মিথ্যে আশ্বাস

মিথ্যে আশ্বাস

মা- সুস্মিতা এই সুস্মিতা। এই দিকে আয় তো মা।

সুস্মিতা – কি মা?

মা- রাফি কে স্কুলে দিয়ে আয় তো মা। একা একা যেতে পারবে না।

রাস্তাঘাটে কত কিছু হচ্ছে বলা যায় না কি হয়।

সুস্মিতা – আচ্ছা মা আমি রেডি হয়ে দিয়ে আসছি।

আয়নার সামনে বসে সুস্মিতা একটু সাজসজ্জা করছিল। তার মধ্যে মা তাকে একটা আদেশ দিলেন। সুস্মিতা আয়নার দিকে চেয়ে একটু হাসল। তারপর গালে হালকা মেকাপ দিল। অনেক টা লাল মেকাপ। লাল মেকাপ দিলে মেয়েদের একটু সুন্দর লাগে। মায়াবী চেহারা হয়ে যায়। সুস্মিতা এমনিতেই অনেক সুন্দর। মেকাপ না করলেও চলে কিন্তু ওই যে সমাজের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপর সুস্মিতা কপালে একটা কালো টিপ দিল। আবারও একটা মুচকি হাসি। তারপর উড়নো টা মাথায় দিয়ে রাফির কাছে আসল। রাফি কে নিয়ে স্কুলে আসতে লাগল। সুস্মিতা একটা রিক্সার মধ্যে উঠল। সুস্মিতা রিক্সার পিছনের দিকে তাকাল। একটা বাইক দেখতে পেল। সুস্মিতা আর সেই দিকে খেয়াল করে নি। রাস্তায় বাইক যাচ্ছে তাতে সুস্মিতার কি?

রাফি কে স্কুলে দিয়ে সুস্মিতা ক্যান্টিনে গেল। সেখানে গিয়ে এক কাপ কফি খেতে লাগল। কানের মধ্যে হেডফোন লাগিয়ে বন্ধু কে একটা ফোন দিল। বন্ধুর সাথে অনেক কথা হইল। সুস্মিতা হাসছে। এমনিতেই মেয়েদের হাসলে ভালো লাগে। তারপর সুস্মিতার হাসি। সুস্মিতা কাধঁ ঘুরিয়ে পিছনের দিকে একবার চেয়ে নিল। ও বাবা সুস্মিতা এই টা কি দেখল। সেই বাইকের ছেলে টা। সুস্মিতা একটু চিন্তায় পড়ে গেল। সুস্মিতা ভাবতে লাগল। ছেলে টা কি সুস্মিতা কে ফলো করে । সুস্মিতা একটু ভয় পেয়ে বাসায় চলে আসল। ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। সুস্মিতা খুব ভদ্র একটা মেয়ে। সব সময় একা একা থাকে। তার একটা মেয়ে বন্ধু আছে। তার নাম নন্দিনী। তারা দু’জন একসাথে থাকে। বলতে গেলে যমজ বোন।

সুস্মিতা একদিন লাইব্রেরি তে গেল। তার একটা গাইড বই আনার জন্য। সুস্মিতা একটা ছেলে কে দেখে খুব অবাক হলো। সেই ছেলে টা আর কেউ না ওই যে বাইকের ও ক্যান্টিনের সেই ছেলে টা। ছেলেটির নাম হাবিব। দেখতে শুনতে ভালো। হাবিব সুস্মিতার কাছে গেল।

হাবিব- একটু শুনবেন? আমার কিছু কথা ছিল।

সুস্মিতা – আমি আপনাকে চিনি না। আমি কেন আপনার কথা শুনব?

হাবিব- আমি আপনাকে চিনি। আমি নন্দিনীর খালাতো ভাই। আমি আপনাকে প্রথম দেখেই আপনার প্রেমে পড়ে যাই। আপনার মায়ায় পড়ে যাই।

সুস্মিতা – দেখেন আমি খুব ভদ্র একটা মেয়ে। আমি আপনার সাথে এসব প্রেম ভালবাসা করতে পারব না। আমি এসবের বিরুদ্ধে।

এসব আমার ভালো লাগে না।

হাবিব- একটা সুযোগ আমাকে দেওয়া যায় না?

সুস্মিতা – নন্দিনী আর আমি খুব ভালো বন্ধু। আমি চাই না আপনার জন্য আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হউক।

দুই দিন পর সুস্মিতা নন্দিনী বাসায় গেল। নন্দিনী সুস্মিতা কে দেখে কেমন ভাবে হিংসা করছে।

সুস্মিতা – কি রে নন্দিনী তুই আমার দিকে এভাবে থাকিয়ে আছত কেন? আমার খুব ভয় করছে।

নন্দিনী – তুই এতো সুন্দর কেন রে? তুই জানস তোর জন্য আমার ভাই আজ কি করতে চাইছিল? তুই আমার কথা

শুন। তোকে আমার ভাই খুব পছন্দ করে। আমি চাই না তোর জন্য আমার ভাইয়ের কোনো ক্ষতি হউক।

সুস্মিতা – নন্দিনী তুই একি বলছিস । হাবিব এখন কোথায়? বিশ্বাস কর আমি এর জন্য দায়ী না।

নন্দিনী – হাবিব এখন হাসপাতালে আছে।

সুস্মিতা – ভ্যাএএএএএ। আমিও যাব। আমি হাবিব কে দেখব।

নন্দিনী – ঠিক আছে। তুই দাড়া। আমি মা কে এক কাপ চা করে দিচ্ছি তারপর দু’জন একসাথে বের হয়ে যাব।

হাসপাতালে এখন শুধু হাবিব আর সুস্মিতা। সুস্মিতা লজ্জাবোধ করে বলল-

সুস্মিতা – আপনি কিন্তু কাজ টা ঠিক করেন নি।

হাবিব- আমি আপনাকে ভালবাসি। এই কথা কয়বার বলব। আপনি কিভাবে বুঝবেন?

সুস্মিতা – শুনেন আমি একটা কথা বলি। আপনি যদি আমার মাকে রাজি করাতে পারেন তাইলে আমি আপনার সাথে সম্পর্ক করব।

হাবিব- সত্যি।

সুস্মিতা – হ্যাঁ। সত্যি।

হাবিব- তাইলে আমি কাল ওই যাব। আন্টিকে রাজি করাব।

হাবিব সুস্মিতার মাকে রাজি করিয়ে ফেলে। হাবিব কি খুশি। অবশেষে সুস্মিতা তার হয়ে গেল। হাবিব সুস্মিতার কাছে যায়। সব কথা খুলে বলে। সুস্মিতা মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সুস্মিতা মন খারাপ করে বলে ” আচ্ছা মা যখন রাজি আমিও রাজি। মায়ের সুখ আমার কাছে সব। ” তারপর থেকে দু’জন এক সাথে চলে। এখন থেকে একজন আরেক জন কে তুমি করে বলে। এক সাথে ঘুরাঘুরি করে । এক সাথে রিক্সায় ঘুরাঘুরি করে । সারারাত ফোন আলাপ। এক জনের প্রতি আরেক জনের ভালবাসা প্রকাশ। সব কিছু মিলিয়ে তাদের খুব ভালো যাচ্ছে। দেখতে দেখতে দুই টা বছর হয়ে গেল তাদের সম্পর্ক টা। সুস্মিতা এই কয়েক দিনে দেখতে ফেলো হাবিবের মধ্যে অনেক পরিবর্তন। আগের

মতো ফোন দেয় না। ভালো করে কথা বলে না। সুস্মিতার মন টা ভালো নেই। হাবিব কেন তার সাথে এখন ভালো করে কথা বলে না । সুস্মিতা তো হাবিব কে ভালবাসে। সুস্মিতা সারারাত মন খারাপ করে কান্না করে। সুস্মিতা হাবিব কে ফোন দিল। কিন্তু হাবিব সুস্মিতার ফোন টা ধরে না কেটে দেয়। সুস্মিতা বালিশের সাথে মুখ টা চেপে ধরে কান্না করে। সুস্মিতা হাবিবকেও কোথাও দেখতে পায় না। একদিন হাবিব কে একটা পার্কে দেখতে পেল একটা মেয়ের সাথে। সুস্মিতার বুক টা কেঁপে উঠলো। সেই মেয়েটাও সুস্মিতার খুব কাছের। সুস্মিতা তাদের দু’জনের একদম কাছে গেল। হাবিব সুস্মিতা কে দেখে খুব অবাক হলো।

সুস্মিতা – তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন? তুমি আমার ফোন ধর না কেন?

হাবিব – আমার ইচ্ছা। তোমাকে এখন আমি আর ভালবাসি না ।

সুস্মিতা – মিথ্যা কথা। তুমি এখনও আমাকে ভালবাসো। আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে না।

হাবিব- হা হা হা। তোমাকে আমি এখন দুই চোখে দেখতে পারি না। আমার কাছে শিশির সব। এখন আমি শিশির কে ভালবাসি।

সুস্মিতা – আমার অপরাধ কি?

কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ?

হাবিব- তুমি! তুমি কয় জনের সাথে সম্পর্ক করো। তুমি কি রকম ভালো মেয়ে শিশির আমাকে সব বলেছে। তোমাকে এখন আর আমার ভালো লাগে না। তোমাকে শেষবারের মতো বলে দিচ্ছি। আমার সামনে আসবে না।

সুস্মিতা – বিশ্বাস করো। তুমি যা ভাবছ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। শুধু তোমাকে।

হাবিব – মিথ্যাবাদীরা যা বলে সব সত্য। শুনো আরেক টা কথা আমার আর শিশিরের বিয়ে হয়ে যাবে। আমাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে না আশা করি।

সুস্মিতা কান্না করে বাসায় চলে আসে।

সুস্মিতা এখন আর আগের মতো করে কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে না । যে স্বপ্ন পূরণ হবে না সে স্বপ্ন দেখে কি লাভ? মানুষের জীবনে বারবার ভালবাসা সৃষ্টি হয় না। হয়তো একসময় আসে। সুস্মিতার জীবনেও একসময় ভালবাসা এসেছিল। কিন্তু সেটার আর শেষ হয় নি। পরিসমাপ্তি হয় নি। মাঝপথে ওই সমাপ্তি ঘটে তৃতীয় পক্ষের জন্য। সব শেষে শিশিরের ভালবাসার জয় হলো। কিন্তু সেটা কে জয় বলে না। বলে হিংসা । অন্যর সুখ চিনিয়ে নিয়ে কখনও নিজে সুখি হওয়া যায় না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত