অনেক দিন ধরে সুস্মিতা কে দেখছি খুব একা একা চলে। সুস্মিতা ইন্টার ফাইনাল ইয়ারে পড়ে আর আমি অনার্স ১ম ইয়ার। সুস্মিতাকে দেখতে আমার কাছে জোনাকিপোকার মতো। রাতের আধারে যখন জোনাকিপোকা এই অসহায় রাত কে তার আলো দিয়ে সুন্দর করে তেমনি সুস্মিতাও আমার মনটা কে তার এই সুন্দর মন দিয়ে আমাকে আলোকিত করে। সুস্মিতাকে দেখার জন্য প্রতিদিন তার ক্লাসের সামনে যেতাম। সুস্মিতা তার বন্ধুদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতো। হাত টা অনেক সময় নাঁচাত। আমি যে কি সুখ পেতাম। ইশ! সুস্মিতা দাঁত টা বের করে চুলগুলো ঠিক করত। আর মুচকি মুচকি হাসি দিত। আমি পাগল হয়ে যেতাম। আমি খুব আনন্দ হতাম। যে আমি সুস্মিতার প্রেমে পড়েছি। কিন্তু আমার ভাগ্য টা এমন কেন? যাকে পাব না তার প্রেমে পড়েছি। অন্য কোনো মেয়ে আমার জীবনে আসতে পারল না।
ক্লাস পাকি দিয়ে সুস্মিতা কে দেখার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আমার। অনেক দিন সুস্মিতা কে দেখতে পেতাম তার ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে । আমার তখন অনেক হিংসা হতো যে সুস্মিতার এতো ছেলে বন্ধু কেন? কিন্তু আমার হিংসা। সুস্মিতার কিছু ওই হবে না। কারণ সুস্মিতা তো জানে না আমি তাকে খুব ভালবাসি। সুস্মিতা যেদিন জানবে আমি তাকে ভালবাসি হয়তো আমাকে একটা চড় দিবে। নয়তো সবার সামনে অপমান করবে। সুস্মিতার বাবার অনেক টাকা। আর কোটিপতি বাবার মেয়েদের অনেক অহংকার থাকে। তারা যে কোনো সময় যা ইচ্ছা তা করতে পারে। তারা যেমন ১০ জন বন্ধু নিয়ে ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করতে পারে। তেমনি করে ১০ টা বন্ধু কে অপমান করতেও তাদের কাছে বেশি সময় লাগে না।
আমি একটা রেস্টুরেন্টে বসে কফি খাচ্ছি এমন সময় দেখি সুস্মিতা তার বন্ধুদের সাথে ঢুকল। তার মন টা অনেক হাসি খুশি । ইশ! এতো সুন্দর করে মানুষ হাসে কি করে? সুস্মিতা কে না দেখলে তা বুঝা যেতে না।
আমি সুস্মিতার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। সুস্মিতা আমার কাছে কখন আসলো আমি তো বলতে ওই পারি নি। সুস্মিতা টেবিলের মধ্যে থাপ্পড় দিয়ে আমাকে সজাগ করল। আমি অবাক হলাম। খুব লজ্জা পেলাম। সুস্মিতা হাত নাচিয়ে বলে সমস্যা কি? আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। সেখানে থাকলে হয়তো অনেক লজ্জা পাব। সুস্মিতা অবাক হয়ে তার বন্ধুদের দিকে চেয়ে একটা মন জুড়ানো হাসি দিল।
সুস্মিতা একটা বটগাছের ধারে বসে বই পড়ছে।আমি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তার কাছে গেলাম। আজ আমার মনের কথা বলে দিতে হবে। অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। সুস্মিতা আমার দিকে থাকল। মনে হয় কিছু বলবে। কিন্তু কোনো কথা ওই বলছে না। কি করা যায়। মনে মনে ভাবতে লাগলাম। আচ্ছা সুস্মিতা কি আমাকে পছন্দ করে? আমার মনে হয় না। কারণ সুস্মিতা অনেক হ্যান্ডসাম ছেলেদের সাথে ঘুরাঘুরি করে। মা আমাকে একদিন বলেছিলেন মনের কথা মনে রাখতে নেই। যা বলার তা বলে দিতে হয়। কিন্তু আমি তো সাহস পাচ্ছি না। সুস্মিতা বই ব্যাগের মধ্যে রেখে উড়নো টা মাথার মধ্যে দিয়ে হাঁটতে লাগল। আমি কি হাটব? তা ভাবতে লাগলাম। না আমি হাঁটতে লাগলাম। সুস্মিতা আমার কিছু কথা ছিল। এ কথা বলে জিহ্বার মধ্যে একটা কামড় দিলাম। সুস্মিতা চোখ মোটা করে আমার দিকে থাকিয়ে বলে ” কি?”
আমিও বুকের মধ্যে সাহস এনে বললাম “আমি তোমাকে পছন্দ করি।” সুস্মিতা হিংসা চোখে থাকিয়ে পরে চলে গেল। আমি কোনো উত্তর পাই নি। সেই উত্তরের অপেক্ষায় আমি প্রায় ৩০ দিন অপেক্ষা করলাম।
আমি একদিন সুস্মিতার বাসার সামনে গেলাম। আমি জানি সুস্মিতা এ সময় বাহিরে বের হয়। বের হয়ে মনের খুশিতে চারদিকে ঘুরাঘুরি করে। হ্যা। সুস্মিতা বের হলো। সুস্মিতা আমাকে দেখতে পেল তাদের গেটের সামনে। সুস্মিতা আমাকে দেখে খুব বিরক্ত হলো আমি বুঝতে পারছি। সুস্মিতা আমার কাছে এসে মিনমিন করে চেয়ে থাকল। আমি আমতা আমতা করে বলে ফেললাম ” তোমাকে দেখার জন্য আসলাম। ” সুস্মিতা এবার রাগি মুখ নিয়ে আমাকে বলে ” মার খাবেন? আমি চারদিকে তাকালাম। কোনো মানুষ দেখতে পাই নি। এবার কিছু টা সাহস পেলাম। মার খেলে মানুষ তো আর দেখবে না। আমি বললাম ” তুমি মার দিলে মার খাব।”
সুস্মিতা এবার একটু হাসি দিয়ে বলে ” আমার জন্য প্রতিদিন বিকাল বেলা এই শেষ বেলায় অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে।” আমি তো খুবি অবাক হলাম। নিজের হাতে একটা চিমটি দিলাম। তারপর পরীক্ষা করে দেখলাম আমি ঠিক আছি। তাইলে সত্যি সত্যি সুস্মিতা এ কথা বলেছে। আমি হাসি মুখে বলে ফেললাম ” তোমার জন্য সব কিছু করতে পারব। তোমার জন্য ওই বিল্ডিং থেকে লাফ দিতে পারব। ” সুস্মিতা এবার রাগ করে বলে ” গাধা তুমি যদি লাফ দিতে গিয়ে মরে যাও তাইলে আমি কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখব?
আমি তো বোকা হয়ে গেলাম। সুস্মিতা আমাকে গাধা বলল। যাক অবশেষে সুস্মিতা আমাকে আপন আপন ভাবতে লাগল। আমি বললাম ” এমনি বলেছি। ” সুস্মিতা একটা হাসিয়ে দিয়ে বলে ” কাল ক্যাম্পাসে দেখা করো।
”
আমিও হ্যাসূচক উত্তর দিয়ে চলে আসি।
আমি ও সুস্মিতা খুব চুপ করে বসে আছি। কোনো কথা বলছি না। কি বলব বুঝতে পারছি না। তাই আমি বলে ফেললাম ” আজ কি দিয়ে খেয়ে এসেছ। ” সুস্মিতা একটা বড় হাসি দিল।
হিহিহিহিহিহিহ।
আমার মন টা খারাপ করে ফেললাম। এ আমি কি প্রশ্ন করলাম। সুস্মিতা আমাকে বলে ” এতো অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন করো। আমি না হেসে থাকতে পারি না। আচ্ছা তুমি এতো বোকা কেন?” আমি আশেপাশে তাকালাম। দেখলাম কোনো মানুষ নেই। আমি একটা বটগাছের দিকে থাকিয়ে বললাম ” আমি কিন্তু ওতটা বোকা না। ” কেউ আমার কাছ থেকে এক টাকা বেশি নিতে পারে না। ” সুস্মিতা এবার আমাকে একটা ধমক দিল। চুপ। আমি নিরব হয়ে থাকলাম। এবার সুস্মিতা আমাকে বলে ” তুমি আমাকে অনেক আগে থেকে ভালবাসতে। আমি জানতাম। তাই আমি তোমাকে আমার আশেপাশে দেখলেও কিছু বলতাম না।
ও তাইলে তুমিও কি আমাকে একটু পছন্দ করতে? সুস্মিতা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ” হ্যা ” করতাম।
আমি কিছু বললাম না। মনে মনে হাসতে থাকলাম। সুস্মিতা আমার কাঁধে মাথা রাখল। সুস্মিতা মন টা খারাপ করে বলল ” তুমিও কি আমাকে একদিন ভুলে যাবে?” আমার চোখ থেকে এক ফুটা পানি পড়ল। সুস্মিতা আমার চোখের পানি দেখতে পেল। হয়তো সে মন খারাপ করেছে আর বেশি করে। আমি সুস্মিতা কে বললাম ” যাব না খুব ভালবাসব তোমাকে।