এই কই তুমি?
– অামি তো বাড়িতে।
– জলদি পার্কে অাসো।
– অাসার সময় কি নিয়ে অাসব।10টাকার বাদাম নিয়ে অাসি।
– ফাইজলামি পাইছ! ফকির নাকি তুমি! কোণ অাইসক্রিম নিয়ে অাসো।
– ওক্কে।
অত:পর পার্কে গেলাম।
– কি ব্যাপার অাসতে এতক্ষন লাগে?
– রাস্তায় জ্যাম ছিল।
– জ্যাম ছিল তো কি হয়েছে।গাড়ির ছাদে উঠে এক গাড়ি থেকে অারেক গাড়িতে লাফাই লাফাই অাসতে পারনি?
– ভুল হয়ে গেছে।কান ধরলাম।
– ওকে অাইসক্রিম দাও।
– নাও….
অাইসক্রিম খেতে খেতে দুজন কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।
.
.
রাত্রে বন্ধুদের সাথে অাড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
সবাই নাকি শুক্রবারে পিকনিকে যাবে মানে অার 3দিন পর।কিন্তু টাকা পামু কোথায়!
দেখি ভাইয়া পড়ার টেবিলে বসে রইছে।
– ভাইয়া ভাইয়া শোন, সবাই মিলে পিকনিকে যাব।অাব্বুর কাছে টাকা চাইলাম বলল যাওয়া লাগবেনা
– কত টাকা)
– এইতো মাত্র 800।
– কবে লাগবে?
– এইতো তিনদিন পর।
– ওকে, এই তিনদিনে অামার সব কাপড় গুলো ধুয়ে ইস্ত্রি করবি কেমন?
অার রুমটাও তো অপরিষ্কার হয়ে অাছে।পরিষ্কার হয়ে অাছে, পরিষ্কার করে টাকা নিস।
– ভাইয়া সত্যি।
– হ্যাঁ সত্যি।
.
পরদিন সকালে…..
– এই বাজারে যা (অাম্মু)
– ঘুম থেকে উঠতে তো দাও।
– উঠে তারাতারি বাজারে যা।এহ নবাব! এতক্ষন ধরে ঘুমাতে হয়।বাজার থেকে অাইসাই পড়তে বসবি।
– অামার কষ্ট হয়না?
– উঠবি না পানি ঢেলে দিব?
– উঠতেছি উঠতেছি।
অাহারে! অারামের ঘুমটা হারাম হয়ে গেল।
কেন যে ছোট ছেলে হলাম! সবাই কাজ দিতেই থাকে।
বাজার করে অাসলাম।
অাবার উনার ফোন–
.
– এই কই তুমি?
– কই থাকার কথা!!!!
– রাগ দেখাচ্ছ কেন! রিলেশনই রাখবনা ব্রেকঅাপ।
– অারে না না মজা করছি।
– সকালে খাইছ?
– না খাইনি।
– ওকে অাজ অামি নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দিব।
– সত্যি!!!! ( খুশিতে অামি শেষ)
– কোন রেষ্টুরেন্টে খাব অামরা?
– কার রেষ্টুরেন্টে।
– এটা অাবার কোথায়? কি যে অাজব অাজব একেকটা রেষ্টুরেন্টের নাম বলনা।জীবনে শুনিই নি খাওয়া তো দূরের কথা।
– অারে অামাদের গাড়িতে।গাড়িই তো কার রেষ্টুরেন্ট।
– তোমাদের গাড়ি পাইলা কোথায়…… ও মানে ওই ভাঙা C.N.G. টা?
– কি বললা!! রিলেশনই রাখবনা ব্রেকঅাপ।
– অারে না না মজা করছি।অাচ্ছা বল কখন অাসব? তোমার হাতের রান্না খাব।কি সৌভাগ্য!!
– অামার হাতের রান্না কে বলছে?
– তুমিই না বললা??
– অারে বোকা অামি বলছি।অামি নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দিব।অামার রান্নার কথা তো বলিনি।
– তারমানে?
– হোটেল থেকে দুইটা বিরিয়ানির প্যাকেট কিনে নিয়ে অাসো।
– ও মাগো!! কি কও!!অাসলে অামার না মাথাটা ঝিমঝিম করছে অারেকদিন খাব হ্যাঁ??
– চুপ অাজকেই অাসো।এমনভাব করছে যেন, অামি মনেহয় তোমাকে কখনো রান্না করে খাইয়ে দেইইনি?
– কে বলছে দাওনি! দিছ তো।একবার শুটকিবর্তা দিয়ে খাইয়ে দিছিলা।
– কি বললা শুটকিবর্তা! ডিম চোখে পড়েনি!
– সেটা তো অামিই বাসা থেকে সিদ্ধ করে নিয়ে গেছিলাম।তুমি জাস্ট খাইয়ে দিছ।
– অাচ্ছা বাদ দাও তুমি তারাতারি অাসো।
.
কি অার করার! 2প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে চলে গেলাম।ওর কার রেষ্টুরেন্টে মানে ওদের ভাঙা সিএনজিতে।
ভয় করে।না জানি কখন সিট ভেঙে পড়ে যাই।
.
খাওয়ার পর….
– বিয়ে নিয়ে কিছুু ভাবছ?
– কি ভাবব?
– অামায় বিয়ে করবেনা?
– হ্যাঁ করব তো। তোমার মতই একটা কিপটা বউ চাই তাহলেই অামার সংসারে উন্নতি হবে।
– কি বললা!! রিলেশনই রাখবনা ব্রেকঅাপ।
– সত্যি মজা করে বলছি।অার এটা তো তোমার একটা ভাল গুণ।
– বল কবে বিয়ে করবা?
– অাগে তো অামার বড় ভাইয়া বিয়ে করুক।
– কবে বিয়ে করবেন তিনি?
– এইতো…2-3বছরের মাঝেই।
– না না এত সময় দেয়া যাবেনা। অামার বাড়িতে এখনি বিয়ের কথাবার্তা চলছে।
– তাহলে অার কি করার?
– পালিয়ে নিয়ে যাবে অামাকে?
– না ….তুমি এখনি অামায় ফকির বল।বিয়ের পর যখন তোমায় দামি দামি গিফট দিতে পারবনা।
তখন অামায় ছেড়ে যাবা।তারচেয়ে ভাল তুমি তোমার বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে নাও।
– না প্লিজ পালিয়ে নিয়ে যাও।
– বলা যতটা সহজ।করা ততটা সহজ নয়।
দেখ অামার ফ্যামিলির সব দায়িত্ব অামার উপর।
সকালে ময়লার বালতি ড্রেনে ফেলা থেকে শুরু করে।সব কাজ অামাকেই করতে হয়।অামি পালিয়ে গেলে এসব কে করবে?
অার অামি অামার ফ্যামিলিকে কষ্ট দিতে চাইনা।
– কোন সলিউশন নেই! অামাদের এত দিনের সব স্বপ্ন কি তাহলে ভেঙে যাবে!
– তুমি বিয়ে করে নাও। এটাই বেটার হবে।
অামার কথা শুনে সে কেদে কেদে চলে গেল।
.
.
রাত্রে ফোন…..
ভাবছিলাম রিসিভ করবনা।তারপরও রিসিভ করলাম।
– হ্যালো?
– হ্যাঁ বল
– অাগামি 27তারিখ অামার বিয়ে।মানে অার 4দিন পর।
– অাচ্ছা।
– কি দিবে অামায়?
– তোমাকে দেবার মত তো কিছুই অামার নেই।তারপরও বল তুমি কি চাও?
– একটা দিন চাই তোমার কাছে।
– মানে?
– অামরা অাগে যেভাবে দিনগুলো কাটাইতাম।ঠিক সেভাবেই অারেকটা দিন কাটাব।
– ওহহ! অারেকটা অাইসক্রিম খাবা??
– কি বললা তুমি!! অামাকে কি এখন তোমার ছোটলোক মনেহয়!
– শুধু এখন না সবসময় তোমাকে কিপটা মনে হয়েছে।
– অাচ্ছা তুমি অাসবে কি অাসবেনা ক্লিয়ার করে বলে দাও।
– অাচ্ছা শুধু একদিনই।
– সম্ভব হলে অামার দেয়া লাল শার্ট টা পড়ে এসো।
– অারে ওটা একবার ধুইছিলাম।পড়ে রং চলে গেছে, ডিসকালার হয়ে গেছে।
– তবুও পারলে পড়ে এসো।
– দেখি।
.
.
পরদিন গেলাম দেখা করতে।
অামি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ও অাসল।
– কি ব্যাপার এত দেরি হল যে?
– রাস্তায় জ্যাম ছিল।অামার অাইসক্রিম এনেছো?
– এত খাওয়া খাওয়া কর কেন! অাসছ একটু রেস্ট নাও।
– কি!!
– কিছুনা,, অাচ্ছা অামরা কি এখানেই দাড়িয়ে থাকব? নাকি হাটব?
– চল হাটি।
– থ্যাংকস।
– কেন?
– অামার দেয়া শার্টটা পড়ে অাসার জন্য।
– হুহ।রাস্তায় পরিচিত কয়েকজন বলছিল।কিরে এই পুরান কাপড় পড়ছছ।অাবার প্যান্টের সাথে ইন ও করসছ!!
…..
অামরা কিছুক্ষণ ঘুরলাম।
অত: পর ফেরার পালা।
– শোন তোমার জন্য কিছু গিফট এনেছি।
– দাও?
– এই নাও ঘড়ি।ভাল লাগলে হাতে দিয়।
– ঘড়ি ঠিক নাকি নষ্ট?
– চুপ। অার নাও এটা পাওয়ার ব্যাংক।তোমার ফ্যামিলি তোমায় ফোন দিয়ে না পেলে তো টেনশন করবে।
– অারে অামার নোকিয়া 1200 অাছেনা? কখনোই চার্জ শেষ হবেনা একদিনে। পারলে একটা চিকনপিনের চার্জার কিনা দাও।
– এখন অার সম্ভব নয়।অার নাও এটা ডায়েরি। অামার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করলে লিখে রাখবা।
একদিন হুট করেই চেয়ে বসব।অার তোমার সব জমানো কথা গুলো পড়ব।
– এতদিন তোমার পিছে যা যা খরচ করছি।যদি এটা লিখে রাখি? সব টাকা ফেরত দিবানা?
– অামার এখন যেতে হবে।
– হ্যাঁ মাথা নাড়িয়ে।
– শোন…নিজের যত্ন নিবা।ভাল থাকবা।সবার সাথে ভাল থাকবা।অামি তাহলে অাসি?
– প্লিজ অামি একটু দূরে যাই।
না হলে এই C.N.G ষ্টার্ট দিলে যে সাউন্ড টা হয়।বোম মারলেও এরকম সাউন্ড হবেনা মনেহয়।
অার এটা অামার সহ্য হয়না।অার তুমিও ভাল থেকো।
.
.
.
বাসায় ফিরছি।অার মনে মনে ভাবছি।অামি কাদব কেন!!
অামাদের মত ছোট ছেলেদের লুকিয়ে লুকিয়ে কাদতে হয়না।
কাদতে হয় সবার সামনে….যাতে সবাই দেখে না পাওয়া জিনিস গুলো সহজেই কিনে দেয়…………..( সমাপ্ত)