ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছে মুগ্ধ। সেই সকাল বেলা বেরিয়েছে বাসা থেকে আর এখন বিকেল হতে চলল। সারাদিন ক্লাস করে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হবে। তারপর খেয়ে নিয়ে ঘুম দিবে এইসব চিন্তা করতে করতে বাসার দিকে চলেছে মুগ্ধ।
এইসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসে সে। বাসার সামনে আসতেই অবাক হতে হয় মুগ্ধকে। বাড়ির সামনে দুইটা প্রাইভেটকার দেখা যাচ্ছে। ঢাকা থেকে আবার কেউ এলো নাকি?
কলিংবেল চাপার পর মুগ্ধের মা এসে দরজা খুলে দেয়।
– এতক্ষন লাগে তোমার দরজা খুলতে আরেকটু হলেই তো___
কথা শেষ করতে পারে না মুগ্ধ কারন তার চোখ গিয়েছে ড্রইংরুমে। সেখানে কয়েকজন অতিথি বসে আছেন। উনারা সবাই এখন মুগ্ধের দিকেই তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ তাদের কাউকেই চিনে না। লজ্জা পেয়ে এক দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকে মুগ্ধ। ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে ঢুকতেই দেখে মুগ্ধের মা বসে আছে বিছানায়।
– মুগ্ধ শোন।
– হ্যা বল মা।
– উনারা পাত্রপক্ষ। তোকে দেখতে এসেছে।
– মানে কি এসবের? আমি না বলেছি আমি এখন বিয়ে করব না।
– দেখ জিদ করিস না। তোর বাবার বন্ধুর ছেলে মাহিন।অনেক ভালো ছেলে। তার চেয়ে বড় কথা ছেলে প্রতিষ্ঠিত।
– এসব তো আমি শুনতে চাই না। আমি এখন বিয়ে করব না ব্যাস।
– আমাকে এসব বলে লাভ নেই। যা বলার তোর বাবাকে গিয়ে বল। এখন শাড়িটা পড়ে নিচে নেমে আয়।
এসব বলেই মুগ্ধর মা চলে যায়। মুগ্ধর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সে এখনি বিয়েটা করতে রাজী না। সে তার পড়ালেখা শেষ করতে চায়। তারপর বিয়ের চিন্তা করবে। কিন্তু বাবা-মায়ের জিদের কাছে সবসময় হার মানতে হয় সন্তানদের। মুগ্ধ হার মেনে নেয়। শাড়ি পড়ে পাত্রপক্ষের সামনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় মুগ্ধ।
.
বড়লোক বাবা- মায়ের বড় ছেলে মাহিন। লেখাপড়া শেষ করে নিজেদের পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছে এখন মাহিন। সকালবেলা অফিস এর জন্য বের হওয়ার সময়….
– মাহিন।
– হ্যা বলো মামনি।।
– আজ আর তোকে কোথাও যেতে হবে না।
– কেন?
– আজ আমরা তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাব গ্রামে।
– মামনি আমি তো বলেছি আমি এখন বিয়ে করব না। আরো কিছুদিন পরে করব।
– আমরা মরার পরে করবি? আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না। তুই যাচ্ছিস আমাদের সাথে।
মায়ের মুখের উপর আর কথা বলা চলে না। মাহিন রাজী হয়ে যায়। তারপর পরিবারের সবাই চলে আসে মেয়ের বাড়িতে।
মেয়ের বাবা আর মাহিনের বাবা বন্ধু। তারা দুইজন খোশগল্প করছেন। এদিকে মাহিনের কেমন কেমন লাগছে। এর মধ্যেই মুগ্ধ এসে হাজির হয়। মুগ্ধকে এক নজর দেখেই ভাল লেগে যায় মাহিনের। মনে মনে ঠিক করে এই মেয়েকেই সে বিয়ে করবে। তার কিচ্ছুক্ষণ পরেই মুগ্ধ এসে হাজির হয় ওদের সামনে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে থাকে মাহিন। যেন এক আসমান থেকে নেমে আসা কোন পরীকে দেখছে। চোখ,কান,নাক,ঠোট সব মিলিয়ে দেখতে অসাধারন মুগ্ধ।
মাহিনের বাবা-মায়ের ও পছন্দ হয়েছে মেয়ে। তারা দিন তারিখ ঠিক করে ফেলে।
এদিকে মুগ্ধ প্রথমে বিয়ে করবে না বললেও মাহিনকে দেখার পর মত পরিবর্তন করে। কি যেন এক অদৃশ্য মায়াজালে আটকে যায় মুগ্ধর মন। মাহিনকেই এখন চাই মুগ্ধর।
বিয়ের দিন খুব শীঘ্রই ঘনিয়ে আসে। বিয়ের আগে দুজনের কারো সাথে কারো দেখা বা কথা হয়নি। দুজনই দুজনকে নিয়ে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখে দিনগুলো কাটিয়ে দেয়।
আজ তাদের বাসর রাত। হালকা আলোকিত ঘরে বসে আছে মুগ্ধ। অপেক্ষা করছে মাহিনের জন্য। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঘরে প্রবেশ করে মাহিন। এগিয়ে এসে মাহিনকে সালাম করে মুগ্ধ।
– চলুন দুরাকাত নফল নামায পড়ে নেই।(মাহিন)
– আচ্ছা চলুন..(মুগ্ধ)
নামায পড়ে ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো বিছানায় গিয়ে বসে মাহিন এবং মুগ্ধ। দুজনেই খুব অস্বস্তিবোধ করছে। বলার মত কোন কথা খুজে পাচ্ছে না।
– আপনি কি পড়ালেখা শেষ করতে চান?(মাহিন)
– জ্বী।
– আচ্ছা খুব ভালো। আমিও চাই আপনি আপনার পড়াশোনা শেষ করুন।
– ধন্যবাদ।
– আচ্ছা আপনি কি বই পড়েন?
– হ্যা বই পড়তে আমার ভীষন ভালো লাগে।
– আমারো। আপনার প্রিয় লেখক কে?
এইভাবে চলতে থাকে তাদের কথা। এক রাতের মধ্যে খুব ভালো একটা বন্ধুত্ত হয়ে যায় তাদের। সারারাত গল্প করেই কাটিয়ে দেয় মাহিন এবং মুগ্ধ।
পরদিন সকাল। রোদের আলো চোখের এসে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় মাহিনের। চোখ খুলে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে মুগ্ধ। ঘুমন্ত অবস্থায় খুব সুন্দর লাগছে মুগ্ধকে। মাহিনের খুব ইচ্ছে করছিল মুগ্ধর ঠোটে একটা চুমো খাবে। কিন্তু সাহস পাচ্ছিল না। হঠাত মুগ্ধর ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে দেখে মাহিনের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল সে। প্রচন্ড লজ্জা পায় মুগ্ধ। উঠে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হতে চলে যায় মুগ্ধ। মাহিন বিছানায় বসে হাসতে থাকে।
তাদের বিয়ের এক সপ্তাহ হতে চলেছে। মুগ্ধ আর মাহিনের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে কিছুটা। তারা এখন একে উপরকে তুমি বলে ডাকে। সকাল বেলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে মুগ্ধ। পিছনে হা করে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে মাহিন। মুগ্ধ একটু পর পর আড়চোখে মাহিনকে দেখছে। চুল আচড়ানো শেষ করে মাহিনের সামনে এসে দাঁড়ায় মুগ্ধ।
– এই যে মিস্টার। হা করে কি দেখছেন?
– ক-ক-কই? কিছু না ত। আমি তো পেপার পড়ছিলাম।
– তাই? আমি তো দেখলাম তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে।
– একদম না। আমি পেপার পড়ছিলাম।
– ভালভাবে মিথ্যে কথাও বলতে পারো না তুমি। আচ্ছা শুনো আজকে বিকালে তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু।
– কেন?
– ঘুরতে যাব তোমার সাথে।
– আচ্ছা ঠিক আছে চেষ্টা করব।
– চেষ্টা না তোমাকে আসতেই হবে।
– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চলে আসব।
বিকেল বেলা মাহিন আর মুগ্ধ একসাথে বেরিয়ে পড়ে। মুগ্ধ নিষেধ করায় গাড়ি নিয়ে বের হয়নি মাহিন। বিয়ের পর এই প্রথম তারা একসাথে ঘুরতে বের হয়েছে। রিক্সায় বাতাসে মুগ্ধর চুলগুলো উড়ে এসে মাহিনের মুখে পড়ছে। মাহিন নেশাগ্রস্থের মত চুলের সুবাস নিতে থাকে। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে ওরা। ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এখন বাসায় ফিরার পালা। ফাকা রাস্তায় আপন গতিতে চলছে রিক্সাটা।
– একটা কথা বলার ছিল তোমাকে। (মাহিন)
– আমি জানি কি বলবে তুমি।
– কিভাবে জানো?
– এমনিতেই বুঝে গিয়েছি তোমার মনের কথা।
মাহিন চুপ হয়ে যায়। কথা বলার মত কিছু খুজে পায় না। মুগ্ধ হঠাত করেই আলতো করে মাহিনের ঠোটে চুমো খায়। এই আকস্মিক ঘটনায় অবাক হয়ে যায় মাহিন আর মুগ্ধ হাসতে থাকে। সেই হাসি মাহিনকে অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিচ্ছে। মাহিনের কাধে মাথা রাখে মুগ্ধ পরম নির্ভরতায়। সে বুঝে গেছে তাকে অনেক আগলে রাখবে এই ছেলে। মাহিন পরম ভালবাসায় আগলে ধরে মুগ্ধকে। তারা এখন জানে দুজনই দুজনকে তারা ভালবেসে ফেলেছে।
বেচে থাকুক এই ভালবাসাগুলো।
…………………………………………………………… সমাপ্ত ……………………………………………………………..