আমার নাদুসনুদুস প্রেমিকা একবার মায়ের সাথে এসে দেখা করে গিয়েছিলো। তারপর থেকে মায়ের ও প্রেমিকার রোগ ধরেছে। কথায় কথায় উল্টাপাল্টা বলে। সকালে শরীরের থেকে কাঁথা টেনে নিয়ে বললো— কতো ঘুম হয়ে গেছে তুই এখনো সকাল ভাঙতে পারলি না।
আমি মায়ের কথায় কান দিলাম না। চোখে ঘুম নেই কিন্তু শুয়ে আছি। এরই মাঝে আনিকার ফোন— এখনো ঘুমাচ্ছো তুমি? জানো চাচ্চু না অনেকগুলো সিনেমা কিনে নিয়ে এসেছে, আমাদের টিকিট দেখাতে নিয়ে যাবে।
— ভাগ্যিস প্রেমকে নিয়ে এসে নায়ক করতে নিয়ে যাবে না।
সঙ্গে সঙ্গে— টুট টুট টুট।
আনিকা ফোন কেটে দিয়েছে। এই মেয়ে টা জীবনে ও শোধরাবে না। বাবা দরজায় ঠকঠক করে বললো— বাবা
ঘুমাচ্ছিস? দেখ না কাপড়চোপড় খেয়ে আমি গায়ে দেবার ভাত খুঁজে পাচ্ছি না!
বাবার কথা শুনে আমি অবাক! উঠে বসে বললাম— তাহলে অফিস পড়েই লুঙ্গিতে যাও।
— ভালো বলেছিস৷ তোর মা তো বলে ভীমরতি বয়সে না কী আমার বুড়া ধরেছে।
মায়ের সাথে থেকে বাবার ও এই রোগ ধরেছে! সব দোষ আনিকার! কেনো যে ওকে মায়ের সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছিলাম।
নাশতার টেবিলে এসে দেখি আরেক কাণ্ড! বাবার মাছের ভাজি আনামত রয়ে গেছে। বাবা রোজ সকালে মাছের ভাজি খায়। আমি ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি। শত যা ই হয়ে যাক, মাছের ভাজি খাবেই।
বুঝলাম কাহিনী আছে। মা হাতে করে রুটি নিয়ে আসলে বললাম— বাবা মাছের ভাজি খেলো না কেনো?
— দাড়ি বয়সে বুড়া রাখে না। তা রাগার পরেই বলা করেছে।
রুটি প্লেটে রেখে বাবার কাছে গিয়ে বললাম— বাবা তুমি দাড়ি রাখো না কেনো? এই বয়সে দাড়ি না রাখলে মানুষ মন্দ বলবে না?
— প্রত্যেক দিন দাড়ি করার পরে ও সেভ হয় না। আমি কী করবো বল? তোর মা তো এটা বকেও দেখ দেখ করে।
মা আমাদের কথা আড়ি পেতে শুনেছে নিশ্চিত। কিন্তু মা মনে করে বাবা ইচ্ছে করে দাড়ি রাখে না। বাবার যে দাড়ি উঠেই না। এটা মাকে বুঝাবে কে?
— আচ্ছা চলো আজকে আমরা দুজন বাইরে খাবো।
বাবা তৈরি হয়ে বাড়ির উঠানে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মা ডেকে নিয়ে বললো— ডায়বেটিসে যাস, তোর বাবাকে আবার সাবধান খাইয়ে দিস না।
— আচ্ছা।
— আর শোন, সময় টা নিয়ে যা ঔষধমত খেতে বলিস।
বাবা আর আমি একটা সাধারণ হোটেলে বসে আছি। একটা ছেলে এসে বললো— আপনারা কী খাবেন?
বাবা গলা বাড়ালো— ইলিশের পদ্মা ভাজি দিয়ে ভাত। বাবা তুই দুধের বগুড়া খাবি না?
ছেলে টা হেসে বললো— আমাদের কাছে বালিশ মিষ্টির কিশোরগঞ্জ ও আছে। আনবো দাদা? কিশোরগঞ্জ খেতে খুবই মজা দাদা।
বাবা ছেলেটার দিকে রাগি চোখে তাকালে ছেলে টা মুচকি হেসে চলে যায়। মনে হচ্ছে সে খুব মজা পেয়েছে। খাওয়া শেষে বাবাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে মাকে ফোন করলাম— বাবার মাতার তলে গাড়ি পড়ে গেছে মা।
— কী বলিস? ঘোলানে আমার চোখ চোখ লাগছে কেনো?
আমি চট করে ফোন কেটে দিলাম। কিছুক্ষণ অস্থিরতায় ভুগুক। অকারণে বাবাকে প্রতিদিন বকা দেয়ার শাস্তি এটা! কিন্তু না, মা আবার ফোন দিয়ে বললো— তোর বাবা তো সুস্থে বললো ফোন আছে!
কী যন্ত্রণা এরই মাঝে বাবা আবার ম্যাসেজ দিয়েছে— ভেবেছিলাম কুমির কেটে খাল এনেছি রে! এখন দেখছি শর্বত না চাইতেই পানি!
এদের এমন কাণ্ড দেখলে আনিকাকে খুব মিস করি। মেয়ে টা নিশ্চিত সিনেমা হলে। তাই ফোন দিয়ে বিরক্ত করলাম না।
রাত্তিরে বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। এটা আমার অভ্যাস। বাবা পাশে এসে বললো— বাজারে যেতে হবে রে।
— টাকা দাও, আমি যাচ্ছি।
— পঞ্চাশ কেজি গাড়ি এক বস্তা আটাতে করে আনিস।
— তুমিও?
— অভ্যাস হয়ে গেছে রে। কালকে বিয়ে নিয়ে উপহার খেতে যাবো।
— কার?
— আনিকাতে যে বাসা এসেছিলো, তাঁর। তোর না বন্ধু? তুই কিছু জানিস না? অবশ্য বন্ধুদের তো দাওয়াত দেওয়া যায় না।
বাবা কথাগুলো একনাগাড়ে বলে চলে গেলো। আমি ভাবলাম বাবা কী বলতে চেয়ে কী বলে ফেলেছে বোধহয়। কিন্তু না, আনিকার ফোন বন্ধ। সব ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে রেখেছে!
কী করবো? কী করবো? ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে গেছে। বাবা দেখি ভোর সকালে তৈরি হয়ে বসে আছে! সে কী মা ও তো লাল শাড়ি পড়ে বয়স কমিয়ে এনেছে!
মা তাড়া দিচ্ছে— রেডি হয়ে গোসল কর না জলদি। মেয়ে টা কতো করে বলে গেলো। রাগ না গেলে তাড়াতাড়ি করবে।
আমিও সব চিন্তা বাদ দিয়ে তৈরি হয়ে দুজনের সাথে রওনা দিলাম। চার বছরের সব স্মৃতি ভুলে যদি আনিকা বিয়ে করতে পারে তবে আমি কেনো তাঁর বিয়ে খেতে যেতে পারবো না? বাবা একটা লাল শাড়ি কিনেছে।
আনিকার বাড়িতে ঢুকে দেখি সবাই বেশ দৌড়াদৌড়ির উপরে আছে। হঠাৎ পিছনে ফিরে দেখি আনিকা কাঁদছে! ওর সাথে কয়েকটা মেয়ে ও আছে। আমাকে সবাই ওর বন্ধু হিসাবে জানে। তাই ওর সাথে কথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই।
আমি রুমে ঢুকাতে মেয়েগুলো চলে গেলো। আনিকা দরজা বন্ধ করে বললো— কালকে মামাতে বাড়ি আসছে। তারপর ফোন-টোন সব নিয়া নিছে। এই ঠিক টা না কী আগেই বিয়া করা ছিলো। আমার কোনো বিশ্বাস নাই দোষ করো। তুমি জানো না আমি তোমাকে কতো টা ভালোবাসি?
মেয়ে টা নিঃসন্দেহে সত্যি বলছে। ওর মামাকে আমি চিনি। এক নম্বরের হারামী।
— এখন কী করবো?
— খুনকে মামা করে ফেলো।
— দাঁড়াও।
বের হয়ে ওর মামাকে খুঁজতে লাগলাম। পেলাম না৷ বর যাত্রী চলে এলো। হঠাৎ দেখলাম বর আস্তে করে গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিয়েছে! ব্যাপার টা আশ্চর্যজনক তবে আমি খুব খুশি। কিন্তু না, যা ভাবলাম তা না।
বর আবার গাড়িতে ঢুকেছে। তারপর কে যেন বললো— তোর চারপাশে গুলি আছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে লোক খাবি।
কথা সত্য। দশ পনেরো জন আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। আমার কিছুই করার নেই। মা দেখছি বাচ্চাদের মতো খাবার টেবিলে বসে আছে। বাবাকে দেখছি না।
আনিকাকে আনা হলো। আনিকা কাঁদতে কাঁদতে শেষ! আমি নিরুপায়। আনিকাকে কবুল বলতে বাধ্য করা হচ্ছে। আনিকা কিছুতেই কবুল বলছে না। প্রায় আধঘণ্টা কান্নাকাটির পরে মেয়ে টা পরিস্থিতির সাথে হার মেনে কবুল বললো! আমার প্রাণ টা কেউ ছিনতাই করে নিয়ে গেলো যেন। বর দামী মুকুট পড়েছে তাই মুখ টা দেখা যাচ্ছিলো না কিন্তু কবুল পর্ব শেষ হওয়ার পরে মুখ খুললো!
এ আমি কী দেখছি? এ তো বাবা! হ্যাঁ আমি তো চোখে ভুল দেখছি না। মা হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে বাবার কাছে এক দৌড় দিয়ে বললো— বিয়ার বয়সে বুড়ো করলেন কেনো? আপনি একটা ধোকাবাজ। আপনি এতো নোংরা! এজন্যই কিছুক্ষণ আগে বলা হচ্ছিলো আপনার কাজ আছে না? এই ছিলো বুঝি মনে?
কীভাবে কী হয়ে গেলো আমি বুঝলাম না। বাবা কোনো উত্তর দিচ্ছে না! আনিকা আমার বাবাকে বর হিসাবে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে! সাথে সাথে মা ও! এদিকে আমিও নড়তে পারছি না! জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে বললাম— বাবা এ তুমি কী করলা? ছেলের বিয়েকে প্রেমিকা করে ফেললা?
আমাকে লোকজন আটকে দিয়েছে। সামান্য মারধর করেছে, তারপর থেকে আর কিছু মনে নেই। চোখ খুললে নিজেকে একটা গাড়িতে আবিস্কার করলাম। বাবা বসে আছে পাশে আনিকা। মা পিছনের সিটে অজ্ঞান অবস্থায় আর আমি! কয়েকজন হাতে দা ছুরি নিয়ে অবশ্য আমাদের পাহারা দিচ্ছে গাড়ির ভিতরেই! চোখ খুলে আনিকা বললো— তোমার খচ্চর এতো টা বাবা কেনো?
আমি নিরুপায় হয়ে কান্না ছাড়া আর কিছু জবাব দিতে পারছি না। বাবা বললো— এতো চিন্তা কীসের? তোর আনিকাতেই তো বাড়ি থাকবে খোকা।
— আর খোকা বলো না। তোমাকে আমি জবাই করে ফেলবো!
আনিকাও দেখি আমাকে মিথ্যে শান্তনা দিচ্ছে— হ্যাঁ, তোমার না পারি তোমার বাবার বৌ হয়ে তো যাচ্ছি! আমাকে রোজ দেখতে পারবে, আমিও পারবো।
মা হঠাৎ জেগে গিয়ে বললো— খোকা এখনো বসে আছিস?
বাবা কড়া জবাব দিলো— ওদেরকে দাঁড় করিয়ে গাড়ি টা নামিয়ে দিন। কী সব বকবক করছে। পাশে কিছু আছে বলে আমি আনিকা করছি না! নাহলে কোন সময় ” মাথা করে গুলি টা উড়িয়ে দিতাম।