মেয়েঃআচ্ছা আপনি তো রোজা তাই না???
ছেলেঃহুম…কেন?
মেয়েঃ বিকাল গরিয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে, ইফতারির বেশি সময় নেই আর।
ছেলেঃ ওহহ!আচ্ছা আমরা কি একসাথে এইখানে ইফতারি করতে আরি না?
মেয়েঃ আমার পক্ষে এটা সম্ভব না। কারন টা কি জানেন?
ছেলেঃহুম, আপনার বাড়ি থেকে সমস্যা হবে।
মেয়েঃ খুব একটা ঠিক বলেননি।
ছেলেঃ কেন কেন?
মেয়েঃ কারন বাড়ির সবাই জানে তাদের মেয়ে বিনা দরকারে বাড়ির বাহিরে থাকে না। কিন্তু আল্লাহ তো দেখতাছে আমি একজন পরপুরুষ সাথে বেশি ক্ষন সময় কাটাইতাছি।আমি কখনোও বোরখা এর সাথে মুখস ছাড়া বের হইনা,শুধু আপনার সাথে বিয়ের সম্মন্ধ ঠিক হইছে তাই হিজাব পরে আসছি।কারন আমার মুখ এতটুকু দেখার অধিকার আপনি রাখেন।
ছেলেঃ আচ্ছা চলেন হাটতে হাটতে আপনার বাড়ির কাছে দিয়ে আসি।[মেয়েটির সাথে যতই কথা বলছি ততই মগ্ধ হচ্ছি(মনে মনে)]
মেয়েঃ আচ্ছা চলেন।দাঁড়ান মুখসটা লাগিয়ে নেই।
………………………………
[রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে,…]
মেয়েঃ কিছু বলছেন না যে??
ছেলেঃ কি বলবো? আপনার কথা গুলো শুনতেই ভালো লাগে।
মেয়েঃ ও আচ্ছা তাই না?[মুছকি হেঁসে]
ছেলেঃহুম।
মেয়েঃ ওহ আচ্ছা। আচ্ছা একটা কথা বলেন আপনি যে বললেন আপনি সিগারেট খান/নেশা করেন আপনার চেহারা দেখেতো মনে হয় না।
ছেলেঃ আমার চেহারা এমনই।আপনি জানলেন কেমনে?এমন হয় না?
মেয়েঃআরে আমি শুনছি তাদের চেহারা বাজে হয়।আপনি কিন্তু রোজা আর রোজার রাখলে মিথ্যা বলতে হয় না। সত্যিই কি আপনি নেশা করেন?
ছেলেঃ এহেম এহেম, আচ্ছা এই কথা আমরা বাদ দেই।
মেয়েঃ নাকি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না?? না হলে বলেন আমি আমার পরিবারকে বলে দিচ্ছি।
ছেলেঃ কিযে বলেন আমি আপনার মত মেয়ে পেলে ধন্য হইয়ে যাব।কিন্তু আমি তো আপনার যোগ্য না আর আমাকে ভালো মত চেনেনও না।
মেয়েঃ আমার চেনার দরকার নেই।বাবা মা হয়তো আমার খারাপ চাইবে না।
ছেলেঃ ইসলামে আছে তুমি যাকে বিয়ে করবে তার সম্পর্কে যেনে নাও।
মেয়েঃ তার জন্যই তো আপনার সাথে সাক্ষাৎ হলো আমাদের ।আমার মন বলছে আপনি এতটাও খারাপ না।আমি জানা মতে আপনি অনেক বিশ্বাসী আর ভালো মানুষ।এখন আমি যা শুনেছি এটা ভুল নাকি আপনি মিথ্যা বলছেন এটাই বুজতে পারছি না।এখন আপনার ইচ্ছা যদি আমাকে বিয়ে না করতে চান তাহলে এখন বলে দিতে পারেন।
ছেলেঃ কি যে বলেন আপনাকে পছন্দ করবে না এমন মানুষ কমই আছে।আর আপনাকে তখন বললামই আমি কোনো চাকরি করি না যা করি আমার একা চলি কোনো মতে।তাহলে আপনাকে চলাইবো কেমনে?এইযুগে টাকা ছাড়া কি কোনো জায়গায় সম্মান পাওয়া যায় নাকি?
মেয়েঃ আমি কি টাকাকে বিয়ে করতে চাই নাকি? টাকার সম্মান ক্ষণস্থায়ী।কারন আজ টাকা আছে সম্মান আছে,কিন্তু কাল টাকা নেই সম্মান ও নেই।কিন্ত ভালোবাসার সম্মান সারাজীবন।আমি আজ টাকাওলা দেখে বিয়ে করলাম কিন্তু কাল তিনি মারা যেতে পারে বা টাকা নাও থাকতে পারে।আর যারা টাকাওলা তারা প্রায়ই টাকার পিছনে দৌড়ায়,আল্লাহ আদেশ উপদেশ ভুলে,তারা তাদের স্ত্রী দের সময় দিতে পারে না,তাদের মধ্যে তেমন ভালো বাসা থাকে না।যে স্বামী-স্ত্রী এর মধ্যে ভালোবাসা থাকে তাদের কাছে পৃথিবীটাই জান্নাত।তাই আমি একটা জান্নাত চাই টাকা নয়।
ছেলেঃ(অবাক হইয়ে তাকিয়ে আছে)
মেয়েঃ আচ্ছা বাদ দেন।বাড়ির কাছে এসে গেছি।কাল আমাদের বাড়ির কাছে আসতে পারবেন?
ছেলেঃ হুম পারবো। কিন্তু কেনো?
মেয়েঃ আসলেই বুঝবেন। আর আমার নাম্বার ০১……।দয়া করে কোনো এসএসমেস অথবা কল দিবেন না।কারণ আমি আর পরপুরুষ এর সাথে অকারনে কথা বলতে চাইনা। শুধু কাল বিকালে যখন আমাদের বাড়ির কাছে আসবেন তখন একটা sms করবেন।
ছেলেঃআচ্ছা।
মেয়েঃ আল্লাহ হাফেজ।
ছেলেঃআল্লাহ হাফেজ।
……………………
রাতে মেয়েটি নামাজ পরে আল্লাহ এর কাছে দোয়া করছে…………
“-হে আল্লাহ আপনিতো বলেছেন, যে যেমন তার সঙ্গী তেমন হবে। আমি চাই আমার স্বামী তোমার প্রতি আত্ন সমার্পনকারী হোক।আজ যার সাথে দেখা হলো জানি না তিনি কেমন, কিন্তু কেনোযেনো আমার মনে হচ্ছে তিনি ভালো। যদি তিনি পথ ভ্রষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তাকে আপনি হেদায়াত দান করুন।আল্লাহ আমি তার কাছে বিয়ে বসতে পারি আর না পারি আমি তোমার ভিরু করতে পারি,আল্লাহ তুমি সাহায্য করো। আর আপনি বলেছে নেককার স্বামী চাইতে, আমি চাই আমার স্বামী নেকার হোক।(আমিন)
ছেলেটি নামাজ পরে শুয়ে চিন্তা করছে, পরীক্ষা কি বেশি নিয়ে ফেললাম নাকি?নাহ এত ভালো একটা মেয়েকে পরিক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি।আচ্ছা যাইহোক কাল দেখি কি হয়……………।।
।।…………।।
“ছেলেটি বিকালে মেয়েটির বাড়ির কাছে গিয়ে sms দিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরে একটি ছোট ছেলে একটি প্যাকেট নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে চলে গেলো।ছেলেটি ঐ পিচ্ছি ছেলে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কিন্তু উত্তর না দিয়েই চলে গেলো।“ সাথে সাথে একটি sms আসলো তার মোবাইলেঃ-“আসলামু আলাইকুম।এই প্যাকেটের মধ্যে একটি ইসলামিক বই আছে। এই বই ১০ দিন পরবেন আর পরেছেন কিনা এটা জানার জন্য আমি ১০-১২ দিন পরে একটি পরিক্ষা নিব।আমি চাই আপনি কম পক্ষে ৮০% যেন উত্তর দিতে পারেন।‘’
ছেলেটি sms এ রিপ্লাই দিলো ‘ধন্যবাদ!আমি চেষ্টা করবো’
.
..
মেয়েটি ছেলেটিকে প্রতিদিন নামাজের সময় নামাজ পরার জন্য প্রতি ওয়াক্তে sms দিতো। আর কিছু উপদেশ মূলক হাদিস sms দিতো।যেমনঃ-
১।“আল্লাহ পাক বলেন উত্তম কে হইতে পারে যে ব্যাক্তি সৎ পথে নিজে চলেই এবং তিনি অপরকে সৎ পথ ও আল্লাহ আর আল্লাহ এর রাসুল এর দিকে ডাকে” (আমি চাই আপনি নামাজের সময় অন্যকে ডাক দিয়ে নিয়ে যান)
২।“নামাজ বেহেস্তের চাবি” “আল্লাহ বলেন,যে ব্যাক্তি এখলাস এর সাথে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরেবে আল্লাহ তাকে ৫টি পুরষ্কার দিবে।(১)পৃথিবীতে রিজিকের দঃখ দূর করে দিবে, (২)কবরের আজাব হঠায়া দিবে,(৩)পুল সিরাত বিদ্যুৎ এর গতিতে পার করে দিবে,(৪) আমলনামা ডান হাতে দিবে,(৫) বিনা হিসাবে জান্নাতে দিবে।(আপনার সাথে যদি বিয়ে হয় তাহলে আপনার সাথে আমি জান্নাত থাকতে চাই)
৩।মাদককে আল্লাহ হারাম করেছেন।(আমি চাই এবং অনুরোধ করি আপনি মাধক সেবন করবেন না দয়া করে)
এইরকম মেসেজ প্রতিদিন মেয়েটি দিতো। কিন্তু ছেলে মেসেজ এ কথা বলতে চাইলেও মেয়েটি রিপ্লাই দিতো না………।
১০ দিন পরে…………
“ছেলেটি মেসেজে বলল,আসলামু আলাইকুম। আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো,আজ বিকালে সেই রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে পারবেন?
মেয়েঃ অলাইকুম আসসালাম। বাড়ি থেকে অনুমতি নিয়ে একটু পরে বলছি।
ছেলেঃআচ্ছা।
………৫ মিনিটি পরে
মেয়েঃআছরের নামাজের পরে সেই রেস্টুরেন্টে দেখা হছে ইনশাল্লাহ।
ছেলেঃ ধন্যবাদ। আসলামু আলাইকুম।
মেয়েঃ অলাইকুম আসসালাম।
;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;বিকালে রেস্টুরেন্টে;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;
ছেলেঃআসলামু আলাইকুম।কেমন আছেন?
মেয়েঃ আসলামু আলাইকুম।আলহামদুল্লিহ ভাল।আপনি কেমন আছেন?
ছেলেঃআলহামদুল্লিহ।
মেয়েঃকি যেন বলতে চাইছিলেন?
ছেলেঃ কি ভাবে বলি।আমি মিথ্যা দিয়ে সম্পর্ক শুরু করতে চাই না।আমি সেদিন মিথ্যা বলছিলাম আমি মাদক-আসক্ত,তেমন চাকরি করিনা,আমি তেমন নামজ পরিনা।আসলে আমি কখনোও মাদক জাতীয় কিছু সেবন করিনি ইনশাহল্লাহ করবো না।আমি আল্লাহর রহমত এ একটা ভালো চাকরি করি কিন্তু তেমন বড় পদে নয় নতুন তো। আর আমি প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরি ইনশাহল্লাহ।জানি না আল্লাহ কবুল করবে কি না তারপর ও পরি। আর আমি মিথ্যা বলার জন্য দঃখীত।
মেয়েঃ অহহ… আমি মিথ্যাবাদীকে বিয়ে করতে পারবো না।(ছেলেটির মুখ কালো হয়ে গেলো)।
মেয়েঃযাইহোক ভুল যেহেতু স্বীকার করছেন আল্লাহ মাফ করবে ইনশাহল্লাহ তার মধ্যে আমি আর কি? আমি মাফ করে দিলাম।(ছেলেটির মুখ উজ্জল হয়ে গেলো)
মেয়েঃ কিন্তু একটা শর্ত আছে।
ছেলেঃ কি শর্ত বলুন।
মেয়েঃ আগামী শুক্রবার আপনি কিছু গরীব দুঃখীদের কাফফারা হিসাবে ইফতারী করাবেন।
ছেলেঃআচ্ছা। আপনি থাকবেন তো ?
মেয়েঃ না। কিন্তু বিয়ের দিন গরিব দুঃখীদের যখন খাওবেন তখন সাথে থাকবো।
ছেলেঃআচ্ছা।চলেন ইফতারী এর সময় হয় এলো আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
মেয়েঃ আচ্ছা চলেন…।।
“এক ভাল/নেককার স্বামী-স্ত্রী/ছেলে-মেয়েই পারে তার সঙ্গীকে ভালো করতে।কিন্তু আল্লাহ-তায়ালার কাছে দোয়া করতে হবে কারন হেদায়াত দেওয়ার মালিক আল্লাহ’’।
….
ঈদের দিন সবাইকে দাওয়াত,,কেউ আমাদের বাড়ি আসতে ভুলবেন না….
…(অগ্রিম ঈদ মোবারাক)
……………………………………………………….(সমাপ্ত)……………………………………………….