ও মা ও মা কিছু খেতে দাও। অনেক খিদা লাগছে। এ কথা বলে আমি আমার ব্যাগ টা টেবিলের মধ্যে রাখলাম। হাত মুখ ধুয়ে এসে টেবিলে বসলাম। কিন্তু মা কোনো খাবার দিচ্ছেন না। আমি তো খুব বিরক্ত হলাম। বিরক্ত হয়ে মায়ের কাছে গেলাম। ” মায়ের রুমে গিয়ে দেখি মা কান্না করেন ” আমার বুক টা কান্না করে উঠলো। ” মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম ” মা কান্না করো কেন? ” মা কান্নায় কোনো কথা বলতে পারছেন না। আমার চোখ পড়ে গেল মায়ের চশমার দিকে। ও বুঝতে পারছি। মায়ের চশমা টা ভেঙে গেছে। তার জন্য মা কান্না করছেন। ইশ! এখন আমার কাছে কোনো টাকা নেই। যদি থাকত তাইলে আমি নিজে কিনে দিতাম। আমি মাকে বললাম ” মা কান্না করো কেন? আমি চশমা কিনে দিব। টিউশনির টাকা দিয়ে কিনে দিব মা। ও মা কান্না করো কেন ? কান্না করো না মা। ” মা আমার দিকে চেয়ে
আমার মুখ টা হাতিয়ে দেন। আমার খুব খিদা লাগছিল। কিন্তু এখন আর খিদা নেই। শুধু একটাই চিন্তা মায়ের চশমা টা কিভাবে কিনে দিব। আমরা খুব মধ্যবিত্ত পরিবার। আমাদের এতো টাকা নেই। যে যা ইচ্ছা তা করতে পারব। তবে আমাদের মধ্যে খুব ভালবাসা আছে। মাকে আমি খুব ভালবাসি। মাঝে মাঝে মায়ের সাথে একটু রাগ করি। তবে আমি ইচ্ছা করে রাগ করি। মায়ের ভালবাসা পাবার জন্য। আমি যখন রাগ করি তখন মা আমাকে অনেক বকা দেন। পরে মা আমার রাগ ভাঙাত নিজে কান্না করে দেন। মা আমাকে কপাল টা হাতিয়ে দিয়ে বলেন ” আমি যেটা পছন্দ করি না সেটা কেন করিস বাবা? জানিস আমি অল্পতে রেগে যাই। তারপরও আমাকে রাগাস কেন? ” আমি মায়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি। আর মিটমিট করে হাসি। যে আমার মা আমার কাছে বোকা হয়ে যান।
আমি রাতে শুয়ে আছি। আমার একটা মেয়ে বন্ধু আছে। খুব ভালো বন্ধু আমার। আমি খুব পছন্দ করি। আমাদের মধ্যেও খুব রাগ অভিমান হয়। আমি একটু বেশি অভিমান করি। আমার আবেগ টা একটু বেশি। সুস্মিতা আমাকে ফোন দিল। আমি কল ধরলাম। সুস্মিতা আমাকে ফোন দিয়ে বলে তাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে। আমি একটু চিন্তা করলাম। আমার কাছে কোনো টাকা নাই। এমনিতেই টাকার জন্য অনেক চিন্তা তারপর সুস্মিতার ছোট ছোট আবদার। না আমাকে কিছু একটা করতে হবে।
সকাল বেলা সুস্মিতার সাথে দেখা করলাম। সুস্মিতা অনেক সাজসজ্জা করে এসেছে। দেখতে একেবারে নতুন বেলি ফুলের মতো। বেলি ফুল দেখলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। আমিও একটু পাগল হলাম। সুস্মিতার প্রেমে আবার পড়ে গেলাম। কিন্তু আমার মন টা বেদনাময়। সুখ সৃষ্টি হয়েও সে সুখ টা মনের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না। সুস্মিতা হাত টা ধরলাম। সুস্মিতা কে বললাম ” সুস্মিতা আমি যদি একটা অপরাধ করে ফেলি আমাকে ক্ষমা করে দিবে কি?
সুস্মিতা আমার গাল টা হাতিয়ে বলে ” তুমি কোনো অপরাধ করতে পার না। ”
আমার চোখে পানি চলে আসলো। আমি হাত দিয়ে তা মুছে ফেললাম। সুস্মিতা অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। সুস্মিতা আমাকে খুব বিশ্বাস করত। কিন্তু আমার অভাবের জন্য আমাদের ভালবাসা টা টিকিয়ে রাখতে পারলাম না। আমি সুস্মিতার চোখের দিকে থাকিয়ে বললাম ” আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। কিন্তু আমি তোমাকে সুখে রাখতে পারব না। আমি তোমার সব মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারব না।
সুস্মিতা কান্না করে দিল। আমিও কান্না করছি। সুস্মিতা আমার চোখের দিকে তাকাল। আমিও তাকালাম। ” মানে কি ” এ কথা বলে সুস্মিতা মন টা অভিমান করল। আমি মনটা শক্ত করলাম। আমার সব কথা সুস্মিতা কে বলে দিতে হবে। নইলে সুস্মিতার চোখে আমি সারাজীবন অপরাধী হয়ে থাকব। কেউ আমাকে ঘৃণা করুক আমি চাই না।
সুস্মিতা কে আমি দাঁড়িয়ে রেখে বলতে লাগলাম ” সুস্মিতা আমি তোমাকে প্রতিদিন ফোন দেই। প্রতিদিন ঘুরতে নিয়ে যাই। এতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু তবুও আমি তোমার মনের আশা পূরণ করতে পারি না। আমি তোমাকে সারাজীবন খুশি রাখতে পারব না।
সুস্মিতা কান্নামাখা মুখে বলে ” তুমি আমাকে কিছু দিতে হবে না। শুধু একটু ভালবাসা দিও। ” আমার চোখে আবার পানি চলে আসল। সুস্মিতা আমাকে এতো ভালবাসে। আমাকে এতো বিশ্বাস করে। কিন্তু আমি তো কিছু ওই করতে পারব না। আমি নিজের চোখের পানি মুছে বললাম ” দেখো সুস্মিতা তোমার বাবার অনেক টাকা আছে। এখন আমি যদি তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করি তাইলে আশেপাশের লোকজন বলবে আমি তোমার বাবার সম্পত্তির লোভে তোমাকে ভালবেসেছি। তখন আমাদের দু’জনের জন খুব খারাপ কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমি চাই তুমি আমাকে
ভুলে যাও। তুমি আমাকে এমন ভাবে ভুলে যাবে যাতে তুমি আমাকে দেখলেও আমার সাথে তোমার কথা বলতে ইচ্ছা হয় না। ” সুস্মিতা আমাকে খুব স্বার্থপর ভাবল। যে আমি একটা স্বার্থপরের মতো কাজ করেছি। তার ভালবাসার কোনো গুরুত্ব ওই দিলাম না। তাকে খুব অবহেলা করলাম। কিন্তু আমি জানি সুস্মিতা কে আমি কত টা ভালবাসি। সুস্মিতা কে বাচানোর জন্য আমার কাছে আর ভালো যুক্তি ছিল না। সুস্মিতার সাথে সম্পর্ক টা যদি আমি টিকিয়ে রাখি তাইলে আমার মায়ের কোনো ইচ্ছা ওই আমি পূরণ করতে পারব না। মায়ের কোনো আবদার আমি পালন করতে পারব না। সুস্মিতা সাথে চলাফিরা করতে গেলে সুস্মিতা মতো হতে হবে। অনেক টাকা খরচ করতে হবে। তাই আমি সুস্মিতার কাছ থেকে দূরে চলে আসলাম। শুধু আমার মাকে ভালবাসার জন্য। মায়ের লক্ষ্মী ছেলে হবার জন্য।
৫ বছর পর সুস্মিতা কে দেখতে পেলাম। আগ থেকে অনেক বড় হয়েছে। সুস্মিতার কোলে একটা বাবু। দেখতে একেবারে সুস্মিতার মতো। সুস্মিতা আমাকে দেখে খুব অবাক হলো। সুস্মিতা আমার কাছে এসে বলে ” তুমি কেমন আছো? ” আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম ” তুমি ভালো থাকলে আমিও ভালো। তোমাকে ভালো রাখার দায়িত্ব টাও আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়েছিল। সুস্মিতা তার বাবু টাকে মাটিতে নামিয়ে বলে ” আগ থেকে অনেক শুখিয়ে গেছ। বিয়ে করেছ?
আমি খুব চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সুস্মিতা আবার বলল ” বিয়ে করেছ? ” আমি এবার সুস্মিতা মুখের উপর একদম শান্ত কন্ঠে বললাম ” তোমাকে ওই আমি ভুলতে পারে নি। তারপর আরেকজন কে কিভাবে আমি আমার মন টা দিব। ” সুস্মিতা আমার গাল টা হাতিয়ে দিতে চাই ছিল। একটা অবুঝ শিশুকে মানুষ যে হাতের স্পর্শ দেয় সে রকক ভাবে দিতে চাই ছিল। কিন্তু দেয় নি। হাত টা শুধু এনেছিল। কিন্তু মনে মনে টিকি কান্না করেছিল। সুস্মিতা আমাকে খুব ভালবাসত। তা আমি বুঝতে পারতাম। আমি তো সুস্মিতার ভালবাসার যোগ্য ছিলাম না। তাই সুস্মিতার ভালবাসা পাই নি। সুস্মিতা হাতের উপর হাত রেখে অন্য দিকে চেয়ে রয়ে ছিল। হয়তো আমার উপর অভিমান করতে চাই ছিল। কিন্তু সে অভিমান টা আর আমার উপর করার তার অধিকার নাই। সে এখন অন্য কারো। কিন্তু আমি আমার মা কে নিয়ে ভালো আছি। মায়ের সেবা করছি। আমি সুস্মিতার সাথে কথা বলে যে টাকা নষ্ট করতাম। সে টাকা দিয়ে আমি আমার মায়ের জন্য চশমা কিনতাম। মায়ের জন্য কাপড় কিনতাম। মায়ের জন্য প্রতিদিন আপেল আঙুর কিনে নিতাম। মা শুধু আমার দিকে চেয়ে থাকতেন। আমি মা কে বলতাম ” মা গো আমি তোমার ভালো ছেলে হতে পারে নি। ” মা আমাকে মাফ করে দিও।
সুস্মিতা আমার কাছে এসে বলে ” একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিও। আমি তো আর ভালো মেয়ে ছিলাম না। ” আমি কিছু বলছি না। যা বলার সুস্মিতা মন খুলে বলুক। আমি শুধু শুনব। আজ আমার সব কিছু শুনার সময়। তারপর সুস্মিতা চলে গেল। আমি আকাশ টার দিকে চেয়ে রইলাম।