তরী একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে সবে মাত্র। দেখতে শুধু সুন্দর নয় এক কথায় সুন্দরীই বলা যায়। দারুণ গাঁয়ের রঙ, চুল-চোখ-নাক-মুখ-হাত-পা সব কিছুতেই একটা আকর্ষণের বিচ্ছুরণ। যে কারণে প্রথম ক্লাসের দিন থেকেই সব ছেলেদের উৎসুক নজরে পরে গেল স্বাভাবিক ভাবেই।সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই মেয়েটি ডিপার্টমেন্ট এরই সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর কাঙ্ক্ষিত জনে পরিণত হল! শুধু তার বাহ্যিক সৌন্দর্য, কথা বার্তার রঙ-ঢং আর আন্তরিকতায়। আর দুই-এক ক্লাস উপরের বড় ভাইয়েরা তো কেউ প্রেমে, কেউ জলে, কেউ অতলে আর কেউ-কেউ আবার তার রূপের গাড্ডায় নিমজ্জিত হয়ে গেল!
–
কিন্তু সমস্যা হল, মেয়েটি যতটা সুন্দরী ঠিক ততটাই বোকা! বা বলা যায় সহজ-সরল, একটু আলাভোলা টাইপের! সুন্দরী মেয়েদের ক্ষেত্রে যেটা সাধারণত কম হয়। তারপরেও তরী কাউকে পাওা দিতো না। নিঙ্কে এইসব থেকে দূরে রাখতে চাইতো। যে কারণে, বেশ কয়েকদিন কথার খোঁচা, ফালতু মন্তব্য, চটুল উটকো বাক্য ভেসে আসতে লাগলো তরীর চারপাশ থেকে। এতে স্বভাবতই সে বেশ বিরক্ত হয় কিছুটা বিষণ্ণও হয়। স্বাভাবিক ভাবেই। তরী পড়ালেখা খুব ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে, কারো কথায় কনো কান দিচ্ছে না। একদিন কলেজের মাঠের এক কোণে বান্ধবীরা মিলে বসে আছে, হঠাৎ করেই তরীর চোখ আটকে গেলো, একটা অচেনা ছেলের দিকে, তাকে সে আগে কখনো কলেজে দেখে নি। আজই প্রথম।
–
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো, ছেলেটি এই কলেজেরই, আজই ভর্তি হয়েছে। নাম ছিলো অভ্র। তরী খুব ভালোবেসে ফেললো অভ্রকে কিছু না বুঝেই। এরপর থেকে তরী লুকিয়ে লুকিয়ে অভ্র কে দেখতো, কিন্তু অভ্র কে কিছুই বুঝতে দিতো না। অবশ্য কয়েকদিন পর অভ্রর চোখে তরী ধরা পড়ে গেলো, সব কিছু জেনে গেলো, অভ্র তারপরেও কিছুই বললো না নীরব ছিলো।
–
এরপর একদিন তরী সামনা সামনিই অভ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, আর ভালোবাসি বলে দিলো, তারপরেও অভ্র কিছুই বললো না। যেনো মনে হলো ও কিছুই শুনেনি। তরী অনেক কষ্ট পেলো, এইভাবে আবার কয়েকদিন পর তরী অভ্রর সামনে গেলো, আবার ভালোবাসি বললো।
–
উওরে অভ্র বললো, আমাকে দিয়ে ভালোবাসা হবে না, তুমি যদি চাও আমরা বন্ধু হিসেবে থাকতে পারি। শুধু বন্ধু আর কিছু না, তরী মেনে নিলো।
–
এভাবে চলতে লাগলো, দুজন বন্ধুর মতোই থাকতো, কিন্তু কয়েকমাস পর তরী অভ্রর মাঝে অনেক বদলানো দেখলো। অভ্র তরীকে একটু বেশীই কেয়ার করতে লাগলো, তরী একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে না গেলে, অভ্র পাগলের মতো হয়ে যেতো, আর ফোন করে তরীকে বকতে শুরু করে দিতো, কেনো আসলো না, অনেক বেশীই সময় কাটাতো অভ্র তরীর সাথে, এইসব দেখে তরীর ও ভালো লাগতো, তরী মনে মনে ভাবলো অভ্র হয়তো তরীকে ভালোবেসেই ফেললো। অভ্রর সাথেই বেশী সময় কাটাতো তরী, আর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে-বেড়াতো। তরী অভ্রর ব্যাপারটা বান্ধবীদেরকে বলে দিলো, তারা খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিলো কথাটা। আর নিবেই না কেনো? একটা মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কারো প্রেমে পড়তেই পারে। ভালো কাউকে বাসতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক।
–
এইভাবেই চলতে লাগলো, একজন অন্যজনকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা যেনো অসম্ভব হয়ে গেছে। একদিন সকালে তরীর খুব জ্বর হলো, তাই আর কলেজে যেতে পারলো না, তরী ভাবলো অভ্র আজও ফোন করে বকবে, কিন্তু নাহ! কোনো ফোন আসেনি অভ্রর। তরী কিছুটা অবাক হলো, এরপরে ও নিজেই ফোন দিলো, কিন্তু ওর নাম্বার টা বন্ধ বললো।
–
তরী মনে মনে ভয় পেলো ছেলেটার কিছু হলো না তো? পরদিন সকালে তরী কলেজে গেলো, কিন্তু তরী হতাশ হলো। অভ্র কলেজে আসে নি, ওর নাম্বারটাও বন্ধ। তরী কি করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করে ছেলেটার কি এমন হলো?
–
এর প্রায় নয় দিন পর অভ্র কলেজে আসলো, তরী দৌড়ে গেলো, আর জিজ্ঞাসা করলো, তোমার কিছু হয়নি তো? অভ্র কিছু বললো না, শুধু বললো, কালকে সকাল সাতটায় আমাদের প্রিয় সেই জায়গাটায় এসো তুমি, আমি অপেক্ষা করবো। তরী বললো, কি বলবা এইখানে বলো এখন।
–
অভ্র উওরে কিছুই বললো না, চলে গেলো। তরী ও বাড়ি ফিরে আসলো, আর ভাবতে লাগলো কি এমন কথা বলবে অভ্র? এইসব ভাবতে ভাবতে সকাল ও হয়ে গেলো, তরী সেই জায়গাটার দিকে রওনা হলো, ওইখানে পৌছে তরী থমকে গেলো, এখনো সাতটা বাজার বাকি অনেক, অথচ অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। তরী পেছন থেকে গিয়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরলো, আর বলতে লাগলো অনেক ভালোবাসি তোমায়।
–
অভ্র তরীর মুখ টা চেপে ধরলো, আর বললো, আমাকে ভালোবেসো না, আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসতে পারবো না। আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি। আমি ওকে কথা দিয়েছি ওকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসবো না আমি। তুমি আমাকে ভালোবাসো জেনেও এই কারণে নীরব ছিলাম আমি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো। এই কথা বলেই অভ্র চলে গেলো, একবারও পিছনে তাকালো না। তরী মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, আর চিৎকার করেই কাঁদতে লাগলো।
–
তারপর থেকে তরী আর কলেজে যেতো না, রুমের ভেতরই বসে থাকতো, আর কাঁদতো, এর কয়েকদিন পর তরীর বান্ধবীরা আসলো, আর তরীকে জিজ্ঞাসা করলো সব কিছু ঠিক আছে তো? তরী সব কিছু বললো, তারপর ওরা বললো, যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন মন খারাপ করে কি করবা। স্বাভাবিক ভাবেই থাক।
–
উওরে তরী শুধু বললো…
“সে আমার কাছে এসেছিলো, কভু ভালোবাসেনি “
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা