সমস্ত বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি রুমের দরজা, প্রতিটি রুমের জানালা, সিড়ি, আমার পিয়ানো, সব কিছু। সব কিছু লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়ির সবাই কাজে খুব ব্যস্ত। সবাই বাইরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। আর আমি? আমি তো আমার রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছি। চোখে কাজল দিচ্ছি। কি ভাবছেন? আমি বিয়েতে আমন্ত্রিত কোনো অতিথি? না না। আমি কোনো অতিথি নই। আর এই বিয়েটা আমার কোনো ভাই বা বোনের ও নয়। এই বিয়েটা আমার। এটাই ভাবছেন তাই না? এই মেয়েটি পাগল। পাগল না হলে কেউ নিজের বিয়েতে নিজেই সাজে??? আরে না না। আমি কোনো পাগলও নই। আমাকে সাজিয়েছে অন্যরা ঠিক। শুধু
কাজলটা আমি নিজে পড়ছিলাম। আসলে আমার হবু বর মানে কিছুক্ষণ পর যিনি হবু শব্দটি বাদ দিয়ে আমার বর হবেন উনার ইচ্ছা আমি যেন নিজেই কাজলটা পড়ি। এই তো!! কাজল পড়া শেষ হয়েছে। লাল বেনারশি, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, হাতে কাচের চুড়ি, পায়ে নূপুর, আর গা ভর্তি গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুলের গহনা। আশ্চর্য হচ্ছেন? এ কেমন বিয়ের সাজ? এই সবকিছু উনার পছন্দ। উনি মানে ফাহিম। আমার হবু বর। যার সাথে কিছুক্ষণ পর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবো। আসলে ফাহিমের ইচ্ছা আমাদের বিয়েতে আমি যেন অন্য রকম সাজি। ফাহিম বলে ফুল
পবিত্র। একটা সম্পর্ক অবশ্যই পবিত্রতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা উচিত। তাই সে চায় বিয়ের দিন আমাকে যেন ফুলের গহনা দিয়ে সাজানো হয়। কাচের চুড়ির ঝন ঝন শব্দে নাকি মেয়েদের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। ভাবছেন ছেলেটি নিশ্চয়ই কিপটা। তাই না? জ্বি না। ফাহিম মোটেনা। ফাহিম মোটেও সে রকম ছেলে নয়। সে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভালোবাসে। তাই তো আমাকে পার্লারে নয় ঘরে সাজানো হলো। উফ!! পায়ে আলতা তো পড়লামই না। ওহ আলতা তো ফাহিম পড়িয়ে দিবে বলেছিল। সে চায় আমি প্রথম পায়ে আলতা তার হাতেই পড়ি। অবশ্য এর আগে কখনো আলতা পড়ি নি আমি। এই প্রথম পড়বো। তাও ফাহিমের হাতে। আমার ভালোবাসার মানুষটির হাতে। হ্যা ফাহিমকে আমি ভালোবাসি। ফাহিম সাথে আমার প্রথম দেখা ভার্সিটিতে।
সেদিন ভার্সিটিতে আমার প্রথম দিন ছিল। সকাল থেকেই প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। ভার্সিটির ক্যাম্পাসের সামনে রিকশা থেকে নেমে এক প্রকার দৌড়েই বারান্দায় দাঁড়াই। বৃষ্টিতে আমি প্রায় ভিজেই গিয়েছিলাম। চুল থেকে ক্লিপ খুলে ভেজা চুল ঝাড়ছি। হঠাৎই কোনো ছেলের কন্ঠ কানে ভেসে আসে।
“এই যে মিস, আপনি চুল ঝাড়ছেন নাকি ভেজা কাপড় ঝাড়ছেন?” পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
— জ্বি!!! আমাকে বলছেন?
— আপনি ছাড়া কেউ আর আছে?
— জ্বি বলুন।
— আপনার চুল ঝাড়ার কথা বলছিলাম। আপনি চুল ঝাড়ছেন? নাকি কাপড় ঝাড়ছেন?
— কেন? কি হয়েছে?
— কি হয়েছে মানে? দু দুটো চোখ লাগিয়েছেন। তাও দেখতে পাচ্ছেন না?
— আশ্চর্য!!! আপনি কি ঠিক করে বলবেন আপনার সমস্যা কি?
— সমস্যা আমার নয়। সমস্যা তো আপনার মিস চশমিস। দু দুটো চোখ লাগিয়েও আমার মতো এতো বড় একটা ছেলেকে দেখতে পাচ্ছেন না? আমার উপরে চুল ঝাড়ছেন।
— আরে? আপনি পেছনে দাঁড়িয়েছে আমি কি করে জানবো?আর আমি যখন এখানে এসেছিলাম তখন তো আপনি ছিলেন না এখানে। আপনি তো পরে এসেছেন। আপনি সরে দাঁড়াতে পারলেন না???
— আমি ঠিক ভাবেই দাঁড়িয়েছিলাম। আপনি চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আমার কাছে এসেছেন।
— দেখুন গায়ে পড়ে ঝগড়া করবেন না।
— ঝগড়া??? আমি আপনার সাথে ঝগড়া করতে যাবো কোন দুঃখে???? আর ঝগড়া তো মেয়েরা করে। আমাদের বাসায় যে কাজের মহিলা কাজ করে তাকে প্রতিদিন দেখি চুল তেরেং বেরেং। যদি জিজ্ঞেস করি “কি গো খালা, তোমার চুল এমন কেন? কি হয়েছে?
” সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিবে ” আরে আমাগো বস্তির কুসুমের মার লগে যে কাইজ্জা হইছে। আর সুকুনির মা,,,
— স্টপ!!!! আপনার ফালতু কথা শুনার আমার কাছে সময় নেই। যত্তসব।
সেখান থেকে গিয়ে নিজের ক্লাস খুঁজে বের করলাম। নতুন পরিবেশ, নতুন মুখ। কারো সাথে বন্ধুত্বও হবে না এতো তাড়াতাড়ি। প্রতিটি টেবিলে ২জন করেবসে আছে। আমি বসবো কোথায়? হুউউউউউউউমমমমমম এই তো একটা টেবিলে খালি আছে। সেটাতেই বসি। সেই টেবিলে গিয়েই বসলাম। টেবিলটি জানালার পাশে। বাইরের বৃষ্টি খুব ভালোই উপভোগ করা যাবে।
.
ক্লাসে স্যার এলেন। আমাদের সাথে তিনি ভালো মন্দ কথা বলছেন এমন সময় একটা ছেলে বাইরে থেকে বলল,
” May I Coming Sir ”
দরজার দিকে তাকালাম। উফ এ তো সেই ঝগড়াটে ছেলেটা। ও এখানে কি করছে?
— Yes Coming. যাও গিয়ে বস।
.
ছেলেটা এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। ছেলেটাকে দেখেই আমি আমার ব্যাগটা টেবিলের ওপর পাশে রাখলাম আর ওড়নাটা বেঞ্চের খালি অংশে ছড়িয়ে দিলাম। যাতে আমার পাশে বসতে না পারে।
— এই যে মিস চশমিস। আপনার ব্যাগ আর ওড়নাটা সাইডে নিন। আমি বসবো এখানে।
— আপনি এখানে কেন বসবেন? আর কোনো জায়গা দেখছেন না চোখে????
— না দেখছি না। আমি এখানেই বসবো। এখানেই বসবো।
উফ পারা গেল না ছেলেটার সাথে। আমার পাশেই বসলো। কি ঝগড়াটে ছেলেরে বাবা। কথায় কথায় ঝগড়া করে। যার সাথে এই ঝগড়াটে ছেলেটার বিয়ে হবে তার জীবনটা একদম তেজপাতা করে দেবে। ক্লাসে স্যার সবার সাথে পরিচিত হলেন। সবার নাম জিজ্ঞেস করলেন। তখন জানতে পারলাম সেই ঝগড়াটে ছেলেটির নাম ফাহিম। যাই হোক প্রথম দিন ক্লাস শেষে বাসায় চলে এলাম।
পরদিন ক্লাসে এসে দেখি ফাহিম আগেই এসে বসে আছে। আমি অন্য একটা মেয়ের পাশে বসে পড়লাম। যে মেয়েটির পাশে বসে ছিলাম তার নাম আলফি। সেই দিনই আলফির সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল।এভাবেই কেটে যাচ্ছিল আমার সময় গুলো।
একদিন বিকেলে ছাদে হাঁটছিলাম। হঠাৎই একটা ঘুড়ি এসে পড়লো আমাদের ছাদে। ঘুড়িটা গিয়ে তুললাম। ঘুড়িটা বেশ সুন্দর। অন্য রকম একটা ঘুড়ি। কিন্তু এই ঘুড়ি এখানে এলো কিভাবে?
“হ্যালো? প্লিজ ঘুড়িটা দিবেন? এটা আমার। আমার ভাই ঘুড়ি কেটে দিয়েছে। প্লিজ দিয়ে দিন। ”
কন্ঠটা খুব চেনা মনে হচ্ছে। পেছন ঘুরে দেখি ফাহিম।
— আপনি!!!!!! (দুজন এক সাথে)
— আপনি এখানে কি করছেন? হ্যাঁ? ভার্সিটিতে তো শান্তি দেন না। পিছু করতে করতে শেষ পর্যন্ত এখানেও। (আমি)
— হ্যালো মিস চশমিস। আমার পিছু নিয়ে আপনি এখানে এসেছেন। আমি আসি নি। বুঝতে পেরেছেন? আর আপনি এখানে কি করছেন?
— আমার বাসায় আমি থাকবো না তো কি আপনি থাকবেন?
— আমার বাসায় আমি থাকবো না তো কি আপনি থাকবেন মিস চশমিস? এবার কথা না বাড়িয়ে আমার ঘুড়ি ফেরত দিন।
— আপনার ঘুড়ি আমার ছাদে এসেছে কেন?
— সেটা ঘুড়িকে জিজ্ঞেস করুন না। আমার ছাদ হয়তো ঘুড়ির পছন্দ হয়নি তাই লাফ দিয়ে আপনার ছাদে চলে গিয়েছে। এবার দিন।
— Next time ঘুড়ি যেন না আসে।
— সেটা ঘুড়ি বলুন আমাকে নয়। ঘুড়িকে আমি পাঠাই নি আপনার ছাদে।
— ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি দারোয়ানকে দিয়ে পাঠাচ্ছি। এরপর যদি আসে তাহলে আর পাবেন না।
এই বলে ছাদ থেকে নেমে দারোয়ানের কাছে ঘুড়িটা দিয়ে ফাহিমকে দিতে বললাম। এরপর প্রায় দেখতাম ফাহিমকে ছাদে। ফাহিমকে ছাদে দেখলে আমি আর ছাদে যেতাম না। আমার ঝগড়া করতে বিরক্ত লাগতো। দেখতে দেখতে আমাদের পরীক্ষা শুরু হলো।
একদিন পরীক্ষার হলে ফাইমকে অনেক চিন্তিত দেখলাম। এতো ভালো একটা ছাত্র আজ প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর থেকেই চিন্তিত? অন্য সময় তো ঝড়ের বেগে লিখতে শুরু করে। আজ এদিক ওদিক কি দেখছে?
— Any Problem? (আমি)
— না মানে হ্যাঁ। আমার কলমের কালি শেষ। কারো কাছেও নেই। (ফাহিম)
— নিন।
— এঁ?
— নিন ধরুন।
— ওহ
পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে একটা গাছের নিচে বসলাম। আলফি পরীক্ষা শেষ করে অনেক আগেই চলে গিয়েছে। বাসায় যেতেও এখন ইচ্ছা করছে না। তাই একাই বসে রইলাম গাছের নিচে।
“আপনার কলমটা” মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি ফাহিম। কলম ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে কলমটা নিলাম।
— এখানে বসতে পারি? (ফাহিম)
— Sure (আমি)
— Thank you.
— Welcome.
— প্লিজ কিছু মনে করবেন না। এতদিন শুধু শুধু ঝগড়া করছি আপনার সাথে।
— না ঠিক আছে। সমস্যা নেই।
— আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
— হ্যাঁ নিশ্চয়ই।
— তাহলে আপনি থেকে তুমি তে আসা যাক? তাছাড়া আমরা তো একসাথেই পড়াশোনা করি।
— হ্যাঁ হ্যাঁ।
এই প্রথম ফাহিমের সাথে ঝগড়া ছাড়া কথা হলো। অনেক গুছিয়ে কথা বলে ছেলেটা। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আমরা একসাথেই বাসায় ফিরলাম। রাতে বিছানায় গিয়ে ভাবলাম ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভাবতাম ততটা খারাপ সে নয়। যাই হোক আস্তে আস্তে আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠলাম।
একদিন বিকেলে ছাদে উঠলাম। খুব সুন্দর বাতাস দিচ্ছিল। কোনো রোদও ছিল না। ছাদে থাকা দোলনাতে বসে ছিলাম।
— পিউ!!!
— তুমি??
— হ্যাঁ। হাওয়া খেতে উঠলাম। এসে দেখি তুমিও এখানে। ভালোই হলো গল্প করতে পারবো।
— হ্যাঁ। আমিও একাই বসে ছিলাম। তুমি আসায় ভালো হলো।
— একটা কথা বলবো?
— হ্যাঁ বল।
— তোমাকে আজকে অন্য রকম লাগছে। একদম অন্য রকম।
— অন্য রকম মানে?
— পড়নে সেলোয়ার কামিজ, চুলে বেণী, চোখে মায়াবি কাজল সাথে চশমা। সত্যি অসাধারণ লাগছে।
— তাই বুঝি!
— সত্যি মিথ্যা বলছি না। দেখ বাতাসে তোমার সামনের চুল গুলো কেমন সুন্দর উড়ছে।
— এমনভাবে কথা বলছো যে তুমি কোনো কবি।
— হতে— হতেও পারি যদি তুমি চাও।
— মানে?
— না মানে বন্ধুর জন্য কবি হতে সমস্যা কি?
— আচ্ছা এখন যাই। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
— কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে। বাই
— বাই।
পরদিন সকালে ভার্সিটিতে গেলাম। ক্লাসে গিয়ে দেখি ফাহিম আগেই চলে এসেছে। আমাকে দেখেই হাত নাড়লো। ওর কাছেই গিয়ে বসলাম। আমাকে ফাহিমের পাশে বসতে দেখে মুচকি হাসে আলফি। ফাহিমের পাশে বসতেই ফাহিম একটা ভাজ করা কাগজ দিল আমাকে। খুলে দেখি লেখা,
“কাজল কালো মায়াবি নয়নে চেয়ো না গো আমার দিকে, সেই দৃশ্য দেখে আমার প্রান যাবে চলে।”
— এটা কি? (আমি)
— কবিতা। (ফাহিম)
— তোমার লেখা?
— হ্যাঁ। তুমি কাল বললে আমি কবি হয়ে গিয়েছি তাই কবি হবার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।
— ব্যর্থ কে বলল? অনেক সুন্দর হয়েছে।
— সত্যি?
— একদম।
এভাবে প্রায় আমাকে ফাহিম কবিতা লিখে দিতো। ফাহিম প্রায় বলতো কাজল পড়তে। যেদিন কাজল পড়তাম না সেদিন চাপা এক অভিমান নিয়ে থাকতো। আর কাজল চোখে দেখলাতো আনন্দের সীমা নেই। আস্তে আস্তে মনে হচ্ছিল আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে।
একদিন সন্ধ্যায় ফাহিম আমাকে ফোন করে পার্কে দেখা করতে বলে। পরদিন বিকেলে পার্কে যাই আমি। পার্কের একটা বেঞ্চে বসে ফাহিমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ফোন করেছিলাম বলল আসছি। এখনো আসার কোনো খবর নেই। কিছুক্ষণ পর ফাহিম এলো। আমার সামনে এসে হাত পেছনে নিয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বার বার জিজ্ঞেস করছি কি হয়েছে? কেন ডেকেছ? কোনো জবাব দেয় না। কিছুক্ষণ পর আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পেছন থেকে হাতে গোলাপের তোড়া আমার সামনে ধরে বলে,
“আজ ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রপোজ ডে আজকে। আর আজকের এই দিনে আমি তোমাকে মন থেকে প্রপোজ করলাম। এটাই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ প্রপোজ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাসবে?”
