হুট করে ঘুমটা ভেঙে গেলো।
চোখ মেলে নিজেকে মেঝের উপর হাত পা ছড়ানো অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। মেঝেটা অপরিচিত। আমার বাসার মেঝে তো নয় এটা! কোথায় আমি?
চারপাশটা একটু নজরে আনার চেষ্টা করলাম।
খুব বেশি আলো নেই এখানটাতে। মৃদু আলো, খুব নম্র।
দুটো ডিম লাইট জ্বলছে মাত্র। বেশ কিছু চেয়ার আর টেবিল এদিকে ওদিকে সাজানো।
বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা একটা রেস্টুরেন্ট।
আমি এখানে কি করে এলাম? আমি তো বাসায় আমার রুমেই ছিলাম! তবে কি স্বপ্ন দেখছি? সজোরে নিজের গায়ে চিমটি কাটলাম।
শুনেছি চিমটি কেটে বোঝা যায় যে স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তবে আছি। চিমটি কেটে খুব একটা ভালো ফলাফল পেলাম না। পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হলো না। শুধু ব্যথাটাই অনুভব করলাম।
উঠে বসার চেষ্টা করলাম। অনুভব করলাম গায়ে প্রচুর ব্যথা। নড়তে কষ্ট হচ্ছে বেশ। হঠাৎ করে ডিম লাইট গুলো নিভতে-জ্বলতে শুরু করলো। শুনশান নীরবতার মাঝে শর্টসার্কিটের শব্দ বোমা ফাটার আওয়াজের মতো মনে হচ্ছে। কান চেপে ধরতে ধরতেই বাতি গুলো একদম বন্ধ হয়ে গেল। আবার নেমে এলো শুনশান নীরবতা। জন্ম হলো প্রচন্ড আধারের।
অনুভব করলাম চারিদিকটা প্রচন্ড মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠছে। যে কোন ধরনের গন্ধেই আমার এলার্জি আছে। নাকে গেলে হাঁচি শুরু হয়ে যায় সাথে সাথেই। কিন্তু এই গন্ধটা অন্যরকম। প্রচন্ড তীব্র। কিন্তু খুব মোলায়েম। কষ্ট হচ্ছে না একটুও। হাঁচিও হচ্ছে না।
হঠাৎ প্রচন্ড নীরবতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জানিয়ে দেশলাইয়ে কাঠি খোঁচার শব্দ ছড়িয়ে পড়লো স্তব্দ আধারে। সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলো এই বিরাট রুমটার অন্য এক কোনায়।
কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছেন। দেশলাইয়ের জলন্ত কাঠি হাতে। খুব যত্ন সহকারে টেবিলের উপরে রাখা মোমবাতিটাতে আগুন ধরাচ্ছেন।
কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?
কোথায় আমি? মাথাটা ঝিম ধরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সব কিছু চক্কর খাচ্ছে। বুঝলাম নার্ভে প্রেশার পড়ছে খুব। মোমবাতির আলোটা ক্ষীণ হয়ে আসতে শুরু করলো। আলো কমতে কমতে এক সময় পুরোটা অন্ধকার হয়ে গেলো।
হঠাৎ চোখটা খুলে গেলো।
নিজেকে চেয়ারে বসা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম এবার। টেবিলের উপর মাথাটা কাঁত হয়ে আছে। মাথাটা তুললাম। টেবিলের উপরে একটা বড় সাইজের স্বচ্ছ কমলা রঙের মোমবাতি জ্বলছে। তবে মোমবাতিটাকে সাধারণ মোমবাতির মতো মনে হচ্ছে না। কারণ মোমবাতির আলোটা শুধু আমার দিকেই আসছে, উলটো দিকে যাচ্ছে না।
খেয়াল করলাম এটা ঐ টেবিলটাই, যেখানে একটু আগে কাউকে মোমবাতি জ্বালাতে দেখেছিলাম।
মনের মাঝে এক অজানা ভয় বাসা বাধতে শুরু করলো।
মোমবাতির ওপাশের কিছুই দেখতে পাচ্ছি না আমি।
ভয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা এক অনুভূতি নেমে গেল কেমন যেন।
এ কোথায় আমি? কেন এই দুঃস্বপ্ন শেষ হচ্ছে না? আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে? কেন ঘুম ভাঙছে না আমার? আমি এই দুঃস্বপ্নের মাঝে থাকতে চাই না।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠতে গেলাম। আমার শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি নেই, নাকি আমাকে কোন অদৃশ্য শক্তি বেঁধে রেখেছে আমি জানি না। তবে আমি এক চুল পরিমানও চেয়ারটা ছেড়ে উঠতে পারলাম না।
আস্তে আস্তে মোমবাতির আলোটা আগের থেকে মলিন হতে শুরু করলো। মোমবাতির অপর পাশে আলো যেতে শুরু করেছে একটু একটু করে। দেখলাম আমার সামনে এক পূর্ণ নারীর অবয়বে কেউ একজন বসে আছে। খোলা চুল। অর্ধেক চেহারা চুলে ঢেকে আছে। তবে বাকি অর্ধেক চেহারাটা দেখা যাচ্ছে না। তিনি কালো রঙের শাড়ি পড়া। লাল পাড় লাগানো। প্রচন্ড সুন্দর কারুকাজ করা শাড়ি এবং পাড়ে। এমন সুন্দর শাড়ি আমি আগে কোনদিন দেখেছি কিনা মনে করতে পারছি না।
আমার তো প্রচন্ড ভয় পাওয়া উচিৎ! কিন্তু এখন কেমন যেন আর ভয় পাচ্ছি না। ইচ্ছে করছে তার চুল গুলো সরিয়ে দিই মুখের উপর থেকে। কিন্তু ভয় না পেলেও ওই সাহসটাতে কুলাচ্ছে না। আলোটা মলিন হয়ে একটা পর্যায়ে থেমে স্থির হয়ে গেছে। এখন আমি সব দেখতে পাচ্ছি। মিষ্টি গন্ধটা এখন আগের থেকেও বেশ তীব্র। বুঝলাম, আমার সামনে যিনি বসে আছেন তার শরীর থেকে এই সুগন্ধ ছড়াচ্ছে।
তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম তার শরীরটা স্বচ্ছ। আমি তার শরীরের মধ্য দিয়ে ওপাশের দেয়ালটা দেখতে পাচ্ছি। দেয়ালটা অন্ধকার না। ওখানেও মোমবাতির আলো আছড়ে পড়ছে। তার শরীর ভেদ করে আলো যাচ্ছে! তবে কি উনি মানুষ? নাকি অন্য কিছু? আত্না?
: কবি!
কল্পনার জগতে ভাবতে ভাবতে নিজের নাম শুনে বুকটা কেমন যেন ধক করে উঠলো।
: কবি!
আবারো ডাকলো। বুঝলাম শব্দটা আমার সামনে থেকে হচ্ছে। আমার সামনে যিনি বসে আছেন, তিনিই ডাকছেন। কন্ঠটাতে প্রচন্ড মায়া ভরা। খুব চেনা, খুব পরিচিত। মনে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে চেনা কারো কন্ঠ। কিন্তু নামটা কেন মনে করতে পারছি না? কেন মেলাতে পারছি না।
: চিনতে পারছো না আমায়?
এবারের এই কথাটা শোনার পর মাথায় কেমন যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো এক রকম। আমার বুঝতে একটুও অসুবিধে হচ্ছে না কে ইনি।
আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে যাচ্ছে। মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে গেলো-
:- মায়াবতী!
সেই চেনা হাতটা এসে আমার গালে স্পর্শ করলো। আমি মায়াবতীর স্পর্শ পেলাম। এই প্রথম। আমার চোখের জল মুছে দিলো। খুব ঠান্ডা স্পর্শ। বরফের মতো।
: কেমন আছো গো? খুব রাগ বুঝি আমার উপর?
ওর প্রশ্নের উত্তরে আমি কিছু বলতে পারছি না। আমার গলা থেকে কোন শব্দ বের হচ্ছে না।
: কি হলো কথা বলবে না? ভালোবাসো না বুঝি এখন আর!
খুব জোরে শ্বাস নিলাম, পৃথিবীর সমস্ত শক্তি গলায় জড়ো করে চিৎকার করে উঠলাম,
:- ভালোবাসি।
: জানি তো আমি। খুব ভালোবাসো তাই না?
:- হ্যা, খুব ভালোবাসি। খুব খুব ভালোবাসি।
বুঝতে পারলাম আমি কাঁদছি, প্রচন্ড জোরে কাঁদছি।
: পাগল আমার! কাঁদছো কেন? তুমি না একটাবার আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলে! আমি এসেছি, এই দেখো! তোমার মনে কত প্রশ্নের ঝড়! আজ আমি সব উত্তর দিতে এসেছি গো।
এভাবে কাঁদবে? কষ্ট দেবে আমায়? তুমি জানো না, আমি কাঁদলে যেমন তোমার কষ্ট হতো! তুমি কাঁদলেও ঠিক আমার তেমন কষ্ট হয়!
:- কই? কাঁদছি না তো! এই দেখো, হাসছি। কেমন আছো গো তুমি?
হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো শেষ করলাম।
: তোমার ভালোবাসা কি খারাপ থাকতে দেয়? বলো!
:- কেন চলে গেলে আমায় ছেড়ে?
: যেতে চাই নি গো, জোর করে নিয়ে গেলো!
:- কত খুঁজেছি তোমায়, জানো? তোমার বাসার ঠিকানাটাও যে আমার কাছে ছিলো না। না ছিলো কারোর নাম্বার! তবুও খুঁজেছি, পথে পথে। পাইনি তোমায়, চলে গেলে, ভালোই। একটাবার ফোন করে জানাতে তো পারতে!
: মৃত মানুষ কি ফোন করতে পারে? বলো!
:- মানে! কি বলছো তুমি এসব? উল্টোপাল্টা!
: আমি তো সেদিনই মরে গেছি গো। বেঁচে আছি তোমার মাঝে। তোমার ভালোবাসার মাঝে। জানি না কিভাবে কি হলো, শুধু জানি, সেদিন আমি মরে গেছি। তোমার ভালোবাসার টানেই এখানে এসেছি।
:- আমায় রেখে চলে গেলে?
.
: যেতে আর পারলাম কই? তুমি তো বেঁধে রেখেছো!
:- আজও দেখা দেবে না? মুখটা ঢেকে রাখবে?
: আজ যে দেখা দিতেই এলাম!
:- চুল গুলো সরিয়ে দেই?
: দাও গো। আজ মন ভরে দেখে নাও।
চুল গুলো সরিয়ে দিলাম। হঠাৎ করে চেহারাটা জ্বলজ্বল করে উঠলো। সেই চেহারা! সেই মায়া! এই চেহারার দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে এক মহাকাল পার করে দেয়া যাবে নিঃসন্দেহে। এই আমার হারিয়ে যাওয়া মায়াবতী।
: এভাবে তাকিয়েই থাকবে? কথা বলবে না?
:- ভালোবাসি।
: আমিও ভালোবাসি।
:- তোমার সাথে নেবে আমায়? আমার যে খুব কষ্ট হয়। তোমাকে ছাড়া।
: এখনো যে সময় হয়নি! যেদিন সময় হবে, ঠিক এসে নিয়ে যাবো। আর কষ্ট পাও কেনো গো? আমি তো তোমার পাশেই থাকি সবসময়। তুমি যখন ঘুমিয়ে যাও, আমি তো তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোই। শুধু তুমি বুঝতে পারো না। আমি আছি তোমার সব কিছুতে। তোমার ভেতরে, তোমার বাইরে। তোমার চারপাশের প্রকৃতিতে। তোমার কান্নার মাঝে, তোমার হাসির মাঝে।
:- আমি যে তোমার সাথে থাকতে চাই। তোমায় মন ভরে দেখতে চাই।
: থাকবে তো! সময় আসুক। দুজনে একসাথে থাকবো। একটা কবিতা শোনাবে? অনেকদিন তোমার গলায় কবিতা শুনি না গো। সেদিনের পর থেকে তুমি আর আবৃত্তি করো না, আমিও শুনতে পারি না।
:- কোন কবিতা শুনবে?
: ওই যে, মৃত্যু নিয়ে তোমার একটা লেখা কবিতা! যেটা তুমি শোনাতে গিয়েছিলে, আমি কেঁদেছিলাম আর তোমায় বকেছিলাম, ওই কবিতাটা। ওটার শেষ কি হলো জানতে পারিনি। এখন জানতে ইচ্ছে হয় খুব।
:- আচ্ছা, শোনাচ্ছি।
এই মায়াবতী !
কাঁদছো কেন? হুম?
ওদিকে কি দেখছো?
ও! রাগ হয়েছে বুঝি?
তোমার চোখের জল আমার সমস্ত কষ্টের কারন!
তুমি জানো না?
আজও কষ্ট দেবে আমায়?
একটু হাসবে?
তোমার মায়াবী হাসির প্রেমে পড়ে যাই প্রতিবার!
তুমি জানো না?
কি? এত রাগ?
কথা বলবে না আমার সাথে?
আমি তো এদিকে!
তুমি ওদিক মুখ করে আছো যে!
তাকাও না এদিকে!
চেয়ে দেখো না আমার দিকে!
দেবে আর একবার তোমার রূপের মায়ায় পড়তে?
তুমি বলেছিলে না-
তোমার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক!
তবে কেন ওই নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে আছো?
ফেলছো চোখের জল?
এই আত্মা আমি তোমার মাথায় হাত বুলাচ্ছি!
অনুভূতি পাও না ভালোবাসার?
কায়া ছেড়েছি বলে একটুও কষ্ট পাইনি-
বিশ্বাস করো!
কষ্ট পেয়েছি তোমায় ছাড়তে হবে বলে।
আর তো মাত্র কিছুক্ষণ তোমায় দেখতে পাবো!
কিছুক্ষণেই যে আমার শেষ গোসল হবে!
সাদা রঙের কাপড়ে জড়ানো হবে আমায়,
নাকের ছিদ্রে ঢোকানো হবে তুলো!
জানো?
দম আটকাবার বেশ ভয় আমার!
নিশ্বাসের বরাবরের কষ্টটাই যে ভয়টা রচেছে!
নাকের ছিদ্রে তুলো গুলো না দিলেই কি নয়?
আবশ্যক হলে থাকুক!
তোমায় ছেড়ে যাওয়া কষ্টের কাছে ওটা কিছুনা।
গোসল শেষে আমার চুলগুলো একটু মুছে দিও তো ভালো করে,
চুলে জল থাকলে আমার যেন কেমন অস্বস্তি হয়!
কাফনের কাপড়ের গিট গুলো একটু ঢিল করে দিতে বলো,
ট্রাউজারের দড়ি টাইট হয়ে গেলে আমার খুব অস্বস্তি লাগতো!
একেবারে টাইট-ফিটিং আমার সহ্য হতে চায় না।
দেখতে দেখতে যে জানাজার নামাযটাও শেষ হয়ে গেলো!
সময় বড় কঠিন বাস্তব গো!
তোমার থেকে আলাদা করার কি তাড়াহুড়ো,
দেখলে?
মায়াবতী,
যাবার যে সময় হয়ে গেল!
এখনো কাঁদবে?
একটু হাসি মুখে বিদায় দেবে না?
জানি তোমার মনের মৃত্যু হয়েছে এরই মধ্যে বারবার।
কি করবো বলো?
আমি যে প্রচন্ড স্বার্থপর!
তোমার হাসিমাখা চাঁদমুখটা দেখতে ইচ্ছে হয় বারবার।
কষ্ট পেও না গো!
তুমি কষ্ট পেলে যে আমার প্রচন্ড কষ্ট হয়-
বলতে পারিনি কখনো।
খুব বেশি দূরে যাচ্ছি না গো!
যাচ্ছি মাত্র আড়াই হাত মাটির নিচে,
যাবো তো প্রকৃতিতে মিশে!
তবু কেন কাঁদো মিছি-মিছে?
মায়াবতী,
প্রতিটিক্ষন থাকবো তোমার পাশে,
প্রকৃতি হয়ে,
গাছের বাঁকলে,
পাতার সবুজে,
আসমানের মেঘে,
ঝড়ের বাতাসে,
বৃষ্টির কনাতে,
রাতের আধারে,
জোনাকির আলোতে,
তোমার চরন তলের মাটিতে।
বৃষ্টিতে ভিজলে যে তোমার শরীর খারাপ হয়!
ভিজবে না একদম,
শুধু হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিও একটু!
ওতেই যে আমার শান্তি!
ঝড়ো বাতাস হলে বাধন থেকে মুক্ত করো তোমার চুলগুলো, আমি ওই মাতাল হাওয়া হয়ে তোমার চুল নিয়ে খেলবো।
চেয়ে দেখো প্রকৃতির সবুজে, আমায় পাবেই পাবে ওর মাঝে।
সকাল সন্ধ্যায় নিয়ম করে বোসো বেলকনিতে,
ইজি চেয়ারটাতে,
মন ভরে দেখবো তোমায়,
“ভালোবাসি তোমায়”-
শুনতে পাবে-
পাখির কলরব আর ঝিঁঝিঁদের ডাকে।
আমার কাছে আসার তাড়াহুড়ো করবে না একদম।
নইলে রাগ করবো কিন্তু ভীষণ।
ওখানে আগে আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে উঠি,
তবে এসে একদিন তোমায় নিয়ে যাবো ক্ষণ!
একটু জায়গা রেখো আমার সমাধি পাশে!
বলে দিও আমি তোমায় নিয়ে গেলে যেন-
তোমায় আলতো করে শুইয়ে দেয় আমার পাশে!
বড় কোলবালিশের বর্ডারটা যেন আর না থাকে।
আরও অনেক কিছু বলার ছিলো,
সময় নেই যে!
ওরা যে আমায় নিয়ে রওনা দিলো বলে।
যাবার আগে আরেকবার তোমার কানে-কানে বলে দিলাম-
ভালোবাসি তোমাকে,
মায়াবতী,
বড় বেশি ভালোবাসি তোমাকে…
: কবি, কেন ভালোবাসো এতো?
:- ভালো না বেসে থাকতে পারি না যে!
: এরপর একা একা আবৃত্তি করবে মাঝে মাঝে। আমায় শোনাবে। তোমার কবিতা না শুনলে আমার বুক শুকিয়ে যায়।
:- আচ্ছা শোনাবো। গভীর রাতে। যখন শহর ঘুমিয়ে যায়।
: তোমার ড্রয়ারে আমার একটা ছবি আছে। তুমি এঁকেছ। দেখেছি আমি। তুমি যখন ছবিটা তোমার বুকের উপর রাখো, তখন আমার খুব শান্তি হয়।
:- এটাই কি তবে ভালোবাসা?
: তোমার থেকে ভালো আর কে জানে?
:- ভালোবাসি, বড় বেশি ভালোবাসি।
: আমিও ভালোবাসি গো। আজ যে যেতে হবে। সময় ফুরিয়ে এসেছে।
:- একবার জড়িয়ে ধরবে আমায়?
স্বচ্ছ অবয়ব নিয়ে আমার মায়াবতী উঠে দাঁড়ালো। আমার হাত টেনে আমাকে দাড় করিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলো। শান্তিতে চোখ বুঁজে গেলো আমার। আমার বুকে ওর নিশ্বাস পড়ছে। ওর শরীরের মতো নিশ্বাসটাও বরফের মতো ঠান্ডা। বুঝতে পারছি ও কাঁদছে। একটু পরে আমার কপালে ও ঠোঁট ছোয়ালো। প্রচন্ড ঠান্ডা। এমন শীতল অনুভূতি আগে কোনদিন পাইনি।
সাথে সাথে চোখ খুললাম। আমার রুমে আবিষ্কার করলাম নিজেকে। ফোনের টর্চটা জ্বেলে লাফ দিয়ে উঠে ড্রয়ারটা টান মেরে খুলে ওর ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরলাম। দেখলাম ছবির নিচে একটা চিরকুট পড়ে আছে। ওতে লেখা-
“ভালোবাসি, ভালোবেসো”।