তোকে কথা দিলাম

তোকে কথা দিলাম

-“Hi!!!”

-“Hello!!!!!”

-“কেমন আছেন?”

-“জ্বি ভাল।আপনি?”

-“আমিও ভাল আছি।আচ্ছা,আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি?”

-“(অবাক হয়ে) আমিতো আপনাকে চিনিনা জানিনা।আপনি কি আমাকে চিনেন?”

-“আসলে আমিও আপনাকে চিনিনা।কিন্তু কেন যেন আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে খুব ইচ্ছে করছে।”

-“তার কারণ কি জানতে পারি?”

-“আপনার আইডির প্রোফাইল পিকচারটি আমার খুব ভাল লেগেছে।আর তার সাথে আপনার লেখা গল্পগুলো এক কথায় অসাধারণ।প্লিজ,না করবেন না।আমার কোনো ভাল বন্ধু নেই।আমার মনে হয় আপনার সাথে আমার সুখ-দুঃখগুলো শেয়ার করতে পারব।আমার বন্ধু হবেন প্লিজ?”

-“আচ্ছা ঠিক আছে।এত করে যখন অনুরোধ করছেন,বন্ধুত্ব করব।”

-“(খুশি হয়ে) অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।তাহলে আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই?”

-“ঠিক আছে।”

চ্যাটিং হচ্ছিল মিথিলা এবং রাতুলের সাথে।রাতুল এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কোচিং করছে।আর মিথিলা এইচএসসি প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করছে।

এক সময় কথা বলতে বলতে দুজন দুজনের খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায়।সারাদিন কে কি করল না করল সবকিছু শেয়ার করে তারা।দুজন দুজনকে তাদের মনের অজান্তে ভালবেসে ফেলে।কিন্তু তারা তাদের মনের কথা প্রকাশ করেনা।কারণ,একজন আরেকজনের বলার অপেক্ষায় আছে।

-“মিথিলা!!!!”

-“হুম বল।”

-“আমার ছবি দেখবে?”

-“(আগ্রহ নিয়ে) হুম অবশ্যই দেখব।তুমি তো প্রতিদিনই আমার ছবি চাও।আমি দেই।কিন্তু তুমিতো দাওনা।আর এই ফেক আইডি আর কতদিন চালাবে?নিজের পিক দিয়ে আইডি খুললে কি এমন সমস্যা হবে?আমিতো আমার ছবি দিয়েই আইডি খুলেছি।এই আইডি চালানো এখন বাদ দাওতো।”

রাতুল কিছু বলেনা।

-“কি হল?কিছু বলছনা যে?”

-“কিছুনা।এই দেখ,এইটা আমি।”

-“(অবাক হয়ে) এইটা তুমি!!!!!! মাশা আল্লাহ!!!! অনেক অনেক সুন্দর।”

-“তাই?”

-“হুম সত্যি।পুরোই বলিউডের নায়ক।”

-“ও আচ্ছা।ভাল।”

এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় একমাস হয়ে যায়।মিথিলা রাতুলের সাথে দেখা করে তার মনের কথাটা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।

-“রাতুল!!!!”

-“হুম বল।”

-“একটা কথা বলব?রাগ করবেনাতো?”

-“তোমার কোনো কথায় আজ পর্যন্ত রাগ করেছি পাগলী?বল কি বলবে?”

-“আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।”

-“(অবাক হয়ে) হঠাৎ এই কথা যে?কি হয়েছে?”

-“কি হয়েছে সেটা দেখা হলেই বলব।এখন বল কবে,কখন,কোথায় দেখা করবে?”

-“আসলে দেখা করার মত সময়তো আমার নেই।সামনে রেজাল্ট দিবে।আর কোচিংয়ে তো প্রায় প্রতিদিনই পরীক্ষা থাকে।তাই এখন হয়ত সম্ভব না।”

-“(রেগে গিয়ে) তুমি চাইলেই সম্ভব।আমি কিছু জানিনা।তুমি আমার সাথে তাড়াতাড়ি দেখা করবে এটাই হচ্ছে আমার শেষ কথা।”

অবশেষে রাতুল মিথিলার জিদের কাছে হার মেনে দেখা করতে রাজি হল।

কিন্তু তারপরদিন থেকে রাতুল মিথিলার সাথে ভালভাবে কথা বলেনা।রাতুলের হঠাৎ এমন আচরণে মিথিলা অনেক অবাক হয়ে যায়।সে কল দেয়।রাতুল রিসিভ করেনা।ম্যাসেজ দিলেও কোনো উত্তর দেয়না।

তার দু’দিন পর রাতুল হঠাৎ তার আইডি ডিলিট করে দেয়।এমনকি তার ফোন নম্বরও চেঞ্জ করে ফেলে।মিথিলা কিছুই বুঝতে পারেনা।রাতুল এভাবে তাকে কোন অপরাধের শাস্তি দিচ্ছে,কি ভুল ছিল তার এসব ভাবতে ভাবতে আর রাতুলের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মিথিলা পাগলপ্রায় হয়ে যাচ্ছে।

মিথিলা রাতুলের সাথে যোগাযোগ না করে আর থাকতে পারছেনা।সে প্রতিজ্ঞা করে যে করেই হোক,রাতুলের সাথে দেখা করে তাকে সবকিছু জানতে হবেই।

রাতুল তার কোচিং সেন্টারের ঠিকানা মিথিলাকে দিয়েছিল।মিথিলা সেই কোচিং সেন্টারের সামনে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।

-“সেই সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি।রাতুল কখন বের হবে কে জানে।ও কখন ঢুকেছে তাইতো খেয়াল করতে পারলামনা।মাঝে মাঝে কি যে বোকার মত কাজ করি।
ধ্যাৎ!!!!!!!

আচ্ছা,ও আমাকে ভুল ঠিকানা দেয়নি তো?
না না।এসব আমি কি ভাবছি।ও আমাকে মিথ্যে বলবেনা।বলতে পারেনা।এই বিশ্বাস ওর প্রতি আমার আছে।”

মিথিলা এসব আকাশ-কুসুম চিন্তাভাবনা করতে করতে হঠাৎ করে চারজন ছেলেকে দেখল।তাদের মধ্যে একজন হুবহু রাতুলের মত দেখতে।মিথিলা অবাকচোখে তাকিয়ে আছে।ভালভাবে দেখার এবং চেনার চেষ্টা করছে।কিন্তু তারা চারজন যখন মিথিলার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল,তখন রাতুলকে চিনতে মিথিলার আর কষ্ট হলনা।

আর তখনি মিথিলা “রাতুল রাতুল” বলে ডাকতে থাকল।কিন্তু রাতুল পেছনে ফিরে একবারও তাকালনা।এমনকি মিথিলার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও মিথিলাকে দেখে কিছু বললনা।

মিথিলাকে এরকম অবহেলা করার কারণে রাতুলের উপর মিথিলা খুব রেগে যায়।সে রাতুলের সামনে গিয়ে পথ আটকায়।

-“কি ব্যাপার?কে আপনি?আর এভাবে আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়ালেন কেন?”

-“(রাগান্বিত স্বরে) খুব সাহস বেড়েছে তোমার তাইনা?আমাকে দেখেও না দেখার অভিনয় কর।না চেনার অভিনয় কর।কি দোষ ছিল আমার যে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে?

যে রাতুল সারাদিনে কি করত না করত সব কথা তার প্রিয় মানুষ,প্রিয় বন্ধু মিথিলাকে না বলে থাকতে পারতনা,সে এত তাড়াতাড়ি মিথিলাকে ভুলে গেল কিভাবে?
বল রাতুল বল?”

এই কথা বলে মিথিলা কাঁদতে থাকে।রাতুল অবাক দৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে আছে।তার বন্ধুরা মিথিলাকে কিছু বলতে গেলে রাতুল বাধা দেয়।সে তাদেরকে ইশারা করে বাসায় চলে যেতে।

-“আপনি কাঁদবেন না প্লিজ।দেখুন,রাস্তায় এভাবে রাগারাগি,চেঁচামেচি,কান্নাকাটি করছেন,আশেপাশের সব মানুষ আমাদের দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অন্য কোথাও বসি।তারপর আমরা কথা বলি কেমন।চলুন ঐ চায়ের দোকানে বসি।”

মিথিলা রাজি হয়।চোখের পানি মুছতে মুছতে রাতুলের সাথে গেল চায়ের দোকানে।

-“চা খাবেন?”

-“না।আমি যে চা খাই না এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?আর এরকম আপনি আপনি করে বলছ কেন আমাকে?”

-(মুচকি হেসে) আচ্ছা,আমি যে রাতুল সেটি আপনাকে কে বলল?”

-“(অবাক হয়ে) কে বলল মানে?!!!! কি বলছ এসব?তোমার কি হয়েছে বলতো?কেন আমাকে চিনেও না চেনার অভিনয় করছ?”

-“দেখুন,আমি রাতুল নই।আমি জিসান।এক মিনিট।আমার কলেজের আইডি কার্ড দেখাচ্ছি।(আইডি কার্ড বের করে) এই যে দেখুন।এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে বলুন?”

মিথিলা জিসানের আইডি কার্ড হাতে নিয়ে নিজের চোখেও বিশ্বাস করতে পারছেনা।

-“তাহলে রাতুল আমাকে মিথ্যে বলেছে?ঠকিয়েছে?কেন এমন বিশ্বাসঘাতকতা করল রাতুল?কি দরকার ছিল?”

রাগে-অভিমানে মিথিলা আবার কাঁদতে থাকে।

-“আপনি আবার কাঁদছেন?কাঁদবেন না প্লিজ।আচ্ছা,আপনাকে কে বলেছে যে আমি রাতুল?”

মিথিলা জিসানকে শুরু থেকে সব ঘটনা বলল।জিসান শুনে তো পুরোই হতবাক।মিথিলা যখন জিসানকে রাতুলের আইডি দেখাল,তখনই জিসান পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পারল।

-“আচ্ছা আমি যদি আপনার সামনে রাতুলকে এনে দেই,পারবেন তাকে ক্ষমা করতে?”

-“(অবাক হয়ে) আপনি রাতুলকে চিনেন?”

-“(মুচকি হেসে) সেটি নাহয় সময়ই সব বলে দিবে।আমি তিনদিনের মধ্যে রাতুলকে আপনার সামনে নিয়ে আসব কথা দিলাম।আপনি যদি আমাকে বিশ্বাস করেন,তাহলে আপনার ফোন নম্বর দিন।আমি আপনাকে যেদিন আর যখনই এখানে আসতে বলব,আপনি সময়মত চলে আসবেন কেমন।আজ আসি।ভাল থাকবেন।আর শুনুন,রাতুল কিন্তু অনেক ভাল ছেলে।আসি।”

মিথিলা সব শুনে থ হয়ে গেল।কিছুই বুঝতে পারলনা।

দু’দিন পর…..

সকালে মিথিলার নম্বরে অচেনা নম্বর থেকে কল আসে।

-“হ্যালো!!!!!”

-“জ্বি মিথিলা বলছেন?”

-“জ্বি বলছি।কিন্তু আপনি কে বলছেন?”

-“আমি জিসান বলছি।আজকে বিকেল ৪টায় যেখানে আসতে বলেছিলাম,সেখানে চলে আসবেন কেমন।”

-“(খুশি হয়ে) আচ্ছা ঠিক আছে।”

মিথিলা যথাসময়ে এবং যথাস্থানে যায় জিসানের কথামতো।তার কিছুক্ষণ পর জিসান তার সাথে করে একটি ছেলেকে নিয়ে আসে।

-“এই যে আপু!!!! ইনি হচ্ছেন আপনার সেই রাতুল।আমি এখন আসি।আপনারা কথা বলুন।”

জিসান চলে যাওয়ার পর মিথিলা রাগে-অভিমানে রাতুলের দিকে তাকিয়ে আছে একনজরে।রাতুল মাথা নিচু করে আসামির মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

-“(রাগান্বিত স্বরে) কি দরকার ছিল এমন মিথ্যে অভিনয় করার?অন্য ছেলের ছবি দেয়ার?আমিতো কখনও তোমার ছবি দেখতে চাইনি।তুমি নিজের থেকেই দিয়েছ।তারপর যখন দেখা করতে চাইলাম,আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে।আর জিসান-ই বা কে?আজ,এখনই তোমাকে সবকিছু বলতেই হবে।কেন এমন করলে?আমার সব প্রশ্নের উত্তর চাই-ই চাই।”

রাতুল আগের মতই চুপ করে রইল।

-“চুপ করে আছো কেন?বল।নাকি তুমি রাতুল নও?অন্য কেউ?”

মিথিলা খেয়াল করল রাতুল কাঁদছে।ওর কান্না দেখে মিথিলা অবাক হয়ে গেল।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।রাতুল চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল-

-“মিথিলা!!! তুমি আমাকে দেখে হয়তো খুব ঘৃণা করছ তাইনা?তোমাকে আমার বন্ধু জিসানের ছবি দিয়েছি কেন জানো?কারণ আমি দেখতে কালো,অসুন্দর,আনস্মার্ট।কোনো মেয়ের প্রতি আমার এতটা ভাললাগা,ভালবাসা জন্মায়নি যেমনটা তোমার প্রতি জন্মেছে।তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি।জানি তুমি আমাকে গ্রহণ করবেনা।কারণ তুমি সুন্দর।আর আমি কালো,অসুন্দর।

জিসানের ছবি দেখিয়ে তোমাকে খুশি করিয়ে আমার মনের কথাটি বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুমি যখন দেখা করতে চাইলে,তখন তোমার কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আমি নিজেই সরে গেলাম তোমার জীবন থেকে।আর তাছাড়া তোমাকে আমি ঠকিয়েছি।কোন মুখ নিয়ে আমি তোমার সামনে দাঁড়াতাম বল?

তাই কোচিং করা ছেড়ে দিয়ে,তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে আমার সব ভালবাসা,স্বপ্নকে মাটিচাপা দিয়ে আমি গ্রামের বাড়ি চলে যাই যাতে তোমার সাথে আমার আর কখনও দেখা না হয়।

কিন্তু ভাগ্যের কি খেলা দেখ,তোমার সাথে জিসানের দেখা হল।অথচ জিসান আমাকে এসব কিছুই বলেনি।জিসান বলেছে ও খুব অসুস্থ।আমাকে দেখতে চাইছে।আর ওর কথা শুনে আমিও সাথে সাথে রওনা দিয়ে ওর বাসায় চলে আসি।দেখি ও সম্পূর্ণ সুস্থ।আমাকে তোমার কথা বলে ধমক দিয়ে এখানে জোর করে নিয়ে আসে।আর আমি এখানে এসে দেখি তুমি সত্যিই আমার জন্য অপেক্ষা করছ।

আমি মিথ্যে বলেছি।অন্যায় করেছি।তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।এখন তুমি যা শাস্তি দিবে,আমি মেনে নিব।”

মিথিলা সব শুনে আরও জোরে জোরে কাঁদতে থাকে।

-“ইচ্ছে করছে তোমার টি-শার্টের কলার ধরে তোমার গালে কষিয়ে একটা চড় দেই।আমিও যে তোমাকে পাগলের মত ভালবাসি।আর এই কথা বলার জন্যই তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম।আমিতো তোমার ছবি দেখতে চাইনি।তুমি দেখিয়েছ।আর তোমার ছবি দিয়ে দেখতে আমি কি বলি।কেন অন্যের ছবি দেখিয়েছ?এখন থেকে তুমি আর কোনো ফেক আইডি চালাবেনা এই বলে দিলাম।”

রাতুল তারপরও কাঁদছে।চুপ করে আছে।

-“আর কখনও আমাকে কষ্ট দিবি?কখনও এই হাত ছেড়ে চলে যাবি?বল শয়তান?না বললে কিন্তু তোকে এখনি খুন করব।”

এই কথা বলে মিথিলা হাসতে থাকে।আর রাতুলও হেসে উঠে।

-“(মিথিলার হাত শক্ত করে ধরে) এই হাত ছেড়ে কোথাও যাবনারে পাগলী।তোকে কথা দিলাম।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত