অভ্রের সাথে আমার যখন বিয়েটা হয়, বুঝতেই পারিনি কি হতে যাচ্ছে। খুব হঠাৎ করে আর খুবই সাধারণভাবে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেল। সাধারণ বলতে আসলে অনুষ্ঠানটার কথা বলতে চাচ্ছিনা, অনুষ্ঠান একটা হয়েছে মাশাল্লাহ, কিছুরই অভাব ছিল না। বলছিলাম পুরো প্রক্রিয়াটার কথা । কোথায় কেউ এসে আমাকে একটু খোঁচা দেবে…” আপু, বরটা তো সে রকম পেয়েছেন”।অথবা বিয়ের পর কি কি হবে সেসব নিয়ে দু’একটা কথা বলতে ছাড়বে না, এমন কিছুই হয়নি। বিয়ের আগে থেকে শেষ পর্যন্ত এমন একটা ভাব ছিল সবার, সব গরজ মিথিলার, ওর বর কেমন হবে তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা করে ফাটিয়ে ফেলার কি দরকারটা শুনি!
খুবই হতাশার সাথে বিয়ের দিন লক্ষ করলাম, পাশে বসা ছেলেটাকে আমি বিন্দুমাত্র চিনি না। নামটাই জানি শুধু, একবার যে ডিজিটাল যুগে ফোন করে একটু কথাটথা বলে নিব সেই কাজটাও করিনি। আমার বান্ধবীরা সব প্রেম করে বিয়ে করছে, বিয়ের দিন জামাইয়ের সাথে ঢলে ঢলে ছবি তুলছে,তাদের সে কি হাসি! মাঝে মাঝে আমরা শালীরাও ঢলে ঢলে ছবি তুলেছি…
আর আমার ক্ষেত্রে! একবার অভ্র আমাকে দেখতে আসল , আর একবার অভ্রের হাতে আংটি পরিয়ে ওকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেললাম। সম্পত্তি হল ঠিক, এমনই সম্পত্তি যার সম্পর্কে কিছুই জানা হল না।
আমি খুবই লুতুপুতু টাইপের মেয়ে , ভালবাসতে বাসতে লাল করে ফেলি এমন । সারাদিন কাঁদিয়ে আধমরা করে ফেলা টাইপ বইপত্র পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে যাই, আমার মন ক্লান্ত হয়না। বন্ধুদের তাড়া দি, ” এই ওই রোমান্টিক ছবিটা আমাকে কখন দিবি বলতো?” আমার চারপাশের মানুষ আমার জ্বালায় এককথায় অতিষ্ঠ । আমার খুব প্রিয় বান্ধবী আমাকে বলে, এত বইপত্রের হিমালয় না জমিয়ে তোরই মত , বা আরও এক কাঠি বাড়া লুতুপুতু টাইপ একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেল, আমরাও বাঁচি তোর ঘ্যানঘ্যানানি থেকে , আর তোরও একটা গতি হোক। নাহলে যেই হারে বই কিনছিস আঙ্কেলকে কিছুদিন পর ব্যাংকরাপ্ট এর মামলা খেতে হবে।
আমার কি দোষ? প্রেম করতে পারব না জানি, প্রেম করার সাহস বা ধৈর্য কোনটাই আমার নেই। তাই এই প্রেমের স্বর্গরাজ্যে হানা দেয়া। আমি গর্তের মানুষ। গর্ত থেকে আমাকে নিশ্চয়ই কেউ একদিন না একদিন টেনে বের করবে। আমি তো শুধু স্বপ্ন দেখে যাব, এক রাজপুত্র আসবে, আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, সাদা শুভ্র আমি হারিয়ে যেতে চাই সেই স্বপ্নের মাঝে।
হায় পোড়া কপাল, এসব কি হচ্ছে আজকে !
চিনিনা , জানিনা, এই ছেলেকে আমি বিয়ে করে ফেললাম। একটা দিন প্রেম করার সুযোগটা পর্যন্ত দিলাম না নিজেকে।
সত্যি বলতে, বিয়ের দিন আমি যতটা না কাঁদলাম বাবা মায়ের জন্য, তার থেকে বেশি কাঁদলাম নিজেকে নিয়ে । গাধী একটা । বলল , আর বিয়ে করে ফেলতে হবে !! রাগ লাগছে এখন, সব ভেঙ্গেচুড়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ছেলেটার মাথায়ই ।
আহারে, আমার এই বর , এখনো জানেই না, তার সদ্য বিবাহিত বউ তাকে নিয়ে কি সব বিধ্বংসী চিন্তাভাবনাই না করছে । আমি তাকাচ্ছি বারবার ওর দিকে , কিন্তু এই হাঁদারাম একবারও আমার চাঁদবদন মুখটার দিকে তাকানোর কসরত পর্যন্ত করছে না । ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছ ভাল কথা বাবা, যন্ত্রপাতি ছাড়া আর কি কিছু চোখে পড়ে না !!
হাঁদারাম !
যা ভাবলাম তাই, আমি পুরা একটা হাঁদারামকে বিয়ে করেছি । বিয়ের প্রথম রাতটাই তার প্রমাণ । কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু এই ছেলের সাথে …” আপনি ভাল আছেন মিথিলা?…জি আমি ভাল আছি…” এই দুই বাক্য ছাড়া আর কোন কথাই হয় নি ।
মিথিলা, তুমি মরেছ । তোমার আজীবনের সাধ , তুমি এখন পাটায় পিষে খেয়ে ফেলতে পার ।
জানিনা, আমার আশাভঙ্গের আর জীবন পাল্টে দেয়া সেই রাতটায় আমি কেমন করে ঘুমালাম । দু’ চোখের পাতাতো এক হওয়াই উচিৎ না, অথচ আমি ঘুমালাম । এমন ভাব, জীবনেও ঘুমাইনি, আর কখনো সুযোগও হবে না , যা ঘুমিয়ে নেয়ার আজকেই ঘুমিয়ে নাও । সকালে ঘুম ভাঙতে যে আরও বিপদে পরবো , বুঝিনি । মাথাটা এখনো অভ্যস্ত হয় নি, আমি এখন আর আমার বাসায় নেই, আমকে এখন আর মা আদর করে ডেকে দিবে না । আমাকে এখন নিজে নিজেই উঠতে হবে, পারলে বাড়িসুদ্ধ মানুষকে ঘণ্টি বাজিয়ে ডেকে তুলতে হবে, আরও কতকি!!
সকালের রোদটা আমার একেবারে চোখে এসে পড়লো । আর ঘুমাতে পারলাম না , চোখ খুলতেই হল। মিটিমিটি চোখে তাকাচ্ছি চারপাশে , অচেনা অজানা একটা রুম।
মানুষটা কোথায় গেল ? ইসস…আমি মনে হয় বেশি দেরি করে ফেলেছি ।
কাউকে খুঁজে পেলাম না ঘরটায় । আজব ছেলে, একটাবার যে আমাকে ডেকে দিয়ে যাবে, সেটাও করল না । ধ্যাত। হাঁদারাম পুরা ।
আমি টেবিল ঘড়িটার দিকে হাত বাড়ালাম । এই রুমে কোন বড় ঘড়ি নেই। ঘড়ি ধরতে গেলাম ঠিক , কিন্তু হাতে ঠেকল অন্য কিছু, গরম কিছু।
একটা কফির মগ । আর একটা ছোট্ট চিরকুট ।
“মিথিলা,
ঘুমাচ্ছিলেন। তাই আর জাগালাম না । চিন্তা করবেন না , আমার বাসার মানুষজন একটু বেশি বেলা করে ঘুমায় ।
কফি তৈরি করে রেখে গেলাম । শুনেছি আপনার পছন্দের। খেয়ে নেবেন ।”
আমি আর কি বলব । পুরা চুপ হয়ে গেছি । কখনো ভাবিনি , আমার জন্য এই মানুষটা কফি বানিয়ে রেখে যাবে ! কখনো মাকেই সকালে একটা কাপ কফি দেয়াতে রাজি করাতে পারিনি।
আরে, এসব কি না কি ভাবছি ! কফিই তো বানিয়েছে, কফির ফ্যাক্টরি বানিয়ে ফেলেনি আমার জন্য । একটা কাপ কফির জন্য এই হাঁদারামের প্রতি আমার ভালবাসার ঢেউ উছলে পড়া কি ঠিক? মোটেও না ।
মিথিলাকে আল্লাহ শুধু মনটাই দিয়েছে , মাঝে মাঝে মনে হয় । বুদ্ধিটা আল্লাহ প্যাকেট করে অন্য কোথাও রেখে দিয়েছে, আমি যেন কোনদিন ওটার নাগাল না পাই।
সেই দিনটা যে খুব খারাপ কাটল , তা না । হাঁদারামের বাড়ির লোকজন আমাকে ভীষণ পছন্দ করে, প্রমাণ পেলাম । করবেই তো, রূপসী মেয়েদের সব জায়গায়ই দাম আছে, আমি কি দেখতে খারাপ নাকি খুব !
নানা কাজে দিনটা পার হয়ে গেল । দাওয়াত খেতে গেলাম , বাসায় ব্রিগেড ভর্তি মানুষজন আসল, সবাইকে আমার পাউডারে সাদা বানানো চেহারাটা একনজর করে দেখাতে হল। আর কি প্রশংসা! প্রশংসার বানে মাঝে মাঝে মনে হল , পালিয়ে সুন্দরবন চলে গেলে এর থেকে খুশি হতাম মনে হয়।
আমার বরটা কিন্তু সারাক্ষণ আমার আশেপাশেই ছিল । কিন্তু আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম তার আড়ালে আড়ালে থাকার শক্তি দেখে। অবাক হলাম, আমি আসলেও বুঝতে পারছিনা এই ছেলের অস্তিত্ব। সব আত্মীয়দের সাথে ও মিশছে , আমার প্রায় পাশেপাশেই থাকছে । একটুও শিহরণ জাগছে না মনে। আমি কি ঠাণ্ডা হয়ে গেলাম!
মোটেও না। এ আমার রাজপুত্র হতেই পারেনা । আমি ওকে অনুভব করতে পারিনা । সিনেমাতে টম ক্রুয , শাহরুখ খান সবাইকেই মনে হয় আমার রাজপুত্র । আর আমার সত্যিকারের বর , যার সাথে আমার ১০ লক্ষ ১ টাকা দেনমোহরে কাগজে সই করে বিয়ে পর্যন্ত হয়ে গেল , আমার ভিতর তার কোন মূল্য থাকছে না।
তবুও তো, জীবন চলে , থেমে থাকে না । আমরাও চলি । কষ্ট হলেও চলি । চলতে চলতে হোঁচট খাই, ফের উঠে দাঁড়াই ।বিধাতার হাতের মোমের পুতুল আমরা, সুতা যেদিকে টান পরবে , সে দিকেই চলতে হবে । আমার সুতা আমাকে এই বাসায় এনে ফেলেছে , আমাকে এখান থেকেই এগুতে হবে , পিছনে সামনে ডানে বাঁয়ে কোন দিকে ঘুরার আর সুযোগ নাই ।
সপ্তাহ ঘুরে । সাতদিনের কোটা পার করে আমরা এখন অষ্টম দিনের স্বামী স্ত্রী । একটা মানুষকে জানতে নাকি মাত্র কয়েকটা মুহূর্তই প্রয়োজন হয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হয় না। আমি বেশি স্বপ্ন দেখেছিলাম তো, তাই ২৪ পূরণ ৭ ঘণ্টা পরেও আমি আমার পাশের মানুষটাকে চিনতে পারিনি । এত সুন্দর , ভদ্র আর কিউট একটা ছেলে , আমি সবসময় চেয়েছিলাম , ঠিক তেমন একটা ছেলেই আমার চারপাশে ঘুরাফেরা করে , আশ্চর্য , আমি তাকে চিনতে পারি না । কেন আমি পড়তে পারিনা একে , কেন আমার অপেক্ষাগুলো শেষ হয় না!!
আমার খুব প্রিয় আকাশ দেখা । বেশি ভাবুক তো, উদাসীনের সব লক্ষণ একেবারে কায়দা করে রপ্ত করেছি । আমাদের বিশাল রুমটার সাথেই একটা ছোট খোলা বারান্দা আছে, দখিনে মুখ তার । আমার ভীষণ প্রিয় জায়গাটা । সারাটা দিন এখানে সেখানে মানুষের পদধূলি নিতে নিতে জান যায় , তাই দিনে এখানে আসা হয় না । কিন্তু রাতটা শুধুই আমার । অভ্র ঘুমিয়ে পড়ে । তারপর এসে বসি এখানটায় । আকাশের সাথে কথা বলি । তারাগুলো আমার বন্ধু । বিচার চাই তাদের কাছে । আমার স্বপ্নগুলোতো ওরাই তৈরি করে দিল । মুক্ত আকাশের নিচে ভালবাসাবাসি করার স্বপ্নটা কি আমার পূরণ হবে না! এলো বাতাসকে বলি , আমাকে গল্প শুনিয়ে যাও , আমার জীবনটা এমন হল কেন?
আফসোস , আজ সবাই নিশ্চুপ । কারো কাছে কোন শব্দ নেই …
অভ্রের সাথে যখন গাড়িতে বসে থাকি , খুব ইচ্ছা করে ওর হাতটা একটু ধরি । গিয়ারে ধরা ওর হাতটা একটু কেঁপে যাক । সামনের কাঁচটা একটু ঝাপসা হয়ে যাক । একটু গাড়িটা নেচে উঠুক । আমিও নেচে উঠি সেই সাথে , আনন্দে।
কিছুই হয়না । ও সামনেই তাকিয়ে থাকে , রাস্তায় খুব মনোযোগ । আমিও গাড়িগুণার চেষ্টা করি , এক দুই তিন
দখিনের বারান্দাটায় একটা ছোট্ট গোলাপ গাছ আছে। কেউ দেখে না। অযত্নে অবহেলায় সে দিন গুজরান করে। বেচারা একটু পানিটুকুও পায় না। তাতে কি , প্রকৃতি তার সন্তানদের নিজ দায়িত্বে রাখে। অযত্নে বেড়ে উঠা সেই গাছটিতে একটা লাল টকটকে ফুল ফুটেছে দুইদিন হল। আমিও হেলায় এড়িয়ে যাই ওটাকে। থাকুক না।
মাঝে মাঝে মনে হয় , অভ্র কি কখনো বুঝবে , ওই লাল ফুলটা ওর হাতে পাওয়ার আমার কত শখ ? কখনো কি বুঝবে , ওই লাল ছোট্ট সৃষ্টিটাও খুশি হবে , তুমি আমার হাতে দিলে!
আজ কি হচ্ছে না হচ্ছে , কোনদিকে খেয়াল নেই। আপন মনেই বাসার এমাথা থেকে ওমাথা ঘুরে বেড়াচ্ছি। এটা সেটা নাড়াচাড়া করছি, বাবা মায়ের সাথে কথা বলছি, নানা রকম কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার একটা ক্ষুদ্র এবং ব্যর্থ চেষ্টা। ছাইপাশ যা ইচ্ছা তাই করে আমি মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরাচ্ছি।
আমি অভ্রের প্রেমে পড়ছি… একটু একটু করে… শামুকের চেয়েও ধীর গতিতে ….
রুমে চলে আসলাম।কাবার্ড গুছাবো । বিয়ের পর এইদিকে একদম মনোযোগ দেয়া হয়নি। যাচ্ছেতাই অবস্থা এখন। এলোমেলো সব জিনিসপত্র , আমারই মত। একটা একটা করে গুছাচ্ছি।
হঠাতই ,একটা কাল ডাইরি পেলাম ।অবশ্যই অভ্রের । এটা অভ্রের রুম ।
হাত নিশপিশ করছে ওটা খুলতে । কিন্তু এটা অভ্রের । আমার বর হলেও ও এখনো অন্য মানুষ । ওর সব জায়গায় প্রবেশাধিকার আমি পাইনি ।
বলতে বলতেই খুলে ফেললাম।
আমার নিশ্বাস আটকে আসছে , আমি জানিনা ওতে কি লেখা আছে , এমন কিছু কি , যা আমি কখনো শুনতে চাইনা?
” মিথিলা ,
আজকে তোমাকে প্রথম দেখলাম । প্রথম । কিন্তু আমার মনে হল , তোমাকে আমি যে আরও কতবার দেখেছি । ছবিতে দেখে বুঝতে পারিনি , জলজ্যান্ত দেখে বুঝলাম আজ । মানুষ সুন্দরের পূজারী , আমিই বা আলাদা হব কেন? তোমাকে গুটি গুটি পায়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে যখন আসতে দেখলাম , আমার জগত থমকে গিয়েছিল । বিশ্বাস করো মিথিলা , কখনো কাউকে দেখে এমনটা মনে হয় নি আমার । তোমাকে ওই এক নজর দেখায় আমি জানতাম , তোমাকেই দরকার আমার । আজব ব্যাপার জান , আমি জানি , তুমি যখন আসবে , আমি কখনোই তোমাকে বলতে পারব না , তোমাকে ভালবাসি । আমি এমনই মিথিলা । লিখে তো যাচ্ছি মিথিলা , মুখের কথা আর ফুটবে না, বুকের কথা বুকেই রয়ে যাবে । মাকে জানিয়ে দিয়েছি , তোমাকে পাশে পেতে চাই , তোমরাও নাকি জানিয়েছ।
কিন্তু , আমাকে একটু সহজ করে নিও। আমি যে পারিনা কিছু। এই লেখাটা তোমাকে পড়তে দিব। নাহ… সেটাও পারব না।”
পাতার পর পাতা লিখে যাওয়া। অজস্র শব্দ, অসংখ্য আবেগ , অফুরন্ত কথা। পড়তে পারছিনা আমি , আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। সব গল্পে নাহয় রাজপুত্র আসে, আজকে রাজকন্যা আসবে , রাজপুত্রকে নিয়ে যেতে।
আমি সেই রাজকন্যা হব ।
সন্ধ্যা হয় হয় এমন একটা সময় নির্মল। একটা খুব ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে , আস্তে আস্তে। আমাদের রুমের পর্দাগুলো সেই হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে।
১০১ টা মোম জ্বালিয়েছি । ভয়ে আছি, যেই অকর্মার ঢেঁকি আমি , কখন না আগুন ধরিয়ে দি। তখন বাড়িসুদ্ধ মানুষসহ ফায়ার সার্ভিসের মানুষের সাথে প্রেম করতে হবে।
তবুও… জ্বালালাম। আজকে আমার রাত। আজ কিছুই হবে না। তারারা আমাকে বলে গেছে। বাতাস গান গেয়ে শোনাচ্ছে ।
এবং সবকিছু চপেট করে দিয়ে বেকুব ছেলেটা হঠাৎ করেই এসে পড়লো। ওর এখন আসার কথা ছিল না। আজকেই সব কিছু বরবাদ করার জন্য হাঁদারামকে তাড়াতাড়ি আসতে হবে!
আমি রুমের বাইরে ছিলাম ।
অভ্র রুমে দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে দেখতে পাচ্ছে না । বেডসাইড টেবিলটায় আমি ওই গোলাপটা আর একটা কাগজের টুকরো রেখে দিয়েছি। ওকে দিতাম । ও নিজেই থেকেই দেখে ফেলেছে ।
চিরকুট পড়ছে অভ্র…
“তোমাকে সবসময় আমি কি বলে ভেবে এসেছি জানো?
হাঁদারাম । এবং আমার ধারণা ১০০ শতাংশ সত্যি ।
ভালবাস , একটাবার বলা যায় না?
ভালবাসার আমি যে কাঙাল , কেন বুঝ না ?
এমনকি হাঁদা ছেলে , এটাও বুঝতে পারনি , আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। “
আমার শব্দ পেয়ে গেল অভ্র। পিছন দিকে খুব হুড়োহুড়ি করে ঘুরতে গেল , যেন খুব লজ্জা পেয়ে গেছে । একটু কি আমি দেখলাম , চোখটা একটু মোছার চেষ্টা করল ? কি জানি , আমার দেখার ভুল হবে হয়ত…
এক সমুদ্রভরা ভালবাসা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ও । বিধাতা আমার স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে দেয় নি , হাঁদারাম তো আসলে ছিলাম আমি , এমন ভালবাসার সমুদ্র ফেলে আমি ছোট জলাধারে ছুটে গেছি , ভালবাসার হাহাকার করতে করতে । আমাকে উপযুক্ত শাস্তিই দেয়া হয়েছে । ভাল হয়েছে, খুব ভাল ।
আজকে ভোর দেখলাম দুজন ।পুবের আকাশটাকে রাঙ্গা করে সূয্যি মামা নতুন একটা দিনের ডাক দিচ্ছে । একটা নতুন সময়ের প্রতীক্ষায় সবাই জেগে উঠবে কিছুক্ষণ পরেই ।
আর আমার শুরু হবে একটা নতুন জীবন । ভালবাসাময় একটা জীবন।
সকালটায়ও জেগে আছি । অভ্র ঘুমাচ্ছে আমার পাশে । সকালের মিষ্টি হলুদ রোদটা ওর উপর এসে পড়েছে । ভুরু কুঁচকাচ্ছে আমার রাজপুত্রটা ।
আমি দেখছি । সীমাহীন মায়ায় বুকটা ভরে যাচ্ছে আমার ।
ইসস………এত মায়া যে কোথা থেকে আসে!