একটা বিকেলের গল্প

একটা বিকেলের গল্প

ইদানীং আকাশের ব্যাপার স্যাপার খুব কনফিউজিং। শ্রাবণের আকাশ মেঘে মেঘে কালো হয়ে থাকার কথা। প্যাঁচপ্যাঁচে বৃষ্টির জন্য রাস্তা ফুঁড়ে বেরোনো কাদায় সাদা সালোয়ারে দাগ লাগলে বাসার শান্ত মেয়েটাও মুখ গোঁজ করে গাল দেবে, এক হাঁটু পানিতে সিএনজি চলতে চলতে দুম করে বন্ধ হয়ে যাবে, সিএনজিওয়ালা মামা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলবে পানি জমে গেসে মামা গাড়ী আর যাই তো না, তীব্র জ্যাম ফুরিয়ে বাড়ি এসে সরকার আর শহরের শাপ-শাপান্ত করে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতে হবে, খিঁচুড়ি ইলিশের জন্য অফিসে আকুলি বিকুলি ইচ্ছে বাসায় আলু ভর্তা আর ডালের সাথে একটা পোড়া মরিচ নিদেন পক্ষে একটা ম্যাগী নুডলস ক্যোঁৎ করে গিলে ফেলা ব্যাপার থাকবে। এসব কিচ্ছুটি এখন হচ্ছেনা। শরতের সাদা কাশফুলের মত মেঘেরা পথ ভুল করে এই আকাশে ঘুরে বেড়ায়। নীল আকাশ, আগুন ধরা রোদ, সাদা মেঘ সব পেরিয়ে আনহাফের মন পড়ে থাকে একটা বেগুনী বক্সে।

বেগুনী বক্সের বামদিকে অনেকগুলো নাম থাকে। ডানদিকে শত কথোপকথন। অনেক হাসাহাসি – সিরিয়াস কথা- ওয়েবলিঙ্ক প্রতিদিন জমা হয়। এসবে আনহাফের মনে নেই। ঘুরে ফিরে একটা নির্দিষ্ট নামে চোখ আটকে থাকে। নামের পাশে চব্বিশ ঘন্টা অনলাইন। আনহাফের মনের ঝড় কী-বোর্ডে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনেক বছরের মান-অভিমান-না বলা কথা- স্মৃতিচারণ। সব লেখা হলে আনহাফ বারবার পড়ে। কোন ভুল হলো না তো? বানান ঠিক আছে? সব লেখা হলো? সব? বিন্দু বিসর্গ? কেমন আছো? কই তুমি?কি করছো আজকাল? ভালো আছো তো?
তারপর আনহাফের ক্লান্তি লাগে। ভয়ঙ্কর ক্লান্তি। অনেকদিনের শ্যাওলা ধরা মরচে পড়া ক্লান্তি। ব্যাকস্পেস চেপে ঝড়ের ক্ষরণ গুলো আলগোছে টেনে নেয় মস্তিষ্কে। তারা পূনরায় চলে আসে মস্তিষ্কের ধূসর অংশে।তারা বরং নিউরনেই আটকে থাক।সারা শরীর দাঁপিয়ে বেড়ানো রক্তে মিশে থাক।বুকের বাঁ পাশের দম আটকানো চাপ চাপ ব্যাথাতে মিলে থাক।

আআনহাফ দীর্ঘশ্বাস চাপে। তারপর লাল দালানের জানালা পেরিয়ে আকাশ দেখে। আকাশ জোড়া সাদা মেঘ। মেঘ পেরিয়ে কালো রাস্তায় একটা ঘন্টা চুক্তিতে ভাড়া করা ঝলমলে নতুন রিকশা। একরাশ হাসাহাসি। টুক টাক ঝগড়া। কড়া সিগারেটের ঘ্রাণ। রাস্তায় ইতিউতি হাঁটা। হাত ভর্তি বেলীফুল। হল থেকে ফোনকলে লাইভ কনসার্টের সঙ্গী করা, রাতের ফোন কলে সারাদিনের বৃত্তান্ত, একসাথে স্টারগ্যাজিং এর স্বপ্ন। একটা নতুন ভোর।আকাশে পথভুলো মেঘের আনাগোণা। সব পেরিয়ে চোখ নামে সেই বেগুনী বক্সে।বক্সের সেই নির্দিষ্ট নামটা তখনো জেগে থাকে।

মনের মাঝে সযত্নে গড়ে তোলা ইগোর গুষ্টি কিলাতে কিলাতে আনহাফের কী-বোর্ডে পূনরায় কাল-বৈশেখী নামে। বেগুনী বক্সটায় তখন অনেক অভিমানের আঁকিবুঁকি হয়। আনহাফের হুট করে নিজেকে এন্টার আর ব্যাকস্পেসের মাঝে পথ হারানো সাদা মেঘদল মনে হতে থাকে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত