–নিরব,দেখতো বাবা কে আসছে?(আম্মু)
–হুম,দেখতেছি।এই অসময়ে আবার কে দরজায় নক করলো।কে আপনি?
–আমাকে চিনতে পারছো না?(অপরিচিত মেয়ে)
–না তো,কে আপনি?
–দেখো নিরব,সব সময় নাটক ভালো লাগে না।(অপরিচিত মেয়ে)
–মেয়েটা কে নিরব?(আম্মু)
–জানি না(আমি)
–জানো না মানে,মিথ্যা বলছো কেন?আমি জানি তুমি তোমার মাকে খুব ভয় পাও,তাই বলে এখনো মিথ্যা বলবা(অপরিচিত মেয়ে)
–তুমি কে মা?(আম্মু)
–আমি নেহা,নিরব আর আমি,আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসি। (অপরিচিত মেয়ে)
–কি?এই আপনি কে?আমিতো আপনাকে আজ ই প্রথম দেখলাম।(আমি)
–কি বলতেছো তুমি?পাগল হইছো নাকি তুমি(নেহা)
–নিরব,সত্যি করে বলবি,তুই কি এই মেয়েকে চিনিস?সত্যি বলবি,আমি কিছু বলবো না(আম্মু)
–না,আমি তো তাকে আজ প্রথম দেখলাম,আগে আর কখনো ই দেখিনি।(আমি)
–আবার মিথ্যে বলছো,এখন কিসের ভয়,মা তো বলেই দিয়েছেন কিছু বলবেন না তোমাকে(নেহা)
–আরে কে আপনি?আর কেনই বা আমার পিছনে লেগেছেন? (আমি)
–তুমি কি আমাকে অস্বীকার করতেছো?(নেহা)
–বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে এর আগে আর কখনো দেখিনি।(আমি)
–দেখ নিরব,এই মেয়ের সাথে যদি তোর কোনো সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে বল,আমি কিছু বলবো না।কারন মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।(আম্মু)
–না মা,আমি তাকে কোনোদিনও দেখিনি এর আগে।(আমি)
–হুম,বুঝছি,তুই আমাকে এখনো খুব ভয় পাচ্ছিস।(আম্মু)
–না,,,,,,আমি সত্যি ব,,,,(আমি)
–তুই চুপ থাক,আচ্ছা নেহা,আমি তোমার মা বাবার সাথে কথা বলতে চাই?(আম্মু)
–জ্বী,আমার মা বাবা নেই,তাই তো নিরব আমাকে কোনোদিন আপনার কাছে নিয়ে আসেনি। আর তাই হয়তো এখন আমাকে অস্বীকার করতেছে। (নেহা)
–তোমার মন খারাপ করে দিলাম মা।সমস্যা নেই আজ থেকে আমিই তোমার মা।কি পারবে না আমাকে মা হিসেবে মেনে নিতে?(আম্মু)
–কেন পারবো না,এটাতো আমার সৌভাগ্য।(নেহা)
–কাদতেছো কেন মা?কাদে না,আর নিরব তুই এতো ছোটো, সামান্য এতীম বলে তুই মেয়েটাকে অস্বীকার করলি,ছীঃ।(আম্মু)
–মা,বিশ্বাস করো আম,,,,(আমি)
–চুপ,কোনো কথা বলবি না।আজকেই নেহার সাথে তোর বিয়ে।(আম্মু)
–কিন্তু,,,,,,(আমি)
–চুপ,কোনো কথা বলবি না।
(তারপর আর কি,বিয়ে করতে হলো ওই মেয়ে মানে নেহাকে।আমি বুঝিনা আমি আবার কবে তার সাথে পিরিত করতে গেছিলাম,কি দিয়ে যে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।অনেক চেষ্টা করছিলাম জানতে যে,কে আপনি?কোনো কিছুতেই কিছু হলো না।তারপর সেদিনের মতো ঘুমিয়ে গেলাম।কিসের বাসর রাত ওটা ছিলো বাশ এর রাত।)
–এই যে, উঠো, সকাল হয়ে গেছে(নেহা)
–,,,,,,,,(আমি)
–কই কথা কানে যায় না।
–আসছে,সকাল সকাল কানের কাছে প প শুরু করছে।আলগা পিরিত দেখে বাচি না।এই তুমি তুমি করে বলার মানে কি।কি পিরিত,পিরিত দেখলে ইচ্ছা করে কানের নিচে একটা মারি।
–মারো,কারন জিবনে কোনো ছেলের হাতের কিটকাট খাইনি।আর আমি তোমাকে তুমি করে বলবো না তো কি বলবো।আর তুমি আমার স্বামী, তাই তো পিরিত দেখাই।
–ওলে বাবা,স্বামী, তোর স্বামীর গুষ্টি কিলাই।তুই স্বামী কেন আসামী মুভি টা দেখছো?
–না,দেখে নিবো?
–তোর দেখা লাগবে না।ওটা বাস্তবেই তোকে দেখাবো।তোকে খুন করে আমিই আসামী হবো।
–তা কইরো,কিন্তু তুই করে বলতেছো কেনো?তুমি করে বলো।
–কি,তুমি,তুমির গুষ্টি কিলাই।
–এতো মারামারি করা লাগবে না।তুমিকে না হয় আমিই কিলাবো।
–নিরব,শুনলাম কা কে জানো খুন করবি, কা কে খুন করবি তুই?(আম্মু)
–আমা,,,,,,(বলতে দিলাম না নেহাকে মুখ চেপে ধরলাম)
–কাউকে না,সিনেমার ডায়ালগ মারছিলাম।(আমি)
–ওই তুই নেহার মুখ চেপে ধরছিস কেন?(আম্মু)
–কই নাতো,বেবি আজকে বিকেলে আমরা ঘুরতে যাবো, তুমি রেডি হয়ে থেকো।(নেহার হাত ধরে কথা গুলো বললাম।এই প্রথম নেহাকে স্পর্শ করলাম আমি।)
–হুম(নেহা)
–ওই তোরা ব্রেকফাস্ট করতে আয়(বলেই আম্মু চলে গেলো)
–এই হাত ছাড়েন(আমি)
–কেন?খারাপ লাগছে নাতো?
–আমার খারাপ লাগছে
–ও তাহলে বিপদে পরে এসব করেছেন,ওকে,পরেরবার দেখে নিবো কে আপনাকে বাচায়।
–হুম,এই যে দেখেন,কি সুন্দর না দেখতে আমি?
–হুম,ছাগলের মতো।
–ভালো,কিছু কিছু সময় ছাগলও অনেক কিউট হয়।
–হি হি হি।আচ্ছা জিবনে কয়টা বিয়ে করার আশা আছে তোমার।
–অসংখ্য, যার হিসেব কম্পিউটার ও রাখতে পারবে না,আপনার?
–আমি তোমার মতো না।আমি জীবনে একবার-ই বিয়ে করবো,আর করেও ফেলেছি,আর আমার আশা আমি আমার স্বামী কে এমন আদর দিবো যে,এতো আদর না নিতে পেরে খুশিতে বুক ফেটে,মরে যাবে।
–তাহলে তো আপনি বিধবা হয়ে যাবেন।
–তা না হয় হলাম।স্বামীর জন্য না হয় এইটুকু কষ্ট করলাম।
–ও,আপনি কি আপনার স্বামীর মৃত্যু কামনা করতেছেন?
–না,মজা করলাম।আসলেই আমি আমার স্বামী কে অনেক ভালোবাসবো,এই টুকু সত্যি আর তারপরে যা বলছিলাম তা সব মজা করে বলছি।
–ও।
–একটা অনুরোধ করবো রাখবা?
–কি?
–আচ্ছা আগে বলতো আমি কি খুব খারাপ?
–না,ক্যানো?
–না,তুমি আমাকে আপনি করে বলতেছো,তাই।আচ্ছা,আমাকে কি তুমি করে বলা যায় না?
–চেষ্টা করবো।তুমি করে বলার।আমি একটা প্রশ্ন করছিলাম তোমাকে?কে তুমি?
–সময় হলেই জানতে পারবেন।কে আমি?
–ওকে।কিন্তু আমি একটা কথা বলি,মাঝেমাঝে যখন মাথা গরম থাকে,তখন আমি কাকে কি বলি তা নিজেও জানি না?ওই সময় একটু তুমি ম্যানেজ করে নিও নিজেকে।
–ওকে।
(এভাবে খুব ভালোই চলছিলো ১টা বছর।এর মধ্যে আরো কাছে চলে এসেছি আমরা।কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই গেলো কে তুমি?আর ওর ব্যাবহার দেখে মনে হয়,কত বছর ধরে যেন, ও আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু কে তুমি?)
–নেহা?(আমি)
–হুম,বলো(নেহা)
–কি এতো সারাদিন কাজ করো।মা তো বাসায় নেই।শুধু আমরা দুজনিই তো।আমরা না হয় আজকে বাহিরে খাবো।
–না।
–কেন?
–এমনি।
–এমনি?খুব সংসারী হয়েছো।(বলেই কোলে তুলে নিয়ে আসলাম রুমে)
–কি সমস্যা কি তোমার?
–পিরিতের সমস্যা।
–এখন এতো পিরিত আসে কোথা থেকে।
–জানি না।আচ্ছা নেহা,তুমি আমাকে কতোটা বিশ্বাস করো।মানে তোমার কি মনে হয়,তোমাকে আমি কি কোনোদিনও ছেড়ে দেবো?
–আমারতো মনে হয়, তুমি ইচ্ছা করলেও আমাকে ছেড়ে দিতে পারবা না।
–তাই,তা এতোই যখন বিশ্বাস করো তো।এখন তো বলতে পারো কে তুমি?বিশ্বাস করো আমি কোনোদিনও তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
–হুম,জানি।ওকে,বলতেছি।আমি সত্যিই এতিম।মা বাবা নেই।শুনছি আমার জন্মের ২মাস পর রোড এক্সিডেন্ট-এ।মা বাবা দুজনিই মারা গেছে।চাচা-চাচির কাছে বড় হয়েছি।চাচা আমাকে খুব ভালোবাসলেও।চাচি সারাদিন কথা শুনাতো,এমনকি মারধর ও করতো।তাই চাচা এসব সহ্য করতে না পেড়ে আজ থেকে ১০বছর আগে তোমাদের বাসার সামনে যে এতিমখানা টা আছে ওখানে রেখে যায় আমাকে।তারপর ওখানেই বড় হয়েছি আমি।একদিন তোমার মা ওখানের সামনের রোড দিয়ে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পরে।তখন আমি তাকে আমার রুমে নিয়ে, কিছুটা সুস্থ করে তুলে,বাসায় দিয়ে যাই। আর তারপর থেকে মা প্রায়ই আমাকে দেখতে যেতো। এবং একসময় তোমার কথা বলে।এবং এসব নাটক সব মা-র কথায়ই হয়েছে।আমি রাজি ছিলাম না।কিন্তু তোমার মা অনেক জোর করছিল,তাই।এখন তুমি যদি ছেড়ে যেতে চাও যেতে পারো?
–তুমি পাগল নাকি?
–কেন?
–আমি যদি পাগলো হতাম তাহলেও তো তোমাকে ছেড়ে যেতে পারবো না।আমি তো সেদিনই ভালোবেসে ফেলেছি।যেদিন প্রথম তোমার হাত ধরে তোমার ওই চোখ দুটির দিকে তাকিয়েছিলাম।
–ও মা,তাই।তা এতোদিন বলো নি কেন?
–এমনি?দেখে নিলাম তুমিও আমাকে সত্যি ভালোবাসো কি না?
–তা কি দেখলা?
–এদিকে আসো বলছি?
–হুম,এখন বলো।
–কি আর বলবো(বলেই নেহার কপালে একটা ভালোবাসার প্রজাপতি একে দিলাম)
–এটাই বুঝি দেখছো?
–হুম,এবার খুজে নাও এর মধ্যে থেকে আমার মনের কথা।
–হুম,আচ্ছা আমারো তো একটা প্রশ্ন ছিলো।
–কি?
–কে তুমি?
–আমি,আমি নেহা নামে একটা পাগলি আছে,ওই পাগলির পাগল।
— না,
–কেন?
–তুমি তো ছাগল,তুমিই তো বলছিলা।
–তাহলে তো তুমি ছাগলী?
–ওকে।
(এভাবেই শুরু হলো ছাগল-ছাগলীর ভালোবাসা।সবাই দোয়া করবেন এই গৃহপালিত ঝুটির জন্য)
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা