আমি এমনি

আমি এমনি

ওই একবার আমাদের বাড়ির নিচে আসো।
-কেনো?
-একটা বিশাল সমস্যা হয়ে গেছে।
-কি সমস্যা?
-ফোনে বলা সম্ভব না,আসো তারপর বলছি।
-রাত কয়টা বাজে দেখেছো!
-হুম তো!
-ভূত ধরে যদি।

-চোপ..২০মিনিটে আসবা,বাই।

বলেই সুমাইয়া কল কেটে দিলো।কোনো উপায় না পেয়ে আমিও সাথে সাথে জ্যাকেট পরে বেড়িয়ে পরলাম।

ফাকা শুনশান রাস্তা।কনকনে শীতে সব প্রাণী গা-ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে আছে।
ঝিঝিপোকারাও নিশ্চুপ।

চাঁদের আলো আকাশ ভেদকরে চারিপাশে ছড়িয়ে পরে কুয়াশার আবরণে মিলিয়ে গিয়ে সাদা মেঘের রূপ ধারণ করেছে।

ঝুমঝুমে এক পরিবেশ।
মনের মাঝে ভয় সাড়া দেওয়ায় হাঁটার স্প্রিড দ্বিগুণ করে দিলাম।
সামনে গোরস্তান দেখে থেমে গিয়ে আর এগবো কি না ভাবতে ভাবতে চোখটা বুজে দিলাম এক দৌড়।
যখন চোখ খুললাম তখন আমি সুমাইয়াদের বাড়ির সামনে।
মোবাইলটা বের করে সুমাইয়াকে কল দিতে যাবো,তখনই পেছন থেকে সুমাইয়া বলে উঠলো “ভৌউ”।
আমায় আর ধরে কে,ভয়ে বাচ্চাদের মতন চিৎকার করে উঠলাম।
আমার চিৎকার দেখে সুমাইয়া তখন ওর কোমল হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।
-ভয় পেয়েছো?
-এভাবে ভয় দেখানোর কোনো মানে হয়!
-হিহিহি।
-ধ্যাত,ডেকেছো কেনো সেটা বলো।
-পরে,আগে ভেতরে চলো।
-এত্ত রাতে শ্বশুর-শাশুড়ি কি বলবে!
-চুপিচুপি চলো।

আমারি ফায়দা দেখে,আর কিছু না বলে সুমাইয়ার পিছু পিছু ওদের বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম।
তারপর ওর রুমে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে খাটের ওপর লাফিয়ে পরলাম।
সুমাইয়া রেগে গিয়ে দিলো এক ঝাড়ি,”এর কোনো মানে হয়।”
আমিও অভিমান করে বললাম,”ওহ্,সরি।”

-অভিমান করো কেনো,যদি পেটে ব্যথা পেতাম।
-খাটের ওপর লাফিয়ে পরলে আবার কে ব্যথা পায়!
-ও তুমি বুঝবানা।
-বুঝিয়ে বলো।
-আগে বলো চিল্লাচিল্লি করবানা।
-ওকে বলো।
-তুমি আব্বু হতে চলেছো।[বলেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে মুখ লুকালো।]
আমি পরলাম মহা বিপদে,খুশিতে চিল্লাইতেও পারছিনা।
-সুমাইয়া একটা কথা বলি!
-হুম বলো।
-দরজাটা আগে আটকে আসোতো।
-হিহিহি,ওকে।

সুমাইয়া উঠে দরজা আটকানোর সাথেই চিল্লানি দিয়ে সুমাইয়াকে কোলে তুলে নিলাম।
আফসুস দুই মিনিট বাদেই রুমের সামনে শ্বশুর-শাশুড়ি হাজির।
সুমাইয়াকে কোল থেকে নামিয়ে দিতেই বালিকা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
-রাসেল,তুমি কখন আসলে?(শ্বশুর)
-জ্বি বাবা।একটু আগেই।(আমি)
-কিছু খেয়েছো বাবা?(শাশুড়ি)
-জ্বি আম্মা খেয়েছি।(আমি)
-আচ্ছা বাবা তোমরা এখন ঘুমিয়ে পরো।(শাশুড়ি)
-জ্বি আম্মা।(আমি)

খুশিতে দুই চোখে ঘুম উধাও,তাই সুমাইয়াকে সাথে করে ছাদে গেলাম।
-সুমাইয়া ।
-হুম।
-চাইলেও আমি তোমায় কখনো বড় কোনো উপহার দিতে পারিনি,তবে আজ তুমি যা চাইবা তাই দিবো।
-আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার তুমিই।ব্যস সারাজীবন এভাবে পাশে থেকে অনেক অনেক ভালবাসবা।

তারপর সুমাইয়ার সাথে আরো কথা বলতে বলতে সকালের আযান দিয়ে দিলো।
-ওই এখন চলো।
-কোথায়?
-নামাজ পড়তে যাবা।
-বাসায় পড়ি?
-মসজিদে যাবা।
-ভয় করে।
-আব্বুর সাথে যাইও।
-তাহলে সমস্যা নাই।
তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে শ্বশুড়ের এক্সট্রা পাঞ্জাবি পড়ে শ্বশুরের সাথে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
চলার পথে শ্বশুর মশাই কিছু ইসলামিক ধারণা দিলো।
যেগুলো শুনলে সত্যি ফুরফুরা মনটা আরো তরতাজা করে দিতে যথেষ্ট।

অতঃপর নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখলাম সুমাইয়া কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করছে। তাই বালিকাকে ডিস্টার্ব না করে ওর মিষ্টি শুরে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙলো বসের কলে….
-রাসেল কোথায় তুমি?
-বস্..শ্বশুর বাড়ি।
-ওহ্,তারমানে আজ অফিসে আসবানা!
-জ্বি বস…আর আপনাদের সবার জন্য একটা খুশির খবর আছে।
-কি খবর শুনি!
-আমি বাবা হতে চলেছি।
-ওয়াও,কনগ্রাইচুলেশন।
-ধন্যবাদ বস্।
-আর শুনো পনেরো দিনের ছুটি দিচ্ছি।বউয়ের পাশে থেকে খুব সেবা করো।
-কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো আপনাকে,ইউ আর দ্যা বেষ্ট বস্।
-হাহাহা,হইছে এখন রাখি..বাই।
-বাই বস্।

কলটা কেটে দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ১১টা বাজে। পাশে তাকিয়ে দেখলাম সুমাইয়া ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে।
-কে কল দিছিলো?
-অফিস থেকে।
-আল্লাহ্,আফিসে যাবানা আজ?
-নাহ্,তোমায় ভালবাসার জন্য অফিস থেকে পনেরো দিনের ছুটি দিছে।
-কেনো?
-ভালোবাসি তাই।
-সত্যি!
বলেই সুমাইয়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত