বৃহস্পতিবার রাত্রে অফিস শেষ করে বাসায় এলাম, বাসায় এসে ঘরে ঢোকার সাথে সাথে জান্নাত বলে উঠলো – আমার শাড়ি কোথায়?আজকে না আমার জন্য শাড়ি আনার কথা ছিলো ?
তখনই আমার মাথায় হাত, আমার তখন মনে পড়লো তার শাড়ির কথা ।গত চার পাঁচ দিন যাবত সে আমার কাছে একটা শাড়ির কথা বলছে , তাকে একটা নীল শাড়ি এনে দেয়ার জন্য ।
আর আমি তাকে প্রতিদিনই বলি অফিস শেষ করে বাসায় আসার সময়ে মার্কেট গিয়ে শাড়ি নিয়ে আসব । কিন্তু অফিস শেষ করার পর তার শাড়ির কথা মনেই থাকে না । এই শাড়ি নিয়েই গত রাত তার সাথে অনেক তর্ক বিতর্ক আর ঝগড়া হয়েছে ।
তাই তখন আমি তাকে বলছিলাম আজকে অফিস শেষ করে যেমন করে হোক আমি তার জন্য শাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরবো ।আর আজ যদি শাড়ি নিয়ে বাসায় না আসি তাহলে তুমি যা বলবে যা করতে বলবে সব শুনবো ।
কিন্তু অফিস শেষ করার পর ,প্রতিদিনের মত আজকেও শাড়ির কথা একদম ভুলে গেছি ।
এখন যদি আমি বলি ,আমার মনে ছিল না শাড়ি আনার কথা , আমি ভুলে গেছি ।
তাহলে গত রাতের মতই রাতভর তার বকবক আর এটা সেটা শুনতে হবে ।
তাই আমি তার বকবক শুনা থেকে বাঁচতে , তাকে কিছু বলতে না দিয়ে আমি রেগে গিয়ে
বললাম- এতো শাড়ি শাড়ি করছো কেনো ।
শাড়ি শাড়ি বলে আমার মাথাটা শেষ করে ফেলছো , আলমারিতে এতো শাড়ী থাকতে আবার নতুন শাড়ির কী দরকার। যেগুলো আছে সেগুলো কি তোমার হয় না । কয়দিন পর পর তোমার নতুন শাড়ি লাগবে কেন ।
আর এই আধুনিক যুগে মেয়েরা শাড়ি পড়ে নাকি ,তুমি স্কাট, টপস, ট্রাউজার এসব পড়তে পারো না। আরো একগাদা কথা বলে দিলাম । তারপর তার চেহারার দিকে তাকালাম দেখি তার কাঁদো-কাঁদো অবস্থা চোখে জল টলমল করছে এখনই মনে হয় কেঁদে দিবে।
আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ রুমে চলে গেলাম । রুমে গিয়ে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিলাম ,
যাক বাবা তার বকবক শুনা থেকে বাঁচা গেলো ।
কিছুক্ষণ পর ছোট বোন রুমে এসে বললো , খাবার টেবিলে রেডি আছে এসে খাওয়ার জন্য । সব সময় জান্নাত এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যায় খেতে । কিন্তু আজ ছোট বোন কে পাঠালো ।
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আমার কথায় সে অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই আমার উপর রেগে আছে । একটা শাড়ির জন্য আমি তাকে এত কথা শুনাবো সে কখনও হয়ত কল্পনাও করে নাই ।
কিন্তু সত্যিটা সে জানেনা , যা বলছি সব আমার মনের কথা না । শুধু তার কথা শোনা থেকে বাঁচতে মিথ্যে নাটক করলাম ।
এরপর খাবার টেবিলে গেলাম, খাওয়া-দাওয়া করে রুমে আসলাম । এসে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । সে অনেক রাত করে রুমে ঢুকে বিছানা ঠিক করে ঘুমিয়ে পড়লো । আমার সাথে কোন কথাই বললো না । আমি নিজ থেকে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম , কিন্তু সফল হলাম না । আমার সাথে কোন কথাই বললো না , চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো ।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা করে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম । একটা দোকানে বসে চা খেতে লাগলাম । তখনি আমার বন্ধু সোলেমান এসে বললো – দোস্ত আমার একটা কাজ করতে পারবি ।
আমি বললাম – হাঁ সমস্যা নেই বল কি কাজ ।
সে বলে – আমার গার্লফ্রেন্ড রিতার জন্য কিছু গিফট নিয়েছিলাম তাকে দিব বলে কিন্তু সেগুলো তো আর বাসায় নিয়ে যেতে পারছিনা বাবা-মা দেখলে চিল্লাচিল্লি করবে । তাই তুই যদি আপাতত তোদের বাসায় রাখিস আমি জুমার নামাজের পর নিয়ে যাব ।
আমি বললাম – আচ্ছা ঠিক আছে , সমস্যা নাই আমি নিয়ে রাখবো ।
আমার কথা শেষ হতেই – সে আমাকে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল ।
আমিও ব্যাগটা খুলে দেখলাম না ভিতরে কি আছে । আমি ব্যাগটা নিয়ে বাসায় গেলাম । তারপর ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে দিলাম ।
দুপুরে জুমার নামাজ শেষ করে বাসায় গেলাম ।
তখনই সোলেমান কল করে বলে – আধাঘন্টা পর ব্যাগটা নিয়ে তার বাড়ির সামনে যেতে ।
আমি কলটা কেটে দিয়ে টেবিলে পাশে গেলাম ,
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার টেবিল উপর সেই ব্যাগটা নাই । আমার সঠিক মনে আছে আমি টেবিলে উপর রেখেছিলাম । কিন্তু এখন সেটা গেল কোথায় । আমি ভাবলাম ঘরের কেউ হয়তো অন্য কোথাও রেখেছে । তাই আমি রুমের সব জায়গায় দেখতে লাগলাম ।
তখনই রুমে জান্নাত এসে বলে – এই দেখো তো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে !?
আমি তার দিকে না তাকিয়ে ব্যাগ খুজতে
খুঁজতে বললাম – এখন দেখার সময় নেই ।
সে বলে – আরে বাবা একনজর দেখনা আমায় ।
আমি বললাম – দেখো এখন ফাজলামি করার সময় না । এমনি মেজাজ খারাপ ।
সে বলে – কেনো , কি হয়েছে ?
আমি বললাম – সকালে টেবিলের উপর একটা ব্যাগ রেখেছিলাম সেটা খুঁজে পাচ্ছি না এখন ।
সে তখন বলে – যাকে দেওয়ার জন্য এনেছিলে সে পেয়ে গেছে । তুমি আমার দিকে তাকাও তাহলে বুঝতে পারবে ।
আমি পিছন ফিরে তার দিকে তাকালাম , দেখি নতুন একটা নীল শাড়ি পড়েছে কপালে নীল টিপ হাতে নীল চুড়ি অনেক সুন্দর লাগছে তাকে আজ ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম – আরে তুমি নতুন শাড়ি পেলে কোথায় ?
সে বলে – তুমিতো এনে রেখেছিলে সকালে টেবিলের উপর , তুমি হয়তো ভাবছিলা আমাকে সারপ্রাইজ দিবে কিন্তু তার আগে আমি নিজেই তোমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিলাম । নিজেই সবকিছু পেয়ে গেলাম আর এখন পড়ে তোমার সামনে আসলাম । জানো রাতে খুব রাগ হয়েছিল তোমার উপর , তোমার কথায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছি আমি কান্না করেছি । কিন্তু আমি কি জানতাম তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে অন্য প্ল্যান করে রেখেছো । সত্যি তুমি না অনেক ভালো , পৃথিবীর বেস্ট হাজবেন্ড ।
এই বলে সে হাসতে লাগলো , আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে বারবার দেখতে লাগলো । কখনো কোমর কখনো শাড়ির আঁচল কখনো শাড়ির কুচি সবকিছু দেখতে লাগল । তার খুশি আর আনন্দ যেন বাঁধ মানছে না । একটা শাড়ি পেয়ে কেউ এতটা খুশি এতটা আনন্দিত হতে পারে তা আমার জানা ছিল না । তার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে এখন দুই বছর , কিন্তু এর আগে কখনোই তাকে এত আনন্দিত এত খুশি হতে দেখিনি ।
সে নিজেকে বারবার আয়নায় দেখছে আর জিজ্ঞেস করছে আমায় – এই বলোনা কেমন লাগছে আমাকে নীল শাড়িতে।
আমি বললাম – অনেক সুন্দর লাগছে ।
তখনি সে আমার কাছে এসে আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো – দেখি দেখি কয়েকটা সেলফি তুলি তোমার সাথে।
তারপর কয়েকটি সেলফি তুললো । এরপর বললো -তুমি থাকো আমি আম্মু আর ছোট আপুকে শাড়ি টা দেখিয়ে আসি।
এই বলে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো ,
আমি কিছুই বললাম না চুপ থাকলাম কারণ আমি চাইনি আমার কারণে তারা আনন্দ তার খুশি শেষ হয়ে যাক । আমি যদি বলতাম এগুলো আমি আনেনি এগুলো আমার বন্ধু সোলেমানের, সে তার গার্লফ্রেন্ডের জন্য নিয়েছে । হয়তো সে আরো অনেক বেশি কষ্ট পেত তার মনটা ভেঙে যেতো । আমি তা কখনো চাইনি আমার কারনে তার চোখেমুখে যে আনন্দ যে খুশি দেখেছি তা নষ্ট হয়ে যাক । তাই তাকে কিছু বললাম না ।
সেদিন আমি বুঝতে পারলাম , ভালোবাসার মানুষকে খুশি করতে দামি দামি গিফটের প্রয়োজন হয় না । ভালবাসার মানুষটির কিছু প্রিয় জিনিস উপহার দিলেই সে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় ।
এরপর আমি সোলেমান কাছে গিয়ে
বললাম – দোস্ত সকালে তুই যে ব্যাগটা দিয়েছিলি , তার মধ্যে কি কি ছিল আর কোথায় থেকে কোন মার্কেট থেকে কিনে এনেছিলি,
এখন সেখানে চল ।
সে বলে – কেনো ?
আমি বললাম – আগে চল যেতে যেতে তোকে সব কিছু বলছি , এই বলে মার্কেটে রওনা দিলাম ।
…………………………………………………………………..সমাপ্ত………………………………………………………………