ফাহিমের কথা গুলো আমাকে অবাক করছিল। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ফাহিম আমাকে ভালোবাসে। পার্কের উপস্থিত সবাই পাগলটার পাগলামি দেখছে। ফাহিমের হাত থেকে ফুল গুলি নিয়ে বললাম, “আমিও তোমাকে ভালোবাসি”। ব্যস এটা বলতেই হৈচৈ করে তালি বাজিয়ে আমাদের সব বন্ধু বান্ধব এসে হাজির। তারা জানতো আজ ফাহিম আমাকে প্রপোজ করবে। তাই তারা আগেই এসে হাজির।
সেদিন থেকে আমাদের প্রেমের যাত্রা শুরু। আমরা প্রায় ঘুরতে যেতাম। ১৪ ফেব্রুয়ারি ফাহিম আমাকে নিয়ে সমুদ্রে বেড়াতে গেল। সমুদ্রের ধারে আমরা দুজন দাঁড়িয়ে আছি। সমুদ্রের ঢেউ এসে আমাদের পা ছুঁয়ে যাচ্ছে বার বার।
— আমাদের প্রথম ভালোবাসা দিবস। (ফাহিম)
— হ্যাঁ। (আমি)
— তোমার জন্য ভালোবাসা দিবসের এই ছোট্ট উপহার॥
— কি এটা?
— খুলেই দেখে নাও না।
— নূপুর!!!!
— হ্যাঁ। তুমি যেখানেই থাক না কেন তোমার নূপুরের শব্দে আমি ঠিক খুঁজে বের করবো।
— তাই?
— হ্যাঁ
— নাও।
— (মন খারাপ করে) ফেরত দিচ্ছ?
— আমি নূপুর পড়তে পারি না (মিথ্যা কথা)॥ পড়িয়ে দাও
ফাহিম হাসি মুখে আমার হাত থেকে নূপুর নিয়ে পায়ে পড়িয়ে দেয়।
ভালোই চলছিল আমাদের প্রেম। কিন্তু কথায় আছে না
“সুখে থাকলে ভূতে কিলায়”?
আমাদেরও ঠিক তাই হলো। আমার মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় আমি আম্মুর ফোন থেকে ফাহিমকে মেসেজ করি। কিন্তু সেগুলো ডিলেট করতে ভুলে যাই। ব্যস্ আর কি। ধরা পড়ে গেলাম। ভার্সিটি যাওভার্সিটি যাওয়া বন্ধ, ফোন ব্যবহার করা বন্ধ, ছাদে উঠা বন্ধ। এক কথায় ফাহিমের সাথে যোগাযোগের সব ব্যবস্থা বন্ধ। বাসা থেকে দ্রুত ছেলে দেখা শুরু করে দিল। বিয়ে দিয়ে দিবে। কিন্তু মানুষের জীবনে ভালোবাসা তো একবারই আসে। আর আমি তো ফাহিমকে ভালোবেসেছি। তাহলে অন্য কারো সাথে কিভাবে সংসার করবো?যে করেই হোক আমাকে এই খবরটা ফাহিমের কাছে পৌঁছতেই হবে। তাই কসমেটিক দিয়ে কাজের মেয়েকে হাত করলাম। তাকে দিয়ে ফাহিমের কাছে একটা চিঠি পাঠালাম। চিঠিটি নিয়ে সে ফাহিমকেও দিয়েছিল। আর ফাহিম সব জেনে সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কাজের মেয়ের কাজে এটা শুনে ইচ্ছে হচ্ছিল ছুটে যাই ফাহিমের কাছে। কিন্তু তা সম্ভব নয়।
একদিন বর পক্ষ আমাকে দেখতে এলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবা মার সম্মান রক্ষার্থে বর পক্ষের সামনে গেলাম। আমাকে তারা কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। আমার চাচাতো বোন আমার কানে কানে বলে,
“একবার দুলাভাইকে দেখ”। ওর কথা গুলো মনে হচ্ছিল কাঁটা শরীরে লবণের ছিটে। ছেলের দিকে একবারও দিকে একবারও তাকালাম না।
এরপর আমাদের পাঠালো হয় আলাদা ঘরে। নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য। রুমে ঢুকে ভাবছি ফাহিমের কথা বলেই দিবো। তাহলে বিয়ে হবে না। কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই পাত্র বলে উঠলো, ” আজকের কাজলটা আমার মন মতো হয় নি। তাও লেপ্টে আছে চোখের পানিতে।” কণ্ঠটা শুনেই চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি ফাহিম। ফাহিমকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারলাম না। ঝাঁপিয়ে পড়লাম তার বুকে। পাগলের মতো কাঁদতে লাগলাম। ফাহিম আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আর বলতে লাগলো,
— আর কান্না নয়। অনেক হয়েছে। এখন শুধু ভালোবাসা। দেখি, দেখি আমার দিকে তাকাও। (চোখ মুছে দিয়ে ) এবার একটু হাসো মিষ্টি করে। এই তো।
— কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে! কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
— তোমার চিঠি পড়ে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।
নিজেকে খুবই অসহায় লাগছিল। জানিনা কি হয়ে গিয়েছিল আমার, সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম আমি। কতদিন অজ্ঞান ছিলাম ঠিক জানিনা। যখন জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরলেও মানসিক ভাবে সুস্থ হতে পারলাম না। আজ সকালে বাবা এসে আমাকে বললেন আমার জন্য পাত্রী দেখতে যাবেন। আমাকেও যেতে হবে। আমি না করে দিয়েছিলাম। তখন বাবা টেবিলের উপর একটা ছবি রেখে বললেন “এটা মেয়ের ছবি। আজ বিকেলে মেয়ে দেখতে যাবো। ছবিটা দেখে নিস”। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিল। রাগে ছবিটি ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলাম। ছবিটি হাতে নিতেই দেখি তোমার ছবি। বিকেলে বাবা রুমে এসে দেখেন আমি রেডি হয়ে বসে আছি। বাবা জিজ্ঞেস করলেন “এখন রেডি হয়েছিস কেন? বিয়ে করবি নাকি এই মেয়েকে? ” নির্লজ্জের মতো বলে ফেললাম করবো। তারপরের কাহিনী তো তুমি জানোই।
— বাইরে চল। সবাই অপেক্ষা করছে।
— আগে চোখটা মুছো ।
তারপর আমরা বাইরে এলাম। ৯ আগস্ট আমাদের বিয়ের দিন ধার্য করা হলো। ৯আগস্ট আমার জন্মদিনও।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে রুমে শুয়ে আছি। এমন সময় ফাহিমের ফোন।
— হ্যালো (আমি)
— হ্যালো। কি করছো? (ফাহিম)
— কিছু না। তুমি?
— তোমার কথা ভাবছি। একটা কথা।
— বল?
— কাল প্লিজ কাজলটা তুমি নিজে পড়বে। প্লিজ?
— কেন বলতো?
— আমি তোমাকে আমার স্বপ্নের রাজকন্যার রূপে দেখতে চাই। আর পায়ে আলতা আমি নিজের হাতে পড়িয়ে দেব।
— হিহিহিহি ঠিক আছে।
— কাল সকালে ফুলের গহনা পাঠিয়ে দেব তোমার বাড়ি।
— কিন্তু ফুলের গহনা তো গায়ে হলুদে পড়ে।
— আর আমি চাই আমাদের ভালোবাসা পবিত্রতায় ভরে থাকুক। ফুল পবিত্র। আমি চাই এই পবিত্র ফুল দিয়েই আমাদের বিয়ে হোক।
— ঠিক আছে, ঠিক আছে। এবার ঘুমাও।
— তুমিও ঘুমাও
— হ্যাঁ।
“কিরে? কি ভাবছিস? ” আলফির কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম। এতক্ষণ আগের কথা ভাবছিলাম।
আমরা দুজন এখন পাশাপাশি বসে আছি। না তাকালেও বুঝতে পারছি ফাহিম বার বার আমাকে দেখছে। দেখার তো কথাই। তার স্বপ্নের