“আমরা এক মায়ের পেটে জন্ম না নিলে ও সে আমার ভাই।আমার বন্ধু সাজিদ আমার জন্য সব করতে পারে।
আমাকে যদি বনের বাঘে ও খাওয়ার জন্য আসে আমার বন্ধু সাজিদ সে বাঘের সাথে লড়াই করবে, এতটুকু বিশ্বাস তার উপরে আছে আমার।
.
“আমি অনিতাকে ভালোবাসি আজ ৪ বছর।
অনিতা এবার ইন্টারে এ পড়ালেখা করতেছে।
আমি পড়ালেখা বাদ দিয়ে ছোট একটা কোম্পানিতে জব করি, সাথে আমার বন্ধু সাজিদ ও।
অনিতা আমাকে খুব ভালোবাসে অামি যদি অনিতাকে বলি –
__তুমি এখন ঘর ছেড়ে চলে আসো।তাহলে অনিতা চলে আসবে কিন্তু তা আমি চাই না।
আমি চাই তার পড়ালেখার পরে তাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হলো না।
অনিতা সাথে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় তার ভাই দেখে, আমাকে মারবে বলে হুমকি দেয়।
আমি তারপরেও তার ভাইয়ের কথা শুনি নাই, আমি আমার প্রেম চালিয়ে যাইতেছি।
একদিন অনিতার ভাই আমাকে রাস্তা একা পেয়ে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বলে-
__তুই আমার বোনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবি। তোর কারণে আজ আমার বোনকে কিছু বললে সে আত্মহত্যা করবে বলে আমাদের বলে।
এ কথা বলে চলে গেলো সে অনিতার ভাই।
.
“সাজিদ বিকেলবেলা আমাদের বাড়িতে আসে। দেখতেছে আমার মুখ লাল হয়ে আছে।
সাজিদ বুঝতে আর দেরি হয় নাই যে অনিতার ভাই আমাকে মারছে। সাজিদ মোটরসাইকেল নিয়ে অনিতার ভাইকে মারা জন্য যাবে।
আমি সাজিদ কে কোনো রুকুমে থামিয়ে রাখি।আমি সাজিদকে বলি-
__সাজিদ এ সময়ে মারামারি করা ঠিক হবে না।তাছাড়া অনিতার পড়ালেখা এখনও শেষ হয় নাই।
তার পড়ালেখা শেষ হলে আমি অনিতাকে বিয়ে করবো।যেহেতু সে রাজি তাহলে পালিয়ে গিয়ে হলেও বিয়ে করে নিবো।
কিন্তু সে আশা আর পূরণ হয় নাই।
.
“অনিতার পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগে পারিবারিক সমস্যার কারণে আমাকে বিয়ে করতে হয়েছে।
অবশ্যই আমি পরিবারের সবাইকে অনিতার কথা বলি, কিন্তু কেউ রাজি হয় নাই।তারা সবাই বলে ভালোবেসে বিয়ে করলে নাকি সংসারে ঝগড়া হয়।
আজ সে ভুলের জন্য আমার বউ নুসরাত আমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।মেয়েটার মন সত্যি পাথর দিয়ে তৈরি।
কখনো কেউ কে মনের দুঃখের কথা বলে নাই।নিজের কষ্ট বুকে চেপে রেখে হাসিমুখে সংসার করতেছে।
কিন্তু আমি এখন ও অনিতাকে ভালোবাসি, অনিতাও আমাকে ভালোবাসে। কি করে ভুলবে অনিতা আমাকে, সে তো আমাকে মন থেকে ভালোবাসে।
অনিতা আমি বিবাহিত হওয়ার পরেও আমার সাথে আগের মতো করে সম্পর্ক রাখছে।তাই চিন্তা করলাম অনিতাকে বিয়ে করবো।
শহরের ছোট একটা চাকরি নিয়ে শুরু করবো আমাদের ছোট সংসার।অনিতা ও আমাকে বিয়ে করতে রাজি।
.
“বন্ধু সাজিদ এর সাহায্য ছাড়া অনিতাকে বিয়ে করা সম্ভব না। তাই সাজিদকে বিস্তারিত সবকিছু বলি।
সে প্রথমে রাজি ছিলো, কিন্তু রাতে যখন বাজারে যাই সাজিদ আমাকে নিরিবিলি যায়গা নিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।
এ প্রথম আমার বন্ধু আমার কলিজা সাজিদ এর চোখে পানি দেখি আমি।সাজিদ যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না মুখে বলে-
__বন্ধু তোর কাছে আমার তিনটা আবদার আছে।তুই সে আমার আবদার রাখবি নাকি?(সাজিদ)
__হ্যাঁ বন্ধু তোর জন্য আমি সব করতে পারি তুই আমার বন্ধু। কি আবদার বলে পেল বন্ধু(আমি)
সাজিদ কান্না করতে করতে বলে-
***যে মেয়ে তার বাবা,মা,ভাই পরিবারের সবাইকে ছেড়ে, তোর কাছে সারাজিবনের জন্য থাকার জন্য শপথ করছে,
তুই এভাবে অবহেলা করিস না তাকে।
***তুই অনিতাকে এখন বিয়ে করলে সমাজে জানাজানি হলে তোর নামে খারাপ মন্তব্য করবে।
আর আমি তোর বন্ধু হয়ে এমন মন্তব্য শুনে সহ্য করতে পারবো না।তুই অনিতাকে বিয়ে করিস না।
***তুই অনিতাকে যেভাবে ভালোবাসতি ঠিক সেভাবে নুসরাতকে ভালোবাসা দিয়ে অালোকিত করে দে।
.
“সাজিদ যখন কান্না মুখে এ আবদার গুলো করে আমি না রেখে পারি নাই।
কারণ সাজিদ আমার সব আর সে বন্ধুর জন্য আমি এতটুকু করতে পারবো না বুঝি?
হ্যাঁ অবশ্যই পারবো। দেরি না করে ফোন দিলাম অনিতার কাছে-
__হ্যালো অনিতা
__হ্যাঁ বলো?
__অনিতা প্লিজ রাগ করবা না।তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমাকে যেভাবে ভালোবাসতা ঠিক তার মতো করে।
তোমার মা,বাবার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হলে তাকে ভালোবাসো।
অবশ্যই অনিতা প্রথমে রাজি ছিলো না।পরে নুসরাতের ভবিষ্যৎ এর কথা বলাতে অনিতা রাজি হলো।
সে এখন বাবা,মায়ের পছন্দের ছেলেকে জীবনসঙ্গী করবে।
.
“আমি যখন সাজিদ এর আবদার রাখি। সাজিদ আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগে।আমি সাজিদের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলি-
__সাজিদ আর কান্না করিস না।এখন তুই বন্ধু আমাকে বুদ্ধি দেয় নুসরাতের কাছে কিভাবে মাফ চাইবো?
__আরে পাগল একটা গোলাপ ফুল নিয়ে যাহ।আর নুসরাতকে বলবি –
নুসরাত এ ফুলটি তোমার জন্য। দেখবি নুসরাত তোকে জড়িয়ে ধরবে।
__সত্যি সাজিদ?
__হ্যাঁ রে পাগলা।বউরা তার স্বামীর কাছে টাকা পয়সা চায় না। দূর থেকে আসার সময় আলতা, চুড়ি, ফুল নিয়ে গিয়ে হাতে দিলে খুশি হয়ে যায়।
__আচ্ছা ঠিক আছে।যা বন্ধু তুই বাড়িত যাহ আর কান্না করিস না।
__আল্লাহ হাফেজ।
.
“সাজিদের কথা মতো ফুল নিয়ে বাড়িত আসছি।বিয়ের ৫ মাস পরে আজ আমি নুসরাতের সাথে ঠিক মতো কথা বলবো।
মেয়েটা প্রায় সময় রাতে না খেয়ে ঘুমায়। আজ ও মনে হয় না খেয়ে ঘুমাচ্ছে।বাড়িতে এসে খাবার টেবিলে খাবার রেডি করা আছে।
নুসরাত শুয়ে আছে, অামাকে দেখে উঠে বলে-
__আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি তরকারি গরম করে নিয়ে আসি।
__না থাক গরম করা লাগবে না ঠাণ্ডা খেতে পারবো।নুসরাত?
__হ্যাঁ বলেন?
__না, কিছু না।
__ কিছু বলবেন নাকি?
__এ ফুলটি তোমার জন্য।
আমার পাগলা বন্ধু সাজিদ যা বলছে তাই হইছে।
~নুসরাত বুঝতে আর দেরি করে নাই, যে আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করছি।দৌড় দিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
আজ নুসরাত শুধু আমার ভুলের কারণে তার চোখে পানি।নুসরাতে চোখের পানি মূল্য আমি কখনো দিতে পারবো না।
মেয়েটা এতদিন আমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।আমি রাজা না হলেও নুসরাতকে রাণীর মতো করে রাখা আমার দায়িত্ব ছিলো।
কিন্তু আমি তার হতভাগা স্বামী তা করতে পারি নাই।তবে আজ থেকে ঠিকে মহারাণী করে রাখবো আমার নুসরাতকে।
নুসরাতের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলি-
__মাফ করে দাও আর এমন হবে না সত্যি এমন কখনো হবে না।
__এই মাফ চাইতে হবে না। আমি এমনে আজ অনেক খুশি।বাথরুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।আজ আমি নিজের হাতে আপনাকে খাইয়ে দিবো।
__সত্যি খাইয়ে দিবা যে?
__হ্যাঁ অবশ্যই। তাড়াতাড়ি আসেন।
__আচ্ছা জান এখনই আসতেছি।
.
“আমাদের সুখের সংসার এখন।যার মাঝে নাই কোনো অভাব।সুখ আর সুখ আমাদের সংসারে।
নুসরাতের কোলে এখন ছোট কিউট একটা বাচ্চা আছে।আমার বউ নুসরাত আমাদের সন্তানের নাম রাখছে সাজিদ।
.
“সাজিদ এর বন্ধুর জন্য আজ আমার সুখের পরিবার।আর এমন বন্ধু গুলো অনেক এর থাকে।
যারা সুখে দুঃখে পাশে থাকে।বেঁচে থাকুক শতবছর এমন সাজিদ এর মতো বন্ধুরা।