মেয়ে বলে কি কোনো স্বাধীনতা নেই?
কতোবার করে আব্বু-আম্মুকে বোঝালাম এতো তারাতারি বিয়ে দেওয়ার কি আছে।কোথাও পালিয়েতো যাচ্ছিনা। কে
শোনে কার কথা।
সব দোষ ঐ পাজি ঘটক গুলোর।
কোনো বাসায় মেয়ে দেখেছেতো পাত্রের লিস্ট নিয়ে হাজির।ছেলেদের এমন সব প্রশংসা করে যে এখন মেয়ের বিয়ে না দিলে সারাজীবনেও আর এমন ভালোপাত্র পাওয়া যাবে না।
সেজন্যই আব্বু আম্মু এখন আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পরে লেগেছে।
ওহ আমার পরিচয়টাই তো বলা হলো না
আমি আয়েশা ইসলাম পুর্না
আব্বু-আম্মুর খুব আদরের মেয়ে।
বিশেষ করে আব্বুর কারন ছোট থেকে আজ পর্যন্ত তার কোনো কথার অবাধ্য হইনি।
মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের।না চাইতে আব্বু সব দিয়েছে।আব্বুকে অনেক ভালবাসি।
তাই প্রেম ভালবাসায় কখনো জরাইনি।
কারন আব্বু কষ্ট পাবে এমন কিছু করবনা।
আর বিয়েটাও তাদের ইচ্ছেতেই করব।
পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছি।
এর আগেও দুই বার এমন পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হয়ে ছিল।অনেক কষ্টে আব্বু-আম্মুকে বুঝিয়ে সেগুলোকে বাদ দেওয়া গেছে।
কিন্তু আপদ আবার এসে হাজির।
এখন একটাই চিন্তা এই সমন্ধটা কিভাবে আটকানো যায়।
ওহ শুনেছি পাত্রের নাম নাকি নীল।একবার আড়চোখে পাত্রের দিকে তাকিয়েছিলাম।
নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে ভালই কিন্তু তাতে কি আমি তো এখন বিয়ে করবনা।
পাত্রের মায়ের নাকি আমাকে খুব পছন্দ এখন পাত্র পছন্দ করলেই বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে।
সবাই বলছে আগে দুজনের আলাদা কথা বলা দরকার।আম্মু বলল আশা নীলকে উপরে নিয়ে যাও।
আমি ছাদের দিকে যাচ্ছি নীল ও আমার পিছু পিছু আসছে।
মনে মনে ভাবছি নীলকে এমন কিছু বলব যাতে বিয়েটা না হয়।
কিন্তু কি বলব?
আমি আর নীল এখন ছাদে দাড়িয়ে আছি।
দুজনেই চুপ করে আছি।
নীল এখনো নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে।
তারপর নীল ই প্রথমে নিরবতা ভেঙ্গে বলল,
নীল:আমার কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে যেটা আপনাকে জানানো টা খুব জরুরী।
হয়তো কথাটা জানানোর পরএই বিয়েটা আর হবে না।তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
তবুও কথাটা বলতে হবে।
আমি:বাহ আমিও তো এটাই চাই যাতে বিয়েটা না হোক(মনে মনে বললাম)
>জ্বি কি কথা বলুন?
নীল:আমি একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসতাম ওর নাম নীলিমা।
নীলিমাও আমাকে খুব ভালোবাসতো।ওর ব্রেইন টিউমার ছিল। সেটা যখন জানতে পারলাম তখন খুব দেরি হয়ে গেছে।
ওর হাতে মাত্র এক মাস সময় ছিল।
নীলিমার খুব ইচ্ছে ছিল আমার বউ সাজার।আগে বললেও অসুখ ধরা পরার পর আর কখনো বলেনি।আমি ডিসিশন নেই নীলাকে বিয়ে করব।
কিন্তু নীলা রাজি ছিলনা কারন ওর হাতে সময় খুব কম ছিল।
তবুও অনেক বলে ওকে রাজি করিয়েছি।
আমি নীলিমাকে বিয়ে টাও করলাম।
এর কিছুদিন পর ই আমাকে ছেড়ে নীলা চলে যায়।
>কথাগুলো বলার সময় দেখলাম নীলের চোখ দুটো ছলছল করছিল।
পিছন ফিরে চোখ দুটো মুছে আবার বলা শুরু করল
-নীলা চলে গেছে আজ ছয় মাস হবে।
বলেছি আর কখনো বিয়ে করবনা।
বাকি জিবনটা ওর স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দেব।
কারন নীলার জায়গাটা কখনো কাওকে দিতে পারবনা।
কিন্তু আমার মা খুব অসুস্থ।
আর তিনি চান আমার আবার সংসার হোক।তাই আর না করতে পারিনি।
এতকিছু জানার পরও আপনি বিয়েটা করবেন কিনা সেটা আপনার ইচ্ছা।
কথাগুলো বলেই নীল নিচে চলে গেল।
আমি তখনও ছাদে দারিয়ে।কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসল।
কেনো জানি নীলের প্রতি একটা ভালো লাগা অনুভব করলাম।
যখন নিচে গেলাম আব্বু-আম্মু জিজ্ঞেস করলেন নীলকে আমার পছন্দ কিনা।
দেখলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার উত্তর টা জানার জন্য হয়তো।
কি মনে করে হ্যা বলে দিলাম।
সবাই খুব খুশি।
শুধু নীল অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঔ দিন ই বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো।
আগামী সপ্তাহে বিয়ে।
আজ বিয়েটা খুব ভালো ভাবেই সম্পূর্ণ হলো।
এখন আমি নীলেররুমে বসে আছি।খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে রুমটা।
অনেক্ষন পরে নীল ঘরে ঢুকলো।
এসেই খাটের এক কোনায় বসে পড়ল।
-একটা কথা বলব?(নীল)
>হুম বলুন(আমি)
-আপনাকে তো আমার জিবনের সব কথাই বলেছি।তবুও এই বিয়েতে কেনো রাজি হলেন?
আপনাকে তো আমি বলেছি আমি নিলিমার জায়গাটা কাওকে দিতে পারবনা।
>আমি নীলার জায়গা চাইনা শুধু নিজের জন্য একটা জায়গা বানাতে চাই।আপনি শুধু একটু সুযোগ দিলেই হবে।(একটু মুচকি হেসে বললাম)
নীল কিছু না বলে খাট থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।
আমি খাটে বসে নীলের দিকে তাকিয়ে আছি।
নীলকে দেখে মনেই হয়না ওর মনে এতো কষ্ট লুকিয়ে আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি টেরই পাইনি।
এভাবেই কিছুদিন চলে গেলো।নীল খুব কম কথাই বলে আমার সাথে।
শুধু আমার সাথে না নীলা চলে যাওয়ার পর থেকেই নাকি দরকার ছাড়া কারো সাথে বেশি কথা বলে না।
আমার শশুড়,শাশুড়ি,ননদ সবাই খুব ভালো।
সবাই খুব ভালবাসে আমায়।
সারাদিন আমি আর নিরা বসে অনেক গল্প করি।(নিরা নীলের একমাত্র ছোট বোন)
নিরা নীলিমার বেপারেও আমাকে অনেক কথা বলেছে।নীলা চলে যাওয়ার পর থেকেই নাকি নীল কেমন যেনো হয়ে গেছে।
ঠিক মতো খেতনা কথা বলত না।
হাসতে ভুলেই গেছে।
তবে আগের থেকে এখন একটু সাভাবিক।
নীল যখন অফিসে থাকে তখন একটু পর পর ওকে ফোন করি।
কি করছে,,ঠিক মতো খেয়েছে কিনা খবর নেই।
জানি ও অনেক বিরক্ত হয় কিন্তু কখনো কিছু বলেনা।কম কথা বললেও ভালো ব্যবহারকরে আমার সাথে।
নীরার কাছে শুনেছি কাল নীলের জন্মদিন।
তাই আমি ও নীরা বিকেলে মার্কেটে যাই।
নীলের জন্য একটা ঘড়ি ও একাটা নীলরঙের একটা সার্ট কিনে আনি।
রাতের খাবার শেষে সবাই ঘুমাতে চলে গেছে।
আর নীল ঘরে বসে বসে অফিসের কাজ করছে।
আমি বসে নীলের দিকে তাকিয়ে আছি।
কেনো জানি খুব ভাল লাগে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে।লাগবেই না কেনো ওকে যে ভালবাসতে শুরু করেছি।
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো,,কিছু বলবেন?(নীল)
>মাথা নেরে না সূচক উত্তর দিলাম।
– রাত অনেক হয়েছে শুয়ে থাকুন।
বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে রইলাম।
কিন্তু ঘুম আসছেনা তাই নীলের কথা ভাবছি।
আচ্ছা নীল কি আমাকে কখনো ভালবাসতে পারবে?
ও কি ওর অতিত ভুলে সব নতুন করে শুরু করতে পারে না?
নীলের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর কাজ শেষ।
বসে বসে কি যেন ভাবছে।
হঠাৎ করেই রুম থেকে চলে গেলো।
অনেক্ষন হয়ে গেল এখনো আসছে না।
এতো রাতে কোথায় গেলো। সবাই ঘুমাচ্ছে কারো রুমে তো যাবেনা তাহলে?
আমি উঠে সবার রুমের দিকে তাকালাম সব দরজা বন্ধ। হঠাৎ ই মনে হলো ছাদে হতে পারে।
নীরা বলেছিল প্রায় সময় ই নীল ছাদে গিয়ে একা একা বসে থাকে।
তাই ছাদেই চলে গেলাম।
ছাদে গিয়ে দেখি নীল ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে।
আমি ওর সাথে গিয়ে দারালাম।
>এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে আছেন যে?(আমি)
-এমনি ঘুম আসছিল না।
আপনি এখানে কেনো?(নীল)
>আমারও ঘুম আসছে না তাই।
কিছুক্ষন দুজনেই চুপ ছিলাম তারপর নীল নিরবতা ভেঙ্গে বলল,
-আজ নীলিমার কথা খুব মনে পরছে।
রাতে নীলার যখন ঘুম ভেঙ্গে যেতো এখানে বসে ও আমার কাধে মাথা রেখে চাদ দেখত।
আর যখন মন খারাপ থাকতো আমাকে গান গেয়ে ওর রাগ ভাঙাতে হতো।
পাগলি একটা।
ছোট ছোট জিনিস নিয়ে বায়না করতো খুব।
কথা গুলো বলেই নীল হাসতে শুরু করল।
নীল এই প্রথম আমার সাথে মন খুলে কথা বলছে।
আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
কি সুন্দর করে হাসতে পারে ছেলেটা।
খুব ইচ্ছে করছে নীলের কাধে মাথা রেখে চাদ দেখার।
ওর গান শোনার।শুনেছি নীল খুব ভাল গান গায়।
>একটা গান শোনাবেন?(একটু ভয়ে ভয়েই বললাম)
-……..(নীল চুপ করে আছে)
এমন আবদার করব হয়তো ভাবেনি তাই।
>থাক এখন লাগবেনা আপনার যখন ইচ্ছে তখনই শুনিয়েন।(একটুহেসে বললাম)
আবারো দুজনেই চুপ করে আছি।কি বলব বুঝতে পারছিনা।তখন নীল বলল
-আপনি রুমে যান অনেক রাত হয়েগেছে।
>আপনিও চলুন
-আপনি যান আমি আসছি
ইচ্ছে করছেনা যেতে। তবুও নিচে যাওয়ার জন্য পা বারালাম।
কয়েক পা এগিয়ে যেতেই মনে পড়ল ওহ আমিতো নীল কে উইস ই করলাম না।
আবার পিছনে ফিরে নীলের সামনে এলাম।
– কি হল কিছু বলবেন?(নীল)
>হুম-হুম বলুন
>হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
-থ্যাংকস
>একটা কথা বলব?
– জ্বি বলুন।
> আমার বন্ধু হবেন?(নিচের দিকে তাকিয়ে)
নীল কিছু বলল না শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে হাতটা বারিয়ে দিল।
আমিও একটা হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম।
>আরেক টা কথা আমাকে তুমি করে বলবে।
-ঠিক আছে চল এবার যাওয়া যাক।
>হুম চল
পরের দিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় নীলকে বললাম যেন তারাতারি চলে আসে।
উত্তরে বলেছিল ঠিক আছে।
মাকে জিজ্ঞেস করে নীলের পছন্দের খাবার গুলো আমি নিজেইরান্না করলাম।
কিছুক্ষন পর নীল চলে আসবে তাই রুমে গিয়ে ওর জন্য আনা গিফট টা টেবিলে রেখে আসলাম আর সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট ও লিখা ছিল
“ছোট্ট একটা গিফট পছন্দ হবে কিনা জানিনা তবে গ্রহন করলে খুশি হব”।
আজ নীল অফিস থেকে খুব তারাতারি ই এসেছে।
এসেই ফ্রেস হতে রুমে গেলো।
আমি সবার সাথে ড্রইং রুমে বসে আছি আর চিন্তা করছি নীল কি গিফট টা দেখেছে।
ওর কি পছন্দ হবে?
এসব চিন্তা করতে করতেই দেখি নীল আমার সামনে দারিয়ে আমিতো পুরোই অবাক
নীল আমার দেওয়া সার্ট ও ঘড়ি দুটোই পরে আছে।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা।
খুব সুন্দর লাগছে নীললে সার্টটাতে।
নীরা: আরে বাহ ভাইয়া তোকেতো দারুন লাগছে। ভাবির পছন্দ আছে বলতে হবে।
নীল কিছু না বলে শুধু একটা হাসি দিল।
সবাই বসে রাতের খাবার খাচ্ছে।
<জানিস ভাইয়া আজ রান্না ভাবি করেছে তাও সব তোর পছন্দের।
নীল একবার আমার দিকে তাকালো তখন কিছুটা লজ্জা পেলাম।
খাওয়া শেষ তাই যে যার মতো চলে গেলো।
-থ্যাংকস (নীল)
>থ্যাংকস কেনো?(আমি)
– না এমনি।(একটু হেসে)
>এমনি এমনি কেও থ্যাংকস দেয়?
– হুম আমি দেই।
ইদানিং নীলের মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করলাম।
সবার সাথে হেসে কথা বলে।
আগের মত চুপচাপ থাকেনা।
আগের থেকেএখন একটু বেশিই কথা হয় নীলের সাথে আমার।
অফিসের কাজ কম থাকলে নীল নিজে থেকেই আমায় ফোন করে গল্প করে।
নীলের প্রতি আমার ভালবাসাটা দিন দিন বাড়েই চলছে।
আমি যে নীলকে ভালোবাসি সেটা আমার আচরন ও কথায় তো নীলের বুঝার কথা।
ও কি বুঝেনা নাকি বুঝতে চায় না।
আজ খুব বোরিং লাগছে তাই আলমারি টা একটু গুছাচ্ছিলাম।
ড্রেস রাখার জন্য আলমারিতে আমার আর নীলের সাইট ভিন্য ছিলো।
আমি কখনো ওর সাইটে হাত দেইনি।
যদি কিছু মনে করে।
কি মনে করে আজ ইচ্ছে হল।
কিন্তু কি গুছাবো সব তো গুছানোই আছে।
অদ্ভুত আমি জানতাম ছেলেরা বেশির ভাগ অগুছালোই হয়।কিন্তু নীল তো একদমই অমন নয়।
আলমারির দরজা বন্ধ করতে যাব হঠাৎ কিছু একটা চোখে পড়ল।
হাতে নিয়ে দেখলাম এক মুঠো নীল রঙের কাচের চুরি।খুব সুন্দর ছিল চুরিগুলো।
তাই কিছু না ভেবেই পড়ে ফেললাম।
কিছুক্ষন পর নীরা আসলো ভাবী আসব?
>আরে আসতে আবার জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি?আসো।
<বাহ চুরি গুলো তো খুব সুন্দর।ভাইয়া এনে দিয়েছে নিশ্চই(আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল)
>(কিছু না বলেই একটা হাসি দিলাম)
<হুম বুঝেছি (মিটি মিটি হাসছে আর বলছে)
এমন সময় কলিং বেল টা বেজে উঠলো।
মনে হয় নীল এসেছে।
তাই দরজা খুলতে গেলাম।দরজা খুলতেই কিছু না বলে নীল রুমে চলে গেলো।
দেখে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে মনে হয় কাজের চাপ একটু বেশি ছিল আজ।তাই এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখি নীল চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।
>অফিসে কাজের চাপ কি বেশি ছিলো? (পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিতে দিতে বললাম)
নীল গ্লাস টা নিয়ে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল
-এই চুরি গুলো কোথায় পেলে তুমি?(রাগি শুরে)অনেক টা ভয় পেয়ে গেলাম কারন রাগে নীলের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
-কি হল বলছোনা কোথায় পেলে এই চুড়ি?(আরো বেশি রেগে)
>আলমারিতে ছিল তাই(ভয়ে ভয়ে বললাম)-আলমারিতে থাকলেই পড়তে হবে?
আমি বলেছিলাম পড়তে?(খুব জোরে জোরেই বলছে)
>…..(চুপ করে আছি)
– আর কখনো না বলে আমার কিছুতে টাচ করবেনা।
খুব কান্না পাচ্ছে।এই প্রথম নীল আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করলো।
কান্না করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।
আসার সময় দেখলাম নীরা ও মা দরজার সামনে দারিয়ে আছে।এতক্ষন সব শুনেছে মনেহয়।
অনেক্ষন ধরে ছাদে দারিয়ে দারিয়ে কান্না করছি। কি এমন করেছি যে এতো বকা দিতে হয়।
এসব ভাবছি আর হাতের চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হল।
ওখানেই দারিয়ে আছি।পুরো ভিজে গেছি তবুও।আজকে কেনো জানি ভাল লাগছে ভিজতে।
কিছুক্ষন পরে কারো আসার শব্দ পেলাম।পিছন ফিরে দেখি নীল।
আবার মুখ ফিরিয়ে নিলাম।নীল আমার পাশে এসে দাড়ালো।
-মন খারাপ?(আমার দিকে তাকিয়ে বলল)
>এই বৃষ্টির মধ্যে কেনো এসেছেন?
চলে যান নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে।(অভিমানি কন্ঠে বললাম)
-তুমিও তো ভিজছো তোমার ঠান্ডা লাগবেনা?(নীল)
>আমার কিছু হলে আপনার কি?(অভিমানি কন্ঠে)
-তাহলে আমার কিছু হলে তোমার কি?
>আমার অনেক কিছু(অভিমানি কন্ঠে)
-অনেক কিছু টা কি জানতে পারি?(মুচকি হেসে)
>এতক্ষন বকাবকি করে এখন এসে হাসছে অদ্ভুত(মনে মনে বললাম)
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলল
-এই গান শুনবে?
নীলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ও নিজে থেকে গান গাইতেচাইছে।
কিছু না বলে নীচের দিকে তাকিয়ে আছি।
“আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে তুমি আনমনে বসে আছো আকাশ প্রানে দৃষ্টি উদাস আমি তোমার জন্য এনে দেব মেঘ থেকে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি হাওয়া সে হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি”
নীল গান গাইছে আমি মুগ্ধ হয়ে ওর গান শুনছি। কি অসাধারন গাইতে পারে নীল। ভুলেই গেলাম একটু আগে ও আমায় বকেছে।
-সরি আশা তখন ওভাবে বলাটা আমার ঠিক হয়নি।আসলে মাথা ঠিক ছিলনা।(নিজের কানে ধরে বলছে)
ওর কানে ধরা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছিল।
অনেক কিউট লাগছে ওকে।
>ওভাবে বলছ কেনো। দোষটা আমারি।আমি খুব সরি।তোমাকে না বলে চুড়ি গুলো পড়া ঠিক হয়নি।
– আসলে এই চুড়ি গুলো আমি নীলিমার জন্য এনেছিলাম।ওর খুব প্রিয় ছিল এগুলো।কিন্তু কখনো পড়তোনা।শেষ একদিন দেখেছিলাম পড়তে।যেদিন ও চলে গেলো।
-আজ তোমার হাতে চুড়ি গুলো দেখে নীলিমার শেষ মুখটা ভেসে উঠলো।
তাই আর নিজেকে মানাতে পারিনি।
কথা গুলো শুনে নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছে।এটা একদম ঠিক করিনি আমি।
চুড়ি গুলো খুলে নীলের হাতে দিয়ে বললাম সরি আর কখনো এমন হবেনা।
তারপর নিচে যাবার জন্য এগুলাম।কিন্তু হঠাৎ আমার হাতে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।
আমি কি ভুল দেখছি?
হ্যা নীল আমার হাত ধরে রেখেছে।
আমি অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আছি।
নীলঃ আমি ভেবেছিলাম নীলিমার সাথে সাথে আমার জিবন থেকে বেঁচে থাকার মানে হারিয়ে গিয়েছে।
-আমি সেই মানেটাকে আবার খুজে পেয়েছি তোমার মঝে।
-নিজের অজান্তেই তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
তুমি বলেছিলেনা নীলার জায়গা নয় নিজের জন্য একটা জায়গা বানাতে চাও?
তোমার সেই জায়গাটা যদি আমি দেই তুমি কি সেটা নিবে??
কি বলব আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুচ্ছে না।নীলকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম।
কিন্তু আমি কাদছি কেন আমার তো সুখের দিন আজ।
যা চেয়েছি তার থেকে অনেক বেশি পেলাম।
-আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে নাতো?(নীল)
>যাবোনা তবে আমার কিছু শর্ত আছে
– কি শর্ত?
১.আমাকে অনেক বেশি ভালবাসতে হবে।
২.মাঝরাতে রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তোমার কাধে মাথা রেখে চাদ দেখব।
৩.আমার মন খারাপ থাকলে গান শুনিয়ে মন ভালো করতে হবে।
কি রাজি তো???
নীল আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল হুম আমি রাজি।