মোবাইলে দেওয়া এলার্মে ভোরে ঘুম থেকে উঠে নজরুল সাহেবের মেয়ে নুসরাত বেগম। রমজান মাস ছিলো। তাই সাহরী করার জন্যই ভোরে উঠা। রান্নাঘরে গিয়ে খাবার গুলো গরম করতে লাগলো। টেবিলে সবার জন্য খাবার বেড়ে রাখলো। পরে সবাইকে ডাকতে গেলো। শশুর- শাশুড়ি’কে ডেকে উঠালো। কিছুক্ষণ পরেই আসলো তার নবাব ছলিমুল্লা’কে ডাকতে। কিন্তু ছলিমুল্লা কি আর এত সহজেই ঘুম থেকে উঠবে। ডাকতে ডাকতে নুসরাত বেগমের মাথাটাই গরম হয়ে গেলো। মাথা গরম না হয়ে কি হবে এত ডাকার পরও যদি ঘুম থেকে না উঠে তাহলে রাগ হবে না তো কি হবে। বাল্ব চালু করে পাখাটা বন্দ করে দিলো। যাতে গরমে উঠে যায় এর কারণে।
.
১০ মিনিট পর আবার আসলো ডাকতে। কিন্তু এবার মুখে নয় হাত দিয়ে ডাকছে। মানে আগের বার মুখে বলেছিলো কিন্তু এইবার হাত চালাচ্ছে। নাকের মধ্যে ধরে জোড়ে ডাকলো। এক ডাকেই ছলিমুল্লা লাফ দিয়ে উঠে বসে বিছানাতে।
.
– এই কি হয়েছে? ভুমিকম্প হলো নাকি?
– তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবারের টেবিলে আসো। নাহলে সত্যি সত্যি তোমার উপর দিয়ে ভুমিকম্প হয়ে যাবে।
.
কথাটি বলেই নুসরাত বেগম রুম থেকে চলে আসে। অন্যদিকে তার মা-বাবাও খাবারের টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে। আর দেড়ী না করে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে বসলো। সবাই সাহরী শেষ করে ফজরের নামাজ পড়ে নেয়। কিন্তু ছলিমুল্লা নামাজ না পড়েই বিছানাতে এসে পরে। বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। একটু পর নুসরাত বেগম নামাজ আদায় করে ডাকতে আসলো তার নবাব ছলিমুল্লা’কে।
.
পরে নামাজ পড়ে নিলো। এখন ঘুমোচ্ছে সবাই। এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিদিনই হয়ে যাচ্ছে। যে ছেলেটা রোজা রাখতো না নামাজ পড়তো না। তার কপালে এরকম একজন বউ জুঁটলেই হবে। একেবারে সোজা করে ফেলবে। আর হ্যাঁ একে অপরকে ভালোবাসে বলেই এতটুকু আসতে পারা। তাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়। দু’বছর হয়েছে তাদের বিবাহিত জীবন। দু’জন দু’জনকে পছন্দ করতো। এবং সে পছন্দের কথা পরিবারকে জানায়। এবং মেনে নেয় তাদেরকে।
.
সকাল নয়টা –
– এই উঠো <ঘুম ঘুম কন্ঠে ডাকছে নুসরাত তাদ স্বামী’কে>
– হুমম….
– উঠো নয়টা বেজে গেছে।
– আর একটু পর উঠি।
– উঠো বলছি <একটু জোড়েই বললো>
.
সাথে সাথে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। এবং অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগলো। নুসরাত তার স্বামী’কে বিদায় দিয়ে শুয়ে পড়লো। রমজান মাস তাই একটু দেরী করে ঘুম থেকে উঠে। ১০ টায় ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। একটু পরে তার মোবাইলে কল আসলো।
.
– হ্যালো।
– কি করে আমার বউটা?
– ঘর গুছাচ্ছি।
– ওহহহ কখন উঠেছো ঘুম থেকে?
– তুমি যাওয়ার একটু পরেই উঠেছি।
– ওহহহ।
– আজ ইফতার কি বানাবো?
– মা’কে জিজ্ঞাসা করো।
– ঠিক আছে। কিন্তু তুমি কি খাবে? তোমার জন্য কি বানাবো?
– এত কষ্ট করতে হবে না। সবাই যা খাবে আমিও তাই খাবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে। এখন তাহলে রাখো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। টাটা।
– হুমম।
.
কথা শেষ করে আবার সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। একটা মেয়ের জীবনে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জীবন হলো তার সংসার। একটা মেয়েই পারে তার সংসারটা’কে আগলে রাখতে। মায়ের জাতটাই এরকম। সংসারের কাজ শেষ করে। রান্নাঘরে যায় তার শাশুড়িকে সাহায্য করতে। তার শাশুড়ির কাছ থেকেই রান্না শিখেছে। কিন্তু তাকে রান্না করতে দেয় না। নিজের মেয়ের মতো ভাবে তাকে। কিন্তু নুসরাত ও নাছোড় বান্দা যখন যেটা বলবে করবেই। বাধ্য হয়েই তাকে রান্না করতে দেয়।
.
যোহরের নামাজ আদায় করে তার স্বামীকে কল দেয়।
.
– হ্যালো।
– হুমম বলো।
– নামাজ পড়েছো?
– ইয়ে না মানে একটু ব্যস্ত তাই পড়িনি।
– তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে আসো। নামাজ শেষ করে আমায় কল দেও।
– ইয়ে…
– কোনো ইয়ে নয়। যা বলছি ঐটাই।
– আচ্ছা যাচ্ছি।
.
কিছুক্ষণ পর নামাজ শেষ করে কল দেয় তার বউকে। এবং কয়েক মিনিট কথা বলে বিদায় জানায়।
.
– নুসরাত..
– জ্বি মা।
– হৃদয়’কে কল দিয়েছিলে?
– হ্যাঁ মা দিয়েছি।
– ছেলেটা তোমার জন্যই একটু ভালো হয়েছে। আমাদের কথা তো শুনতোই না। এত বলেও কিছু করাতে পারতাম না। তুমি আসলেই অনেক লক্ষী একটা মেয়ে।
.
নুসরাত একটু লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলে। আর হ্যাঁ ছলিমুল্লার আসল নাম হচ্ছে হৃদয়। তার বাবা তাকে একবার এই নামে ডেকে ফেলছিলো। সে থেকেই ছলিমুল্লা নামটাও তার আরেক নাম হয়ে যায়। নুসরাত তার বাসায় কল দিয়ে তার মা-বাবার সাথে কথা বলে।
.
এর কিছুক্ষণ পর তার শশুর এসে ডাকে-
.
– মা….
– জ্বি বাবা।
– মা কি করো?
– এইতো বাবা শরবত বানাচ্ছিলাম।
– তুমি সারাদিন এত কষ্ট কেনো করো? তোমার মা’কে বললেই তো হতো।
– না বাবা। ঠিক আছে।
– নিজের খেয়াল রেখো মা।
– হ্যাঁ বাবা।
– হৃদয়ের আসতে কি আজ দেরী হবে?
– না বাবা। ও তো অফিস থেকে একটু আগেই বের হয়ে গিয়েছে। হয়তো রাস্তায় জ্যামে পড়েছে।
– আচ্ছা মা ঠিক আছে।
.
ইফতারের ঠিক ২০ মিনিট আগে হৃদয় বাসায় এসে পৌঁছায়। ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নেয়। একটু পর হৃদয়ের বউ তার কাছে আসে।
.
– কি কষ্ট হচ্ছে খুব?
– হুমম।
– আর একটু কষ্ট করো।
– হুমম।
– মাথা টিপে দেবো?
– হুমম।
– শুধু হুমম হুমম?
– হুমম।
– আবার?
.
নুসরাতের কোলে মাথা রাখে। এবং নুসরাত তার স্বামীর মাথা টিপে দিচ্ছে। কি আর করবে বেচারা রোজা রাখতে পারে না। কিন্তু এখন ঠিকই রাখে। এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়ে। সব মুসমানদেরই উচিত আল্লাহ্ আদেশ – নির্দেশ মেনে চলা। আল্লাহ্’র কথা স্মরণ করা। কুরআন পড়া এবং বেশি বেশি হাদীস পড়া এবং সেটা অন্যকে জানানো। নুসরাত প্রতি রাতেই তার স্বামীকে হাদীস শুনাতো। এবং হৃদয়ও তার বলা হাদীস গুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনতো।
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই আজান দিবে। সবাই খাবার সামনে রেখে অপেক্ষা করছে আজানের জন্য। মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন-
“ইফতারের সময় যখন রোজাদার ব্যক্তি আজানের অপেক্ষা করে। তখন আল্লাহ তা’য়ালা শয়তানকে ডেকে বলেন, দেখো আমার বান্দা যাকে তুমি নাফরমান বলেছো, তার কানে যতোক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম না পৌঁছাবে ততোক্ষণ সে এক লোকমা খাবারও মুখে দেবেনা। ঠিক এই সময় আমার বান্দা যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তা অবশ্যই পূরন করবো।”
.
আল্লাহ্ সবাইকে রোজা এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা