সাহসিক প্রেম

সাহসিক প্রেম

আবিদ ভার্সিটি পড়ুয়া একজন মেধাবী ছাত্র। মাস্টার্স দিচ্ছে। আজ আবিদের মনটা খুব খারাপ। তাই রাতে কিছু নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ে ছাদে এসে পান করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল। ভোরবেলায় সূর্যের আলো পড়ায় খুব ভোরেই ঘুম ভেংগে গেল। উঠে এক দু পা সামনে দিতেই অবাক হয়ে গেল। একটা মেয়ে ছাদের এক পাশে এলোমেলো অবস্থায় শুয়ে আছে। আবিদ নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। ছাদে মেয়ে আসলো কিভাবে? আবিদ ভাবলো হয়তো নেশার ঘোরটা এখনো যায়নি। তাই টাংকির পানি দিয়ে ভালোমতো মুখ ধুয়ে নিল। কিন্তু নাহ যা দেখছে তা সত্যই। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে মারধর করে রেখে গেছে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? গেইট তো রাত ১২টার পর বন্ধ থাকে। তবে কি তার আগেই ……? আবিদ সামনে গিয়ে মেয়েটাকে ডাক দিল। কিন্তু সাড়া পেল না। আবিদ পানি নিয়ে মেয়েটির মুখের উপর ছিটালো।

মুখের উপর পানি পড়ায় মেয়েটি আস্তে আস্তে নড়চড় করতে শুরু করল। এক পর্যায়ে ছোট করে চোখ দুটো খুলল।
~ আবিদ! কে এই মেয়েটা? (বাড়িওয়ালা)
> বাঁচান আমাকে এই শয়তানটার হাত থেকে। (মেয়েটা)
আবিদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।

 

অতঃপর
আবিদ এখন তার বোন, দুলাভাই, বাড়িওয়ালার সামনে অপরাধীর মত বসে আছে। বাড়ির চতুর্থ তলায় আবিদ তার বোন ও দুলাভাইয়ের সাথে থাকে। সেই অজ্ঞাত মেয়েটির কথা অনুযায়ী, “আবিদ গভীর রাতে তাকে হাত, পা, মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে আসে। প্রচুর মারধর ও নির্যাতন করে। আবিদ অত্যন্ত নেশাগ্রস্ত ছিল।” মেয়েটির কথা বিশ্বাসযোগ্য কারণ ছাদে নেশার দ্রব্যসামগ্রী পাওয়া গেছে এবং আবিদের শরীর থেকেও নেশার গন্ধ পাওয়া গিয়েছিল। সবকিছু শুনে আবিদের বোন কান্না করতে করতে বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম। তার ভাই এমন একটি কাজ করতে পারে?

বাড়িওয়ালা পুলিশে খবর দিতে চাইলো। কিন্তু আবিদের দুলাভাই ব্যাপারটা নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে সিদ্ধান্ত নিল যে আবিদ মেয়েটিকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিবে।

মেয়েটির সাথে কথা বলে জানতে পারল মেয়েটির নাম মৌ এবং সে এতিম। গ্রাম থেকে শহরে এসেছে চাকরির খোঁজে। মেয়েটির অভিভাবকের দায়িত্ব নিল বাড়িওয়ালা। অতঃপর বিয়ে হয়ে গেল। যাবতীয় খরচ বাড়িওয়ালা ও দুলাভাই দিয়েছে।

= দেখ আবিদ, যা হবার হয়েছে। ভুলটা সংশোধন করার সুযোগ পেয়েছ যা সবাই পায় না। আর মনে রেখ তোমারও একটা বোন আছে। সুতরাং মৌকে কষ্ট দিওনা। (দুলাভাই)
~ দেখ ভাই, মেয়েটাকে আপন করে নে। তাহলেই হয়তো আল্লাহ তোর পাপটা ক্ষমা করবে। (বোন)
~ মনে রেখ মেয়েটার অভিভাবকের দায়িত্ব আমি নিয়েছি। যদি কষ্ট দাও তবে পরিণাম ভাল হবে না। (বাড়িওয়ালা)

এভাবেই সবাই আবিদকে উপদেশ-সর্তক বার্তা দিল। কিছুক্ষণ পর দুলাভাই আবিদকে বাসরঘরে পাঠালো। আবিদের মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, “কি হয়েছিল সেই রাতে?” “কে এই মৌ?”

আবিদ রুমে ঢুকার পর মৌ এসে পা ধরে সালাম করতে লাগল কিন্তু আবিদ সরে গেল।
> আপনি কি আমাকে মেনে নিতে পারেননি?
– একটু সময় তো লাগবেই।
> কেন লাগবে? আমি মেয়ে হয়ে সব মেনে নিতে পারলাম আর আপনি পারছেন না? (কিছুটা রাগ)
– আমার লাইফটা মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে গেল আর আমি এটা সহজেই মেনে নিব?
> তো আমার লাইফটা পরিবর্তন হয়নি?
– প্লিজ আস্তে কথা বলুন। বাইরে আপু-দুলাভাই আছে।
> তাতে আমার কি? আমি আমার সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার চাই ব্যস।
– অদ্ভুত মেয়ে তো আপনি!
> এখনো ভালমত চিনলেনই বা কি? আমি যা চাই তা পেয়েই শান্ত হই।
– প্লিজ আপনি ঘুমান।
> আর আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটিং করবেন?
– আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।
> আগামীকালই আপনার সকল বন্ধুবান্ধবদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিবেন। গুড নাইট।

মৌ শুয়ে পড়ল। আবিদের মনের মধ্যে থাকা একটা প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেছে। তা হল এই মেয়ে গ্রামের বোকা টাইপের মেয়ে নয়। বাকিদের থেকে ভিন্ন কিংবা গ্রামের মেয়েই না। কিছু একটা রহস্য তো আছেই।

সকালে মৌয়ের ডাকে আবিদের ঘুম ভাংলো।
> এই যে উঠো। এত ঘুমানো ভাল না। শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
আবিদের চোখ কপালে। আপনি থেকে তুমি? তাও আবার অনুমতি ছাড়াই? আবিদ উঠে পড়লো। মৌ পাকঘরে এল।
~ আরে তুমি এখানে কেন? তুমি গিয়ে টিভি দেখ। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
> একটু সাহায্য তো করতে পারি।
অতঃপর দুজনে মিলে নাস্তা বানালো।
~ আসলে আমি খুব লজ্জিত। আমার ভাই এমন একটা কাজ করবে আমি ভাবতেই পারিনি।
> অতীত বাদ দেয়াই ভাল। উনি তো এখন আমার স্বামী। উনার ভুলের কথা বললে আমারই খারাপ লাগে।
~ তুমি অনেক মহান।
> আপনাদের থেকে নয়। আপনারা যদি মেনে না নিতেন তবে মৃত্যু ছাড়া উপায় থাকতো না।
~ বাদ দাও এসব। চল নাস্তা সার্ভ করি।

 

আবিদ ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য, দুলাভাই অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে এল নাস্তার টেবিলে এলো।

~ আবিদ।
– হ্যা আপু।

~~ মৌকেও তোর সাথে নিয়ে যা। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিস।

আবিদ বুঝল যে কথাটা মৌ বলেছে। আবিদ তার বোনকে না করে না। তাই নাস্তা শেষে মৌকে নিয়ে বেরিয়ে রিক্সায় উঠলো। সময়মতো ভার্সিটিতে চলে এল। বন্ধুরা অনেকেই জানে যে আবিদ হঠাৎ বিয়ে করেছে। কিন্তু আসল ঘটনাটা ইয়াসিন (ক্লোজ) ব্যতীত আর কেউই জানে না। সবাই খুব ভালমতই মৌয়ের সাথে কথা বলল। ঘন্টাখানেক পর তারা বাসায় ফিরে এল।

= মৌয়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করা উচিত তাই না? (দুলাভাই)
~~ হ্যাঁ ওর তো তেমন কিছু নেই। (বোন)
> না না আমার তেমন কিছু লাগবে না।
= তুমি বললেই হল? আমরা বুঝি না? আবিদ এই নে টাকা কেনাকাটা করে আয়।

বাধ্য হয়ে আবিদ মৌকে নিয়ে কেনাকাটা করতে বের হল।
> তুমি কিছু কিনবে না?
– নাহ।
> চল না ফুসকা খাই।
– আচ্ছা।
> এই তোমার মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই?
– না নেই।
> Irritating. (আস্তে করে বলল)
– কি বললে?
> কই কিছুই তো না।
অতঃপর ফুসকা খেয়ে কেনাকাটা করে বাসায় ফিরলো।

এক সকালে মৌ কাপড় শুকানোর জন্য ছাদে গেছে। তখন আবিদ তার বোনের কাছে এল।
– এদিকে আয় কিছু কথা আছে।
~ বল।
– দেখ বিশ্বাস কর আমি সেদিন কোনো উল্টাপাল্টা কাজ করিনি।
~ দেখ অতীত ভুলে যা।

– আপু বিলিভ মি। আমি সেদিন নেশা করেছি ঠিক তবে ছাদে এসে। কিন্তু মৌয়ের কথা অনুযায়ী আমি তাকে বাইরে থেকেই তুলে এনেছি।

আবিদের বোন একটা থাপ্পড় মেরে বলল

~ একদম চুপ। ওরকম একটা জঘন্য কাজ করার আগে একবারও কি চিন্তা আসেনি তোর ঘরেও একটা বোন আছে? যা হবার হয়েছে। মৌকে আপন করে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত্ব কর। (চলে গেল)

আবিদ চুপচাপ বসে রইলো। আবিদ ১০০% শিউর যে সেদিন সে নেশা ছাদে বসে করেছিল। কিন্তু মৌ বলেছিল তাকে বাহির থেকেই ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। এখানেই আবিদের একটা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছিল। যা এতদিন পর তার বোনকে জানালো। কারণ তখনই জানালে বিশ্বাসই করতো না। যদিও এখনো করেনি তবুও আশা ছিল যে সময়ের সাথে রাগটা কমলে যুক্তি বুঝার চেষ্টা করবে।

এদিকে মৌ নিজের অধিকার জোরপূর্বক আদায় করে নিতে লাগল। আবিদের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে লাগল। কোনো একটা কথা না শুনলেই আপু। তাই বাধ্য হয়ে আবিদ মৌয়ের কথামতো চলে। তবে এতদিনে আবিদ একটা জিনিস বুঝেছে যে মৌ বড্ড জেদী মেয়ে। যা চায় তা যেকোনো ভাবেই আদায় করে নেয়। কিছু মাস পর আবিদ একটা জব পেল।

আবিদ অফিসের কাজে ব্যস্ত তখনই মৌয়ের ফোন।
– হুম বল।
> কখন ফিরবে?
– এইতো কিছুক্ষণ পর।
> হুম দেখেশুনে এসো।
– আচ্ছা।
> লাভ ইউ।
– আচ্ছা রাখি।
> তুমিও লাভ ইউ বল।
– হুম লাভ ইউ।
টুট টুট।
এভাবেই মৌ তার ইচ্ছেগুলো আদায় করে নেয়।

মৌ সবসময়ই আবিদের খোঁজখবর রাখে। আবিদের ভাবভঙ্গি দেখে মৌ বুঝতে পারল যে আবিদও তাকে ভালবাসতে শুরু করেছে। আজ আবিদের সেই ক্লোজ বন্ধু ইয়াসিনের জন্মদিন। আবিদে-মৌয়ের বিয়ের আসল ঘটনা বন্ধু মহলের মধ্যে ইয়াসিনই জানে। আবিদ মৌকে নিয়ে অনুষ্ঠানে এলো। ঘন্টাখানেক থাকার পর আবিদ ইয়াসিন থেকে বিদায় নিতে এলো।

– ওকে দোস্ত আসি।

ইয়াসিনঃ তোদেরকে দেখলে মনেই হয় না একটা দুর্ঘটনায় তোদের বিয়ে হয়েছে। মনে হয় মৌ তোকে ভীষণ ভালবাসে যেন অনেক বছরের প্রেম ছিল তোদের মাঝে।

অতঃপর আবিদ মৌকে নিয়ে চলে এলো। ইয়াসিনের কথাটা আবিদের মাথা নতুন কিছু সৃষ্টি করলো। আসলেই তো, মৌ বিয়েটা অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছিল। আর মৌকে দেখে কখনোই মনে হয়নি যে সে আবিদকে একটুও ঘৃণা করে। কিন্তু মৌয়ের কথা অনুযায়ী তার সাথে যা হয়েছিল তাতে যেকোনো মেয়ে শুরুতে হলেও ঘৃণা করতো। তবে … আবিদের মাথা ঘুরে যায় এসব কথা ভাবলে।

মৌ পাশের বাসার এক মহিলার সাথে কেনাকাটা করতে গিয়েছে। আজ আবিদ হঠাৎ করেই বিকালে চলে এলো।

– মৌ কোথায় আপু?
~~ শপিংয়ে গেছে।
– একটা কথা বলি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করিস ঠিক আছে?
~~ বল।
– মৌয়ের বাড়ি কোথায়?
~~ কোন গ্রামে যেন কিন্তু কেন?
– আচ্ছা ওর মুখ থেকে কখনো গ্রাম্য ভাষা শুনেছিস?
~~ হঠাৎ এসব বলার মানে কি?
– হয়তো তোর কাছে কোনো মানে নেই। কিন্তু এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্য।
~~ কিসের রহস্য?
– “মৌ কে” এই রহস্য।
~~ দেখ মেয়েটা এতিম। গ্রামে বাবা মা কেউই নেই। এখন আমরাই ওর সব।
– দেখ আমি মৌকে ভালবাসি ঠিকই কিন্তু আমার জীবনে মৌয়ের আগমন একটা রহস্যে আছে।
~~ কিসের এত রহস্য?

– শুন আপু, আমি সেই রাতে নেশা ছাদে বসে করেছি। কিন্তু মৌ বলেছিল আমি তাকে বাইরে থেকেই ধরে এনেছিলাম। এখানেই সব রহস্য।

~~ তুই নেশাগ্রস্ত ছিলি তাই সব মনে নেই।

– না আপু নেশার আগের সবকিছুই ঠিকঠাক মনে আছে। আমি নেশা ছাদে এসেই করেছি। আর তুই মৌয়ের ব্যবহার লক্ষ্য করেছিস?

~~ হ্যাঁ। ওর ব্যবহারে খারাপ কিছু নেই। একদম ভাল মেয়ে।

– এখানেই আরেকটা রহস্য। ওর কথাবার্তা চালচলন একটা শিক্ষিত মেয়ের মত। কিন্তু ও বলেছে ও গ্রামের এতিম মেয়ে। পড়ালেখা করেনি, এমনকি নিজের গ্রামের নামটাও জানে না। আর আমি যতটুকু বুঝেছি মৌ অত্যন্ত জেদী মেয়ে। যা চায় তা যেকোনো প্রকারেই হোক অর্জন করে শান্ত হয়।

আবিদের বোন এবার একটু চিন্তা করতে লাগল। আসলেই তো, মৌয়ের ব্যবহার দেখে কেউ বলতে পারবে না যে মৌ অশিক্ষিত। তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখল মৌ এসেছে।

> আরে তুমি আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?
– আজ কাজ নেই তাই।
> তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি নাস্তা দিচ্ছি।
– আচ্ছা।

অতঃপর আবিদ তার বোনের সাথে মিলে একটা প্ল্যান করল। প্ল্যান অনুযায়ী এক দুপুরে আবিদের বোন কাজের নাম দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো। ঘরে শুধুমাত্র মৌ। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখল একজন লোক এসেছে।

> জ্বি?
== এটা কি আবিদ সাহেবের বাসা?
> জ্বি। কিন্তু উনি বাসায় নেই অফিসে।
== আমি ইউসিবি ব্যাংক থেকে এসেছি উনার কিছু তথ্য ভেরিফাই করার জন্য।
> আপনি অপেক্ষা করুন আমি ওকে জিজ্ঞেস করে আসি।
== জ্বি অবশ্যই।

মৌ আবিদকে ফোন করলো।
> ইউসিবি ব্যাংক থেকে একজন লোক এসেছে কি যেন ভেরিফাই করবে।
– আপুকে বল।
> ঘরে নেই।
– আচ্ছা তুমি উনাকে একটু বসাও। আমি আপুকে কল দিয়ে বলছি।
> আচ্ছা।

মৌ এসে লোকটাকে বসতে বলল।
= আবিদ সাহেব ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। তাই নমিনির সাক্ষর লাগবে।
> কোথায় দিতে হবে?
= আপনি … কে?
> আমি ওর স্ত্রী।
= তো সিগনেচারটা আপনিই করে দিন।
> জ্বি। কোথায় করতে হবে?

লোকটা মৌয়ের দিকে কিছু কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এই নিন। এখানে একটা এখানে আরেকটা …………”

মৌ কিছুক্ষণ কাগজের তাকিয়ে রইলো। তারপর কাগজটা লোকটার মুখে ছুড়ে মেরে চিত্কার দিয়ে উঠলো। পাশের বাসার মহিলা, পুরুষ চলে এলো। কিন্তু কিছু বলার আগেই আবিদের বোন এসে পড়লো। আবিদের বোন এসে বাকিদের চলে চলে যেতে বলল।

~~ কি হইছে মৌ?
> না জানার ভান করিয়েন না।
~ কি হইছে বল তো।
> লোকটার হাতে ডিভোর্স পেপার। আর সেখানে আবিদের সাইন কিভাবে? এটা আপনাদের প্ল্যান তাই না?
– তুমি কিভাবে বুঝলে যে ওটা ডিভোর্স পেপার?
> আমি LAW এর স্টুডেন্ট তাই আমি জানি।
– তুমি তো বলেছিলে তুমি পড়ালেখা করনি।
> ইয়ে মানে …
– ধরা যেহেতু খেয়েই গেছ। সুতরাং সব বলে দাও।
> কি …… সব বলব! (তোতলিয়ে বলল)
– কে তুমি? কি হয়েছিল সেই রাতে?
> এতদিনের সংসারে তুমি আমাকে একটুও ভালবাসনি?
– ভালবাসি তবে রহস্যটা জানতে চাই।

মৌ বসে পড়লো। আবিদের বোন মৌয়ের কাছে এসে বলল

~ তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি সত্য বলতে পার। তোমার সংসারের গ্যারান্টি আমি নিচ্ছি।
মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল

> আমি আবিদকে প্রথম দেখেছিলাম হাসপাতালে। রোড এক্সিডেন্ট হওয়া কিছু মানুষের জন্য আবিদ দৌড়াদৌড়ি করছিল। সেই মানুষগুলোর জন্য আবিদের বেদনা দেখেই আবিদের প্রেমে পড়েছিলাম। কিন্তু আমার মত এতিমকে কেউ মেনে নেয় না। কিন্তু মন থেকে আবিদকে ভুলতে পারছিলাম না। তাই আমি আবিদকে ফলো করতে লাগলাম। ওর পুরো বায়োডাটা বের করলাম। জানলাম যে আবিদের আপন বলতে আপনারাই। তারপর একদিন এক বন্ধুর মাধ্যমে জানলাম আবিদ কিছু নেশা দ্রব্য কিনেছে। সেদিন সারাদিন আমি আবিদকে ফলো করেছি। আবিদকে মদের বোতল নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দেখে আমি শিউর ছিলাম আবিদ মদের বোতল নিয়ে বাসায় যাবে না। তাই চুপচাপ পিছু করলাম। দেখলাম আবিদ ছাদে এসে মদ খাচ্ছে। তখনই বাকিটা প্ল্যান করেছিলাম।

কথাগুলো শুনার পর আবিদ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। মৌ আবিদের হাত পা ধরল তবুও আবিদ থামল না চলে গেল। মৌও পিচু পিছু যেতে চাইলো কিন্তু আবিদের বোন ধরে ফেলল।

~ চিন্তা কর না। ও আবার ফিরে আসবে। সবই তো এখানে।
মৌ কান্না করতে করতে বলল
– আমি আবিদকে ছাড়া বাঁচবো না।
~~ আহা কান্না থামাও। কিছু হবে না।

দুপুর পেরিয়ে, বিকাল, বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা। তবুও আবিদের কোনো খবর নেই। ফোনটাও অফ। মৌ কেদে কেদে অস্থির। যখনই কলিংবেল বেজে উঠে মৌ দৌড়ে গিয়ে খুলে কিন্তু বারবারই নিরাশ হয়। রাত বাজে ৯টা কলিংবেল বেজে উঠলো। মৌ দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল। দেখল আবিদের দুলাভাই এসেছে। মৌ হতাশ হয়ে চলে আসতে লাগল তখনই আবিদের কন্ঠ শুনলো। মৌ ঘুরে দেখল আবিদ এসেছে। মৌ আবিদের কাছে যেতেই লাগল কিন্তু আবিদ মৌকে এড়িয়ে চলে গেল। মৌ ডিনার দিল। আবিদ চুপচাপ ডিনার করতে লাগল।

> আরেকটু ভাত দেই?
– (চুপ)
> তরকারি দেই?
– (চুপ)

আবিদ রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর মৌ রুমে এসে দেখল আবিদ ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই মৌও ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আবিদের ডাকে উঠে পড়লো। ঘুমকাতুর কণ্ঠে মৌ বলল

> কিছু লাগবে?

– বারান্দায় আসো। কিছু কথা আছে।

আবিদ বারান্দায় চলে এলো। মৌও আবিদের পিছু পিছু চলে এলো। আবিদ চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। মৌ বলল
> দেখ আমি আজীবন তোমার পায়ের কাছে পরে থাকবো। তুমি শুধু আমাকে একটু ভালবাসা দিও।

– যদি একটু না দেই?
> তবুও পরে থাকব।
– যদি পুরো ভালবাসাই দেই তাহলে?

কথাটা বলে আবিদ মৌয়ের দিকে তাকালো। দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে দিবে।
– এই একদম কাদবে না।
> তুমি আমাকে মেনে নিয়েছ?

– এমন ভালবাসা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। তুমি আমাকে কতটা ভালবাস তা আমি বুঝে গেছি। এই ভালবাসা উপেক্ষা করলে আজীবন পস্তাতে হবে।

মৌ কেঁদে উঠলো। আবিদ মৌকে বাহু বন্ধী করে বলল
– এই পাগলী কাঁদেনা। তাহলে ভাববো আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।
মৌ চোখের পানি মুখে বলল
> আজ আমি অনেক খুশি।

– আমিও। কারণ আমি জানতে পেরেছি আমাকে একজন তার জীবন থেকেও বেশি ভালবাসে। আর শুন তোমার স্থানে পায়ে নয় আমার হৃদ মাঝারে।

মৌয়ের চোখ দিয়ে অঝোর বেগে পানি পড়তে লাগল। আবিদ মৌকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। দুজন মিলে চাঁদ দেখছে। আজ তাদের কাছে মনে হচ্ছে চাঁদ তাদের জন্যই হাসতেছে। দুজনে একটা নতুন পথে পা বাড়িয়েছে।
সব ভালবাসার পাগলীদের উৎসর্গ করলাম

********************************************সমাপ্ত***************************************

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত