প্রপোজের পর

প্রপোজের পর

“”নদীর তীরে কলসি করে পানি নিতে এল ঋতু। হঠাৎ দেখল কিছুটা দূরে নদীর পানিতে কিছু একটা ভাসছে। ঋতু তার বাবাকে ডাক দিল। গ্রামের মানুষ এসে নদীর পাড়ে নিয়ে এল।
আরে, এ তো একটা ছেলে!!!! ঋতুর বাবা গ্রামের কবিরাজ।
ঋতুর বাবা চেক করে বলল, “বেচে আছে।” ঋতুদের বাসায় নিয়ে ঔষুধ দেয়ার ৬ ঘন্টা পর ছেলেটির হুশ ফিরলো।
জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানতে পারল। ছেলেটি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
কিছু কাজের জন্য ঋতুর বাবা গ্রামের বাইরে গেলেন। ছেলেটির দেখাশোনার দায়িত্ব ঋতুর ওপরই পড়ল।

> এইযে ভাত খেতে আসুন। (ঋতুর ছেলেটিকে বলল) ছেলেটি ভাত খেতে বসল।

আচ্ছা আপনার নামটাও কি আপনার মনে নেই? ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে “না” ইশারা করল।
নাম ছাড়া মানুষ পশুর মত। আমি আপনার একটা নাম দেই? যদি আপনার আপত্তি না থাকে।
ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। তাহলে আজ থেকে আপনার নাম উম্মম্মম্মম (কিছুক্ষণ ভেবে) সাগর। পছন্দ হয়েছে? ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে “হ্যা” ইশারা করল।
কথা বলতে কি লজ্জা লাগে? মানুষের অন্যতম একটা পরিচয়ই তো হল তার মনের ভাব।
– জ্বি আচ্ছা।
ঋতু সাগরের দেখাশোনায় কোনো কমতি রাখে না।
একদিন সকালে। এইযে, একটা সাহায্য করতে পারবেন?
– জ্বি বলুন। > বাবা তো গ্রামের বাইরে গিয়েছেন। ধান গুলো যদি এখন সিদ্ধ করা না হয় তবে নষ্ট হয়ে যাবে। যদি আপনি আমার একটু হেল্প করতেন।
– জ্বি চেষ্টা করব।
সাগর অনেক কষ্ট করে কাজ গুলো করল। ঋতুও যতটা পেরেছে সাগরকে সাহায্য করেছে।
ঋতুর খোলামেলা চলাফেরা ও বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবটাকে সাগর ভালবাসতে শুরু করল।

আচ্ছা আপনি সবসময় চুপচাপ থাকেন কেন? মনের মধ্যে কি কোনো কথা উঠে না? – উঠে। > তাহলে কথা বলেন না কেন? কথা বললে মন হালকা হয়।
– আপনি রাগ করবেন না তো? > না করব না।
– আমি আপনাকে ভালবাসি।
ঋতু স্তব্ধ হয়ে গেল। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।
– আপনি চুপ কেন? কিছু বলুন। > ইয়ে মানে আমার কাজ আছে। চুলায় ভাত বসানো আছে। পুড়ে যাবে।
কথাটা বলে ঋতু চলে গেল। চুলার ঘরে বসে বসে ঋতু সাগরের কথা ভাবছে। ছেলেটা ভদ্র। তা না হলে বাবা নেই। আমি একা তবুও ছেলেটা কখনো অন্য নজরে তাকায়নি। ঋতু মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল। আগে বাবাকে বলবে তারপর বাবা যা করেন। প্রপোজের পর থেকে ঋতু সাগরের সম্মুখীন হলেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মুখ থেকে কথা বের হতে চায় না।

একদিন নদীর পাড়ে ঋতুর এক বান্ধবী বলল ~ নদীর ধারে কুড়িয়ে পাওয়া ছেলেটি নাকি তোকে ভালবাসে? > তোকে কে বলেছে? – ছেলেটা আমার ভাইকে বলেছে। আমার ভাই আমাকে বলেছে। . ঋতু দৌড় দিয়ে বাড়িতে আসলো। দেখল ছেলেটা কাঠ কাটছে। . ঋতু ঘন ঘন নিশ্বাসে বলল > আপনি আমাকে ভালবাসেন এই কথাটা অন্য জনকে বলেছেন কেন? – আপনিই তো বলেছিলেন মনের ভাব প্রকাশ করতে। > হ্যা তবে এই কথাটা আর কাউকে বলবেন না। . সাগরের সুন্দর ব্যবহার, ভদ্রতা ও বাচ্চা স্বভাবটাকে ঋতুও ভালবেসে ফেললো। . এদিকে ঋতুর বাবাও চলে এল। ঋতু সুযোগ বুঝে তার বাবাকে বলল, সে সাগরকে ভালবেসে ফেলেছে।

= দেখ মা, আমরা ছেলেটা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। যদি কখনো ওর স্মৃতি ফিরে আসে। তবে ও এসব ভুলে যাবে। . কথা গুলো শুনে ঋতুর মন ভেংগে গেল। অন্যদিকে দিন যত যাচ্ছে ঋতু ততই সাগরের প্রতি দূর্বল হচ্ছে। অবশেষে মেয়ের সুখের জন্য ঋতুর বাবা তাদের বিয়ে করিয়ে দিলেন।

সুখেই যাচ্ছে তাদের দিনকাল। এক সকালে ঋতু সাজছে। আজ সাগরকে নিয়ে গ্রাম ঘুরবে। হঠাৎ সাগর এসে জড়িয়ে ধরল। . > কিছু লাগবে? – এক চিমটি ভালবাসা।

ঋতু চিমটি দিয়ে বলল, “হয়েছে?” সাগর উহ করে উঠল।
– খুব দুষ্টু হয়ে গেছ। > তুমিও। আগে তো কথাই বের হত না।
– তুমিই শিখিয়েছো। > আচ্ছা তুমি কখনো আমায় ভুলে যাবে নাতো?

সাগর ঋতুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “কখনোই না।” সেদিন দুজন মিলে সারা গ্রাম ঘুরে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরলো। মেয়েকে খুশি দেখে বাবাও খুশি।

কিছু মাস পর > এই শুন। – বল। > আমাদের ভালবাসা দুনিয়াতে আসছে।
– মানে? > মানে হল আমি ……… মা হতে চলেছি। . কথাটি বলে ঋতু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। খুশি আত্মহারা হয়ে সাগর বলল – Wow! That’s great news. > মানে? (ঋতুদের গ্রাম একটি অজ পাড়া গ্রাম)

সাগর কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলল – ও কিছু না। > তুমি খুশি হওনি?
– এত খুশি হয়েছি যে বলার বাইরে। . কিছু মাস পর এক সকালে, ঋতু সাগরকে উঠানোর জন্য জানালার পর্দা সরিয়ে দিল যার ফলে সূর্যের আলো এসে সাগরের চোখে পড়লো।

– Who the hell is this? (রাগন্বিত হয়ে) ঋতু কিছুই বুঝল না। > কি হয়েছে তোমার?

– আপনি কে? অজানা ভয়ে ঋতুর মুখ নীল বর্ণের হয়ে গেল।
> কি বলছ এসব? – এই মেয়ে তোমার তো সাহস কম না আমাকে তুমি করে বলছো?

ঋতু দৌড়ে তার বাবাকে ডেকে আনলো। অতঃপর ঋতুর বাবা বলল, সাগরের স্মৃতিশক্তি ফিরে এসেছে। সাগরের আসল নাম, সোহেল।

ঋতু সাগরকে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বলল, > না এ হতে পারে না। তুমি আমাকে ভুলতে পার না। এখন আমার সন্তানের কি হবে? . সাগর কোনো কিছুই শুনতে রাজি না। . ঋতুর বাবার কথামতো নৌকা প্রস্তুত করা হল। সোহেল যেখানে যেতে চায় সেখানে রেখে আসতে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আগামীকাল যাবে।

সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঋতু নিশ্চুপে সোহেলের রুমে এসে সোহেলের পায়ের কাছে বসে কাদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সোহেল জেগে উঠল।
– আপনি এখানে? > শেষবারের মত তোমাকে দেখতে এসেছি। – আমার সাথে শহরে যাবে? > তোমার কি কিছু মনে পড়েছে? – নাহ। তবে স্বপ্নের মধ্যে তোমার চেহারা ভেসে উঠছে। যদি আমার সাথে থাকো তাহলে কিছু মনে আসতে পারে।

ঋতু রাজি হয়ে গেল। পরেরদিন সকালে ঋতু তার বাবাকে রাজি করিয়ে সোহেলের সাথে রওনা দিল। অনেক দূর যাত্রার পর সোহেল ঋতুকে একটা বিশাল বাড়িতে নিয়ে এল। অন্যদিকে সোহেলকে দেখে বাড়ির সবাই ভীষণ খুশি। সোহেলের বাবা ঋতুকে দেখে জিজ্ঞেস করল, মেয়েটি কে?
– তোমাদের বউ মা।
সোহেলের মুখে কথাটা শুনে ঋতু ভীষণ অবাক হল। শ্বাশুড়ী ঋতুকে ভিতর রুমে নিয়ে গেল। সোহেল সবাইকে সব খুলে বলল। সবাই মেনেও নিল। সোহেল ঋতুর রুমে এলো। ঋতু তখনো কাদতেছে।

– তুমি কাদছো কেন?
> কি হচ্ছে এসব? সোহেল সব খুলে বলল। সে একটা নদী যাত্রার সময় জাহাজ ডুবে যায়। সোহেল স্মৃতিশক্তি হারায়নি। সে নাটক করেছিল। কারণ সে কিছুদিন মনোরম পরিবেশ থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেই ঋতুকে ভালবেসে ফেলেছে। তাই বিয়ে করেছে। কিন্তু সন্তানের কথা শুনে সোহেল নিজ পরিবেশে ফিরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ সোহেল চায় তার সন্তানও সেই সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করুক যা সোহেলও পেয়েছে। তাই সোহেল স্মৃতিশক্তি ফিরে আসার নাটক করেছে। ঋতু বোকার মত তাকিয়ে আছে।

> কিন্তু আমি তো আমার বাবাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
– যখন মন চাইবে তখনই নিয়ে যাব। > তুমি এমন কেন করলে?
– সবকিছু জন্য স্যরি। তবে এসব কিছুর পেছনে একটাই উদ্দেশ্য তোমাকে ভালবাসি এবং আমাদের সন্তানকে সকল সুযোগ সুবিধা দিতে চাই। ঋতু সোহেলকে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বলল > আর কোনো নাটক করো না। আমি সইতে পারব না।
– নারে পাগলী। আর না। তোমাকে পেয়ে গেছি। সেটাই নাটকের পুরষ্কার। কিছু মাস পর তাদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। সুখে শান্তিতেই দিন কাটাতে লাগল তারা। জীবনটা খুবই নাটকীয়। কখন কোন মোড়ে পৌছে দেয় তা বুঝা মুশকিল………!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত