লুকচুরি ভালোবাসা

লুকচুরি ভালোবাসা

অনেক দিনের কথা। গল্পটা দুইজন কিশোর কিশোরীর।(প্রথম গল্প তাই একটু uneasy feel kortesi)…
ছেলেটির নাম ছিলো আবির মেয়েটির নাম ছিলো অহনা।তারা একই স্কুলে পরতো।কিন্তু কেউ কাউকে চিনেনা।কখনো পর্যন্ত কেও কারো মুখ দেখেনি।
তারা যে একই স্কুলে পড়তো তাও জানেনা। তাদের স্কুলে একটি ক্যান্টিন আছে ছাত্র-ছাত্রীরা ১-২ ঘন্টা পর পর। ঠিক আবির ও যেতো দ্বিতীয় ঘন্টার পর।
কারণ অবশ্য ছিলো। এই সময়টা ছিলো গনিত ক্লাস।যা তার মোটেও ভালো ললাগতোনা। সে ভাবতো এই গনিত যযদি ননা তৈরী হতো তাহলে ভালোই হতো।আর এই গনিত ক্লাস টাই নিতো ছিলো সাইদুল হক স্যার। আবির প্রতিদিন ই ক্লাস শূরু হওয়ার ৫ মিনিট পর ক্লাসে যেতো।আর এই সময়টা সে ক্লাসের বাইরেই থাকতো।তো একদিন আবির যথারীতি ক্লাস ফাকি দিয়ে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ তার চোখ পরলো একটা মেয়ের দিকে।সে এর আগে কখনো এই মেয়েকে দেখেছে বলে মনে হয়না। তবে দেখতে ভারি সুন্দর।ঠোঁটের কোণায় ছোট্র একটি তীল। চুল গুলা লম্বা। তাকে দেখে যেনো চোখ আটকে গেছিলো আবিরের। হঠাৎ করেই মেয়েটি যেনো কোথায় চলে যায়। আবির খুঁজতে থাকে কিন্তু পাইনা।তাই সে ক্লাসে ফিরে আসে।ক্লাসে ঢুকতেই স্যার বললো।
স্যারঃ-তা বাবা ঘুরাঘুরি হয়ছে?
আবিরঃ-আমতা আমতা করে বললো স্যার কলম আনতে গিয়েছিলাম।
স্যারঃ- ঠিক আছে তোমার আসনে গিয়ে বসো।
আবিরও চলে গেলো তার আসনে কিন্তু তার চোখের সামনেওই মেয়েটির মুখটা ই ভাসছে।কিন্তু কি আর করার নাম জানেনা।কোন ক্লাসে পরে তাও জানেনা।
কিন্তু তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো যে স্কুল ছুটির সময় সে দারিয়ে থাকবে।তারপর মেয়েটিকে আবার একপলক দেখে নিবে।অনেক ছাত্র-ছাত্রীর ভিতরে সে তাকে খুঁজতে থাকে।অবশেষে পেয়ে গেলো।অজান্তেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠলো।সে মেয়েটির দিকে চেয়ে আছে কিন্তু মেয়েটি রোবটের মতো চলে যেতে লাগলো।পরদিন স্কুলে এসে আবির তার কাছের বন্ধু রবিনকে সব কিছু খুলে বলে।আর আবির তার কাছ থেকে জানতে পাই যে মেয়েটার নাম অহনা অষ্টম শ্রেণীতে পরে।আবির প্রতিদিন মেয়েটির স্কুলে আসার অপেক্ষায় থাকতো।তাই সে প্রতিদিন সকাল ৯ঃ০০ টায় এসে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। মেয়েটি প্রতিদিন ৯ঃ১০ এ স্কুলে আসতো। আবির প্রতিদিন মেয়েটির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো।স্কুলে আসার আগে এবং স্কুল ছুটির পর।
প্রায় একমাস যাবার পর অহনার প্রেমে পরে যায় আবির।আর অন্যদিকে আবিরকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অহনার মনের মধ্যেও চলে যায় আবির।সে মনে মনে বলে কে এই ছেলে নাম জানিনা প্রতিদিন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে অসহ্য। এভাবে যেতে যেতে অহনার মনের মাঝেও আবির একটু জায়গা করে নেই।আবির এর এক বান্ধবীকে অহনার নাম বলে।সে অহনাকে গিয়ে বললো তোমাকে একটা ছেলে পছন্দ করে নাম আবির।সে বলে আমি দেখেছি ওই ছেলেটি প্রতিদিন আমি যেই রাস্তা দিয়ে আসি ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এভাবে চলতে থাকে আরো ছয়মাস আবির রুটিন মতো তার কাজ করতে থাকে। দেখতে দেখতে আবিরের টেষ্ট পরীক্ষা চলে এলো সে পরীক্ষা দিলো পাশ করেছে। টেষ্ট পরীক্ষার পর আর ক্লাস হয়নি তাই ১০ম শ্রেনীর ক্লাস টা ফাকাই থাকতো।যে যার বাড়িতে বসে পড়ালেখা করতো আবির ও তার ব্যতিক্রম না কিন্তু অহনা হঠাৎ আবিরকে দেখতে না পেয়ে অস্থীর তার মনেও আবিরের জন্য ভালো লাগা শুরু হয়ে গেছে। সে প্রতিদিন স্কুলের সামনে দারিয়ে থাকতো কিন্তু আবিরকে আর দেখতে পেতোনা। আবিরের পরীক্ষার আর মাত্র একদিন বাকি সে অনেক মনযোগী পড়ায়। সবগূলো পরীক্ষা ভালোই হলো। ততদিনে অহনা ৯ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। আবিরের অবসর সময় তাই আবার সে স্কুলের সামনে ঘুরাঘুরি করতো। কারণ আবিরের বাড়িটা ছিলো স্কুলের থেকে ৫ মিনিটের রাস্তা।
সে মনে মনে বলতো অহনা যদি প্রতিদিন আমাদের বাসার সামনে দিয়ে আসতো।
একদিন দেখে যে অহনা তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে।আবির তো অবাক।পরে সে জানতে পারে অহনা এইদিকে প্রাইভেট পরতে আসে।তাই মাঝে মধ্যে আবির আর অহনার চোখাচুখি হতো পরক্ষনেই চোখ নামিয়ে নিতো। আবির বুঝতে পারে অহনাও তাকে ভালোবাসে। এইভাবে চলতে থাকে তিনমাস আবিরের রেজাল্ট বের হয়েছে।সে ৪.৯৮ পেয়েছে রেজাল্ট যেহেতু ভালো তাই সে ভালো কলেজে চান্স ও পেয়েছে।
হোস্টেল থেকে পড়ালেখা করবে যাওয়ার আগে সে অহনাকে চিঠি লিখেঃ-
অহনা,
তোমাকে হঠাৎ দেখেছিলাম তাই ভালো লেগে গিয়েছে।তোমার ঠোটের তীল টা অনেক মায়াবী যেনো তোমার সৌন্দর্য আরো বারিয়ে তোলেছে। ভালো থেকো।
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ইতি,
(আবির)

অহনা চিঠি পেয়ে মহাখুশী সে চিঠির উত্তর লিখে আবিরকে দিবে বলে অনেক খুজাখুজি করে কিন্তু পাইনা। আর এই দিকে আবির নতুন কলেজে ভর্তি হয়ে। কলেজ জীবনে পা দেয়।প্রতিনিয়ত তার অহনার কথা মনে পরতো। তাই সে ডাইরিতে সব লিখে রাখতো। আর অন্যদিকে অহনাও আবিরের পথ চেয়ে থাকতো কিন্তু আবির আর আসেনি।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ছয় বছর।
আবির অহনার ভালোবাসাও অনেক গাঢ়
হতে লাগলো। আবির কমার্সের স্টুডেন্ট থাকায়। বি,বি,এ, এম,বি,এ শেষ করে একটা ব্যাংকে চাকরি পাই। অন্যদিকে অহনা বি,বি,এ ২য় বর্ষ এ পদার্পন করেছে।সে আবিরের জন্য আজও পথ চেয়ে আছে। নিরবে চোখের জল ফেলে।
এদিকে বাড়ি থেকে আবিরের বিয়ের চাপ আসে পরিবারের জুড়াজুড়িতে সে বিয়ে করে ফেলে এক অজানা অচেনা মেয়েকে। তার সাথে এমনটা হবে সে ভাবতে পারেনি।তাই সে বাসর ঘরে ঢুকে ওমনি তার বৌ তাকে সালাম করতে আসে তারপর আবার খাটে বসে যায়।
আবির ঘুমটা সরিয়ে বৌ কে দেখতে লাগলো কিন্তু তার মনে হচ্ছে চোখ তীল সব কিছুতেই তার ছয় বছরের মায়া লুকিয়ে আছে। কিন্তু আবির চিনতে পারেনি তাকে অহনাও আবিরকে চিনতে পারেনি। পরদিন আবির ওঠে অফিসে চলে যায়। আর অহনাও বাড়ির সব জিনিস গোছাতে শুরু করে দিয়েছে।
হঠাৎ তার চোখ আটকে গেলো একটা ডাইরির দিকে সে তা হাতে নিলো। ডাইরিতে লেখা একটি ছেলে একটি মেয়ের গল্প। অহনা তা হাতে নিয়ে পরতে থাকে।
সব কিছুই তার সাথে মিলে যাচ্ছে।
তারপর যখন ডাইরিতে তার নাম দেখলো
সে আরো অবাক হয়ে গেলো। অজান্তেই তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
কারণ সে তার হারিয়ে ফেলা ভালোবাসা ফিরে পেয়েছে। বিকেলে আবির বাসায় আসলো।
তারপর ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেতে বসলো খাওয়াদাওয়া করে যখন ঘুমাতে যাবে তখন অহনা বলে আবিরকেঃ-
অহনাঃ- আপনি কি কাউকে ভালোবাসতেন?
আবিরঃ- হঠাৎ এই কথা??
অহনাঃ- আগে বলেন ভালোবাসতেন?
আবির ঃ-হুম অনেক ভালোবাসতাম কিন্তু সে আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে ছয় বছর আগে।তারপর আবির অহনাকে সব খুলে বলে।
অহনা আবিরের কথা শুনে ব্যাগ থেকে চিঠি বার করে আবিরকে দেখায়।
অহনাঃ- দেখেনতো এইগুলা চিনেন কিনা?
আবির চিঠি হাতে নেয় আর পড়তে থাকে আরে এতো আবিরের লেখা যা সে অহনাকে দিয়েছিলো। আবির বললো এই লেখা তোমার কাছে এলো কীভাবে?
অহনাঃ- বারে আমার কাছে দিছেন আর আমার কাছে থাকবেনা?
আবিরঃ- কিন্তু তোমার নাম ফারিয়া?
অহনাঃ- হুম (ফারিয়া আফরিন অহনা)
আবিরঃ- এই কথা শূনার পর আবিরের চোখ দিয়ে জল গঢ়িয়ে পরে।কারণ সে তার পুরনো ভালোবাসা ফিরে পেয়েছে।
অহনাকে বললো – এখনো ভালোবাসো আমায়???
অহনাঃ- হুম অনেক ভালোবাসি বলেই কান্না করতে থাকলো।আবিরকে বললো ছয় বছর কোথায় ছিলে?????
তারপর আবির সব খুলে বলে অহনাকে।
দুজনের চোখেই জল এই জল কিছু প্রাপ্তির জল। হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার জল। অটুট থাকুক তাদের ভালোবাসার বন্ধন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত