বেটি হারামজাদি রিলেশন ব্রেকআপ করবি, কর ব্রেকআপ। আমি ভয় পাই নাকি তর পিছনে দশটা ছেলে ঘুরতে পারলে মনে রাখিস আমার সামনেও ৪/৫টা মেয়ে ঘুরে। কি রে ফাহিম তুই চুপ মেরে বসে আছিস কেন? কিছু তো বল।
-ইয়ে দোস্ত ব্যথা কি বেশি পেয়েছিস?
-ব্যথা কিসের ব্যথা? ওইসব ব্যথায় কিছু হবে না। তবে দোস্ত ব্রেকআপ না করলেও পারত।
-অবশ্যই দোস্ত ব্রেকআপটা জঘন্য হইছে কোন চড় থাপ্পড় নাই, এসে বলল আর চলে গেল। চড় থাপ্পড় না মেরে ব্রেকআপ করলে ফিলিংস জাগে।
সজিব চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
-আমাকে চড় থাপ্পড় মেরে ব্রেকআপ বলা, তুই আমার কিসের বন্ধু, শত্রু বেটা শত্রু।
-রাগ করিছ না দোস্ত, মেয়েটার কপাল খারাপ নইলে তকে ফকির না বানিয়ে এভাবে চলে যায়।
-তুই ফাজলামির লিমিট অতিক্রম করে ফেলছিস।
-বাদ দে ভাই তর দুঃখ বুঝি।
-তুই কিভাবে বুঝলি, তুই প্রেম করিছ?
-সারা দুনিয়া জানে রূপার সাথে আমার প্রেমের কাহিনী, আর তুই এখন বলছিস আমি সিঙ্গেল নাকি ডাবল। শোন আমার বিছানা হয়ত সিঙ্গেল কিন্তু মন টা ডাবল করে ফেলছি সেই কবে।
-আচ্ছা বাদ দে ভাল লাগছে না, চলে যাই।
-ঘুমের ঔষধ কয় পাতা কিনছিস?
-ঘুমের ঔষধ মানে,
-মানে সুইসাইড করবি না, আশ্চর্য একটা মেয়ে এভাবে তকে ছেড়ে চলে গেল তার প্রতিক্রিয়াতে তুই আত্মহত্যা করবি না। মনে রাখিস ভুলেও ফেইসবুক ওয়াল বন্ধ করে মরার চিন্তাও করবি না, বন্ধ থাকলে এখনি খুলে ফেল।
-তর মত বন্ধু যার আছে তার মরার জন্য প্রেমিকার ছ্যাঁকা লাগে না, তদের যন্ত্রনাই মরার জন্য যথেষ্ট।
সজিব মোটামুটি ধরনের রাগ করে চলে গেল। আমি যেখানে বসে ছিলাম সেখানেই রয়েছি, বেচারা সজিব জীবনের প্রথম প্রেমে এভাবে বাঁশ খাবে ভাবা যায় নি। তার জীবণে হঠাৎ করে প্রেম এসে হানা দিল তারপর হুট করে চলেও গেল। তার প্রেমটা আমাদের ঈদের দিনের বন্যার মত হয়েছে। নামাজের যাওয়ার সময় দেখলাম শুকনা রাস্তা, নামাজ শেষে আসার সময় দেখি হাটু পানি, দুপুরে বুক পানি আর রাতে সাঁতার পানি। এই পানি দেখে কক্সবাজার যাওয়ার স্বাদ মিটে গেছে। একবার তো ভেবেছিলাম খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিব যে এইখানে কক্সবাজারের থেকেও পানির মনোরম ঢেউ খেলছে। আফসুস এই ঢেউ মাত্র ২দিনের মত ছিল তিন নাম্বার দিনে সেই ঈদের দিনের নামাজে যাওয়ার মত শুকনা রাস্তা।
বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রুমে ঢুকার আগেই আম্মুর চিৎকার,
-তুই আমাকে পেয়েছিস কি?
-একটা মা পেয়েছি।
-দিন রাত তোদের সব ফরমাশ কাটতে কাটতে আমার জীবন শেষ।
-এতদিন পর বুঝলা ঘরে একটা নতুন মানুষ প্রয়োজন।
-নতুন মানুষ কিসের প্রয়োজন তুই এখন থেকে নিজের সব কাজ নিজে করবি।
-তার থেকে সহজ রাস্তা তোমার কাছে ছিল, আমার কাজ গুলাও করত সাথে তোমার বিশ্রামও হত।
-কোন রাস্তা?
-আমার লজ্জা করে আম্মু।
-তোর লজ্জা করে, কবে থেকে তুই লজ্জাবতী হলি।
-এইতো নতুন রাস্তার কথা মনে হতেই।
-তা সেই রাস্তা কি?
-বিয়ে।
-হারামজাদা নিজেরেই নিজে ঠিক মত রাখতে পারছ না, আবার বিয়ের কথা বলিস।
-আরে আমার বিয়ের কথা না তো।
-তাহলে কি তর বাপরে আরেকটা বিয়া করাবি?
-নাউজুবিল্লা, এইটা কি বল? তবে আব্বুর মনে হয় ইচ্ছা আছে।
-বাপরে নিয়া ফাজলামি, হারামজাদা…..
হারামজাদা পর্যন্তই শুনেছি এরপরের শব্দ শুনতে পাইনি দরজা লাগিয়ে দিয়েছি। রাত ১১টার দিকে সজিব কে ফোন দিলাম, কয়েকবার রিং হতেই সজিবের কণ্ঠ শুনা গেল,
-কি জন্য ফোন দিছস মরে গেছি কি না জানতে?
-না রে দোস্ত, তুই কেমন আছিস সেটা জানতে?
-বুকের বাম পাশে চিনচিন করে ব্যথা করছে।
-ওইটা কিছু না গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, লসেকটিল বাসায় থাকলে খেয়ে ঘুমিয়ে পর।
-ভাই নিতু কেমনে পারল, কত গভীর প্রেম ছিল।
-মেয়েরা গভীর প্রেম যেমন করতে পারে, আবার সেই প্রেম রে ডাইরিয়ার মত পাতলাও করতে পারে।
-আচ্ছা দোস্ত রাখি এখন।
আম্মু এসে চা দিয়ে গেছেন, চায়ে চুমুক দিয়ে হুমায়ূন স্যারের “তোমাদের এই নগরে” বই পড়া শুরু করলাম। বইয়ের পাতা উল্টানোর পর মনে হল রূপা তো অভিমান করে আছে, অভিমান টা ভাঙ্গানো প্রয়োজন ছিল পরে মনে হল থাকুক অভিমান করে কিছু অভিমান জমা হউক। ভালবাসায় সব থাকবে এটাই তো নিয়ম।