তোমার জন্য মন

তোমার জন্য মন

:-ভাইয়া তোমার কী মন খারাপ?(জারা)
:-নাতো।(আমি)
:-প্রতিদিন হাসিখুশি থাকো কিন্তু আজ মনমরা তাই মনে হলো তোমার মন খারাপ।
:-মন খারাপ না।শরীলটা একটু খারাপ লাগছে তাই।তুই পড়।

জারা আমার স্টুডেন্ট। ইন্টার ১ম বর্ষের ছাএী।আর আমি হুসাইন আহম্মেদ।অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।জারা আমাকে ভাইয়া বলে ডাকে।ওর কোনো ভাই নেই এই জন্য আমাকে ওর ভাইয়া বানিয়েছে।এক বড় ভাইয়ের সুবাদে টিউশনিটা পেয়েছিলাম।এখন অবশ্য অনেকগুলো টিউশনি পেয়ে গেছি।

জারার ধারণাটা ঠিক।আজ আমার মন খারাপ।ছোট ভাইয়ের পরীক্ষার টাকা আর বাবার ওষুধ কেনার টাকা পাঠাতে হবে বাসায়।মাস শেষ হতে এখনো ৪দিন বাকি।কয়েকটা টিউশনি করায়।টিউশনি করে যা টাকা হয় সেটা দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে হয় আর বাসায় টাকা পাঠাতে হয়।বাবা অসুস্থ। কোন কাজ করতে পারেনা।পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সব দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়েছে।অবশ্য আম্মু শেলাইয়ের কাজ করে কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা করে।যেভাবেই হোক আজকের মধ্যে বাসায় টাকা পাঠাতেই হবে নয়তো ছোট ভাইটা পরীক্ষায় বসতে পারবেনা।আব্বুর ওষুধ কেনা হবেনা।না আর ভাবতে পারছিনা।এত অল্প বয়সে ফ্যামিলির দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে সেটা কল্পনাতেও ছিলোনা।আমার সব ফ্রেন্ডরা যেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায় সেখানে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা টিউশনি করে বেড়ায়।

:-ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গেলে?(জারা)
:-কোথাও না।তুই মনোযোগ দিয়ে পড়।(আমি)

আচ্ছা জারার কাছে কিছু টাকা ধার চাইবো?চেয়ে দেখি।কিছু করার নেই।আজকের মধ্যে টাকা পাঠাতেই হবে।

:-জারা একটা কথা বলবো?(আমি)
:-বোনের কাছে কিছু বলতে আবার অনুমতি নিতে হয় বুঝি?(জারা)
:-তোর কাছে হাজার চারেক টাকা হবে?
:-ভাবির জন্য গিফট কিনবে নাকি?
:-না।বাসায় টাকা পাঠাতে হবে।
:-দাঁড়াও আমি আম্মুকে বলে দেখি।

জারা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।জারার আব্বু আম্মু খুব ভালো। উনারাও আমাকে ছেলের মত দেখে।
জারা কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আমার হাতে টাকা ধরিয়ে দিলো।

:-Thanks. (আমি)
:-আচ্ছা তুমি কী আমাকে বোন ভাবোনা?(জারা)
:-একথা বলছিস কেনো?
:-বোন যদি ভাবতে তাহলে Thanks বলতে না।
:-সরি বাবা আর এমন ভুল হবেনা।
:-মনে থাকে যেনো।
:-মনে থাকবে।এখন পড়তে বস।

জারাকে পড়িয়ে মেসে ফিরতে রাত ৮টা বেজে গেলো।মেসে ফেরার পথে বাসায় বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিলাম।এখন কিছুটা হালকা লাগছে।মাথায় টেনশন থাকলে কোনকিছুই ভালো লাগেনা।

মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে অবনীকে ফোন দিলাম।অবনী আমার গালফ্রেন্ড।অনার্স ১ম বর্ষের ছাএী ও।ঢাকা ভার্সিটির স্টুডেন্ট। অবনীর সাথে প্রায় ২বছরের রিলেশন।

:-এতক্ষণে ফোন দেওয়ার সময় হলো?(অবনী)
:-হুম।টিউশনি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে তোমায় ফোন দিলাম।(আমি)
:-খেয়েছো এখন?
:-না।তুমি?
:-খেয়েছি।তুমি খেয়ে তারপর ফোন দাও।
:-একটু কথা বলি তারপর খেতে যাবো।
:-কী ব্যাপার আজ মনে হচ্ছে পকেট গরম আছে।
:-আরেনা।মাএ ২০ টাকা ভরেছি ফোনে।
:-বুঝলাম।প্রতিদিনতো আমি ফোন দিই আর তুমি মিসকল দাও।
:-হুম।
:-যাও খেয়ে আসো।
:-আচ্ছা।

ফোন রেখে ডিনার করে নিলাম।ডিনার শেষে অবনীকে ফোন দিলাম।ফোন ওয়েটিং।হয়তো বাসায় কথা বলছে।কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিলাম।এবারো ওয়েটিং।প্রায় দের ঘন্টা চেষ্টা করেও অবনীকে ফোনে পোলাম না।ওর ফোন ওয়েটিং।এত সময় ও কার সাথে কথা বলছে?মনের ভিতর সন্দেহ বাসা বাঁধছে।এর আগে কোনদিন এত সময় অবনীর ফোন ওয়েটিং পাইনি।

ঘন্টা দুয়েক পর অবনী নিজেই ফোন দিলো।

:-কে ফোন দিয়েছিলো?(আমি)
:-রাব্বি।(অবনী)
:-রাব্বি ওই ছেলেটা না যে তোমাকে কয়েকদিন আগে প্রপোজ করেছিলো?
:-হ্যা।
:-ওর সাথে তোমাকে কথা বলতে মানা করেছিনা তবুও কথা বললে কেন?

:-আরে আমি ফোন দিইনিতো ও নিজেই ফোন দিয়েছি।আজ ক্লাসে গিয়েছিলো না তাই পড়া বুঝার জন্য ফোন দিয়েছিলো।

:-পড়া বুঝার জন্য আর কাউকে পাইনি ও।তোমাকেই কেনো ফোন দিলো?আর ও তোমার নম্বর পেলো কোথা থেকে?

:-আমি কি করে বলবো নম্বর কোথা পেলো।
:-তুমি না দিলে আকাশ থেকে পেয়েছে।
:-তুমি কী আমাকে সন্দেহ করছো?
:-না।
:-তেমনিতো মনে হচ্ছে।
:-ও সব দোষ এখন আমার তাইনা।
:-দেখো অযথা ঝগড়া করবেনা।
:-ঝগড়া করার ক্লু তৈরি করলে ঝগড়াতো হবেই।

:-তোমাদের কলেজের মত সামান্য সরকারি না এটা বুঝলে।এটা ঢাকা ভার্সিটি এখানে সবাই সবার সাহায্য করে।

:-ঠিকই বলেছো আমিতো সামান্য একটা সরকারি কলেজে।আস্তে আস্তে সবই বুঝতে পারছো।হয়তো কবে জানি বলতে তোমাকে ভালোবাসার যোগ্যতা আমার নেই।

:-ধুর যতসব আজাইরা।

কথাটা বলে অবনী ফোন রেখে দিলো।আমি আর ফোন দিলাম না।ফোনটা কানের কাছে ধরে কিছুক্ষণ বসে রইলাম।যেদিন অবনী ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পায় সেদিন আমার অনেক ফ্রেন্ডই বলেছিলো আস্তে আস্তে অবনী আমাকে ভুলে যাবে।কারণ ঢাকা ভার্সিটিতে পড়া একটা স্টুডেন্ট কখনো সাধারণ একটা সরকারি কলেজে পড়া ছেলেকে ভালোবাসতে পারেনা।২দিন আগে রাব্বি আমাকে ফোন করেছিলো।জানিনা কোথা থেকে আমার নম্বর জোগার করেছে।রাব্বি ফোন করে আমাকে চ্যালেন্জ করেছিলো অবনীকে ও ওর করে নেবে।আমিও উল্টো চ্যালেন্জ করেছিলাম অবনী আমাকে কোনদিন ছেড়ে যাবেনা।সেদিন রাতে অবনীকে বলেছিলাম রাব্বি এসব বলেছে। তখন অবনী আমাকে আল্লাহর নাম নিয়ে কথা দেয় ও আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা।

ফোনের ডাটা অন করে অবনীর ফেসবুক আইডিতে ঢুকলাম।অনেকদিন হলো ওর আইডিতো ঢুকা হয়না।অবনীর আইডিতে ঢুকতে গিয়ে দেখি পাসওয়ার্ড চেন্জ করেছে ও।আমি আমার নম্বর দিয়ে অবনীকে আইডি খুলে দিয়েছিলাম তাই আমার নম্বর রিকভার করে অবনীর আইডির পাস চেন্জ করে নিলাম।অবনীর আইডিতে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়লো রাব্বির সাথে চ্যাটিং।এখনো চ্যাটিং চলছে।লাষ্ট মেসেজগুলো ছিলো এরকম

:-আচ্ছা অবনী তুমি এখনো ওই ছেলেটিকে নিয়ে পড়ে আছো কেনো?তুমি এখন ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ো ওসব গ্রামের ছেলেকে নিয়ে পড়ে থেকে কেনো নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছো(রাব্বি)

:-আসলে আমিও ওকে ছাড়তে চাই কিন্তু পারছিনা।সব সময় একটা একটা বিষয় নিয়ে প্যারা দিবেই আমাকে।আমি খুব বিরক্ত ওর প্রতি(অবনী)

:-কোন বিষয় নিয়ে বড় ঝগড়া করো তারপর ব্রেকআপ করে ফেলো।

মেসেজগুলো দেখে খুব অবাক হলাম আমি।বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে অবনী আমার প্রতি বিরক্ত। আসলে মানুষ এমনি যখন নিজের প্রয়োজন হয় তখন কাছে টেনে নেয় আর যখন প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় তখন লাথি মেরে দুরে সরিয়ে দেয়।অবনীর কাছে আমার প্রয়োজন আজ শেষ।অবনী এখন উপর তলার শিঁড়িতে ওঠে গেছে।আমি নিচের তলার শিঁড়ির মানুষ।অবনীর এখন সময় নেয় নিচের তলার মানুষকে নিয়ে ভাবার।অথচ এই নিচের তলার মানুষটির জন্য আজ ও উপরে ওঠতে পেরেছে।

চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।চোখের পানি মুছে নিয়ে অবনীকে ফোন দিলাম।দুবার রিং হওয়ার পর রিচিভ হলো

:-ফোন দিয়েছো কী জন্য?(অবনী)

:-আমি ফোন দিলে খুব বিরক্ত হও তাইনা?আর হবেইতো আমাকেতো এখন আর তোমার দরকার নেই। (আমি)
:-দেখো এসব আবেগী কথা শুনার টাইম আমার নেই।ভালো কিছু বলার থাকলে বলো নয়তো ফোন রাখো।

:-রাব্বির সাথে তুমি প্রতিদিন কথা বলো তাইনা?
:-নাতো।আমি ওর কথা প্রতিদিন কথা বলতে যাবো কেনো।আজই কথা হলো শুধু।
:-মিথ্যা বলা ভালোই শিখে গেছো দেখছি।
:-আমি কোন মিথ্যা বলছিনা।
:-আর মিথ্যা বলতে হবেনা।আমি তোমার আইডিতে ঢুকে দেখেছি।
:-ও সব তাহলে জেনে গেছো।সব যখন জেনেই গেছো তখন আর কথা না বাড়ালেই ভালো হয়।

:-হুম।তবে একটা কথা কী জানো আমার কথা একদিন না ঠিক তোমার মনে পড়বে।আমাকে খুব মিস করবে।সেদিন আমাকে পেতে চাইবে কিন্তু আমাকে সেদিন আর পাবেনা। আমি–+

আমি আর কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে ফোন কল কেটে গেলো।ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে থাকলাম।রিলেশন শুরুতে আমি অবনীকে কথা দিয়েছিলাম কোনদিন যদি আমাকে ওর ভালো না লাগে সেদিন ও নিজে আমাকে একবার বললে আমি অনেক দুরে চলে যাবো।কোনদিন আমি ওকে আর বিরক্ত করবোনা।আজ সেই দিনটা এসেছে।আমি আমার কথা রেখেছি।যে আমাকে চাইনা আমিও তাকে বিরক্ত করতে চাইনা।জোর করে সবকিছু পাওয়া গেলেও ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব না।

কিছু কিছু মানুষ খুব স্বার্থপর হয়। নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে তারা।অবনী আজ নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে ছেড়ে দিচ্ছে।খুব কান্না পাচ্ছে আজ।অবনীকে খুব মিস করবো।বিশেষ করে সারাদিন টিউশনির পর ক্লান্ত শরীলে মেসে ফেরার পর।সারাদিন আমার যত কষ্টই হোকনা কেনো রাতে অবনীর সাথে কথা বললে সব কষ্ট দুর হয়ে যেতো।এখন থেকে সেটি আর হবেনা।শুনেছিলাম অনেকেই নিজের ভালোবাসার মানুষকে আটকে রাখার জন্য এটা ওটা বলে ব্লাকমেল করে বাট আমার দ্বারা এটা হবেনা।

চোখের পানি মুছে নিলাম।শেষ মেসেজটা অবনীকে করতে চাই।আমি আত্মহত্যা করবোনা।আত্মহত্যা করবোনা ২টি কারণে।১.আত্মহত্যা মহাপাপ আর ২.আমি মরে গেলে আমার ফ্যামিলিকে দেখার মত কেউ থাকবেনা।নিজেকে শক্ত করতে হবে।ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা।ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ লেখা শুরু করলাম

 

প্রিয় অবনী,

দোয়া করি সবসময় ভালো থাকো।আমি জানি তুমি আর আমাকে চাওনা।কারণ এখন আর আমি তোমার যোগ্য না।দোয়া করি তোমার মনের মত ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি যেনো খুজে পাও।তবে তোমাকে আমি খুব মিস করবো।মিস করবো তোমার মিষ্টি কন্ঠটা।জানো অবনী আমার ভাগ্যটা খুব খারাপ।দেখো এত অল্প বয়সেই ফ্যামিলির দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে।আমার বয়সী ছেলে মেয়েদের এখন পড়ালেখার পাশপাশি আড্ডা মাস্তি করার কথা অথচ আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা টিউশনি করতে হচ্ছে। জানো মাঝে মাঝে আমার মাথাটা খুব ব্যথা করে তখন মনে হয় এই বুঝি মরে যাবো।যত দিন যাচ্ছে ব্যথাটা তত বেড়ে যাচ্ছে।সেদিন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম ব্যথার জন্য, ডাক্তার অনেকগুলো ওষুধ লিখে দিয়েছিলো।

ডাক্তার দেখানোর পরেও ব্যথাটা কমেনি। কেনো কমেনি যানো কারণ ডাক্তারের লেখা ওষুধগুলো আমি কিনতে পারিনি। ডাক্তার দেখানোর পর যখন ওষুধ কিনতে গেলাম তখন বাসা থেকে ফোন আসলো।আম্মু ফোন করে বললো আব্বুর ওষুধ শেষ ওষুধ কিনতে হবে আর ছোট ভাইয়ের পরীক্ষার জন্য টাকা লাগবে। আমিতো আর চাকরী করিনা যে সবসময় অনেক টাকা থাকে আমার কাছে। সেদিন ওষুধ না কিনে টাকাগুলো রেখে দিই।তারপর আমার আরেকটা স্টুডেন্টের কাছ থেকে টাকা ধার করে বাসায় টাকা পাঠালাম আজ।তুমি মাঝে প্রশ্ন করো আমি এতগুলো টিউশনি করে টাকা কী করি আশা করি সেই প্রশ্নের উওরটা পেয়ে গেছো।আর তোমাকে প্রতিদিন ফোন দিতে পারিনা কারণ আমার কাছে বাড়তি টাকা খুব কম থাকে।তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে।দোয়া করি সুখে থাকো।আমার লাইফটা অভাবের লাইফ।আমার লাইফ থেকে চলে গিয়ে ভালোই করেছো।যাইহোক অনেক কিছু বলে ফেলেছি।যদি কোনদিন তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিও।কোনদিন আর তোমাকে বিরক্ত করবোনা।
আল্লাহ হাফেজ।

মেসেজটা পাঠিয়ে ফোন অফ করে রাখলাম।ফোন ভাঙ্গার সাহস আমার নেই।কারণ এই ফোনটা ভেঙ্গে ফেললে আর ফোন কিনতে পারবোনা আমি।ফোনটা বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পড়লাম।এখন ঘুমাতে হবে।সকালে ওঠে আবার টিউশনিতে যেতে হবে।মাঝে মাঝে আমি খুব অবাক হয়ে যাই এই ভেবে যে আমি কষ্টগুলো খুব সহজেই মেনে নিতে পারি।এই যেমন আজ অবনীর সাথে ২বছরের রিলেশন ব্রেকআপ হলো।আমার জায়গাতে অন্য কোন ছেলে হলে হয়তো ঘুমের ওষুধ খেতো কিংবা এটা ওটা বলে ব্লাকমেল করে মেয়েটাকে আটকানোর চেষ্টা করতো,কিংবা নিকোটিনের ধোয়ায় কষ্টগুলো উড়াতে চাইতো।আমার দ্বারা এসব হবেনা।আমার উপর অনেক দায়িত্ব।

রাত ২টার একটু বেশি বাজে।
এখনো ঘুম আসেনি।অবনীকে খুব মিস করছি।অবনীর সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে।অবনী আর আমার দেখা অনেকদিন পরপর হতো।কারণ অবনী ঢাকাতে থাকে আর আমি খুলনা।অবনী যখন ভার্সিটি ছুটিতে গ্রামে আসে তখনি কেবল আমাদের দেখা হয়।অনেকদিন পর যখন আমাদের সামনাসামনি দেখা হয় তখন দুজনের আনন্দের সীমা থাকেনা।
দরজায় ধাক্কার শব্দ হচ্ছে।এত রাতে আবার কে এলো?আমি ভেতর থেকেই প্রশ্ন করলাম

:-কে? (আমি)
:-আমি শিপন।দরজা খোল।(আমার ফ্রেন্ড)
:-দাড়া খুলছি।

এতরাতে হঠাৎ শিপন ডাকছে কেনো বুঝতে পারছিনা।আমি আর শিপন একই মেসে থাকি।আমার রুমে আজ আমি একা।এক রুমে দুজন করে থাকি।আমার রুমমেট বাসায় গিয়েছে।

বিছানা থেকে ওঠে লাইট অন করে দরজা খুললাম।

:-কিরে এত রাতে ডাকছিস কেনো?কোন সমস্যা হয়েছে?(আমি)
:-তোর ফোন অফ কেনো?অবনী তোকে ফোনে না পেয়ে আমাকে ফোন করেছে।(শিপন)

:-ও।ভেতরে এসে বস।

শিপন আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।ও আমার আর অবনীর সম্পর্কে সবকিছুই জানে।অবনীর কাছে শিপনের নম্বর আছে।

:-রাগারাগি করেছিস নাকি?(শিপন)

আমি শিপনকে সব খুলে বললা।

:-এখন বল আমি কী করবো?দুদিন পর এক ঝামেলা আর ভালো লাগেনা।লাষ্ট ১০দিন যে অবনী আমার সাথে কতটা খারাপ ব্যবহার করেছে সেটা আমি জানি।

:-অবনী আবার ফোন করেছে।নে কথা বল।(শিপন)
:-আমি ওর সাথে আর কথা বলতে চাইনা।
:-আরে বাদ দেতো।রিলেশনে এরকম একটু ঝামেলা হয়েই থাকে।

:-তুই এটাকে একটু ঝামেলা বলছিস?আমি ফ্যামিলি নিয়ে কতটা পেশারে থাকি সেটাতো তুই জানিস।তার উপর অবনী যদি ঝগড়া করে তাহলে কেমন লাগে বল?

:-আচ্ছা এখন ফোনটা অন করে অবনীর সাথে কথা বল।আর আমি অবনীকে সবকিছু বুঝিয়ে বলছি যেন এরকম আর না করে।

শিপন আমাদের দুজনের মাঝে ঝামেলা মিটিয়ে দিলো।অবনী শিপনকে কথা দিয়েছে ও কোনদিন আর রাব্বির সাথে কথা বলবেনা।আর কোনদিন আমার সাথে ঝগড়া করবেনা।আমি অবনীর প্রতি খুব দুর্বল তাই মেনে নিয়েছি সহজেই।

১ঘন্টা পর।

শিপন ওর রুমে চলে গেলো।আমি ফোন অন করতেই অবনীর নম্বর থেকে ফোন আসলো।আমি রিচিভ করলাম

:-সরি।(অবনী)

:-সরি বলার কিছু নেই।আমি খারাপ মানুষ।ভালো কিছু পাবার পাবার যোগ্য আমি না।(আমি)
কথাটা বলতে দেরী হলো কিন্তু ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসতে দেরী হলোনা।মেয়েদের সবথেকে বড় অস্ত হলো কান্না।খুব সহজেই ছেলেদের এই কান্না দিয়ে বস করে ফেলে।

:-ওই কাঁদবেনা বলে দিলাম। নিজে অপরাধ করে এখন নিজেই কাঁদছে।
:-আগে বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো?
:-হুম করেছি।তবে এরপর আর যদি কখনো এমন করো তাহলে ক্ষমা করবোনা।
:-আর ভুলেও এমন করবোনা।
:-আচ্ছা সত্যি করে একটা কথা বলবে?
:-হুম।
:-সন্ধায় রাব্বিকে যে কথাগুলো বলেছিলে সেগুলো সত্যি নাকি মিথ্যা?
:-তখনকার জন্য সত্য ছিলো বাট এখনকার জন্য মিথ্যা।
:-বুঝলাম না।

:-আজ কয়েকদিন যাবৎ রাব্বি আমাকপ ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে।কেনো জানি এই কয়েকদিন তোমাকে খুব বিরক্ত লাগছিলো।কিন্তু আজ তোমার সাথে ঝগড়া করে ব্রেকআপ হওয়ার পর কেনো জানি মনের মধ্যে শান্তি পাচ্ছিলাম না।তারপর তোমার মেসেজটা পড়ার পর বুঝলাম আমি ভুল করেছি।তোমাকে হারালে সারাজীবন আমাকে কাঁদতে হবে এর জন্য।

:-আমি যদি তখন আবেগে আত্মহত্যা করে ফেলতাম তখন?
:-আমি জানি তুমি এটা করতে পারবেনা।
:-কিভাবে????
:-বুদ্ধু তোমার মনটাইতো আমার কাছে।
:-হুম বুঝলাম।কঠিন সমীকরণ।
:-কঠিন না।সহজ।
:-জানো আমি খুব কষ্ট পেয়েছি আজ।
:-জানি।বিয়ের পর সব পুষিয়ে দেবো।
:-আজ দাও।
:-শখ কত।
:-হুম অনেক শখ।
:-আগে বলো তোমার মাথা ব্যথা করে এটা আমাকে বলোনি কেনো?
:-এমনি।
:-এমনি কেনো শুনি?আমি কী তোমার পর?
:-বাদ দাও এসব।
:-বাদ দিবোনা।সকালেই ডাক্তারের কাছে আবার যাবে।যত টাকা লাগে আমি দেবো।বুঝেছো।
:-থাক ডাক্তার দেখানো লাগবেনা।
:-ওই বেশি কথা বলবানা।আমি যা বলেছি তাই করবা।
:-হুম
:-কী হুম?
:-তুমি যা বলবে তাই শুনবো।
:-লাভ ইউ
:-আই হেট ইউ
:-ওই কী বললি তুই?আজ তোর খবর আছে।
মুহুর্তেই অগ্নী রুপ ধারণ করলো মেয়েটি।হি হি হি হি
শুরু হলো আবার নতুন গল্প।সব গল্পের শেষটা দুঃখের হয়না।কিছু কিছু গল্পের শেষটা সুখেরও হয়।

**********************************************সমাপ্ত****************************************

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত