও তার পাপের সমষ্টি হিসেবে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করে আদালত।
হীরা এখন আর আগের মতো জ্বলে উঠে না।সে এখনো অবিরাম জেসির প্রেমে মগ্ন।
সীমিত আয়তনের জেলখনার মধ্যে কতোটাই বা জ্বলে উঠা যায়?
আর এইভাবেই শেষ হয় একেক হীরার জীবন, একেক হীরার ভালোবাসার গল্প।