সেদিন রাত্রে যখন দোকান বাসায় ফিরছিলাম। একা একা হাটছি।হাতে চিপস অাছে।একটু পর দেখি একটা কুকুর পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অামি সেদিন একটা লেখায় পড়েছিলাম রাত্রের বেলা কুকুর/বিড়াল এসব পাশ দিয়ে গেলে নাকি ক্ষতি হতে পারে।কুকুরটা যখন পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।অামি ভাবলাম সর্বনাশ!
তখন কুকুরটার পিছে পিছে দিলাম দৌড়!
– এই দাড়া! যাইস না।
– ঘেউ ঘেউ ( কি বলিস!)
ভাবলাম যেভাবেই হোক কুকুরটার অাগে দৌড়ে যেতেই হবে।কারণ সে পাশ দিয়ে চলে গেছে।যদি কোন ক্ষতি হয়! তাই ।
কিন্তু খানিকটা দৌড়ানোর পর অামারেই উল্টা দৌড়ানি শুরু করছে।
অামিও অাবার উল্টা দৌড়!
কুত্তা কেন এর পর থেকে পাশ দিয়া হাতি গেলেও কিচ্ছু বলমুনা। কিন্তু হারামি কুত্তাডা পিছু ছাড়ছেইনা।অামি প্রাণপণে দৌড়াচ্ছি। 2মিনিট দৌড়ানোর পর।একটা গাছে উঠলাম। হাপাতে হাপাতে চোখ দিয়া পানি পড়তাছে। অার নিচ থেকে কুত্তাডা ঘেউ ঘেউ করতেই অাছে।
– ঘেউ ঘেউ ( নিচে নাম সাহস থাকলে)
অামি অার নিচে কেমনে নামতাম!!
ভয়েই শেষ!
গাছে উঠে বসে রইছি।
যাক একটু পর কুত্তার ঘেউ ঘেউ বন্ধ হয়ে গেল।
এবার একটু খুশি মনে নিচে নামলাম।
এক পা দু পা করে সামনের দিকে যাচ্ছে। তখনি
– ঘেউউউ!!( এই যে অামি)
গেছেনা!
এখন অার গাছে উঠার মত শক্তি নাই।
অাবার দৌড় শুরু করলাম।এরকম কুত্তার দৌড়ানি অাগে কখনোই খাইনি!!
কুত্তা না তো বাঘ!!
যে একবার কুত্তার দৌড়ানি খাইছে সেই বুঝে কিরকম লাগে!
অাহ! অার দৌড়াতে পারছিনা।
অবশেষে একটা খোলা মাঠে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
অার কুত্তাডা ঘেউ ঘেউ করতে করতে ততক্ষণে এসেই পড়ছে!
অামি নাক-মুখ বন্ধ করে বসে অাছি।
যদি ভালুকের ঘটনার মত হয়! মৃত ভেবে চলে যায়।
কিন্তু সামনে অাইসা যে ভয়ঙ্কর রুপ নিছে।
পাশেই ল্যাম্পপোস্ট তাই সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে!অামি রাগের মাথায় শরীরের সব শক্তি দিয়ে কুত্তাডারে একটা থাপ্পর দিলাম।কিন্তু কি ব্যাথা!
কুত্তার চাপা কি শক্ত!!
এরজন্যই হয়তো মানুষ বলে।
কুত্তার মত চাপা করবি না বলে দিলাম!
এখন তা প্রমাণ পাইলাম।
মারলাম অামি ব্যাথাও অামিও পাইলাম।
এখন তো মনেহয় অামারে খায়াই ফেলব!
অামি বুদ্ধি করে কুত্তার উপরে উঠে কুত্তার কান দুইটা শক্ত করে ধরলাম।
কারণ একটা গল্প পড়ছিলাম।বাঘের উপরে একটা লোক উঠে বসে।বাঘটাও ভয় পায়! কারণ সে ভাবে না জানি কে তার পিছনে উঠছে! অার লোকটাও ভয় পায় কারণ সে ভাবে না জানি বাঘ অাজকে খেয়েই ফেলে।বাঘও বাঁচার জন্য প্রাণপণে দৌড়ায় অার লোকটাও শক্ত করে ধরে অাছে!
কিন্তু কুত্তাডা ভয় অার কি পাব!
অামারে তো দেখছেই।
ভাবলাম মরে যামু কিন্তু কুত্তার কান ছাড়মু না।
কিন্তু কুত্তা কয়েকটা চাইনিজ কুংফু দেখাইল অার অামি অাবার নিচে
অবশেষে অারেকটা গাছে উঠলাম!
সময় অার যাচ্ছেইনা।
পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম।
ভাগ্যিস ফোনটা পড়ে যায়নি।
ফেসবুকে লগইন করলাম।
– কিরে দোস্ত কি করিস?
– এই তো মুভি দেখছি।
– কি মুভি?
– দ্যা মেন্টাল ডগ।
অার কোন কথা না বলে ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেলাম।ফেসবুকে ডুকার কারণ হল যাতে কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারি।
ততক্ষণে নিচে তাকায়া দেখি কুত্তাডা চলে গেছে।
অামি অাস্তে অাস্তে নিচে নামলাম।
না নেই
যাক অবশেষে বাঁচলাম।
বাসায় অাইসা চিতপটাং হয়ে শুয়ে পড়লাম।
সারাজীবন মনে থাকবে অাজকের ঘটনাটা।
.
.
পরদিন সকালে
ফাহিম খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় হাটছে।ফাহিম মানে অামি।
একটু পরই বুঝতে পারলাম পিছন থেকে কেউ ডাকছে।
– এই ছেলে এই?
– জ্বী,অাঙ্কেলে।
– তুই (..) ভাইয়ের ছেলে না?
– জ্বী অাঙ্কেল।
– বড়দের সালাম দিতে হয় জানিস না? মা-বাবা কিছু শেখায়নি?
– সরি অাঙ্কেল ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু মা-বাবা নিয়ে কিচ্ছু বলবেন না বলে দিলাম।
– তোর বাপের কাছে অামি বিচার দিব।
– কেন?
– এই বেয়াদবির জন্য।
– অামি কি বেয়াদবি করলাম?
– এই যে সালাম দিলিনা।
– অাচ্ছা অার ভুল হবেনা।
– অাচ্ছা ঠিকাছে।
বড়ই অাজব লোক তো! অামি উনাকে দেখিনি তাই সালাম ও দিতে পারিনি।এর জন্য এরকম ব্যবহার করবে।
.
পরদিন সকালে অাবার ঘুম থেকে উঠে হাটছি।
দেখি সেই লোকটা যাচ্ছে।অামি পিছন থেকে যায়া লম্বা করে সালাম দিলাম। অার বললাম ভাল অাছেন?
খুব জোরেই হয়তো বলে ফেলছিলাম।লোকটার হাত থেকে ডিম গুলো রাস্তায় পড়ে গেল।
– এই ছেলে এই!!
– জ্বী অাঙ্কেল।
– তুই (…) ভাইয়ের ছেলেনা?
– জ্বী অাঙ্কেল
– তোর বাপের কাছে বিচার দিব।
– কেন অাঙ্কেল?অামিতো অাজকে সালাম দিছি বেয়াদবিও করিনি।
– বেয়াদবি করিসনি!!তোর জন্য অামার ডিম ভেঙে গেল।
– তো অামি কি করব? নাচব? তাহলে নাচি?
– এই দাড়া!!!!!!!
অামি এক দৌড়।
খানিকটা পথ যাওয়ার পর অন্য রাস্তা দিয়ে চলে গেলাম।
যখন নতুন রাস্তায় গেলাম।দেখি একটা মেয়ে বাচ্চাদের পড়াচ্ছে।
মনে কিছুটা কৌতূহল হল। অামি দাড়াই দাড়াই দেখছি।মেয়েটা কোন ম্যাডাম না সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছি।হয়তো বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের এমনি পড়ায়। অার মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে 10-11 এ পড়ে। একটু পর একটা মেয়ে সুজানা ম্যাডাম সুজানা ম্যাডাম বলে ডাকতেছে।বুঝলাম মেয়েটার নাম সুজানা। কালকেও এখানে অাসবে মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলে অাসলাম।
.
.
পরদিন সকালে অাবার সেখানে গেলাম ।
দেখি মেয়েটা অাজকেও পড়াচ্ছে।
এরকম অারো 10-12 দিন গেলাম।কিন্তু কখনো কথা হয়নি। কথা বলার চেষ্টাও করিনি।
শুধু দেখেই যাচ্ছি।
মেয়েটার জন্য কেমন জানি একটা ফিলিংস তৈরী হয়েছে। কত মেয়েই তো দেখেছি কিন্তু কারো জন্যই তো এরকম কোন ফিলিংস মনের মাঝে তৈরী হয়নি।তাহলে ওর জন্যই বা কেন এরকম ফিলিংস তৈরী হল!তবে কি অামি ওকে ভালবাসি?
অারে ধুরর কি ভাবছি এসব!
এসব ভাবতে ভাবতেই চলে অাসলাম।
পরদিন সকালে অাবার গেলাম।
অাজকে মেয়েটা অামায় ডাক দিল।
– এই যে?
অামি ওর সামনে গেলাম।
– অামাকে বলছেন?
– জ্বী অাপনাকেই।
– বলুন?
– প্রতিদিন এখানে কি করেন?
– এখানে অামার বড় অাপুর একটা মেয়ে পড়ে তো তাই এসেছি। ( মিথ্যে বললাম)
– কিন্তু এরা সবাই তো পথশিশু।অাপনাকে দেখে তো মনেহয়না কোন পথশিশুর মামা?
– কেন পথশিশুর কি মামা হওয়া যায়না?
– যায় ,,, না করেছি নাকি?
– না তা নয়।
– অাচ্ছা বলুন কে অাপনার বড় অাপুর মেয়ে?
একটা পিচ্চি কে ডাক দিলাম।
পিচ্চিটা অাসার পর জিজ্ঞাস করলাম।
– কেমন অাছো মামনি ?
– অাপনে কে?
– অারে অামি তোমার মামা।
– অামার তো কোন মামাই নেই।
– কি মিষ্টার? অাপনি যে বললেন ও অাপনার বড় অাপুর মেয়ে?
– এক বৈশাখী মেলায়,,সেটা অাজ থেকে দশ বছর অাগের কথা।তখন অামার বোন মেলায় হারিয়ে গেছিল।অামি ওদের খুজে পাইছি।কিন্তু ওরা কেউ অামায় চিনেনা।
– চাপা মারার জায়গা পান না।অাপনি তো ছেলেধরা।
– অারে ছেলেধরা হব কেন! অার এটা তো একটা মেয়ে!
এতক্ষণে চারপাশে কয়েকটা মানুষ হয়ে গেছে।
এক লোক জিজ্ঞাস করল।
– কি হয়েছে রে সুজানা?
– এই ছেলেটা ছেলেধরা।
– অামি ছেলে ধরা নই।
– তাইলে তুই কে?( লোকটা)
– অামি মানুষ।
– ওহ অামি ভাবলাম তুই গাধা
– অারে না অামি মানুষ।
– অারে তুই যে মানুষ সেটা তো দেখতেই পারছি।
– তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন? অামি কে?
– তুই জানিস অামি কে?
– অাপনি নিজেই অাপনার পরিচয় ভুলে গেছেন!!
– অামি সুজানার বাবা অার এই থানার ওসি!
– কিন্তু অান্নেরে জল্লাদের মত দেখা যায় কেন! T.V. তে ছোটবেলা দেখতাম জল্লাদরা দেখতে খুব ভয়ংকর।অাপনি তার চেয়ে কম কিসে!
ততক্ষণে অারো 4-5 জন হয়ে গেছে।
এবার সোজা দৌড়ানি শুরু করছে সবাই।
সবাই ধরেই ফেলল।
সবাই মিলে একশটা প্রশ্ন শুরু করল।
কি জবাব দিব ওদের!
– শুনেননননন!!!!
– বল
– অাপনারা কি মোশারফ করিমরে চিনেন?
– হ্যাঁ চিনি।
– তার নাটক দেখছেন সেইরকম চা খুর?
– হহ সেইরকম জালখুর ও দেখছি ( অপরিচিত একজন)
– তো হয়েছে কি। অামরা বন্ধুরা মিলে একটা নাটক বানাব অার অামি হলাম নাটকটার নায়ক।নাটকের নাম দিছি ”সেইরকম চাপাখুর” তাই যারে দেখি তার সাথেই চাপা মারি ।বিশ্বাস না হলে পিছনে তাকায় দেখেন ক্যামেরা নিয়ে দাড়াই রইছে।
সবাই পিছন দিকে তাকাইল।
– তো কিভাবে ভাবলেন এখন চাপা মারছিনা!
এটা বলেই এমন দৌড় শুরু করলাম।
পিছনে তাকায়া দেখি।
কেউ অার দৌড়ায়না।একেকজন হাত দেখাইতেছে।একেকজন পা দেখাইতেছে।অামি জিহবা বের করে ব্যাঙ্গায়া চলে অাসলাম।
.
.
জীবনটা দৌড়ের উপর চলতেছে।
রাত্রে কুত্তায় দৌড়ায়!
দিনে মানুষ দৌড়ায়।
অাসলে অামি একটু বেশি কথা বলি তারজন্যই এই প্রবলেম গুলো হচ্ছে।এখন বুঝতেছিনা কাল থেকে সুজানাকে কিভাবে দেখতে যাব! অাজ যা করলাম!
অার যাওয়ার পথ খোলা রাখিনি।
কিন্তু পরদিনও গেলাম।
কিন্তু দূর থেকে দেখেই চলে অাসলাম।
অার পুলিশের মেয়ে! এটা মনে হলেই হার্টবিট বেড়ে যায়।না জানি ওর বাপে কবে থানায় নিয়া রামধোলাই দেয়।
কিন্তু অামি অামার মত প্রতিদিন অাসতে লাগলাম। এখন শুধু দূর থেকেই দেখা হয়।কাছে যাইনা।
একদিন অাইসা দেখি ও নেই!
হঠাৎ পিছন দিকে তাকাই দেখি ও।
– কি ব্যাপার এখনো অাসেন এখানে?
– অাসলে অামি ছেলেধরা নই কারো মামা ও নই অার ওইদিন মিথ্যে বলছিলাম সরি।
– বুঝলাম কিন্তু কেন অাসেন এখানে?
– অাসলে….
– বলেন?
– অাপনাকে দেখতে।
– অামাকে দেখার কি হল!
– জানিনা ভাল লাগে।
– (__)
– অাপনি কি করেন?
– পড়াশোনা করি অাপনি?
– অামিও।অামরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
– না
– কেন?
– অামি কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ করিনা।
– ওহ ( মন খারাপ করে)
চলে যাচ্ছি।একটু পর মনে হল এই কয়েকদিনে বুঝেছি অামি সুজানাকে সত্যিই ভালবাসি।কারণ রাত দিন শুধু ওর চিন্তাই করি।তাই ভাবলাম অাজকের পর থেকে অার ওর সামনে যাবনা।কিন্তু ওকে বলে যাই।মনে অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলেই ফেললাম।
– অাসলে অাপনাকে অামার ভাল লাগে।অামি অাপনাকে ভালবাসি। প্লিজ অামাকে একটা সুযোগ দিবেন? সারাজীবন অাপনাকে সুখে রাখার চেষ্টা করব।
– অামি এসব প্রেম-ভালবাসায় বিশ্বাসি নই।
তবে অাপনাকে একটা সুযোগ দিতে পারি।
– কি সুযোগ?
– এই যে ছেলে-মেয়েদের দেখছেন না?
– হ্যাঁ
– ওরা একটা স্কুলে পড়ে। অামিই ভর্তি করিয়েছি
অার একমাস পড়েই ওদের ফাইনাল পরিক্ষা।ওদের মাঝে সবচেয়ে ভাল ছাত্রী হল অাপনি সেদিন যারে বলছিলেন অাপনার বড় বোনের মেয়ে সে।ওর রোল হল 07।অাপনি যদি এখানের কাউকে এবার পরিক্ষায় প্রথম বানাতে পারেন তবে অামি ভেবে দেখব।
– অাজব শর্ত্য দিলেন তো!
– ফ্যামিলির বাইরে এরাই অামার সবচেয়ে অাপনজন।
– ওকে অামি রাজি অাজ থেকে একমাস অামিই ওদের পড়াব।
– ওকে অামি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।কাল থেকে অাপনিই পড়াতে অাসবেন। প্রতিদিন সকাল 7টায়।
– ওকে
সেদিনের মত খুশি মনে বাড়ি চলে অাসলাম।
খুব ভাল লাগছিল এটা ভেবে যে একটা সুযোগ তো পাইছি! কিন্ত অাবার খারাপও লাগছিল যে,যদি শর্ত্যটা পুরণ করতে না পারি।
মধ্যরাত পর্যন্ত গোগল-কয়েকটা ফ্রেন্ডের কাছ থেকে পরামর্শ নিলাম যে বাচ্চাদের কিভাবে পড়ায়।
অার মোট 14টা ছেলে মেয়ে সেখানে পড়ে।
তাই অাসার সময় 14টা সেন্টারফ্রুট কিনে নিয়ে অাসছি।সকালে ওদের দিব।
.
.
পরদিন সকালে ওদের পড়াতে গেলাম।
সবাইকে খুব ভালভাবে পড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েই গেছি।জানিনা কতটা সফল হব।
পিচ্চিদের পড়ানোর সহজ উপায় হচ্ছে জোর করে নয় মজার মজার কথা বলে পড়ানো।
– তোমরা কেউ বিমান দেখেছ?
– জ্বী স্যার (সবাই)
– কে কে বিমানে উঠতে চাও হাত উঠাও?
– সবাই হাত তুলল।
– বিমানে উঠতে হলে কি করতে হয় জানো?
– কি করতে হয়?
– ভালভাবে পড়াশোনা করতে হয়।
স্যার/ম্যাডাম যা বলে তা শুনতে হয়।
তোমরা কি অামার কথা শুনবা?
– জ্বী স্যার।
– ওকে তাহলে এখন অামি বোর্ডে যা যা লিখব তোমরা তা খাতায় লিখ।
.
.
সুজানার কাছ থেকেই পরিক্ষা/ওদের পড়াশোনা সম্পর্কে সব জেনে নিছিলাম।তাই পড়াতে প্রবলেম হচ্ছিলনা।
পড়ার ফাঁকেফাঁকে প্রতিযোগিতার অায়োজন করছিলাম।তাই সবাই অারো উৎসাহ সহকারে পড়াশোনা করত।
.
.
এভাবেই প্রতিদিন তাদের খুব যত্ন করে পড়াতে শুরু করলাম।
দেখতে দেখতে পরিক্ষা চলেই অাসল।
এখন অার পড়ানো যাবেনা।ওরা শুধু পরিক্ষা দিবে।
পরিক্ষার অাগেরদিন ওদের সবার জন্য একটা করে ক্লিপবোর্ড অার দুইটা করে কলম দিলাম।
.
.
কয়েকদিন ধরে কারো সাথেই দেখা হয়না।
অার সুজানার সাথে ওদের পরিক্ষার অাগেরদিন কথা হয়েছিল।বলছে ডিসেম্বরের 24তারিখ ওদের রেজাল্ট দিবে।অামি যেন যাই।
.
.
অপেক্ষার সময় তো অার কাটছেইনা।একটা দিনকে মনেহয় এক বছর!!
এক দিন – দুইদিন করে করে সেই কাঙ্খিত দিনটি এসে পড়ল। অামি রেজাল্ট জানার জন্য ওদের স্কুলে গেলাম।ওরা 14জন সুজানা অার অামি একপাশে বসছি।
স্যাররা ভাল মন্দ অনেক কিছুই বলছে।
সব অনুষ্ঠান শেষ এখন রেজাল্টের সময়।
অামার বুক ধুকধুক করছে ।
না জানি কি হয়!!
.
.
– এবার ক্লাস 3 থেকে ক্লাস 4 এ যারা উঠছ তাদের প্রথম 3জনের নাম ঘোষণা করছি
তোমরা মঞ্চের অাসবে।
১ম হয়েছ অনামিকা চৌধুরি।
২য় হয়েছে অারিফা অাক্তার
৩য় হয়েছ পলাশ রহমান।
শিট!! অারিফা ২য় হয়েছে।অামার খুব খারাপ লাগছিল এখন যদি সুজানা অামায় ফিরিয়ে দেয়!
কিন্তু খেয়াল করলাম অামার হাতটায় কেউ ধরে অাছে।দেখি সুজানা।
– অারিফা ফেইল করলেও এখন তোমার হাতটা ধরতাম।
– কেন?
– জানিনা।অাজ থেকেই এই ছেলে মেয়েদের দায়িত্ব অামার অার তোমার।তুমি রাজি তো?
– রাজি মানে অবশ্যই রাজি।
অামিও ওর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।
এই হাত কখনো ছাড়া জন্য ধরিনি।সারাজীবনের জন্য ধরেছি।কারণ কারো হাত ধরার অাগে একশবার ভেবে নেয়া উচিত যে সারাজীবন ওর পাশে থাকতে পারব কিনা!
অার অামি ভাল করে ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।সুখে-দু:খে সবসময়ই সুজানার পাশে থাকার চেষ্টা করব।অামাদের এই পথচলা যেন কখনোই শেষ না হয়।চলতেই থাকে অবিরত…….(সমাপ্ত)