আমি তখন ক্লাশ টেন এ পড়ি।
একটা মেয়েকে ভীষন ভালবাসতাম।
মেয়েটাকে মনের কথা বলেছিলামও। মেয়েটা ভাবার জন্য সময় নিয়েছিল।
তারপর আমাকে পরীক্ষা করার জন্যও কিছুটা সময় নিয়েছিল।
যখনকার ঘটনা তখন প্রায় দেড় বছর পাড় হয়ে গিয়েছিল। দুর্ভাগ্যবসত তখনো মেয়েটা আমাকে পরীক্ষা করে যাচ্ছিল। বুঝতে পারতেছি আমাকেও মেয়েটা ভালবাসতে শুরু করেছে।
মেয়েটার নাম ছিল শোভা।
খুব সুন্দরী ছিল। এজন্য অনেক ছেলেরাই প্রপোজ করতো। আমার ভাগ্যটা ভালো ছিল আমার জন্য কোন ছেলেকেই পাত্তা দেয়নি।
কিন্তু কলেজের এক বড় ভাই ছিল। তার নাম আবুল(ছদ্মনাম)😁।
সেও শোভাকে পছন্দ করতো। শোভা কোনো পাত্তা দিতো না।
এজন্য একদিন আবুইল্লা একটা পিক শোভার ফেসবুক একাউন্টে মেসেজ করে পাঠাল।
পিকটা ছিল বাম হাতে ব্লেড দিয়ে আই লাভ ইউ লেখা রক্তাক্ত ছবি।
ওটা দেখে শোভা অনেক ভেঙ্গে পরলো। আমাকে বলে।
— ছেলেটা আমাকে অনেক ভালবাসে রে!!(শোভা)
— কিভাবে বুঝলি??(আমি)
— আমার জন্য হাত কেটেছে। ইসসস কত রক্ত পরতেছে।
— তো এখন কি করবি??(মেজাজ গরম)
— ভাবতেছি।
— হ্যা ভাববিই তো। এখন তো আমার কথা মনে নাই।😞😞
— দেখ ভাল্লাগে না। ছেলেটা কত কষ্ট পাইছে!!
— ও তাইতো!! কিভাবে বুঝলি যে ও আসলেই হাত কাটছে??
— দেখোস না হাতে একটা কাপড় বেধে রাখছে!!
— ওরকম তো বাধাই যায়। তাহলেই কি প্রমান হয় হাত কাটছে??
— আরে পিক দিছে তো।
— কই দেখা??
পিক দেখে মেজাজটা আরো গরম হয়ে গেল!!
— ওই এটা তো একমাস আগে ফেসবুকে একজনের প্রোফাইল পিকচার দেখছিলাম।(আমি)
তারপর পিক বের করে দেখালাম!!
— কি!!! হারামজাদায় আমারে বোকা বানাইছে??(শোভা)
— তুই তো বোকাই!
— কি??
— তা নয়তো কি?? আর এজন্য আমারে ভুইলা আরেকজনরে নিয়া ভাবতে গিয়েছিলি।
— সরি রে। এবার বিষয়টা বুঝলাম।
–না বুঝো নাই। আরো বোঝার বাকি আছে।২০ মিনিট ওয়েট কর আসতেছি।
— কই যাবি??
— আসতেছি পরে বলবো!!
ভাবতেছি। শোভাকে একটা বাস্তবতা শিখাবো।নাহয় আমার একটু কষ্ট হলো!!
দোকানে গিয়ে একটা ব্লেড কিনে আনলাম।
তারপর আলাদা একটা রুমে গিয়ে হাতে কলম দিয়ে I ♥ U আকলাম
তারপর আর কি।
ব্লেড দিয়া লেখাগুলা আর্ট করলাম।
রক্ত পরতেছে। বেশ কষ্টও হচ্ছে। প্রায় ছয় সাত মিনিটের মত লাগছে পুরোটা জায়গায় ব্লেড চালাইতে।
তারপর শোভার কাছে গেলাম।
তখনো কেউ আসেনি। দু একজন কোচিং এ আসলেও বাইরে ঘুরতে গেছে।
গিয়ে সোজা বললাম…
— দেখ তো,আমার হাতের ব্লেডের লেখাটা পড়তে পারিস কিনা??(আমি)
— এটা কেন করলি??(শোভা)(ও অবাক হয়ে+ভয়ার্ত চোখে তাকালো)
— তোর জন্য…!!!
ঠাসসসস…..(মেয়েরা এমন কেন জানি না।সুযোগ পাইলেই থাপড়াইতে চায়।)
— মারলি কেন??(আমি)
— এমন করছিস কেন??
— তোকে শিক্ষা দিব বলে!!
— মানে??
— মানে হচ্ছে এখন যদি তোকে আমি ফিজিক্যাল ইয়ে করতে বলি”! তুই কি করবি?? করো বা না করো সেটা তোর ব্যাপার। বাট, একটা কথা।
হাত কাটলেই ভালবাসা প্রকাশ হয়না। হাত যে কেউই কাটতে পারে!!
শুধু একটু সাহস থাকলেই হয়।তুই যে আবুল ভাইয়ের ফেক পিক দেখে ঘাবরাইয়া গেলি। যদি হ্যা ই বলে দিতি।তাইলে তো কাজ সারছিল।
ভাব তো একটু কষ্ট করে হাত কাটলেই কি ভালবাসা প্রকাশ হয়??
তাহলে তো প্রত্যেক প্রেমিকই হাত কাইটা ভালবাসার প্রমান দিতো!!
ভালবাসা মনের ব্যাপার। হাত কাটার সাথে ভালবাসার কোনো সম্পর্ক নাই।
আর হাত কাটা ভালবাসার লক্ষন না, বলদামির লক্ষন।
— তাইলে তুইও তো বলদ!!(শোভা)
— ওই আমি তোরে শিক্ষা দিতে করছি।এটা বলদামি না।
— হইছে হইছে আর পাকনামি করতে হবে না। দে হাতটা দে।(একটু কাপা কন্ঠে)
ভাবলাম বাংলা সিনেমার মত হয়তো ওড়না ছিড়ে হাতে প্যাচাই দিবে।কিন্তু না, মাইয়া টিস্যু বের করছে😒😒
টিস্যু ভাজ করে কাটা জায়গায় লাগিয়ে তারপর রুমাল দিয়ে বেধে দিল।
নাহ সিনেমার থেকে কম না😃😃😃
শেষে আমি বললাম…
— কিছু বুঝছো??(আমি)
–হুম অনেক কিছু!!(শোভা)
সাথে মুচকি হাসি!!
বুঝতে পারলাম ভালবাসার গ্রীন সিগন্যাল!!
#মোরাল: মেয়েরা এমনিতেই নরম মনের হয়। হাত পা কাটাকাটি বা রক্ত দেখতে পারে না।(মেডিকেল স্টুডেন্ট আপুরা বাদে)😜
এজন্য কিছু লম্পট ছেলেরা এই সুযোগটা নেয়। হাত কেটে ভালবাসা দাবি করে। তবে এদের এই কর্মকান্ডে দয়া করে দুর্বল হবেন না। হাত কাটা সাহস থাকলেই পারা যায়।এটা আহামরি কিছু না। ভালবাসার কোন লক্ষনও না।
বরং বাজে লক্ষন।
ওরা ভাবে যদি একটু হাত কেটেই মেয়ে/প্রেমিকা পাওয়া যায়। তাহলে কে শুধু শুধু থাক বাদ দিলাম।
এটুকুই বুঝে নিন। হাত কাটা ভালবার লক্ষন না বলদামির লক্ষন।এদের থেকে সাবধান থাকুন।
ভাল ছেলেরা এমন করে না। আর তাই বলে সব ছেলেকে দয়া করে দোষারোপ করবেন না।সবাই কিন্তু এক না।
আর পারলে ইন্টারনেট থেকে একটা গান ডাউনলোড করে শুনে নিন।যদিও ভাল নাও লাগতে পারে। বাট অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
গানটা হচ্ছে..
“বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিওনা এমন জনকে..
যে ফুলে ফুলে উড়ে মধু পান করে,
অবশেষে ভাঙ্গে মনকে”
গায়ক প্রীতম..
ভাল থাকবেন সবাই।
[ গল্পটা আপুদের উদ্দেশ্যে। হয়তো ভাল লাগবে না।তবুও পড়বেন প্লিজ। হয়তো কিছু শিখতেও পারেন।
আমার জীবন থেকে নেয়া]
বি.দ্র.: ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।