-কেমন আছো ফারাহ?
-হুম ভালো, তুমি?
শ্রাবণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু সময় চুপ থাকার পর বললো
-যেমনটা তুমি রেখে গিয়েছিলে।
-বিয়ে করেছো?
-যাকে ভালোবেসেছিলাম, যাকে এই হৃদয় মাঝে স্থান দিয়েছিলাম, তাকে ছেড়ে অন্যকাউকে কিভাবে ভালোবাসবো, অন্যকাউকে কিভাবে বিয়ে করবো?
-তুমি ঠিক আগের মতোই আছো?
-হুম।
-আমাকে ভুলে গিয়ে তুমি তোমার মতো জীবন সঙ্গী খুজে নাও। আমি তো তোমাকে বলেই দিয়েছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসিনা, তবে কেন তুমি আমাকে ভুলতে পারোনা?
-বড্ড ভালোবাসি যে।
-আমি যেমন করে তোমাকে ভুলে গেছি, এ মন থেকে তোমাকে মুছে ফেলেছি। ঠিক তুমিও একইভাবে আমাকে ভুলে যাও।
-পারবোনা ভুলতে তোমায়।
-শোন শ্রাবণ জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে শেখো, জীবনটাকে উপভোগ করতে শেখো।
-আচ্ছা বাদ দাও এসব, এখন বলো তোমাদের দাম্পত্য জীবন কেমন চলছে।
.
কিরে হ্লা ভরদুপুরে ঘুমের ঘোরে কার সাথে কথা বলিস?
আজকে কি মাল টাল খেয়েছিস নাকি?
আকাশের বে-সুর গলার চেচামেচিতে শ্রাবণের ঘুম ভেঙে গেলো। ভুম ভেঙে সে বুঝতে পারলো ওটা তার স্বপ্ন ছিলো, স্বপ্ন বললে ভুল হবে দুঃস্বপ্ন ছিলো।
শ্রাবণ যেন তার হৃদয়ে আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলো। এই ভর দুপুরে সে কি দুঃস্বপ্নটাই না দেখলো! তার দৃঢ় বিশ্বাস আছে তার ফারাহ কখনো এমন করে তাকে ছেড়ে চলে যাবেনা।
.
কোন এক অবেলাতে ফারাহার সাথে তার আলাপ হয়েছিলো। সময়ের আবর্তনে তারা একে অপরের সুখ দুঃখকে আপন করে নিয়েছিলো। তাদের সম্পর্ক প্রথমত বন্ধুত্বের থাকলেও পরবর্তীতে তারা একে অপরের প্রতি দূর্বলতা অনুভব করে। আর সম্পর্কটা তখন বন্ধুত্ব থেকে প্রেম নামক ভালোবাসায় রুপ নেয়।
.
গত দুইবছর যাবৎ তারা একে অপরকে ভালোবেসে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক শ্রাবণ লক্ষ করছে ফারাহ তাকে আর আগের মতো কেয়ার করেনা, অধিক প্রয়োজন ছাড়া তাকে ফোন দেয়না, ভুলেও জিজ্ঞাসা করেনা শ্রাবণ খেয়েছো কিনা। এক কথায় ফারাহ শ্রাবণকে ইগনোর করে।
এতে করে শ্রাবণ মনে মনে কষ্ট পেলেও তা ফারাহার সামনে প্রকাশ করেনা।
এইতো সেদিন ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি করে ফারাহ শ্রাবণের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। আজ পাঁচ দিন পার হয়ে গেলো তবু ফারাহ একটিবারের জন্যেও তার খোজ নেয়নি।
বরং শ্রাবণ ফোন দিলে কেটে দেয়। কথা বলেনা।
কিন্তু এই ফারাহাই একদিন তাকে বলেছিলো, এ দেহে প্রাণ থাকতে সে কখনো তাকে ভুলে যাবেনা।
.
এই পাঁচটি দিন ফারাহার সাথে কথা না বলাতে, তার কেয়ার না পাওয়াতে, ফারাহ তার সাথে যোগাযোগ না করাতে, শ্রাবণ বেশ চিন্তার মধ্যে আছে। আর ঠিক তারই ফলশ্রুতিতে তার ঐ দুঃস্বপ্নটা দেখা।
.
– কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি, কথা বলছিস না কেন? কার সাথে কথা বলছিলি ঘুমের মধ্যে?
আকাশের কথায় সে বাস্তবে ফিরে এলো।
– কই কিছু না তো, কার সাথে কথা বলবো?
– সেটা তো তুই-ই ভালো জানিস।
.
শ্রাবণ বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আজকে ফারাহার সাথে তার কথা বলতেই হবে। সেটা যেমন করেই হোক। তার বাড়িতে যেতে হলে তবুও যাবে।
অনেক ভয় হচ্ছে তার। এই দুঃস্বপ্নটাই যেন সত্যি না হয়ে যায়। সে দ্রুত বেড়িয়ে পড়লো ফারাহার বাড়ির উদ্দেশ্যে। সে তাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছেনা। সে ভেবে পায়না সামান্য একটু কথার জন্য ফারাহ তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।
.
পাঁচদিন আগে….
– ফারাহ শোন।
– হুম বলো।
– চলো আমরা বিয়ে করে নিই।
– কি?
– চলো আমরা বিয়ে করে নিই।
– মাথা ঠিক আছে তোমার?
– কেন, মাথা ঠিক থাকবেনা কেন?
– এখন বিয়ে করতে পারবোনা।
– কেন?
– এমনিই।
– ফারাহ জানো আমার মা খুব অসুস্থ।
– তো?
– এখন তোমাকে বিয়ে করলে আমার মাকে দেখাশোনা করার জন্য একটা মানুষ হবে।
– তোমার মাকে দেখাশোনা করার জন্য আমাকে বিয়ে করবে?
– হুম, বাড়িতে মা একা থাকে। তুমি হলে মা একজন সঙ্গী পাবে।
– কি বললে আবার বলো?
– তোমাকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে গেলে মা একজন সঙ্গী পাবে, তার কাজে সাহায্য করার মতো একজনকে পাবে।
শ্রাবণের এই কথাটা বলাই ছিলো তার বড় ভুল।
তার এই কথা শুনে ফারাহ খৃব রেগে গিয়ে তাকে যা ইচ্ছে তাই বলে চলে যায়। আর তাকে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে গেলো।
.
শ্রাবণের বাড়িতে তার মা একা একা থাকে। মাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই তার। আর এজন্যই সে ফারাহকে বিয়ের কথা বলে।
আর ফারাহ কিনা!
.
“মামা চলে এসেছি, নামেন”। রিক্সাওয়ালার কথা শুনে শ্রাবণ ভাবনা থেকে ফিরে এলো। ভাড়া মিটিয়ে সে ফারাহার বাড়ির দিকে গেলো।
গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে গেটের দারোয়ান তাকে বললো
– কার কাছে যাবেন ভাই?
– ফারাহার কাছে।
– আপনার পরিচয়?
– আমি শ্রাবণ, ফারাহার বন্ধু।
– ও আচ্ছা, একটু দাড়ান। আমি ম্যাডামের থেকে শুনে নিই।
শ্রাবণ “হুম” বলে দাড়িয়ে রইলো।
কিছুক্ষণ পর…..
– ম্যাডাম আপনার সাথে দেখা করবেননা। উনি আপনাকে চলে যেতে বলেছেন।
– কেন?
– সেটা তো বলতে পারবোনা।
– আপনার ম্যাডামকে বলুন শুধু একটু কথা বলেই চলে যাবো।
– আচ্ছা।
তিনি ম্যাডামকে কথাটা বললে ম্যাডাম কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে এলো।
এসেই…
– কি হয়েছে তোমার? আমার বাড়িতে চলে এসেছো কেন?
– তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তৃমি আমার সাথে যোগাযোগ করোনা কেন? ফোন দিলে রিসিভ করোনা কেন? সামান্য একটা ব্যপারে তুমি আমার সাথে এমন করতে পারোনা।
– শোন শ্রাবণ, তোমাকে আমার আর ভালো লাগেনা। আর এজন্যই তোমার সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন বোধ করিনা।
তার এই কথা শুনে শ্রাবণের হঠাৎ মনে হলো সেই স্বপ্নের কথা। তাহলে কি স্বপ্নটা বাস্তবে রুপ নিতে যাচ্ছে?
সে কিছু বলতে যাবে ফারাহকে, কিন্তু দেখে ফারাহ উপরে চলে গিয়েছে।
কোন কিছু না ভেবে বিষন্ন মন নিয়ে শ্রাবণ বেড়িয়ে এলো গেট থেকে।
তার দুঃস্বপ্নটাই ঠিক ছিলো। কিন্তু তার যে ফারাহার উপর অসম্ভব বিশ্বাস ছিলো, ফারাহ কখনো তাকে ছেড়ে যাবেনা!
.
আজ তার ছোটবেলার সেই কথাটা খুব মনে পড়ছে। ছোটবেলায় সে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছিলো, যা তার বাস্তব জীবনেও ঘটেছিলো।
আর আজও ঘটলো।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা