ফারিয়া আপুর ডাকে ঘুমের রাজ্য থেকে বাস্তবে ফিরলাম। ফারিয়া আপু ডাকছেই…
— ওই হ্রামী। আর কত ঘুমাবে, এবার তো উঠো।
— হু যাও তো, ডিস্টার্ব করো না। শান্তিতে ঘুমাতে দাও।
— বাবু, উঠ না রে। কলেজ যেতে হবে তো।
— আচ্ছা উঠছি। শান্তিতে তো আর ঘুম হবে না। হলেও দিবে না।
— হি হি…
–
প্রতিদিন কলেজ যাবার আগে ও আমায় ডেকে তুলে কলেজ নিয়ে যায়। আমি নিয়মিত উপস্থিত থাকার পেছনে তার হাত যে রয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আমাকে জোর করে ডেকে বিছানা থেকে তুলে দিলো। আধা ঘুম আধা জাগরণে বাথরুমে গিয়ে পানি দিয়ে মুখ টুক ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কিছুক্ষুণ পর এসে দেখি সব রেডি। তাড়াতাড়ি শার্ট গায়ে দিয়ে মায়ের কাছে গেলাম। কিছু মুখে দিয়ে আপুকে বলে বাইরে এলাম। পরে আমার ফ্রেন্ড কে নিয়ে কলেজের দিকে রওনা দিলাম।
–
আমি ফয়সাল আহমেদ। পড়ি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। ফারিয়া আমার আপন বড় আপু। আমাকে বাবু বলেই ডাকে। আমি নাকি পিচ্চি বাবুর মত তাই। আপুই সেই যে প্রতিদিন আমাকে ঘুম থেকে তুলে কলেজে পাঠিয়ে দেয়। আর আমার বন্ধু মনির। ব্যাচ মেট আমরা।
–
কলেজে পৌছালাম ক্লাস শুরুর ১৫ মিনিট আগে। আমার আরও কয়েক ফ্রেন্ড ওখানে ছিলো। কয়েকজন বন্ধু বান্ধুবী মিলে আমাদের একটা ফ্রেন্ড সার্কেল। আমরা আড্ডা দিবো এমন সময় একটা মেয়ে ক্যাম্পাসে এ ঢুকলো। মেয়েটা নতুন। এবার ট্রান্সফার হয়েছে ২য় বর্ষে। মেয়েটা খুব সুন্দর না, আবার খারাপও না। তবে বেশ মায়াবী। হেটে চলে গেলো আমাদের সামনে দিয়ে। আমার বন্ধুবী তখন বলল,
–
— কে এই মেয়েটাকে প্রপোজ করবে? বাজি রাখলাম। কে পারে দেখি?
আমার এক ফ্রেন্ড বলে উঠলো-
— আমি করবো প্রপোজ। টাকা রেডি রাখ।
— কিসের টাকা। এখানে চ্যালেঞ্জ বাজি হবে। কার মুখের কত দাম দেখি।
–
কিন্তু সেই বন্ধুটা পিছিয়ে গেল। কারণ তার গার্ল ফ্রেন্ড আছে। সে একবার জেনে গেলে কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছে। তাইলে বাজি ধরার কেউ নাই নাকি। আসলে, মেয়েটা কারওর সাথে কথা বলে না। কারও সঙ্গে মিশে না। কাউকে পাত্তা দেয় না। সবাই হয়তো ভাবে ভাব। কিন্তু আমি বুঝি মেয়েটা কারওর সাথে মিশতে পারে না। আসলে মেয়েটাকে খারাপও লাগে না আমার। একটা চান্স নেয়া যায় কি বলেন? প্রেম করি না, আগেও করি নি। একেবারে খাটি সিঙ্গেল যারে কয় আর কি।
আমি মধ্যে থেকে হিরো সেজে বললাম,
–
— আমিই করবো প্রপোজ। তোরা খালি সব ব্যাবস্থা করে দে।
— আচ্ছা করে দিবে নে।
–
আমার কয়েকটা বন্ধুকে ব্যাবস্থা করতে বললাম। তারা ভিতরে চলে গেল। আর আমি বাইরে এসে বসলাম। মেয়েটার নাম জেনেছি। তাসনিয়া নাম মেয়েটার। বন্ধুরা তাসনিয়াকে আমার ব্যাপার বুঝাবে। আমি তাকে ভালবাসি এই সেই। অতঃপর কোনো এক বন্ধুর কল। তাসনিয়া আমার কাছে আসছে। এটা বলেই কল রেখে দিলো। আমি প্রস্তুত হলাম। মেয়েটা এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়।
–
আমার অবস্থা কি বলবো। লাইফে ফার্স্ট কাউকে প্রপোজ করবো। কেমন যেন ফিল হচ্ছে ভিতরে। যাই হোক তাসনিয়া আমায় জিজ্ঞাসা করলো,
–
–তোমার বন্ধুরা যা বলেছে সত্যি?
— হ্যাঁ।
–
সে আমার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমি অনেক কষ্টে তাকে বললাম, আমি তাকে ভালোবাসি। আসলে লাইফে ফার্স্ট প্রপোজ কি না তাই একটু ভয় লাগছিল। আসলে আমি তাকে ভালবাসি কথা টা মন থেকে নাকি এমনিই সাধারণ ভাবে বললাম বুঝতে পারছি না। তাসনিয়া একটা হাসি দিলো। আর আমার কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিলো। আর সাথে ১ দিন সময় চাইলো সে।
–
আমি তো টেনশন এ আছি। বাজি ধরলাম, এখন যদি রিজেক্ট করে মান সম্মান যাবে। আর তাছাড়া এতো সহজে তো কেউ রাজিও হবে না। ধুর যা হবার হোক। তাকে দেখে তো পজিটিভ মনে হলো। আচ্ছা রাজি হলে কি হবে। আমি তো বাজি ধরে প্রেম করবো। ধুরর ছাই.. যা হবার হোক। পরে দেখা যাবে।
–
পরের দিন যখন কলেজ শেষ করে বাসায় ফিরছি। বাসার কাছে প্রায় পৌঁছে গেছি, তখনই সে আমাকে ফোন করলো। প্রথমে আমি তাকে চিনতে পারি নি। কিন্তু পরে কথা বলার পর পরিচয় দিলে আমি তাকে চিনতে পারি। কথায় কথায় জানতে চাইলাম আমার উত্তর তো পেলাম না। সে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উত্তর দিলো। আমি চুপসে আছি। কিন্তু যখন বুঝলাম সে রাজি আছে। আমার আনন্দ যেন আর ধরে না। আসলে এই আনন্দটা কিসের? বাজি জিতার না তাকে কাছে পাবো সেটার? কনফিউজড!
–
ভালোই চলছিলো আমাদের রিলেশন। দিনে খুব বেশি ফোনে কথা বলতাম না। যাও বলতাম বাইরে গিয়ে বলতাম। মাঝে মাঝে গভির রাতেও কথা বলতাম। মায়ের কাছে ধরা খেয়েছিলাম। ওর আর আমার সম্পর্ক ভালোই চলছিলো। কিন্তু সমস্যা অনেক ছিল।
–
– আমরা সমবয়সী।
– ওর ফ্যামিলির কেউ ভালো ভালো না। আমার মা বাবা মেনে নিবে না।
– ওর খুব রাগ আর প্রচণ্ড জেদ। যার কারণে ঠিক মতো খাবার খেত না। দিনে একবার খেত আবার কখনো না খেয়েই দিন পার করতো।
– ও আমায় কিছু শেয়ার করতো না। অনেক কষ্টে কিছু কিছু জানতে পাড়তাম।
–
আমাদের সম্পর্কের এক পর্যায়ে সে তার প্রায় সবাইকে জানিয়ে দেয় আমাদের সম্পর্কের কথা। আমি চাইছিলাম না কেউ জানুক। জানুক তবে দু’একজন। তবুও সে তার বাবা আর চাচা বাদে সবাইকে জানিয়ে দেয়। আর তার চাচা ছিলো খুব রাগি আর ভয়ঙ্কর। এক পর্যায়ে তার চাচাকে জানিয়ে দেয়।
–
আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্ক খারাপের দিকে এগুতে লাগলো। ওর সাথে কথা বললেই ঝগড়া হতো। ভাঙ্গন শুরু হলো। ওর চলা ফেরা আমার ভালো লাগতো না। ওকে অসহ্য লাগতে শুরু করলো। ও আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলতো না। এক পর্যায়ে চরম অসহ্য লাগতে শুরু করলো। আমি তাকে সরাসরি ডেকে ব্রেক আপ করতে বললাম। এটা শুনেই সে আমার মোবাইল নিয়ে মায়ের নাম্বার নিজের মোবাইল টুকে নিয়ে মায়ের নাম্বারে কল দিয়ে দিলো।
–
আমার মা এসব কিছু জানতো না। কিন্তু সে সব বলে দিলো। কিন্তু দেখলাম সে শান্ত ভাবে কথা বলছে। অর্থাৎ আমার মা তার সাথে শান্ত ভাবে বলছে। আমি কিছু অনুকূলতা অনুভব করলাম। আমি তাকে কিছু বললাম না। ফোন নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। বাড়িতে ফিরেই আম্মু সেরকম যাচ্ছে তাই বলে আমাকে বকা বকি করলো। কি হলো। শান্ত ছিলো ভেবেছিলাম। কথায় আছে না নিশ্চুপ হাওয়া ঝড়ের লক্ষণ। এখানেও তাই। নিশ্চুপ থাকা অতি রাগের কারণ হয়ে উঠেছে। ফারিয়া আপু আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ঘরে বসিয়ে আমার মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে চলে গেল।
–
আমি তো এদিকে রাগে ফুঁসছি। ঠিক করলাম কথা বলবো না আর ওর সাথে। কিন্তু না বলেও থাকতে পারতাম না। তাই মাঝে মাঝে এক আধ টুক কথা হতো আমাদের। এভাবেই দুজনই বিরক্ত একে ওপরের উপর। কিন্তু আবার দুজন দুজন্কে ছাড়তে চাইতাম না। মানে একেবারে নাজেহাল অবস্থা। না পারছি সইতে, না পারছি সরে পড়তে।
–
এদিকে ঝগড়া সম্পর্ক নিয়ে বিজি থাকতে পরিক্ষা খারাপ হলো। ও আবার এগুলো নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় থাকতো। কিন্তু কিছু শেয়ার করতো না। এক সময় পুরো অসহ্য হয়ে গেলো সে। আমার সবার উপর আমার ক্যারিয়ার, তারপর বাদ বাকি। তার জন্য আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে।
–
একসময় ভাবতে লাগলাম যে, ব্রেকআপ করে দিবো। যাকে বিয়ে করতে পারবো না, আমার বিয়ে পর্যন্ত যাকে রাখবে না, অযথা তার জীবন নিয়ে খেলা করে লাভ নাই। আর ব্রেকআপ করার জন্য একটা কারণ লাগবে তো। আমি সেই বাজিকেই কারণ হিসেবে ধরবো ঠিক করলাম।
–
আমি কল দিয়ে তাসনিয়াকে পার্কে আসতে বললাম। সে আসলে আমি বাজি খেলেছি এই সেই বলে আমি ব্রেকআপ করে দিই। সে চুপ করেছিলো। কিছু বলে নি। ও প্রমাণ চাইলো যে আমি সত্যই বাজি ধরেছিলাম কি না? আমি মনির কে কল দিলাম। সে সব বলে দিলো। তাসনিয়া কে বলে দিলাম, আমার সাথে রিলেশন রাখার জন্য চাপ দিবে না। এতে আমি চিরদিনের মত তোমার লাইফ থেকে হারিয়ে যাবো। যদি বিরক্ত না করো আমরা বন্ধু হিসেবে থাকতে পারি। তাসনিয়া তাতেই রাজি হয়ে গেলো।
–
আচ্ছা একবার পরিক্ষা করা দরকার। সে আমাকে সত্যিই ভালোবাসে কিনা। তা করাই যায়। ঠিক করলাম তার সামনে প্রেমের অভিনয় করবো। আর এই কাজে আমার গার্ল ফ্রেন্ড হবার জন্য বললাম, জাষ্ট অভিনয় করতে হবে। সব ঠিক করে ফেললাম।
–
এখন রোজ তার সামনে অভিনয় করি, কথা বলি, চ্যাট করি। সাথে তার প্রতিক্রিয়া দেখি। জেলাস হয় বুঝা যায়। কিন্তু একদিন দেখলাম আমার এক বন্ধুর হাত ধরে ক্যাম্পাসে ঢুকছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ওটা ওর বয়ফ্রেন্ড। নতুন বয়ফ্রেন্ড। এই সে বন্ধু আমাদের সম্পর্কের মাঝে ওকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম।
–
স্বাভাবিকই যদিও বাজি ধরে রিলেশন করেছিলাম। কিন্তু অনেক দিন রিলেশন গিয়েছে। মায়া জন্মানো স্বাভাবিক। প্রেমেও পড়লেও অবাক হবো না। আসলে সে যে জেলাস হতো এটা আমার ভুল ধারণা প্রমাণিত হলো। যাক গে মায়া বাড়িয়ে লাভ নাই। সে নিজের কাউকে খুঁজে নিয়েছে। আমার আর অভিনয় দরকার নাই। তাকে তার মতো চলতে দিই।
–
এখন আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে বিজি। এটাই এখন আমার শখ। মন খারাপ থাকে তাসনিয়ার জন্য। কিন্তু কিছু করার নেই। আগে ভাগেই সরে পরেছি। অনেকে হয়তো বেঈমান ভাববে। হ্যা আমি হয়তো তাই। আমি তার ভালো জন্যই তাকে ছেড়ে চলে এসেছি। এটাও তো এক প্রকারের বেঈমানি। যাই হোক, তাসনিয়া ভালো থাকুক এটাই আমার চাওয়া।