ভৌতিক প্রেম

ভৌতিক প্রেম

বাড়ীটা খালি।বাসার সবাই মামা বাড়িতে আছে।আমিও হসপিটাল থেকে অসুস্থ মামীকে দেখে বাসায় ফিরছি।অনেকটা রাত হয়ে গেছে।

-এইযে ভাইয়া!
মনেহচ্ছে কোনো মেয়ের কন্ঠ!
যাই হোক মনে কিছুটা ভয় নিয়ে হলেও পিছনে তাকালাম!
-কে আপনি?
-আমি তমিস্র।
-কিন্তু এতো রাতে বাহিরে কেনো?

-ভাইয়া আমি আমার ছোট বোনকে দেখতে গিয়েছিলাম হসপিটালে ফিরতে রাত হয়ে গেলো!আর পথে আপনাকে দেখতে পেয়ে ভালোই হলো।অন্ততপক্ষে কিছুটা ভয় অপসারিত হলো!

-হুম।তা কোথায় যাচ্ছেন?
এইতো আপনার বাসা থেকে এগিয়ে গেলে আরো ক্ষানিকটা পথ।
-ও আচ্ছা।এগিয়ে দিতে হবে?
-না!ওদিক দিয়ে আমি একাই চলে যেতে পারবো।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
-আপনার নাম হাসিব তাই না?
-হুম কিন্তু…
-আমি সব জানি!
-কিভাবে?
-আশ্চর্যকথা আপনি কাউকে না চিনলে সেও আপনাকে চিনবে না এটা কেমন কথা!
-আচ্ছা আপনি কি করেন?
-কিছুই করি না!
-মানে?
-আমি আগে স্টুডেন্ট ছিলাম এখন কিছুই করি না!
-আপনাকে আমার খুব ভালোলেগেছে!আপনার নাম্বার পেতে পারি!
-কি আশ্চর্য!চেনা নেই জানা নেই দুই মিনিটে একটা মেয়েকে ভালো লেগে গেলো!
-না মানে চোখের দেখায় ভালোলাগায়ও তো ভালোবাসা হতে পারে!
-আরে বুদ্ধু ওটা ভালোবাসা নয় ভালোলাগা!

-সে যাই হোক এই আধুনিক যুগে ফোন আর ইন্টারনেট যোগে দুইদিন লাগে কাউকে চিনতে।আর ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসা হয়।

-কিন্তু এনালগ যুগে যত অবিচার ছিলো আধুনিক সমাজ তার চাইতেও অধম বিবেকের অধিকারি!শুধু মস্তিষ্ক উন্নত হলেই হয় না বিবেকের উন্নতিটাও চাই!

-আপনি কি বুঝাচ্ছেন আমি কিছুই বুঝতেছি না!
-না বুঝার কিছুই নেই।এইতো আপনার বাসা চলে এসেছে যান।
-যাচ্ছি।কিন্তু…

-চিন্তা নেই।আমি ভয় পাই না।ভয় অনেক আগেই জয় করে নিয়েছি!আমি অন্ধকারে একা হাটতে অভ্যস্ত!আপনি আপনার বাসায় যান।

বাসায় এসে ওর লাস্ট কথাগুলো ভাবছি!আমি অন্ধকারে একা হাটতেই অভ্যস্ত!কে ছিলো ও!কি নাম!কি পরিচয়!আমাকে চিনে!আমি চিনিনা!কি এমন মিস্ট্রিরিয়াস আছে ওর মাঝে!

দুদিন পর মা-বাবা বাসায় ফিরে এলো।আমিও আজ কলেজ (বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) যাবো।
কলেজ গিয়ে আমার চোখটা হঠাৎ আটকে গেলো!ওই মেয়ে এই কলেজে!

-এইযে শুনুন।
-জ্বী আমাকে ডাকছেন?
-হুম কোন বর্ষে পড়েন?
-প্রথম বর্ষ!আপনি?
-শেষ বর্ষ (অনার্স)!
-ভালো!
-হুম।আপনার বোন সুস্থ হয়েছে!

-আমার বোন!কিসের বোন!আমার কোনো বোন নেই!

-তাহলে সেদিন আপনি যে বললেন আপনার বোন নাকি হসপিটালে অসুস্থ!

-আমার সাথে আবার আপনার কোনদিন কথা হলো!আমিতো আগে আপনাকে কখনো দেখিইনি!আর অসুস্থ ছিলাম তো আমি।তিনদিন হসপিটালে ছিলাম!

-তাহলে সেদিন কে ছিলো!যাকে হুবহু আপনার মতো দেখতে।
মেয়েটা কাঁদছে!
-কি হলো কাঁদছেন কেনো?
-ও আমার জমজ বোন ছিলো!
-ছিলো মানে!
-মানে এখন ও আর এই পৃথিবীতে নেই!

ভয়ে আমার হাটু কাঁপা কাঁপা অবস্থা!তাহলে আমি সেদিন রাতে অশরীরীর সাথে কথা বলছিলাম!মাথা যেনো জিম ধরে গেছে!

আচ্ছা ওনার কি হয়েছিলো যে উনি অকালে চলে গেলেন?

-হয়নি!করেছিলো!
-কি?
-আত্মহত্যা!
-কেনো?
-ও একটা ছেলেকে ভালোবাসতো!
-তা তো ভালো কথা কিন্তু আপনার ফ্যামিলি মেনে নেয় নি নাকি ছেলেটার?
-কারোর ফ্যামিলি থেকেই প্রব্লেম হয়নি।
-তাহলে?
-ছেলেটা আপুর সাথে অসভ্যতা করে ওকে অস্বীকার করে।তাই আপু ওটা মানতে না পেরে…..
-হুম বুঝলাম।
-কিন্তু আপনি তমিস্রকে ওই রাতে টাচ করেন নি তাই এখন সুস্থ আছেন!
-মানে?
-অশরীরীর চড় খেয়েছেন?
-না!
-ওদিন তাই খেতেন!
-কেনো?

-কারণ সেদিন থেকে তমিস্র অসভ্য ছেলেদের এইভাবে নির্জন রাত্রিতে শাস্তি দেয়!আর ওই থেকেই আমার ফ্যামিলি ভালোবাসাবাসি বিশ্বাস করে না!

-ও আচ্ছা আমি তাহলে আসি?
-আচ্ছা আসেন!

মনে মনে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচালাম!ভাগ্যিস সেদিন আমার সাথে ওরকম কিছু হয়নি।

বাসায় এসে মায়ের সাথে কথা বলছি।

-মা তোমার তো বয়স হচ্ছে কয়েকদিন পর রিয়ার (ছোট বোন) বিয়ে দিয়ে দিবা তখন তো ভারী কাজগুলা তো একা করতে পারবে না!

-একটা বুয়া দেখিস তো বাবা তুই।

-ধুর বুয়া দিয়ে কি হবে?তার সাথে কি তুমি এই বয়সে সারাদিন আলাপ করতে পারবা নাকি আর তার বুঝি অন্য কাজ থাকবে না!

-তো কি করবো!

-অনেক কিছুই তো করার আছে।প্রত্যক্ষ কিছু না ভাবতে পারলে পরোক্ষ ভাবো।ব্রেইন দিয়া ভাবো মা ব্রেইন।

-ওরে হারামি এবার বুঝি তোর বিয়ার শখ জাগছে!

-মা!
-কাউকে ভালো লাগছে?
-হুম।
-নিশ্চয় প্রেম-ভালোবাসায় সায় দেয় নি!
-হুম।
-তো তোর বাবাকে বল!
-তুমি তো জানই বাবাকে বলতে আমার হাটু কাঁপে তাও এটা আবার জীবনের বড় একটা সিদ্ধান্ত!
-তো আমি কি করে বলবো!
-তুমিই পারবে মা। ম্যানেজ করে দাও!
রাতে বাবা বাসায় ফেরার পর!ডিনার টেবিলে বসে আলোচনা করছি।
-শুনছো।
-বলো।
-ছেলেতো অনেক বড়ই হইছে!
-আমিও তাই ভাবছি।কিন্তু ও রাজি তো!
-সেটা আমি দেখবো।তুমি মেয়ের বাড়িতে যাও কথা বলতে।
-এই হাসিব এদিকে আয় তো!
-জ্বী বাবা বলো।
-তোর কি কোনো মেয়ে পছন্দ আছে?
-হ্যা।না মানে না।মানে হ্যা!
-কি বলছিস এসব!
-আছে!

-কি!আজ বাবা-মায়ের চাইতে নিজের পছন্দ বড় হয়ে গেলো!
-মানে বাবা!আমি যাকে নিয়ে আগামী বছরগুলা কাটাবো তাকে যদি নিজের মতো করে না পাই!
-আচ্ছা মেয়ের বাড়ির ঠিকানা বল।আমরা কাল যাচ্ছি।

অতঃপর বাবা-মা দু মাস পরে বিয়ে ফাইনাল করে এসেছে!
আর দেখতে দেখতে দুটি মাস চলেও গেলো!

আমি বাসর ঘরে ঢুকে দেখি বউতো ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে!আমায় ছোট্ট করে একটা সালাম দিলো আস সালামু আলাইকুম!

-ওয়া আলাইকুম আসসালাম।
বলেও বিছানায় বসতে যাবো।
-হুট!হুরর!আপনি বিছানায় উঠছেন কার অনুমতি নিয়ে?
-আমার বিছানায় উঠতে আবার কার অনুমতি লাগবো!
-ইস!আমার বিছানা!বললেই হলো এই ঘর এখন আমার!আমার ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার আছে!
এখন ভাবছি কি জল্লাদ মেয়েকে বিয়ে করলাম রে বাবা!যাক এতো ভেবে লাভ নেই।
-আচ্ছা আমি বিছানায় উঠতে পারি?

-হ্যা অবশ্যই।এবার পারেন।আর হ্যা উঠার আগে বলুন একটা মেয়েকে ভালোবাসেন আর কখনো তাকে ভালোবাসি না বলেই বিয়ে করার সাহস হয় কি করে!

-না মানে আপনিই তো বলছিলেন।আপনার ফ্যামিলি প্রেম-ভালোবাসা মানে না তাই!
-তো এখন তো প্রপোজ করা যায় নাকি?
-হুম যায়!
-তাহলে বলছেন না কেনো?
-আমি আপনাকে ভালোবাসি!
-বুদ্ধু!ভালোবাসো আবার বউকে আপনি করে বলে নাকি কেউ!
-সরি!
-হুম।

-পরেরদিন লান্স করার জন্য টেবিলে বসলাম।
-মা কে রান্না করছে গো?
-কে আবার!যাকে আমার সাহায্যের জন্য আনলি!
-ও।নতুন বুয়া!
-ওই বদমাইশ হাসিব্বা!
বলেই আমার হাতে জোড়ে একটা চিমটি কাটলো!
-আরে আমি বলতে চাইছিলাম নতুন বউ ভুলে একটু উল্টো বলে ফেলছি!

আর বদমাইশ হাসিব্বা বলে চিমটি কাটা!এটা যেনো আমার খুব চেনা লাগছে!কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছি না!

-হাসিব তোর সোহেলকে মনে আছে?(বাবা)
-সোহেল কাকা?
-হুম।এখানে এসে তোকে কতবার করে তাদের বাড়ি যেতে!কিন্তু একবারও গেলি না!
-তোমার বন্ধু।
-হুম ওনার একটা মেয়ে ছিলো না?দেখছিলি?

-অনেক ছোট বেলায় দেখছিলাম তখন তো আমি তৃতীয় শ্রেনীতে পড়তাম!ওই টা মেয়ে ছিলো নাকি!আস্ত বদজাত!সোহেল কাকা কতো নিরীহ আর ওইটা এসেই আমার শখের রিমোট কন্ট্রোল এরোপ্লেনটা ভাইঙ্গা দিছিলো!
-কি!ওই বদমাইশ হাসিব্বা!তুই বুঝি খুব ভদ্র ছিলি?আমার টেডিবিয়ারের চোখ কে তুলছিলো আগে!

-মানে!তুই…
-হ্যা।আমি!শর্মিলা তমিস্র নিলু!তোর আসাদ কাকু আমার বাবা!
আমি ভাবছি ক্যামনে কি!
হঠাৎ বাবা বলে উঠলেন।

-তোর সাথে নিলুর বিয়ে ঠিক করা ছিলো আগে থেকেই!তাই ও মাঝেমধ্যে তোর কথা জিজ্ঞাস করার জন্য তোর আম্মুকে ফোন দিতো।

-ও আচ্ছা।বাবা ওর কোনো বড় বোন ছিলো?
-না তো!
-তাহলে সেদিন!

-আরে বুদ্ধু ওটা আমিই ছিলাম।সেদিন আম্মাকে ফোন করেছিলাম পরে রিয়া ধরে আমায় বলেছিলো তুমি বাসার দিকে রওনা দিচ্ছো আমিও সেই সুযোগ কাজে লাগাই!কিন্তু ভার্সিটিতে সেদিন তুমি আমার প্রেমে পড়ে যাবে ভাবতেই পারিনি!

-কিরে!ভাইয়া!তুই হবু ভাবী থাকতে অন্য মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলি!
-আরে আমিতো জানতাম না আমার হবু বউ ছিলো!
-জানলে কি করতি!
-প্রেম করতাম আরো বেশি করে!
-কি!সাহস কতো!

-আরে নাহ!আমিতো হবু বউয়ের সাথে প্রেম করতাম!কিন্তু অবাকের বিষয় হচ্ছে আমার বউটা এতো মিথ্যা বানাইতে পারলো কিভাবে!

-হাহাহা!বুদ্ধু একটা!

রাত্রে আবার তমিস্র সে রাতের মতো সাদা পাজামা আর সাদা কামিজ পড়ছে!
-এই হাসিব আজকে আমি তোকে সাথে করে নিয়ে যাবো!
-কোথায়?
-যেখান থেকে কেউ আর কখনো ফিরে না!
-ধুর আমি আর ভয় পাই না!
-কেনো!
-আরে আমার বউটাই তো ভুতুড়ে!সেখানে আর ভূত কোথেকে আসবে!
-হাহাহা!ভালোই বলছো।
-হুম।
-চলো ঘুমাই।
-হুম চলো!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত