বন্ধুর জন্য প্রতিশোধ

বন্ধুর জন্য প্রতিশোধ

আমি কুষ্টিয়া বড় বাজার রেললাইনের উপর বসে বসে সিগেরেট খাচ্ছি ।সাথে আমার 5 জন বন্ধু আছে ।হঠাৎ ট্রেন আসছে দেখে সবাই নিচে নেমে আসলাম ।একটু দুরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে ট্রেনের সামনে দৌড়ে আসছে ।বুঝলাম মেয়েটা সুইসাইড করতে চাই।আসলে এই রকম ঘটনা প্রায় প্রতিদিনি ঘটে ।আমি দৌড়ে গিয়ে মেয়েটিকে ধরে রেললাইনের নিচে নামালাম আর নামিয়েই ঠাস ঠাস ঠাস করে তিনটে চড় মারলাম ।তারপর

মেয়েটি:মারুন আরো মারুন(কাঁদতে কাঁদতে বলল)

আমি:আপনি মরতে চাচ্ছিলেন কেন?

মেয়েটি:আপনাকে বললে আপনি কী করবেন ।আপনাদের মতো ছেলেদের বিশ্বাস করাই ভুল। আমি ছেলেদের বিশ্বাস করি না ।

আমার বন্ধুরা তখন বলল এই আরিয়ান তুই চলে আয় আর ওইসব মেয়ের সাথে কথা বলিস না যে তার জীবন বাচানোর পরেও বিশ্বাস করে না ।

আমি ওদের বললাম থাম তোরা সবাই চুপ হয়ে গেল।

আগে আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই । আমি আরিয়ান রাজ ।বাবা মায়ের বড় ছেলে।এবার পরিক্ষা দিছি আর ছোটখাটো একটা কম্পিউটার (online)অফিসে চাকুরী করি।বেতন মোটামুটি ভালো ।আর রেললাইনের উপর বসে সিগেরেট খাওয়া আর আড্ডা দেওয়া আমার কাজ।যাহোক এখন মূল কথায় আসি ।

আমি মেয়েটির কাছে আবার জানতে চাইলাম আর বললাম তুমি আমাকে বল কেন সুইসাইড করতে যাচ্ছিলে আমি তোমাকে সাহায্য করব কথাদিলাম।

তখন মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করল

মেয়েটি: আমি অধরা আন্জুম মিম।আমার বাসা হাউজিং এ ।বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান ।আমাকে সবাই খুব ভালোবাসতো।আমি ক্লাস ট্রেন এ পড়ি।আমি নিয়মিত ক্লাস করতাম এবং ভালো ছাত্রী ছিলাম ।একদিন লক্ষ্য করলাম একটা ছেলে আমাকে ফলো করছে।আমি আমার এক বান্ধবীকে বললাম তখন সে বলল

বান্ধবী:আরে এটাতো নিলয় ভাই আমাদের সিনিয়র এবার এক্সাম দিবে।আর সে ক্লাসের ফাস্ট বয় ।তার বাবা একজন বড় ব্যবসায়ী ।ওর জন্য সব মেয়েরা ফিদা ।আমি তবুও এড়িয়ে চলতাম ।একদিন ক্লাসে যাবার সময় সে আমার সামনে এসে প্রপোজ করে আমি ক্যানসিল করে দি ।কিন্তু সে প্রতিদিন আমাকে প্রপোজ করতে থাকে ।একসময় আমিও তার পাগলামিগুলো দেখে তাকে ভালো লাগা এবং পরে ভালোবাসতে শুরু করি।পরে আমি তার প্রপোজ এক্সেপ্ট করি।তারপর দুজনে খুব ভালোভাবে কেয়ারিং করতাম দুজনে ।হঠাৎ একদিন নিলয় আমাকে ফোন দিয়ে বলে

নিলয়:আচ্ছা মিম তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো।
আমি (মিম):হঠাৎ এই প্রশ্ন ।
নিলয়:আরে বলো না ।
মিম:অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।
নিলয়: প্রমান দিতে পারবে।
মিম:কি প্রমাণ চাও বলো।
নিলয়: আমার সাথে রুমডেট করতে হবে।
মিম:নিলয় তোমার মাথা ঠিক আছে তো আর আমি পারবোনা।

নিলয়: আসলে তুমি আমাকে ভালোবাসো না।আর আমরাতো বিয়ে করব তাহলে সমস্যা কি আর তুমি রাজি না থাকলে আমি ভাববো তুমি আমাকে ভালোবাসো না।

আমি তখন রাজি হয় পরে ওর সাথে রুমডেট করি।আমি জানতাম না ও সেগুলো ভিডিও করছে গোপনে।পরে আমাকে ভিডিও দেখিয়ে ব্লাকমেইল করত আর ওর বন্ধুরা আমাকে দেখলে বলত কত মিনিট করেছিলি রেট কত আরো অনেক বাজে কথা বলতো।একদিন একজনকে রাগের মাথায় চড় মারলাম এতে ওই ভিডিও আমার বাবা মাকে দেখালো তারা আর আমার বাবা মা অনেক অপমান করে বের করে দিল

বাড়ি থেকে তাই আমি আর এ জীবন রাখতে চায় না । তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা শুনে আমার সহ বন্ধুদের সবার চোখে পানি এসে গেছে ।আমি তাকে বললাম আমি তোমাকে সাহায্য করব আর আজ থেকে তুমি আমাকে বন্ধু ভাবতে পারো আর আমার বাড়িতে থাকবে তুমি ।কাল থেকে শুরু হবে আমাদের প্রতিশোধ নেওয়ার পালা।আমার বন্ধুরা সবাই খুশি হয়ে বলল চল আরিয়ান তোর বাসায় গিয়ে আংকেল আর আন্টিকে বুঝিয়ে ওকে রেখে আসি।আমরা চলে আসলাম আমার বাসায় । কলিংবেল বাজাতেই মা দড়জা খুলে দিল মিমকে দেখে মা বলে উঠল আরিয়ানের আব্বু দেখ তোমার ছেলে সত্যি বিয়ে করে আনছে আমার বউমাকে খুব পছন্দ কিন্তু কাউকে না জানিয়ে হুট করে বিয়ে করে ফেলল আমাদেরকে তো বলতে পারতো।মার কথাশুনে সবাই অবাক হয়ে গেল ।আসলে আমার বাবা মা আমাকে খুব ভালোবাসে তাই কিছু বলে না।কিছুখন পর বাবা মা আমাদেরকে ভেতরে ঢুকতে বলল।ঢুকেই সবাই অবাক হয়ে গেলাম।মা বাবা ঘর সাজিয়ে ফেলেছে এতটুকু সময়ের মধ্যে ।পরে বাবা মাকে সব বললাম। বাবা মা সব শুনে আমাকে বাবা বলল আজ বুঝলাম যে তুই আমার ছেলে একটা কাজের ছেলে ।আমার ছোট ভাইতো অধরা (মিম)কে পেয়ে ওকে ভাবি ভাবি বলে সেইভাবে গল্প করতেছে পরে ওকে একরুমে রেখে বললাম কাল থেকে শুরু করব আমাদের মিশন।

মিম বলল তুমি খুব সুখি আরিয়ান কিন্তু তোমার ভিতরে এত কস্ট।সব আমাকে শিমুল বলেছে।আপনাদের তো বলাই হয়নি শিমুল আমার ছোট ভাই ক্লাস এইটে পড়ে।পরে আমি বললাম আমি ওসব ভুলে গেছি তুমি শুয়ে পড় কাল সকালে উঠতে হবে। পরেরদিন সকালবেলা আমরা সবাই মিমকে বললাম নিলয়ের কোনো ছবি আছে নাকি। মিম আমাদেরকে নিলয়ের ছবি দেখায় ।আমরাতো অবাক কারন এটা শাকিল।আমি বললাম এটাতো শাকিল । সবাই বললো দোস্ত এবার ওকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে ওর জন্য আজ আমাদের এই অবস্থা ।মিম আমাদের কথা শুনে অবাক কারন ও জানে যে ওর নাম নিলয়।

মিম বলল:তোমরা কি বলছো এসব।

আমি বললাম: এটা নিলয় না ।ওর নাম শাকিল জয়।ও আর ওর বন্ধু (হুসনার) জন্যে আজ আমার এই অবস্থা ।আর হ্যাঁ হুসনা আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে ।আর শাকিল জয়ের জন্য আমাদের পাঁচ জনের আজ এই অবস্থা। বাবা এমপি বলে আমাদেরকে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়।আজ ওকে শাস্তি দিবো। সন্ধায় শাকিল ও ওর সেই বন্ধুরা সবাই মিলে নাইট ক্লাবে গিয়ে আনন্দ করছিল।পরে ওদের মদের ভেতর সবচেয়ে কড়া ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দি ।ওরা অগ্যান হয়ে গেলে আমরা ওদেরকে কিডনাপ করে জংগলের পোড়াবাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওদেরকে বেধে রাখি।রাতে ওদের গ্যান ফিরলে আমাদেরকে দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায় ।তার চেয়ে বেশি ভয় পায় মিমকে দেখ।ওরা বলল তোমরা যা চাও তাই দেবো আমাদের মেরোনা । তখন আমি বললাম তোদেরকে একদিন আমরা বলেছিলাম আমাদের মারিস না তখন তোরা কি করেছিলি মনে পরে।আমার লাইফ নিয়ে

খেলেছিস।তাছাড়া মিমকে তোরা কি করেছিলি একটা মেয়েকে এরকম করতে তোদের লজ্জা করলো না । তখন ওরা বলল আমাদের ক্ষমা করে দাও ।

আমি: ক্ষমা তোদেরকে করলে যে আমি সবার কাছে অপরাধি হয়ে যাবো তোদের ক্ষমা নেই বলে ওদের সবাইকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করলাম এবং সবার চোখ তুলে নিলাম ,জিব কেটে দিলাম এবং ডান হাতের দুইটা করে আঙ্গুল কেটে দিলাম যাতে কোনোদিন কারোর সাথে খারাপ কাজ না করতে পারে এবং সারাজীবন শাস্তি ভোগ করে।

তারপর আমরা সবাই ওদেরকে মেইন রোডের ধারে ফেলে দিয়ে আসলাম । বন্ধুরা সবাই চলে গেল।আমি মিমের হাতটি ধরে আমার বাসায় ঢুকলাম ।বাবা মা তারপর আমাকে তাদের রুমে ডাকলো ।আমি গিয়ে বললাম কিছু বলবে। বাবা মাকে বলল তুমি ওকে বলো।তখন মা বলল বাবা আমি আর তোর আব্বু ভাবছি মিমের সাথে তোর বিয়ে দিব ।তুই কি রাজি। আমি বললাম: মা তোমরা যা করবে তাই হবে কিন্তু মিম কি বলবে। বাবা বলল তুই কোনো চিন্তা করিস না আমি ওর সাথে কথা বলে আসছি।

বাবা মিমের সাথে কথা বলে মিম ও রাজি হয়েগেলো।

আজ আমাদের বাসর আমি ছাদে দারিয়ে মিম ও আমার জীবনের ঘটনা গুলোর কথা ভাবছি।তখন বন্ধুরা সবাই

জোর করে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিল এবং বাইরে থেকে আটকিয়ে দিল।মিম আমাকে দেখে সালাম
করলো।আমি ওকে বুকে জরিয়ে নিলাম ।বাকিটুকু ইতিহাস ।

১ মাস পর আমরা আজ মিমের বাসায় যাচ্ছি অবশ্য মিম যাইতে চাচ্ছিল না আমিই জোর করে নিয়ে যাচ্ছি ।
হঠাৎ মিম একটি বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামাতে বলল।

তারপর বলল এটা ওদের বাড়ি।বাড়ির কলিংবেল চাপতেই একজন বাবা বয়সে লোক দরজা খুলে দিল ।

আমাকে বলল কে তুমি বাবা। আমি সরে গেলাম।আর লোকটি মিমকে দেখে বলল কোন মুখ নিয়ে এখানে এসেছিস।

মিম তখন কেদে দিছে।আমি তখন বললাম ভিতরে চলুন সব বলছি ।
লোকটি ভেতরে যেতে বলল ।ভিতরে গিয়ে

সব বললাম তাকে।সে কেদে দিছে আমার কথা শুনে।তারপর তাকে বললাম বাবা আমি ও মিম একমাস হলো বিয়ে করেছি ।মিমের বাড়ির সবাই খুশি আজকে।

পাঁচ বছর পর আজ আমার ছেলে প্রিয়কের জন্মদিন ।সবাই অনেক খুশি।আমি মিম এবং বাড়ির সবাই কেক কাটলাম ।প্রিয়ক আমাকে কেক খাইয়ে দিল কিন্তু মিমকে দিলনা।মিমতো রেগে খুন।তখন প্রিয়ক বলল বাবা তুমি আম্মুকে খাইয়ে দাও।আমি খাইয়ে দিলাম ।

এভাবে হাসি আনন্দের মধ্যে আমাদের জীবন চলতে লাগলো।

 

*******************************************সমাপ্ত***************************************

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত