আমি নিরব। একটা সরকারী অফিসে জব করি। ভালো মাইনে পাই…..মা আর আমার দিন সুখেই ছিল। আমার বাবা নাই। মায়ের মুখে শুনেছি আমি যখন ৪ বছরের ছিলাম তখন নাকি বাবা মারা গিয়েছিল। তখন থেকে মায়েই আমাকে মানুষ করেছে। আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। যাই হোক কাজের কথায় আসি। আমি প্রতিদিন স্বপ্নে একটা মেয়েকে দেখতাম। শুধু স্বপ্নেই দেখেছি । বাস্তবে না। প্রতিদিন আমি আমার স্বপ্নের পরির সাথে কথা বলি। ওর সাথে অনেক হাসি তামাসা আরোও কতো কি…কিন্তু ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই তা বিলিন হয়ে যেত। হঠাৎ একদিন…. মা আমাকে এসে বললো।…
— বাবা তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি?(মা)
— কি বলো মা।(আমি)
— হ্যাঁ, বাবা তোম শরিফ আঙ্কেলের মেয়ে
নীরা।
— কিন্তু মা।……
— আর কোন কিন্তু নয়।…..
যেহেতু প্রেম ভালোবাসা করিনাই তাই
রাজী হয়ে গেলাম। মা বলে গেল আগামী
শুক্রবারে নাকি বিয়ে। সব কিছু ঠিক করে রেখেছে আর আমাকে কিছুই বলে
বলে নাই। যাই হোক অবশেষে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এল। আজ আমার বিয়ে অথচ বউের মুখটাও এখনো দেখি নাই।
যাই হোক অবশেষে বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি এলাম।…… তারপর মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে বাসর ঘরের দিকে পা বারালাম।(যেহেতুু কোন বন্ধুদের বলার সময় পাইনি তাই আরকি মায়ের সাথে কথা বলছিলাম। আর তাছাড়া মায়ের সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধুর মতো।…
অবশেষে বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম। বউ এসে সালাম করে আবার খাটে গিয়ে বসলো। আমিও দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। বসে যেই ওর ঘোমটা টা খুলে দেখেছি ওমনি মাথার ঘুরে গেল। একি রে এটাতো আমার স্বপ্নের রাজকুমারী। আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো। তাই নিজেই নিজেকে চিমটি কাটলাম। না স্বপ্ন নাতো এতো সত্যিই। তাহলে কি আমি আমার স্বপ্নের রাজকুমারিকে কাছে পেয়ে গেলাম। এসব কথা ভাবছি…বউয়ের ডাকে ঘোর কাটলো।……
— এই যে কি ভাবছেন?(বউ)
— হুম…(আমি)
— বলছি এমন করে কি ভাবছেন?
— ভাবছি না দেখছি।
— কি দেখছেন?
— আমার স্বপ্নের রাজকুমারী কে দেখছি।
— কে আপনার স্বপ্নের রাজকুমারী ।
— এই যে আমার সামনে যে বসে আসে।
— ইস চেনা নেই জানা নেই আর আমি নাকি ওনার রাজকুমারী ।…
— কে বলছে চিনিনা।
— আমি বলছি। আপনি কি আমাকে এর আগে কখনো দেখেছেন?
— হুম…
— কোথায়?
— আমার স্বপ্নে।
— স্বপ্নে?
–হুম স্বপ্নে….তুমি আমার স্বপ্নে প্রতিদিন আসতে। আর এসে আমার সাথে গল্প করতে। কতো সুন্দর করে গল্প বলতে আর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে তোমাকে দেখতাম আর তোমার গল্প শুনতাম।…
— পাগল নাকি আপনি?
— হুম পাগল….শুধু তোমার জন্য পাগল।
— ও তাই বুঝি।…
— হুম আমি শুধু তোমার পাগল । আমার স্বপ্নের রাজকুমারীর পাগল ।
— আচ্ছা হয়েছে হয়েছে…..
কিছুক্ষণ নিরব থেকে নীরাই বলা শুরু করলো।…..
— আচ্ছা আমাকে কি আপনার ভালো লেগেছে?(নীরা)
— এটা আবার কেমন প্রশ্ন(আমি)
— বলেন না?
— বলবো..তবে এক শর্তে
— কি শর্ত?
— আমাকে এখন থেকে তুমি করে বলতে হবে।
— আচ্ছা বলবো। এবার বলো?
— হুম অনেক হয়েছে । কারণ তুমি যে আমার স্বপ্নের রাজকুমারী ।
— আমারও অনেক স্বপ্ন আছে যানেন?
— না বললে কিভাবে জানবো।
— আচ্ছা শুনো তাহলে..
— হুম বলো….
— আমি জীবনে প্রেম করিনি। কেন জানো?
— না বলো…
— কারণ আমি আমার স্বামীর জন্য সব ভালোবাসা রেখে দিয়েছি। আমি আমার স্বামীর দুষ্ট মিষ্টি বউ হতে চেয়েছি।
— হুম বুঝলাম। আর কিছু…
— হুম..আচ্ছা তুমি নামাজ পড়ো?
— না পড়ি না।
— আচ্ছা সমস্যা নেই..পড়ো নাই তো কি হয়েছে এখন থেকে পরবা। কথা দাও এখন থেকে পড়বা।
— হুম কথা দিলাম।..
— জানো আমি সব সময় চাইতাম মানে আমার স্বপ্ন ছিল যা আমি মনেমনে পোষণ করে রেখেছি তা হলো আমার ডাকে আমার স্বামীর ঘুম ভাঙবে। সে প্রতিদিন যখন ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজে যাবে যাওয়ার আগে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে যাবে। যখন সে অফিসে যাবে তখনো আমার কপালে একটা চুমু দিবে। যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরবে তখন আমার জন্য একটা করে আইসক্রিম বা অনেক গুলো চকলেট এনে আমাকে জরিয়ে ধরে বলবে এই নাও গো এগুলো তোমার জন্য। আমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে হবে না শুধু একটু সময় ধরে গল্প করলে চলবে। আমাকে কোন দামি গিফ না দিয়ে যদি আমাকে একটা কমদামি শাড়ি এনে দেয় তাতেই আমি খুশি। যদি তাও না দেয় তবুও আমি মন খারাপ করবো না। শুধু আমাকে একটু ভালোবাসা দিলেই চলবে। আমাকে একটু বিশ্বাস করলেই হবে। আমি সব সময় চাইবো আমি আমার স্বামীর কাছে আমার সেরাটা দেওয়ার । আমি আমার স্বামীর কাছে তার সেরা স্ত্রী হতে চাই। এই স্বপ্ন গুলো পুরণ করতে পারবে না।……..
— একি তুমি কাঁদছো কেন?(নীরা)
— কই নাতো।(আমি)
আসলে ওর কথা গুলো শোনার পর আর আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। কি করে বা রাখবো…একটা মেয়ে যে এতো সাধারণ হতে পারে ওকে না দেখলে হয়তো জানতামেই না। কতো ছোট ছোট স্বপ্ন ওর মনে গেঁথে রেখছে। চাওয়া পাওয়া গুলো কতো ছোট । আমি ভাবতেই পারিনি এই যুগের মেয়ে হয়ে ও এরকম। আজ আমাকে মনে হচ্ছে আমি কতো ভাঙ্গবান। যে কিনা এরকম একটা স্ত্রী পেয়েছি। না একে কোন কষ্ট দেওয়া যাবে না। আমার জীবনে ওকেই প্রয়োজন। যে করে হোক ওকে আমি শান্তিতে রাখার চেষ্টা করবো।…..
— কি হলো ,পারবে না আমার এই চাওয়া গুলো পূরণ করতে?(নীরা)
— কেন পারবো না..আমাকে যে পারতেই হবে।(ওকে জরিয়ে ধরে)
— হুম,শুধু এইটুকু চাওয়া পুরন করলে হবে।(আমাকেও শক্ত করে জরিয়ে ধরে)
— আচ্ছা এখন ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে? (আমি)
— হুম…. (নীরা)
তারপর দুজন দুজন কে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম।…………..বউয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো।.
— এই ওঠো,আযান দিচ্ছে?(বউ)
— হুম (আমি)
— হুম কি তারাতারি উঠে গোসল করে নামাজে যাও।
— আর একটু ঘুমাই না।
_– না, এখনি উঠো।
— হুম।
— আরে ওঠো তো।..
— এইযে উঠেছি এবার ।
— হুম এখন যাও গোসল করে এসে নামাজে যাও।
— আচ্ছা যাচ্ছি।…….তারপর গোসল করে এসে নামাজে যাওয়ার জন্য বের হলাম। যাওয়ার সময় ওর কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিলাম।
— হুম যাও এখন(নীরা)
— আচ্ছা…(আমি)
— সাবধানে যেও।……….
নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম।এসে দেখি নীরা নাস্তা তৈরী করছে। আমি দেখে অভাগ….এক রাতেই সবকিছু নিজের মতো করে নিলো।….আবার অনেক খুশিও হলাম। যাক অবশেষে একটা মনের মতো বউ পেলাম।এই বলে রুমে গিয়ে শুয়ে আছি।আর আমার স্বপ্নের রাজকুমারীর কথা ভাবছি।……..
— এইযে শুনছো(নীরা)
— হুম বলো ।(আমি)
— নাস্তা করো এসে।
— আসছি।….তারপর নাস্তার টেবিলে গেলাম। দেখি মাও বসে আছে। তারপর সবাই মিলে নাস্তা করলাম। নাস্তা করার পর মা বললো।….
— কিরে বাবা,তুই তো এতো সকালে ঘুম থেকে উঠিস না।(মা)
— না উঠে উপায় আছে বলো। (আমি)
— কেন কি হয়েছে?
— বাড়িতে যে এখন আজরাঈল এসেছে।
— হুম, আজরাঈল এসেছে তো।(নীরা)
— এই তুই বউমা কে আজরাঈল বললি কেন?(মা)
— এমা…তুমি দেখি এক রাতেই ওর পক্ষ হলে।(আমি)
— এই শোন মা তোমার মতো পঁচা ছেলের পক্ষ নিবে কেন?(নীরা)
— কি আমি পঁচা।….(আমি)
— পঁচা নসতো কি।(মা)
— মা তুমি আমাকে এরকম বলতে পারলে।(আমি)
— হুম পারলাম।(মা)
আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে ওখান থেকে রুমে চলে আসলাম। জানি ওখানে থাকলে দুই শাশুরি বউ মিলে আমার মাথাটা খাবে।…..তাই রুমে এসে শুয়ে আছি।……হঠাৎ নীরার আগমন।আমি ওকে দেখে অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।…….
— কি গো রাগ করেছ নাকি?(নীরা)
–………….
— প্লিজ আমার বাবুটা রাগ করে না।(নীরা)
— আমি কেন রাগ করবো। আমি তো পঁচা ।(আমি)
— আরে আমার বাবুটা দেখি সত্যিই রাগ করেছে।
— হুম রাগ করেছি……আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওর ঠোঁটের মিষ্টি ছোয়ায় আমার মূখ ভরে দিলো।…….
— এখনো কি আমার বাবুটা রাগ করে আছে।(নীরা)
— যে মিষ্টি দিছো তাতে কি আর রাগ করে থাকা যায়।(আমি….ওকে জরিয়ে ধরে)
— এই কি করছো?ছাড়া বলছি।(নীরা)
— না ছাড়বো না।(আমি)
— এই মা দেখবে তো।….
— দেখলে দেখুক। তাতে আমার কি।….
— এই ছাড়ো না। রাতে তো অনেক দুষ্টামি করেছ?
— এখন আরেকটু করি না।…..
— এখন না রাতে।……
— সত্যি…
— হুম, রাতে
— তাহলে কিন্তু এতো গুলো পাপ্পি দিতে হবে।
— যা দুষ্ট কোথাকার। কোন কথা মুখে আটাকায় না। এই বলে দৌড়ে চলে গেল।…..আর আমি ওকে দিকে চেয়েই রইলাম।………..এভাবেই চলুক ওদের পথ চলা……….
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা