আয়না সম্পর্কিত ভালোবাসা

আয়না সম্পর্কিত ভালোবাসা

-তোর মতো কাপুরুষেরা কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না।যে ছেলে রাতের বেলা একা ঘুমাতে ভয় পায় সে আর যাই হোক আত্মহত্যা করতে পারে না।(হো হো করে হাসছিল অরিত্রী) মুঠোফোনের অপরপ্রান্তে তখন কান্নার শব্দ হচ্ছিল।

সে রাতে আর কথা হয়নি।পরদিন সকালে যখন অরিত্রীর ঘুম ভেঙেছিল ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।বোকাসোকা ভীরু ছেলেটি যে সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করবে সে ভাবেনি।সবচেয়ে সহজ পথটিই বেছে নিয়েছিল হয়তো শুভ্র।কিন্তু মরার সময় ও দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি শুভ্রর।ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ার সময় মাঝপথে বাড়ানো রডটি পেট চিরে ঢুকে গিয়েছিল।বেচারা সহজ মৃত্যু চেয়েছিল কিন্তু পেয়েছিল সবচেয়ে কষ্টকর মৃত্যু।ছটফট করতে করতে মারা যায় শুভ্র।ছাদ চুইয়ে চুইয়ে রক্তের বৃষ্টিনামে।নিচ থেকে উত্সহী জনতা চেয়ে দেখছিল বীভত্স মরণের খেলা।কেউ কিছু করতেপারছিল না।

-আচ্ছা শুভ্র কি ওর মরণ ও যে কারো উপভোগ্য হতে পারে এটা কি দেখতে পেরেছিল?হয়তো পারেনি।পারার কথাওনা।চশমা ছাড়া কিছু দেখতে পেত না শুভ্র।একবার তো অরিত্রী দুষ্টুমি করেচশমা নিয়ে যাওয়াতে শুভ্র অরিত্রী ভেবে আরেক মেয়ের হাত ধরে ফেরেছিল।কান্নারমাঝেও­ অরিত্রীর হাসিপেলো।শুভ্রর সুইসাইড নোটটা আবার পড়তেশুরু করলো।মেয়েলি টাইপের সুন্দর হাতের লেখা!
টুকটুকি,

মরতে যাচ্ছি।ভাবিস না এবারো তোকেগাল মারছি।এবার তোকে আত্মহত্যা করে দেখাবো।

( বিঃদ্রঃ তোকে মরার পর ও ছাড়বো না ভাবছি।ভূত হয়ে সারাদিন জ্বালাবো।হে হে।)

মরা নিয়ে ফাজলামি।ছেলেটা পারতোও বটে।পিছনে তাকাল ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখতে পেল টুলের উপর বসে শুভ্রর রক্তমাখা ভূতটা হাই তুলছে।কিন্তু টুলের উপর বাস্তবে কেউ নেই।মাথায় আবার রাগ উঠে গেল।অরিত্রী চিত্কার করে বললো,

-দেখ শুভ্র।enough is enough।অনেক জ্বালিয়েছিস।বেঁচেথাকতেও যতসব উদ্ভট ব্যাপার নিয়ে আমাকে সন্দেহ করতি।অনেক pain দিতি।এখন মরে ও শান্তি দিস না।তুই যাবি কিনা বল্?

শুভ্রর ভূতটা কিছু বলছিল না।মাথাচুলকাচ্ছিল।শুভ্রর এই ভূতটা অরিত্রীকে জ্বালিয়ে মারছে।যেকোনো আয়নায়ই ও তাকালে পিছনে শুভ্রর রক্তমাখা ভূতটা দাঁড়ায়।কথা বলে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।প্রথম প্রথম ভয় লাগতো।চিত্কার করে উঠত’ওই যে ওই যে শুভ্রর ভূত।’কেউ দেখতে পায় না শুধুই ও দেখতে পায়।ওকে পাগলের ডাক্তারের কাছে নেয়া হল।সব শুনে ডাক্তার বলল অরিত্রী ইস্ট্রোফোবিয়ায় (এক ধরনের মানসিকরোগ রোগী আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে গিয়ে অন্য কাউকে দেখার কল্পনা করে)আক্রান্ত।কয়েকটা ট্রাঙ্কুইলার দিলো।কাজ তো হলোই না ভূতটার উপদ্রব্য আরো বেড়ে গেল।অরিত্রী শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছিল।কিন্তু ইদানীং শুভ্রর ভূতটা নতুন উপদ্রব শুরু করেছে।হঠাত্ করেই আয়নায় তাকালে দেখা যায় অরিত্রীর হাতে চেহারায় রক্ত লেগে আছে।কিন্তু বাস্তবে কিছুই নেই।

হাত ধুতে ধুতে আয়নায় তাকালে দেখা যায় হাত ধোয়ার পানির সাথে রক্ত ধুয়ে যাচ্ছে।তাও পরিস্কার হয় না।অথবা গোসল করার সময় বাথরুমের আয়নায় তাকালেও অরিত্রী দেখে শাওয়ার থেকে রক্ত ঝরছে।আর তার সারা শরীরে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে।অরিত্রী বাস্তবে কিছুই দেখতে পায় না।পরিস্কার পানি ঝরছে শাওয়ার থেকে।অরিত্রী মুছতে চায়।মুছতে পারে না।শেষে খামচে ধরে আঁচড় কেটে মুছতে চায় রক্তের দাগ।দাগ তো মুছেই না বরং সারা শরীরে অনেক অনেক আচঁড়ের দাগ।অরিত্রী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।ও আয়নায় তাকাতে চায় না।তাওচোখ চলে যায়।আয়নার মাঝে দেখে শুভ্রর রক্তমাখা ভূতটাও বোকার মতচেয়ে আছে।ঠিক যেমনটা শুভ্র প্রতিবার দেখা করার সময় বোকার মত ড্যাবড্যাব করে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকত।জীবিত শুভ্র অরিত্রীর কান্না দেখে কাঁদত বাচ্চাদের মত।ভূত শুভ্র কাঁদে না।হয়ত ভূতদের কাঁদতে নেই।ভূতরা মায়াকান্না কাঁদে।সত্যিকার কান্না কাঁদে না।অরিত্রী এভাবে বাঁচতে চায় না।শুভ্রের ভূতকে আর ওকে জ্বালানোর সুযোগ দিবে না।সেওআত্মহত্যা করবে।সবাই ওকে আজ পাগলভাবে।আঁচড়ের দাগ লুকোতে ওকে এখন ফুলস্লিভ জামা পরতে হয়।কি অসহ্য।

ও আত্মহত্যা করলে বাবা অনেক কষ্ট পাবে।বাবাকে একটা চিঠি লিখে যেতেখুব ইচ্ছা করে।কিন্তু ও এত ঘটা করে মারা যেতে চায় না।এটা একটা শোঅফ।কখনোই শো অফ পছন্দ করতো না।ফাজিল শুভ্রটা শো অফ করত সবকিছুতেই।আর সুইসাইড নোট লিখলেও কি লিখবে?একটা ভূতের ভয়ে ও আত্মহত্যা করেছে?নিজেকে আর কত হাসির পাত্র করে তুলবে?

এসব ভাবতে ভাবতে ছাদের সিঁড়িঘরে কখন যে উঠে গেছে জানে না অরিত্রী।ঝুম বৃষ্টি পড়ছে।শুভ্র বৃষ্টিভেজা রাতে মারা যেতে চাইত।হয়ত নিজের আশা অরিত্রীর উপরদিয়েই পূরণ করছে।বৃষ্টির তোড় কমেযাচ্ছে।চাঁদটা মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে।চাঁদটাও যেন অরিত্রীর মত সুন্দর একটা মেয়ের মৃত্যু দেখতে চাইছে না।ছাদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে অরিত্রী।লাফ দেয়ার আগে পৃথিবীটা ভালো করে দেখে নিচ্ছে অরিত্রী।ব্যস্ত পৃথিবীবাসী ঘুমন্ত।শুধু বৃষ্টি আর বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।ও মারা গেলে এই র্স্বাথপর পৃথিবীর কিছু যায় আসে না।বাবা খুব কাঁদবে।হয়ত আর একজন কাঁদতো।কিন্তু আহাম্মকটা নিজেই আজ তার মৃত্যুর কারণ।কোনোদিন ই বুঝলো না যে অরিত্রী বেকুবটাকে কত ভালোবাসতো।অরিত্রীর মরতে ইচ্ছা করছে না।আহ!পৃথিবীটা কত সুন্দর।শুভ্র প্রায় ই বলতো যারা আত্মহত্যা

করতে যায় তাদের মারা যাওয়ার আগে সব প্রিয়মুখ গুলোর কথা মনে পড়ে।সুন্দর পৃথিবীতে আর ফিরতে পারবে না এই কথা মনে পড়ে।কিন্তু পরক্ষণেই প্রিয় মানুষগুলোর প্রতারণা স্বার্থপরতার কথা মনে করে আত্মহত্যা করে।শুভ্র সবসময় অরিত্রীর মন ভালো করার চেষ্টা করত।অরিত্রীর মনে হয়,ইস্ শুভ্রটাযদি এসে ওকে আত্মহত্যা করতে বাধা দিত।ওর মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে।মনে হয় ট্রাঙ্কুইলারের প্রভাব।চাঁদটাকে মনে হয় শুভ্রর গোলগাল মুখ।অরিত্রী চিত্কার করে বলতে ইচ্ছা করে,টুনটুন তোকে অনেক ভালোবাসতাম।কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।মাখা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়ার আগ মূর্হূতে তার মনে হয় কেযেন কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে,’তুই সবসময় মুক্তি চাইতি অরিত্রী।জীবিত থাকতে সবসময় তুই আমাকে কষ্ট দিতি।শোধ তুলে নিলাম।তোর মুখে ভালোবাসি শুনবো।তার অপেক্ষায় ছিলাম।তোকে মুক্তি দিলাম।

বাড়ির সবকটা আয়না যে ভেঙে গিয়েছিল তা তখনো কেউ জানতো না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত