– একটা পাপ্পি দাও তো। (আমি)
– নাহ এখন হবে না। (নীলাভা)
– কেনো গো?
– সারারাত জ্বালিয়েছো। এখন যাও তো ফ্রেশ হয়ে আসো। অফিসে যেতে হবে তো নাকি?
– আগে একটা পাপ্পি দাও তারপর।
– নাহ হবে না। ছাড়ো তো এখন।
নীলাভা চলে গেল আমাকে ধাক্কা দিয়ে। আমি মুচকি হেসে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। নীলাভা হল আমার বউ। আমাদের বিয়ে হয়েছে দুই বছর হতে চললো। মেয়েটা আমাকে বড্ড ভালোবাসে। আর আমিও তাকে অনেক ভালোবাসি।
আর কিছু না ভেবে গোসল করতে চল গেলাম। কারন আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই।
তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে খাবার টেবিলের সামনে আসলাম। দেখলাম নীলাভা চুপ করে বসে আছে। আমি বললাম…
– আজ না খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে।
– কিসের মিষ্টি?
– তোমার ঐ ঠোটের মিষ্টি। দাও না একটা।
– ফাজিল, তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো।
– তরকারিতে ঝাল দিয়েছো তো?
– কেনো?
– আরে কেনো মানে? ঝাল এর শেষে তো মিষ্টিই পাবো তাই না?
– চুপ,,তাড়াতাড়ি খাও।
কি আর করার, চুপচাপ বসে খাচ্ছি আমি। খাচ্ছি আর নীলাভার দিকে তাকাচ্ছি। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আমার খাওয়া দেখে রোজ। আমি এত খাইয়ে দিতে চাই কিন্তু সে বলে আমি খাবো আর সেটা সে তাকিয়ে দেখবে পরে খাবে। এটা কোনো কথা?
মেয়েটা আসলেই আমাকে ভালোবাসে। হঠাৎ করেই পুরোনো কিছু কথা মনের মাঝে এসে কড়া নেড়ে গেল। খাচ্ছি আর ভাবছি পুরোনো কিছু কথা…
..
– নিলয়, তোমার সাথে আমার আর রিলেশন রাখা সম্ভব না। প্লীজ আমাকে ভুলে যাও। (অদ্রিতা)
– কেনো? হঠাৎ এ কথা বলছো কেনো? (আমি)
আমার কথা শুনে অদ্রিতা চুপ হয়ে গেল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে। অদ্রিতাকে অনেক ভালোবাসি আমি। সেও বাসে তবে কেননা আজ সে এমন কথা বলছে।
আজ বিকেলে সে ফোন দিয়ে ডেকে এনে কথাটি বললো। আমি প্রথমে ভাবছিলাম সে মজা করছে। কিন্তু না সে সিরিয়াস।
– কি হল কিছু বলো..? (আমি)
– কারন, তোমাকে আমি ভালোবাসি না নিলয়।
– মানে?
– হুমম,, মানে তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি আমি।
– কি সব বলছো অদ্রিতা। আমাদের রিলেশনের ১ বছর হতে যাচ্ছে আর তুমি কিনা এসব বলছো? তাহলে সবটা কি তোমার অভিনয় ছিল?
– হুমম অভিনয় ছিল।
– কেনো? কেনো এমন করলে তুমি?
– দেখো, আমি ভালোবাসি কাব্যকে। ওর সাথে আমার বিয়েটাও ঠিক। কিন্তু ওর সাথে এক বছর আগে ঝগড়া হয়। আমরা রিলেশনের ব্রেকআপ করি। তারপর তোমাকে দেখি আর তোমার সাথেই রিলেশনে জড়ায়। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে কখনই ভালোবাসিনি। সবটাই ছিল অভিনয়।
– বাহ অদ্রিতা বাহ,,নিজেই এসে বলেছিলে ভালোবাসি। আমি তো তোমাকে ইগনোর করতাম তবুও তুমি বলতে ভালোবাসো আর আজ কিনা।
– হুমম বলতাম,,কারন তুমি ক্লাসের ফার্স্ট বয়। আর তাছাড়া কারো সাথে কথা বলতে না। তাই তোমাকে টার্গেট করি। আর এখন কাব্য ফিরে এসেছে তাই চাচ্ছি আমাদের রিলেশনটা এখানেই সমাপ্তি হোক।
আমি কিছু বললাম না আর। চোখ দিয়ে যে কখন পানি পড়ে গেল বুঝতেই পারিনি। চুপ করে হেটে চলে আসতে যাবো তখনি ওর কাছে সরে গেলাম…
– কিছু বলবে? (অদ্রিতা)
– কি আর বলবো, ভালো থেকো।
– হুমমম
– আর শোনো…
কিছু বললাম না। ঠাসস করে দুই গালে কষে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে হন হন করে হেটে চলে আসলাম। আসার আগে একবার পিছন ঘুরে তাকালাম। দেখি সে গালে হাত দিয়ে বসে বসে কাঁদছে। মুচকি একটা পৈশাচিক শান্তির হাসি দিলাম। কারন হাসিটা বিশ্বাঘাতককে শাস্তি দেবার জন্য অজান্তেই বের হয়ে গেল।
তারপর চলে আসি যশোরের সেই কলেজ ছেড়ে ঢাকাতে। এখানে এসে নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবুও নিজেকে শক্ত করেছি। একদিন পাশের বাড়িতে ভাড়া আসে নীলাভারা। তারপর আসতে আসতে পরিচয় হয় নীলাভার সাথে। সেটা না হয় অন্যদিন বলবো। এরপর একদিন আম্মু এসে নীলাভাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। তখন সবে চাকরিতে জয়েন করেছি। তারপর নীলাভা হয়ে যায় আমার বউ।
.
– এই কি ভাবছো। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো? (নীলাভা)
নীলাভাকে অদ্রিতার ব্যাপারে জানিয়েছিলাম। সবই সে মেনে নিয়ে আমাকে ভালোবেসেছে। বিশ্বাস করার ক্ষমতা জুগিয়েছে।
– এই যে মি. কথা কি কানে যাচ্ছে না?
– ওহ সরি সরি
– না খেয়ে বসে বসে কি ভাবছেন শুনি?
– নাহ কিছু না, ভাবছি আজকার ঘুরতে যাওয়া হয় না আজ অফিস থেকে এসে ঘুরতে যাবো।
– তা স্যার, আগে তো অফিসে যান।
– হুমমম
তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। ঠিক তখনি শুনতে পেলাম কেউ ওয়াক ওয়াক করছে। দৌড়ে ওয়াশ রুমের মধ্যে গেলাম দেখি নীলাভা বমি করছে।
– কি হয়েছে গো তোমার? (আমি)
– ও কিছু না। তুমি রেডি হয়েছো তো বের হও অফিসে যাবে তো নাকি?
– হুমম তা বমি করছিলে কেনো?
– বললাম না তুমি বুঝবে না। চলো তোমাকে গেটের কাছে পৌছে দিয়ে আসি।
– আচ্ছা চলো।
গেটের কাছে আসলাম নীলাভার হাত ধরে। গেটের কাছে এসে ওর কপালে ছোট্ট করে একটা ভালোবাসার চিহ্ন আকালাম।
নীলাভা লজ্জ্বায় মাথাটা নিচু করে নিল। আমি বললাম…
– বমি হচ্ছে যখন তখন ঔষধ খেয়ে নিও।
– এ বমি ঔষধ খাইলেও সারবে না।
– কেনো?
– কিছু না, আসার আগে কিছু আচার কিনে নিয়ে এসে তো?
– কেনো? হঠাৎ আঁচার খাওয়ার ইচ্ছে হল কেনো?
– উফফ, তুমি এত প্রশ্ন করো কেনো? যা বললাম তাই করবা। অনেক বেশি করে কিনবা কিন্তু আচার।
– হঠাৎ এত আচার খাবার কি হল?
– আমি বলতে পারবো না গাধা। তুমি বুঝো না।
– আমি গাধা?
– হুমম,,আচার আনবে বলে দিলাম।
– আচ্ছা বেশ, এখন আসি। আল্লাহ হাফেজ।
– দেখে শুনে যাবে।
আমি একটু হেটে এসে রিকশাতে উঠলাম। রিকশাতে উঠছি আর ভাবছি নীলাভার বমি আর আচার খাওয়ার কথা। কি হয়েছে? সে তো বলছেই না।
এ প্রশ্নের উত্তর কে দিবে আমায়? নাহ অফিসে পৌছে একবার আম্মুকে ফোন দিয়ে জিঙ্গাসা করতে হবে “মেয়েরা আচার খাই কেনো”
……………………………………………..(সমাপ্ত)…………………………………………..