কিছু সুন্দর স্বপ্নের শুরু

কিছু সুন্দর স্বপ্নের শুরু

এখন রাত ২ টা, প্রায় তিন চার ঘণ্টা থেকে জয়ের ফোনে কল দিয়ে যাচ্ছে রাইনা, কিন্তু জয়ের ফোন ধরার কোন নামও গন্ধ নেই, রাইনা এতক্ষণে রাতে গদগদ করছে।
অনেকক্ষণ পর ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ফোন ধরলো জয়।

– হ্যালো, বুড়ী ..

: কি ব্যাপার, কোথায় ছিলে তুমি? এতক্ষণ থেকে ফোন করে যাচ্ছি ফোন ধরছিলে না কেন? রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো রাইনা!

– কি বলছো? তুমি আরও কল দিয়ে ছিলে বুঝি?? সরি!! শুনতে পাইনি শুয়ে ছিলাম!!

: শুয়ে ছিলা নাকি ঘুমিয়ে ছিলা স্বার্থপর??

– আরেহ নাহ্ , আমি কি পাগল নাকি যে এইসময় তোমার সাথে কথা না বলেই ঘুমিয়ে যাবো, আমার কি মাথা খারাপ…

: নাহ! তুমি পাগল হতে যাবা কেনো তুমি তো পাগলের সর্দার বড় পাগল।

– আমি পাগলের সর্দার হলে তুমি কি জানো?? তুমি হলে পাগলের সর্দার মানে বড় পাগলের বউ পাগলী!! খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেঁসে উঠে জয়!!

: চুপ বান্দর, আমার দায় পড়েছে তোমার মতন বাঁদরের বউ হতে!! যাও ভাগো…

– ভাগবো কেনো? চুরি করেছি নাকি? ঢাক ঢোল পিটিয়ে বিয়ে করবো, ভাগতে আমি পারব না বস!!

: রাগান্বিত হয়ে ধমক দিয়ে রাইনা জয়কে জিজ্ঞেস করলো, তুমি জানো এখন রাত কয়টা বাজে??

– নাহ!! জানি নাতো, কেন কয়টা বাজে??

: জানো না কেন? রুমে ঘড়ি নাই? নাকি তোমার ঘড়ি ও তোমার মতন পাগলে গেছে??

– ঘড়ি আছে, কিন্তু ঘড়ি তো আমি বন্ধ করে রেখেছি, ওই ঘড়ির সময় শুধু বেহিসেবী বয়ে চলে। আমি যে এই তোমাকে আমার বুকের মাঝে অনুভব করার একটা মুহূর্ত ও বয়ে যেতে দিতে চাই না, আমি চাই সময় ও আমার মতই বেহিসেবি সময় ধরে আমাদের ভালোবাসাতে থমকে থাকুক!! তাই ঘড়ি বন্ধ করে সময় কে থমকে দিয়েছি।

: হয়েছে, হয়েছে স্যার!! অনেক হয়েছে আপনার ভালোবাসার কাব্য করা, এখন শুনো এখন রাত সাড়ে তিনটা বাজে তুমি সকাল ৯টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে ধানমণ্ডি লেকে চলে আসবা, যদি এক সেকেন্ড ও লেট করো আর ঘুমের বাহানা দেখাও তাহলে তোমাকে আমি খুন করবো!!

– বাহ!! তুমি আমাকে খুন করলে বিধবা হবে কে?? জান, ভালোবেসে আদর করে খুন করলে, তোমার হাতের খুন ও মধুর মনে হবে, আই মিন মৃত্যুও চুইত লাগপে মনে হয়!!

: ওই ফাজলামি করবা না আমার সাথে, সকালে ঠিক সময় মতন না আসলে সত্যি কাল তোমার খবর আছে!! বলে দিলাম!!

– ঠিক আছে পাগলী, আমি সময় মতই আসবো, এখন তাহলে টাটা??

: অকে, টাটা, ঘুমিয়ে থাকো, বাই…

পরের সকালে…

ঘুম ভাঙতেই বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে তারাতারি হালকা কিছু খেয়েই রওনা করলো জয়। আজ রাইনার কথা মতন ঠিক সময় মতন পৌছাতে না পারলে সত্যি আজ রাইনা জয়কে খুন করেই ফেলবে। কারন গত কয়েকবার থেকে ওদের যতবার দেখা হচ্ছে প্রতিবারেই জয় দেরি করে ফেলে, আর রাইনাও রাগ করে গাল ফুলিয়ে বাচ্চা মেয়েদের মতন বসে থাকে, জয়ের সেই রাগে গালফুলানো পাগলী টাকে দেখতে ভীষণ ভালোলাগে, ইচ্ছে করে এই গালফুলানো বুড়ীটাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাখতে।

তবুও যত যাই হোক আজ আর দেরী করা চলবে না…

কিন্তু কি করার, রাস্তার জ্যাম কি আর ভালোবাসা বুঝে?? একবার জ্যাম লেগেছে তো লেগেছেই ছাড়ার কোন নাম গন্ধ নেই, এদিকে জ্যামে বসে বসে জয়ের ব্লাড প্রেসার যাচ্ছে বেড়ে। নয় টা বেজে দশ মিনিট, হঠাৎ মুঠো ফোনটা বেজে উঠলো, রাইনার ফোন…

ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে দেয় জয়…

– হ্যালো!! রাইনা… ভয়ে ভয়ে বলে জয়।

ওপাশ থেকে… রাইনা রাগান্বিত কণ্ঠে বলে…

: কি ব্যাপার কোথায় তুমি? এখনো আসোনাই??

– এইতো চলে এসেছি প্রায়, আর মাত্র চার-পাঁচ মিনিট লাগবে।

: আচ্ছা থিক আছে!! তারাতারি আসো, আমি এখানেই বসে আছি… বলেই ফোন কেটে দেয় রাইনা!!
ফোন রাখার আরও প্রায় আধা ঘণ্টা পর জয় ধানমণ্ডি লেকে পৌছায়, হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা। রজনীগন্ধা রাইনার প্রিয় ফুল, রাগ ভাঙ্গানোর ঘুষ হিসেবেই কাজ করবে আজ ফুলগুলো।

দূরে একটা বেঞ্চিতে বসে আছে রাইনা, জয়ের প্রিয় কালো রঙের শাড়ী পরেছে আজ সে, দূর থেকেও খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আজ তাঁকে……

কাছে যেতেই বুঝা যাচ্ছে আজ রাজকুমারী ভীষণ রেগে আছে, ভয়ে ভয়ে চুপ করে রাইনার পাঁশে গিয়ে বসলো জয়, কিছুক্ষণ নীরবতার পর মুখ খুললো রাইনা।

: আচ্ছা জয় বল তো, একমিনিট হয় কয় সেকেন্ডে?? বেশ শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো রাইনা!!

– জয় অবাক হয়ে, কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো, হতাৎ এইটা জিজ্ঞেস করছো কেনো জান?? জয়ের ভঁয় আরও বেড়ে গেলো, মনে মনে ভাবছে সাইক্লোনের আগে বুঝি মহাসাগর গুলোও ওর মতই শান্ত থাকে!!

“কারন তুমি তো ফোনে বললা, চার-পাঁচ মিনিটের মদ্ধে আসবা, তা তোমার চার-পাঁচ মিনিট কি আধা ঘণ্টায়ও হয় না??

– সরি বুড়ী, রাস্তায় খুব জ্যাম ছিলো সেই জন্যই আসতে একটু দেরী হয়ে গেছে, এই নাও তোমার জন্য একগুচ্ছ রজনীগন্ধা।

: রজনীগন্ধা কেন আনছো?? কয়টা ধূতরা ফুল আনতে পারলানা? ওইটা খাইয়েই তোমাকে মারতে পারতাম। অভিমানী গলায় বলল রাইনা!!

জয় রাইনার হাতটা হাতে নিয়ে আদুরে গলায় বলল…

– আমার বুড়ীটা আজ আমার উপর এতটা অভিমান করে আছে কেন?? কি হয়েছে আমার বুড়ীটার??
রাইনা আরও একটু রেগে গিয়ে বলল…

: দেখো জয়,আমার সাথে ঢং করবা না, এইসব ন্যাকামি আমার একদম পছন্দ না।

– আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আর কখন ঢং করে কথা বলব না, কিন্তু তুমিও প্লিজ আমার উপর আর রাগ করে থেকো না, তুমি বুঝোনা? তুমি রাগ করে থাকলে আমারও তো কিচ্ছু ভালোলাগেনা।

: ও আচ্ছা তাই বুঝি?? তুমি প্রত্যেকবার এতো দেরী করে করে আসতে পারবা আর আমি একটু রাগ ও করতে পারবো না তোমার উপর?? অভিমানী সূরে বলল রাইনা!!

– আচ্ছা ঠিক আছে যত ইচ্ছে রাগ দেখিও আমিও দেখবো, কিন্তু এখন না। সকালে তেমন কিছু খাইনি এখন খুব খিদে পেয়েছে চলো আগে কিছু খেয়ে নেই??

: তুমি বাসা থেকে খেয়ে বেরহও নাই?? এতো অনিয়ম করো কেনো তুমি?? কি খাবা বলো? জয়ের খিদে পেয়েছে শুনে রাইনা নিজের রাগটাগ ভুলে জয়কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলো।

– তুমি যা খাওয়াবা তাই, আমার তো পকেট একদম ফাঁকা, তাই তোমার ইচ্ছের উপরই নির্ভরশীল।

: চল আজকের এই বিশেষ দিনে আমরা চাইনিজে খাঁই?

– বিশেষ দিন মানে? আজকে আবার কিসের বিশেষ দিন? একটু অবাক আর না জানার ভান করে জিজ্ঞাস করলো জয়!

: কেন তুমি জানোনা?? মনে নাই তোমার? একটু রাগ আর হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করলো রাইনা!!
– নাতো কি কেন? কি দিবস আজকে??

: গাধা, আজ আমাদের সম্পর্কের একবছর পূর্ণ হয়েছে, আর আজ থেকেই আমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ, আর যাই হোক এতো ভুলোমনা একটা ছেলের সাথে আমি আর প্রেম করবো না, করলে দেখা যাবে কবে ভুলতে ভুলতে আমাকেই ভুলে গেছো, আর শুনো আজকের পর থেকে আমাকে কোন ফোন, ম্যাসেজ কিচ্ছু দিবা না তুমি ইডিয়েট!! অনেকটা অভিমান করে বলল রাইনা!!

– আচ্ছা যাও, অকে দিব না… বলেই পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করলো জয়, কাগজটা রাইনার দিকে এগিয়ে দিয়ে জয় বলল এইটা তোমার জন্য।

কাগজটা হাতে নিয়ে কিছুটা রাগ আর অভিমানেই ভাঁজটা খুললো রাইনা, সেখানে সাদা রঙের কাগজটিতে নীলরঙের কালিতে লেখা…

“আজ এই রাজকুমারীর সাথে এই প্রজাটার ভালোবাসার একটি বছর পূর্ণ হলো, আজকের এই দিনেও এই প্রজাটা চায় তার এই রাজকুমারীর ছোট্ট ভালোবাসার রাজ্যের একমাত্র প্রজা হয়ে বাকি জীবনটাও এই রাজকুমারীটাকে ভালোবেসে যেতে!!”

লেখাটা পড়া শেষ হতে না হতেই রাইনার চোখ ভিজে আসছিলো, পাঁশথেকে জয় অস্পষ্ট গলায় বললো

– তোমায় রাগিয়ে দিতে আমার ভালোলাগে, তুমি যখন রাগ করা সত্ত্বেও আমার দিকে শান্ত চোখে তাকাও তখন আমার খুব ভালোলাগে, আজও তাই করছিলাম কিন্তু বুঝতে পারিনি তুমি এততা রেগে যাবে, সরি রাইনা!!

ভেজা ভেজা চোখে আড় চোখে জয়ের দিকে তাকায় তাকায় রাইনা, বোকা বোকা চেহারায় লেকের পানির দিকে তাকিয়ে আছে জয়, তাঁর বোকা বোকা চাহূনিটার দিকে তাকাতেই সমস্ত রাগ গুলো মলিন হয়ে গেলো রাইনার, বড্ড বেশী ভালোবাসা জাগলো ছেলেটার জন্য, বুকের ভেতর কেমন জেনো একটা কম্পন অনুভূত হল তাঁর জন্য , কেন জানি ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরে খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো

“তোমাকে খুব বেশী ভালোবাসি তাই এতো রাগাও তুমি আমায় তাইনা? তুমি খুব পচা, তবুও ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে, আর বেসে যাবো!! হুহ..”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত