আমি সম্পূর্না

আমি সম্পূর্না

__বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই তখন আমার নেই..কিন্তু আব্বু আম্মু এক প্রকার জোরই করে চলছে। কারন এর আগেও কত গুলো ছেলেকে ভাগিয়েছি..যখন তারা আমাকে দেখতে এসেছে।
.
__যে ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে তাকে ঠিকমত চিনিওনা। আমার একই কথা আমি তাকে বিয়ে করবোনা। কিন্তু মেয়েদেরই বোধ হয় বেশি জ্বালা..পরিবার বোঝানো সহজ কাজ নয়।
.
__অনেকবার পালানোর চেষ্টাও করেছি। কিন্তু তা সম্ভব হলোনা। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই…স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি তে প্রোপোজাল পেয়েছিলাম কিন্তু আমি শুধুই লেখা পড়া টা কেই প্রাধান্য দিতাম। বিয়ের আগে ফালতু জিনিসের প্রতি কোনো আমার কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না।
.
__বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। জানি এরপর আমার জীবনটা পাল্টে যাবে… আমি আর আগের মত নিজের স্বাধীনতায় সব কিছু করতে পারবোনা। এখন অন্যের কথায় চলতে হবে আমাকে।
.
__রাত ১ টার বেশি বাজে। আমার স্বামী কে মাত্রই তার আপন জনেরা বাসর ঘরে দিয়ে গেল। নিজের মনকে শক্ত করেছি..স্বামী যদি ভালবাসা দেখাতে যায়..তাহলে বটি দিয়ে..তার মাথা আলাদা করে দিবো। তাকে আমার কথা মত চলতে হবে। আমি যা বলবো তাই।
.
__ছেলেটার কাজে আমি নিজেই হতবাক হয়ে গেলাম ..এসেই আমাকে পা ছুয়ে সালাম করলো। একি!!! স্বামী কে তো বউ সালাম করবে..এ দেখি উল্টো!!! বান্ধবীরা এমন টাই তো বলেছিল। কি বোকার বোকা ছেলে সালাম করেই যাচ্ছে!!!
.
.
– এই যে কি করছেন এসব?
.
(আমিই বললাম)
.
– সালাম করতে বলেছিল…
– কে!!!
– আমার বন্ধুরা।
– এত বোকা আপনি?? হাদারাম কোথাকার। যান নিচে গিয়ে ঘুমান..আমার পাশে ঘুমাতে পারবেন না।
.
.
সত্যি সত্যিই নিচে একটা বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো। আমি আবার ফ্লাস ব্যাকে যেয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম। মাথাই ঘুরতেছে..ছেলেটা করলো টা কি!!!! সাথে সাথে ডাক দিলাম..
.
.
– এই ছেলে ওঠো?
.
চোখটি কচলে উঠলো ছেলেটা। ভাল ভাবে দেখলাম তাকে…তারঁছেড়া নয়ত!!!
.
– তুমি কি পাগল???
.
__কথা টা বলতে দেরি..সাথে সাথে ছেলেটি কেমন যেন হয়ে গেল..রেগে মেগে বলতে লাগলো **আমি পাগল নাা.. আমি পাগল না** অনেবার বললো…এই বলে বাসর ঘরের সব ফুল ছিড়ে ফেলল.. ডেসিং টেবিলের আয়না ভেঙ্গে ফেলল..এক প্রকার ভয় পেয়ে গেলাম। বাইরে থেকে দড়জা খুলতে বলল কেউ খুলে দিলাম।
.
__ছেলেটিকে তার মা অর্থাৎ আমার শাশুড়ি আম্মা জড়িয়ে ধরলেন.. ঘটনার কিছুই বুঝলাম না। কি যেন একটা রহস্য হয়ে গেল এর মাঝে তা আমার জানতেই হবে।
.
কিছুদিন যেতেই জানতে পারলাম ছেলেটা পাগল!!! একটা পাগলের সাথে আমার বিয়ে দিলো আমার পরিবার!!! কিন্তু কেন!!! সেই প্রশ্নের উত্তর বাবা মা দিলো না। কারন তারা জানতো না ছেলেটা পাগল।
.
__তারা যখন দেখেছিল তখন…ছেলেটি এমন করেনি বরং স্বাভাবিক ছিল। তার মানে ওই বাড়ির লোক আমাদের বোকা বানিয়েছে…!!! না কিছুতেই একটা পাগলের সাথে সংস্যার করতে পারবোনা আমি। তাই নিজের বাবার বাড়িতেই রয়ে গেলাম। তারা অনেকবার নিতে এসেছে যাইনি।
.
__একদিন ছেলেটার মা অর্থাৎ শাশুড়ি আম্মা এসে কথা বললেন আমার সাথে..অনেক বোঝালেন কিন্তু তখনো আমি রাজি নই। যাবোনা মানে যাবোনা।
.
– আমার ছেলেটা এমন ছিলো না মা।
– আপনারা আমাকে ঠকিয়েছেন।
– ক্ষমা করো মা..ফিরে চলো।
– আপনার পাগল ছেলের সাথে কিছুতেই একসাথে সারা টা জীবন কাটানো সম্ভব না আমার।
– ও জন্মগত ওরকম নয় মা…এর একটা রহস্য আছে।
– আমি জানতে চাইনা।(জেদ ধরলাম)
– ঠিক আছে ..তবে তোমার জন্য সারাজীবন আমার দরজা খোলা থাকবে ..
.
.
__শাশুড়ি আম্মা কথাটা বলেই চলে গেলেন। বাবা মা ও আমাকে বোঝালেন যা হয়ে যাওয়ার হয়েছে তা মেনে নিয়ে সেখানেই যেন ফিরে যাই কিন্তু আমিও কম যাই না হুহ। একবার বলেছি যখন যাবোইনা।
.
__একদিন অপরিচিনত নাম্বার থেকে ফোন এলো রিসিভ করলাম।
.
– কে বলছেন?
– ভাবী আমি …নিশু।
.
আলভি ছোট বোনের নাম নিশু..আমাকে প্রথম থেকেই ভাবী বলে ডাকে..আমি বারন করেছিলাম তাও।
.
– তুমি কেন ফোন দিয়েছো?(রেগে বললাম)
– ভাবী জানি আপনি অাসবেন না..তবুও সত্যিই টা আপনাকে জানতেই হবে।
– ঠিক আছে বলো …
.
.
অতপর শুরু হলো সেই রহস্য…”আমার ভাইয়া এমন টা ছিল না। নীলা নামে একটা মেয়েকে খুব ভালবাসতো…মেয়েটাও ভাইয়াকে খুব ভালবাসতো.. একসময় ভাইয়া বলে মেয়েটিকে বিয়ে করবে ..কিন্তু নীলা আপুর পরিবার ভালবাসা টা কে ঠিক চোখে দেখে না ..তাই তারা শর্ত দিয়েছিল যদি তাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে না করে তবে তার বাবা মা অাত্মহত্যা করবে …এক প্রকার বাধ্য হয়েই নীলা আপু বিয়ে করেছিল..কিন্তু সে ভালবাসতো আলভি ভাইয়াকে তাই সে অন্য কাউকে মেনে নিতে পারেনি…তাই বাসর রাতে বিষ খেয়ে মারা যায়..আর অতঃপর সেই ঘটনার পর ভাইয়া শক খায়..এবং যখন নীলা আপুর লাশ দেখলো তারপরই কেমন যেন পাগলের মত হয়ে গেল.. এই তো আপনিও চলে যাবার পর ভাইয়াও এমন শুরু করেছে..কারন সে ভেবেছে আপনিই নীলা আপু..আর কিছু বলবোনা..আপনাকে জোরও করবোনা..আসার জন্য..সিদ্ধান্ত আপনার ভাল থাকবেন”
.
.
__গল্পটা শোনার পর ছেলেটা প্রতি একটু একটু মায়া লাগছিল..আচ্ছা আমি কি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারিনা ছেলেটাকে সুস্থ করে তুলতে? এরপর না হয় তাকে বুঝিয়ে বললে…আমাদের ডিভোর্স টা হয়ে যাবে।
.
.
__পরদিন শশুড় বাড়িতে গিয়ে উঠলাম দেখা যাক ভাগ্য আমার সহায় হয় কিনা? স্বামী কে ঠিক করতে পারি কিনা। আমার শশুড় বাড়ির লোক খুব ভাল নিজের মেয়ের মতই ভালবাসে আমাকে…সমস্যাটা হল আমার বর আলভি কে নিয়ে তারঁছেড়া মার্কা ছেলে একটা। ওকে ঔষুধ খাওয়াতে গেলে আমার চৌদ্দটা বেজে যায়। সারাদিন বাচ্চাদের মত করে..ওরপেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে যাই।
.
.
– নীলা আমাকে একটা গল্প শোনাবে?
.
.
ও ভাবছে আমিই বোধহয় নীলা। এমনই করে সব সময়। তাই একদিন বললাম..আমার নাম শুধু নীলা নয়। তাসফিয়াও। তাই আমাকে এই নামেও ডাকতে। আমি যা বলি তাই ই করে সে।
.
.
একদিন দুজন ছাদে দাড়িয়ে আছি। আসলে ওকে ঔষুধ খাওয়াতে গেলে অনেক কিছুই করতে হয়। এদিকে প্রচুর বৃষ্টি নামছে..তাই সিড়ি কোঠায় বসে আছি দুজন।
.
.
– আলভি প্লিজ একবার ঔষুধ টা খেয়ে নাও?
– না খাবোনা।
– তোমাকে চকলেট দিবো কিন্তু।
– না আমি তোমাকে একটা উম্মা দিবো।
– থাপ্পড় দিবো তাহলে..
.
.
ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিল ছেলেটা আমি হাত দিয়ে ওর মুখটা চেপে ধরলাম। কেউ শুনলে ভাব্বে আমি ওকে মেরেছি। কান্না বন্ধ করলে হাত সরিয়ে নিলাম কিন্তু আবার শুরু করলো।
.
.
– আচ্ছা ঠিক আছে উম্মা দিবো চুপ থাকো এবার?
– আচ্ছা দাও।
.
__একটু পর আমার হাত ধরে টেনে বৃষ্টিতে ..টেনে নিয়ে গেল। ভিজে গেলাম। ছুটে আসতে চাইলাম..সে দিলোনা। বরং আমাকে ভিজিয়েই ছাড়বে। খুব ভিজে ছিলাম সেদিন..বৃষ্টিকে একবার তো জড়িয়েও ধরেছে.. কিন্তু আমি নিজেই ছাড়িয়ে নিয়েছি।
.
__পাগল হলে কি হবে? ভালবাসা আছে ছেলেটার মাঝে। স্বাভাবিক থাকে মাঝে মাঝে আবার অনেক সময় ছোট দের মত করে..মানে যে যা বলবে তাই করবে। যদি বলি দাড়িয়ে থাকো..সারাদিন কেটে যাবে সে এমনই থাকবে।
.
__সেদিন অতিরিক্ত ভেজার ফলে..খুব জ্বর এলো আমার..ছেলেটা আমার মাথায় জ্বর পট্টি দিয়েছিল.. শাশুড়ি আম্মা ঔষুধ দিয়ে গিয়েছিল..তা আমাকে খাইয়ে দিয়ে..নিচে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
.
.
__জানিনা ওর ছেলে মানুষী অর্থাৎ পাগলামী আমার কাছে পাগলামোর মতই লাগতো..তাই খুব বকতামও মাঝে মাঝে..একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি নিচে সে নেই.. খুজতে লাগলাম.. গিয়ে দেখি শাশুড়ি আম্মার ঘরে দাড়িয়ে আছে..আর শাশুড়ি আম্মা একটা ব্যাগে কিছু কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে …সেগুলো আলভির। বোকা টা আমাকে দেখে একটু হাসি দিলো আমি মুখ ভেংচি কাটলাম। মা ছেলে দুজনে কথা বলছে ..শাশুড়ি আম্মার কথা শুনতে পেলাম.. **ওখানে গিয়ে..একদমই দুৃষ্টুমি করবিনা..ঠিকমত থাকবি..আমি সময় হলেই দেখে আসবো কেমন???** অবাক হয়ে গেলাম..আলভি কে সে কোথায় পাঠাচ্ছে!!!!???? তাই বলে উঠলাম..
.
.
– মা..? আলভি কে কোথায় পাঠাচ্ছেন?
– তোমাকে বলা হয়নি..ওকে ওর ট্রিটমেন্টের জন্য ..পাঠাবো।
– কিন্তু কোথায়?
– মেনটাল হসপিটালে..একটু পরই তারা আসবে ওকে নিতে।
– (অবাক হয়ে গেলাম) সেকি মা আমাকে বলেন নি তো?
– আমি জানি আমার ছেলেটা খুব বিরক্ত করে তোমায়…তুমিও তো একটা মানুষ..একটা পাগল কে কত সহ্য করবে তুমি?
– কিন্তু মা..?
– আমারই ভুল হয়েছে..ভেবেছিলাম বিয়ের পর ঠিক হবে…কিন্তু উল্টো তোমাকেই পাগল করে ফেলবে ও।
.
.
বোকা টা হাসতেছে..কিছু বলছেনা। পাগল কোথাকার যে যা বলে তাই শোনে..যেতে বললেই কি শুনতে হবে নাকি?
.
.
– মা আপনি এ কিছুতেই পারেন না। আমি ওর দায়িত্ব নিয়েছি..আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করেন না?
– তা নয়..কিন্তু এখনো সব শেষ হয়নি..আগে যা করেছি ভুল..ভুলে গিয়েছিলাম তোমার একটি সুন্দর জীবনের কথা।
– কিন্তু মা আমি ওকে যেতে দিবো না।
– তুমি ..মেনে নাও বউমা..ওকে যেতে হবে।
.
.
__পাগল টা তখনও দাড়িয়ে আছে..কিছু তো বলবি?? গাধা কোথাকার।
.
– আলভি তুমি তোমার নীলাকে ছেড়ে যেতে পারবে?
.
__মুহুর্তেই ওর মন বদলে সে কিছুতেই যাবেনা…বলছে..বার বার বলছে..”আমি ওকে ছেড়ে যাবোনা মা”। শাশুড়ি মা ওর দু গালে চড় বসিয়ে দিল। অথচ ছেলেকে মেরে সে নিজেই কেদে দিলো আর বলল..”মরে যেতে পারিস না?? আর কত জ্বালাবি? এবার তো আমাদের শান্তি দে আর মেয়েটাকে।
.
.
– মা আমি ওকে যেতে দিবো না আমি ওকে সুস্থ করে তুলবো..আপনি প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করুন..(আমি বললাম)
.
__এই বলে আলভি কে টানতে টানতে আমাদের ঘরে নিয়ে এসে দড়জা লাগিয়ে দিলাম আমি কিছুতেই ওকে যেতে দিবো না।
.
__একটু পর শাশুড়ি মা আসলো..এবং বলল “ঠিকআছে তুমি যা চাও তাই হবে”।
.
.
__কেটে গেল বছর খানিক.. ওর পাগলামো গুলো মোটেও খারাপ লাগেনা। ঔষুধ খাওয়াতে গেলে তাকে..উম্মা দিতে হবে..খাবার খাওয়াতে গেলে তার পেছন পেছন ছুটে যেতে হবে। মনে হয় যেন..একটা বাচ্চা পেলে চলেছি আমি কিন্তু বাচ্চা টা বড় বাচ্চা …(হাসির ইমু)
.
__অনেকবার আলভি কে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছি…ডাক্তার বলেছে..ওর অবস্থা ধীরে ধীরে খুব উন্নতি হচ্ছে…তা শুনে পরিবারের সবাই আমাকে আরে ভালবাসতে লাগলো।
.
__ছেলেটাকে এখন আর নিচে শুতে বলিনা..আমার পাশেই ঘুমায়..একটু পাগলামো করেনা..বিছানায় শুয়ে পড়া মাত্রই ঘুমিয়ে যায়।
.
__মােঝ মাঝে ভাবি..ও যদি সুস্থ হয়ে যায়..আমাকে চিনবে তো??? নাকি ওর পাশে এমন ভাবে আমার জায়গা টাই থাকবেনা? সে সুস্থ হয়ে আমাকে হয়ত চিনবেই না..খুব কষ্ট পাবে তখন.. ওর সাথে কাটানো এই একটা বছর কেন যেন ওর প্রতি ভালবাসা জাগিয়ে তুলেছে আমার। কেন যেন সেলফিস হতে ইচ্ছে করছে..মনে মনে চাইতেও লাগি মাঝে মাঝে যেন ও সব সময় যেন এমনি থাকে..আবার ভাবি না ঠিক হয়ে যাক সবাই তো তাই..চায়। কেন যেন ওর প্রতি দুর্বলতা টা বেড়েই চলছে..ছেলেটা ঘুমোচ্ছে এখন..ওর হাতটা টেনে..নিজের মাথার নিচে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
.
__আগের থেকে ওর পাগলামো টা যেন কমেই চলছে..মনে আমার শুধু ভয় এই বুঝি কখনো আলভি বলে উঠবে..সে আমাকে চিনতেই পাারছেনা.. সেলফিস হতে বড়ো ইচ্ছে করছে আজ.. আমি আমার নিজের স্বার্থে চাই ও যেন সুস্থ না হওক। দুজনে ছাদের ওপরে দাড়িয়ে আছি।
.
.
– কই ঔষুধ দাও? খাওয়াবানা?
– তুমিই তো খেতে চাওনা..আলভি।
– না আজ খেয়ে নিবো দাও আমার হাতে।
– সব সময় তো আমার হাতেই খাও।
– আমি নিজেই খেয়ে নিবো দাও??
– তাহলে তো কিস দিবো না তোমাকে…
– লাগবেনা ..এমনিতেই খাবো দেখো।
.
.
খুব কান্না পেলো আমার.. এতটা পরিবর্তন হচ্ছে ওর ব্যবহারে? ঔষুধ খাওয়ার সময় কিস ওর চাই..সেধে খাওয়াতে হত.. নিজের হাতে খাওয়াতাম..আজ তার ওইসব কিছুই চাইনা.. ঔষুধ টা তার হাতে দিয়ে.. কাদতে কাদতে নিচে নেমে গিয়ে বালিশে মুখ লুকিয়ে কাদতে লাগলাম।
.
সে আমার পাশে এসে বসলো… এবং বলতে লাগলো..
.
– আমি আর কখনো এমন করবোনা..তুমি কেদোনা..প্লিজ? এই যে আমি কানে ধরছি …তুমি খাইয়ে দাও ঔষুধ..আর উম্মা না দিলে খাবোনা কিন্তু…
.
.
নিজেকে আটকাতে পারলাম না..উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম..এটাই প্রথম তাকে জড়িয়ে ধরা..নয়ত আগে সে চাইলেও এমন করিনি..আমার কাছে মনে হচ্ছিলো ও আমার থেকে দুরে সরে যাচ্ছিল..খুব খারাপ লাগছিল “কখন যে তাকে ভালবাসি বলে ফেলেছি নিজেই বুঝতে পারিনি.. আমি যেন নিজেই পাগলী হয়ে গিয়েছিলাম তার প্রেমে।
.
.
আর সেটাই আমি চাই.. শুধু ঔষুধ খাবার জন্য নয়..সব সময় তাকে উম্মা দেই..রাতে তার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে না ধরলে.. আমার ঘুম আসে..না। হইনা তার প্রেমে আমি তার পাগলী সমস্যা???কিহ???

__নার্সের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো আমার। এত সময় আমি আমার অতীত নিয়ে কল্পনা কর ছিলাম। আলভি এখনো হাসপাতালের বেডে ঘুমোচ্ছে। অপারেশনের পর এখনো চোখ খোলেনি..মনের মাঝে আবার সেই ভয়টি জেগে উঠলো। ও যদি আমাকে না চেনে পারবো ওকে ছাড়া বেচে থাকতে???
.
.
__আমার মনে পড়ে..সেদিন ..আমি ফ্রেস হয়ে ওকে ডাকতেছি..কিন্তু… এখনও ঘুমোচ্ছে সে..নার্স বার বার চেক করে যাচ্ছে। অনেকটা সময় পর যখন ওর জ্ঞান ফিরলো সে সবাইকে চিনলো আমি ব্যতিত।
.
.
– কে আপনি? (আলভি)
– দুষ্টুমি করোনা আলভি..আমি তোমার তাসফিয়া।
– কি সব বলছেন? আমি এখানে? আম্মু??আম্মু???
.
.
__খুব কেদেছিলাম সেদিন খুব খুব..আলভিকে হাসপাতাল থেকে..বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে.. ও আমাকে চিনতেই পারছেনা? শাশুড়ি আম্মা অনেক বার বুঝিয়েছে..আমাদের বিয়ের কথা বলেছে..বিয়ের সিডি দেখিয়েছে তবুও সে আমাকে অস্বীকার করছে..
.
.
__আমি কিছুতেই তাকে ছেড়ে যাবো না সে চিনলে চিনুক না হলেও আমি এখান থেকে কোথাও যাবোনা। রাতে ঘুমানোর সময় সে বলল…
.
.
– সব কিছু তো আমি অসুস্থ ছিলাম তখন হয়েছে..
– তুমি সত্যিই আমাকে চিনছো না?
– সত্যিই আমি আপনাকে চিনছিনা বিশ্বাস করুন।
– তোমার কি এসবও মনে নেই? খাবার নিয়ে তোমার পিছু ঘুরতাম..ঔষুধ খাওয়ার সময় কতবার উম্মা চাইতে?
– সত্যিই আমার মনে নেই।
– ঠিক আছে। তাহলে এটা হয়ত মিথ্যে নয়?
.
.
__বলেই ফোন থেকে ছবি দেখালাম তাকে..সেদিন তার বুকে মাথা রেখে পিক তুলেছিলাম। আরো কিছু ছবি দেখালাম তাকে। সে কিছু বললনা। শুধু বলল..শুয়ে পড়ুন। আমি নিচে ঘুমাচ্ছি। একটু সময় দিলাম তাকে। কারন সে এখনো সম্পূর্ন নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারেনি। আর আমি তার ওপর কোন প্রেসার দিতে চাইনা।
.
.
-শুভ সকাল..
.
__ঘুম থেকে জাগালাম তাকে…ব্রেকফার্স্ট তৈরি করলাম। সে বার বার তাকাচ্ছে আমার দিকে। হয়ত আমাকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।
.
– বৌ মা.. ডাক্তার এই ঔষুধ গুলো দিয়েছে..
– ঠিক আছে মা আমি খাইয়ে দিবো।
– মন ভেঙো না মা..এখন যদি জিতে যাও..তাহলে তুমিই বিজয়ী..
– দোয়া করুন মা।
.
.
__ঔষুধ খেতে হবে তাকে..এখনো সে পরিপূর্ন ঠিক নয়..ডাক্তার ঔষুধ Suggest করেছে। হয়ত কিছুটা দুর্বল এখনো সে।
.
__সারা ঘর খুজে দেখি ছাদে দাড়িয়ে আছে সে…”মহাশয় তাহলে এখানে?” বলে উঠলাম।
.
– ঔষুধ খেতে হবে তো…(বলে উঠলাম)
– না…না আমি খাবোনা।
– প্লিজ আলভি হা করো?
– না খাবোনা।
– প্লিজ?
– দেখুন আমি ছোট না ..এমন করবেন না আমার সাথে।
.
.
__ওর কথা টা শুনে খুব কান্না পেলো। ঔষুধ টা নিয়ে নিচে নেমে গেলাম। এই ভয়টাই আমি পেয়েছি। আমাকে ইগনোর করছে সে…চিনছে না আমায়।
.
__একটু পর আবার গেলাম .. সে আমাকে বকলেও তাকে খাইয়ে ছাড়বো…তার জন্য বেহায়া হতেও রাজি আমি। গিয়ে..তাকে চিমটি কেটে লুকিয়ে গেলাম..সে বুঝে গেল আমি সেটা। তাই আবার যখন দিতে গেলাম হাতে নাতে ধরলো…যখনই কিছু বলতে যাবে তখনই মুখে ঔষুধ দিয়ে দিলাম। সেটি খেয়ে কাশতে লাগলো সে।
.
.
– এটা কি হলো?
– তুমি খাচ্ছিলে না তাই।
.
__বলে একটু মুচকি হাসি দিলাম। সে কিছু না বলে চলে গেলো। এভাবেই কেটে গেল কিছু দিন। তার জন্য আমি নিজেই ছোট দের মত আচরন করি। হিহিহি ভালবাসা খুব ডেন্জারেস জিনিস মুহুর্তেই কাউকে পরিবর্তন করে দেয়।
.
__সেদিন খুব রেগে ছিলো সে.. কারন আমি হুট করেই তার অনিচ্ছায় ঔষুধ খাইয়েছিলাম তাকে। এরপর থেকে আমার হাত দিয়ে নয় বরং খেতে সে নিজেই হাত দিয়ে খায়। আবার খায়ওনা কিছু কিছু সময়।
.
– কি ব্যাপার আজ ঔষুধ খেলে না যে?
– তোমার সমস্যা কি?
– সেকি? আমার দশটা না পাচঁটা না একটা মাত্র হাজবেন্ড আমি কেয়ার করবোনা?
– দরকার নেই।
– আছে।
– বললাম তো দরকার নেই।
.
.
__কিছু বললাম না সে নিজ হাতে খেয়ে নিলো.. আমি হুট করে তাকে একটা উম্মা দিয়ে দৌড় দিলাম সে আমাকে ধরে বসলো।
.
__যদিও আমি এটাই চাইছিলাম তবুও খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম … সে আমাকে টেনে এনে..সিড়ি কোঠার দেয়ালে ঠেসে ধরলো।
.
– আলভি ছাড়ো খুব ব্যাথা লাগে হাতে।
– খুব সখ আমাকে ঔষুধ খাওয়ানোর তাইনা?
– উহু একটুও না।
– খুব বক বক করো সারাদিন আজ তোমায় শাস্তি দিবো।
.
.
__অতঃপর দুই জোড়া ঠোঁট পরস্পর একত্রিত হয়ে গেলো। আর কিছু না বলে..আমার দিকে না তাকিয়ে সোজা নিচে সিড়ি বেয়ে নেমে গেলো সে।
.
__””এই যে আলভি সাহেব.. তুমি এতদিন খুব খাটিয়েছ আমাকে যা আমার খুব ভাল লাগত..তোমার পেছনে ঔষুধ নিয়ে দৌড়াতাম..এমন কি খাবার সময়ও..মনে হত তুমি যেন ছোট একটা বাবু..কিন্তু এখন তো তুমি তা নও..তাই আমার একটা ছোট বাবু লাগবে..যার সাথে আমি ঔরকম করতে পারবো”” -রাতে ঘুমানোর সময় বলছিলাম তাকে।
.
__আজ কিছুদিন সে ঠিকমত কথা বলেনা আমার সাথে। আমার যে কতটা কষ্ট হয় তা সে বুঝবেনা। আমি আর এখন ঔষুধের কথা বলিনা। কারন সে এখন শাশুড়ি আম্মার হাতে ঔষুধ খায়।
.
.
.
__এখন তো আর আমার কোনো প্রয়োজন নেই.. সেও আমাকে মেনে নিতে পারছেনা। তাই অনেকটা দুঃখ নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে এসেছি। শাশুড়ি মা অনেকবার ফোন দিয়েছে আমি শুধু এত টুকুই বলেছি আলভি আমাকে নিয়ে যাবে নয়ত আমি যাবোনা।
.
প্রায় সপ্তাহ খানিক পর..আলভির ফোন… (খুশির ইমু)
.
__আমি জানি তুমি আমাকে খুব ভালবাসো..তুমি যখন চলে গেলে তখন ভেবেছি আবার বুঝি নীলা চলে গেলো..আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবোনা প্লিজ ফিরে এসো?-_আলভি বলল।
.
__সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল এমন কথা শুনে..আমি যে সত্যিই পাগল টা কে খুব ভালবাসি। কিন্তু আমি বলে দিয়েছি..আমাকে আবার বিয়ে করতে হবে..কারন তখন পরিবারের জন্য বিয়ে করেছি..কিন্তু এখন আমাদের একটা সুন্দর জীবনের জন্য বিয়ে করবো তোমাকে…আর বর বেশেই আমাকে নিয়ে যেেত হবে। তার আগে আমি যাচ্ছিনা।
.
__ঠিকই বর বেশে বর যাত্রী নিয়ে এসেছিল সে..দ্বিতীয় বার আবার সেই ধুমধাম করেই বিয়েটা হলো আমাদের। সেই আগের মতই বাসর রাতে..বসে আছি।
.
__একটু পর সে আসলো। ভাবলাম সে সালাম করে নাকি আবার আগের মত কিন্তু না। তার আগেই আমি তাকে সালাম করলাম।
.
.
– রেগে আছো বুঝি?(সে বললো)
– হুম।
– আবার কেন?
– আগেবার বাসর রাতে তুমি আমাকে ..সালাম করেছিলে..এবার করোনি।
– হাহাহা এই সত্যিই আমি করেছিলাম? ইস কত বোকাই ছিলাম আমি?
– কিছুটা তবে বোকা টাকেই ভালবেসে ছিলাম।
– এখন বুঝি বাসবেনা? থাক লাগবেনা তোমার ভালবাসা আমি নিচেই ঘুমাবো।
– জ্বি না। কি চেয়েছিলাম আপনার কাছে?
– উমম মনে নেই ..বলোতো কি?
.
.
একটু চোখ পাকিয়েই বললাম “জানিনা”। সে আমাকে খোচা দিয়ে বলল “প্লিজ বলোনা কি চেয়েছিলে???। আমি আবার বললাম “বলবোনা”। সে আবার রিকুয়েষ্ট করলো… তাই বললাম..
.
– একটা ছোট্ট আলভি কে চেয়েছিলাম।
– তাইইই? তাকে পেলে যদি আমার আদর কমে যায়?
– আলভি তুমি কখনো চিন্তাও করতে
পারবেনা..আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি। (রেগে বললাম)
– ও আমি তোমাকে কম ভালবাসি বুঝি?
.
.
__এই বলেই দুষ্টুমি করতে লাগলো সে। কখনো ভুলবো না। সেই স্বরনীয় রাত টা কে..কখনোইনা। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা মুহুর্ত সেদিন উপহার দিয়েছিল সে।
.
.
__আলভি টা নাহ একদমই বাবুদের মতই করে.. একদিন বললাম বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাবো..যেতেই দিলোনা। সে বলে কিনা..তার বুকে আমি না ঘুমালে নাকি তারও ঘুম আসেনা। আসলেও পাগল একটা। আগে ঔষুধ খাওয়ার আগে উম্মা চাইত..সেটা এখন একটু বদলে গেছে..অফিসে যাবার আগে..একটার বদলে অনেক গুলো উম্মা দিয়ে যায়।
.
__এখনো মাঝে মাঝে তাকে আগের মতই শাষন করতে হয়..যেন অফিসে ঠিকমত লান্চ করে নেয়..নামাজ যেন ঠিকমত পড়ে..আমিও ঠিকমত নামাজ পড়ি কারন আমি ওকে পেয়েছি..শুধুই
আল্লাহর জন্যই।
.
__একদিন শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল..শাশুড়ি আম্মার সাথে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। রাতে আলভি যখন অফিস থেকে ফিরলো..
.
– এই বাবুর আব্বু..হা করো..
– কেন?
– উফ করোইনা পাগল..
– এই পাগল বলবানা কিন্তু..
– ওকে বলবোনা হা করো।
.
__মিষ্টি খাইয়ে দিলাম তাকে। সে বোকার মত চেয়ে আছে আমার দিকে। কিছুই বুঝতেছেনা। আমি এত খুশি হয়ে আছি..আবার..মিষ্টি খাইয়ে দিলাম।
.
– কি হয়েছে গো?
– কি আর হবে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম সে বলল..খুব শীগ্রই আমি মারা যাবো।
– নেক্স টাইম প্লিজ এই আবল তাবল বলবানা তুমি।
.
__জড়িয়ে ধরলো সে…প্রায় কেদেই দিয়েছে পাগলটা। এত পাগল কেন সে? এত ভালবাসে আমায়? হয়ত তাকে না পেলে ভালবাসা এতটা মধুর হয় কখনোই বুঝতাম না।
.
.
– এই পাগল তুমি কাদো কেন?
– তুমি যাতা বলো কেন?
– আচ্ছা আর বলবোনা সরিইই..
.
.
__পাগলটার বুকের ওপর শুয়ে আছি…বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছি আর মুচকি মুচকি হাসতেছি।
.
__সে একটু হাসি দিলো। আমি আবার তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিলাম। খুব হাসি পাচ্ছিলো। এমন সময় বলে উঠলো…
.
– তুমি কিছু লুকাচ্ছোনা তো?
– হুম। তা তো অবশ্যই।
– তাহলে প্লিজ বলো লক্ষীটি?
– বললে আমি কি পাবো শুনি?
– কি চাও বলো?
– সেই উম্মা টা।
– আচ্ছা দিবো Now বলো?
.
.
__আমি কানের কাছে মুখটি নিয়ে..বললাম “আমাদের ছোট আলভি আসতেছে” প্রথমে সে কিছু আচ করতে পারেনি বুঝে উঠতে পারেনি হয়।
.
__একটু পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল “সত্যিই!!!”। আমি একটু মুচকি হাসি দিয়ে তার বুকে লুকিয়ে পড়লাম সে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো আমায়।
.
.
__একদিন খুব জন্ত্রনা..লাগছে..মনে হচ্ছে বাবুটা যেন ভেতরে..খুব চিৎকার করছে। পৃথিবীর আলো দেখবে তাই। প্রচন্ড যন্ত্রনা..
.
__এরপর আর কিছুই মনে নেই হাসপাতালের বেডে আমি..আলভি আমার হাতটা শক্ত করে বসে আছে। কাদতেছে আমার পাগল টা। এত ছোট হলে হয়? বাবুর আব্বু হয়ে গেছে অথচ এখনো ছোটই রয়ে গেল।
.
– তুমি ঠিক আছো তো বাবুর আম্মু?
– হুম। তুমি কাদো কেন বোকা?
– তোমার যদি কিছু হয়ে যেত।
– কি হবে আমার? তুমি আছোনা? আল্লাহ্ আমাদের পাশে সব সময় আছে বুঝলে।
.
.
আমাদের ছোট আলভি টা কে …আমাদের দুজনার মাঝে রেখে একটা আমাদের তিন জনের একটা সেলফি তুললো পাগল টা। কেউ বলবেনা সে যে..এই পাগল টা বাবা হয়েছে..কারন সে নিজেই বাচ্চাদের মতই।
.
-থ্যাকস।
.
আমিই বললাম। সে আমাদের দিকে তাকালো এবং বলল..কেন?
.
– আমাকে ছোট্ট একটি অালভি..উপহার দেয়ার জন্য।
– হুম..কিন্তু সব ক্রেডিট আল্লাহর সে চেয়ে বলেই তো..ছোট আলভি টা তার বাবার মতই হয়েছে।
– না আমার মত হয়েছে।
.
__দু-জনে ঝগড়া করতে লাগলাম। এমন সময় বাবা মা এবং শশুড় শাশুড়ি তারা এসে তারাও ঝগড়া শুরু করলো..কেউ বলে…নানার মত..কেউ বলে দাদার মত..কেউ বলে..দাদীর মত কেউ বলে নানীর মত।
.
__আমরা দুজন মিটি মিটি হাসতেছি..বাচ্চা
রাও হয়ত অনেক কিছুই বোঝে..একদম পেট থেকেই পাকা হয়ে বের হয়েছে আমাদের ছোট আলভি টা..সেও হাসতে লাগলো.. তার হাসি দেখে সবাই হাসতে লাগলো।
.
.
••••অতঃপর ৩-বছর পর••••
.
.
– বাবুর আম্মু? আমার শার্ট টা কোথায় রেখেছো?
– অন্য একটা পড়ো..
– না..আমার চেক শার্ট টা কোথায়??
.
.
__এই হলেন পাগল টা… তাকে দুইটা শার্ট গিফ্ট করেছি সেই দুটোই পড়বে..এখন নাকি খুজেই পাচ্ছেনা। আর এদিকে ছোট আলভি কে খাওয়া তে গিয়ে দৌড়াতে হচ্ছে। একদমই বাবার মতই হয়েছে।
.
.
__আমার পাগল টা শার্ট টা পড়তেছে…আর এদিকে ছোট আলভি টাকে খাওয়াতে গিয়ে গল্পও বলতে হচ্ছে …
.
_এমন সময় বললাম..জানো ছোট অালভি একটা পাগল ছিল..তাকে ঔষুধ খাওয়ানোর আগে উম্মা দিতে হতো.. খাবার নিয়ে তার পেছনে পেছনে দৌড়াতে হত..আমি সব সময় তার বুকে ঘুমাতাম..একদিন পাগল টা পুরো পুরি সুস্থ হলেও পাগলামো টা রয়েই গেল”
.
__গল্পটা শুনে আলভি এসে..আমার হাতটা শক্ত করে বলল…”এই কি বললে তুমি আমি পাগল???”
.
– আলভি ছাড়ো?
– এর শাস্তি পেতে হবে তোমায়।
– এই কোনো দুষ্টুমি নয়..ছোট আলভি দেখছে কিন্তু…
.
__আমার কোনো কথা শুনলো না আগের মত করেই শাস্তি দিলো সে.. হাসির শব্দ শুনে.. দুজনে তাকালাম।
.
__ছোট আলভি টা খুব দুষ্টু..একদমই বড় আলভির মতই। আমাদের দেখে হাসতেছিল..এখনো হাসতেছে। এত টুকু বাচ্চা কি বোঝে?? বুঝবেইনা কেন? দুজন যে একই বড় আলভি পাগল..ছোট টা দুষ্টু।
.
__ছোট আলভির হাসি দেখে দুজনই হেসে…জড়িয়ে ধরলাম ছোট আলভিকে… আমাদের জীবনে এত ভালবাসার মাঝেও কিছু একটা অপূর্ন ছিল ছোট অালভি কে পেয়ে আজ যেন ..জীবন টা পরিপূর্ন হয়ে গেল। আর আমি সম্পূর্না…(Smile Emo)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত