— ফার্স্ট ইয়ার এর আজ দুই মাস হয়ে গেলো আর আজ আপ্নি বলছেন আপু,ফার্স্ট ইয়ার এর science এর রুম কোন টা
— সরি আসলে আপু আমি ভর্তি হওয়ার পর থেকে একটা কারনে এতদিন কলেজে আস্তে পারিনি
— ও আচ্ছা নাম কি?
— কার আমার?
— না আপনার পাশে যে ছায়া টা পড়ে আছে তার ( রাগ নিয়া)
— আমার নাম সিয়াম
— আচ্ছা চলেন(বলে হাটা দিলো)
আমি ও কিছু না বলে পিছন দিয়ে হাটতে লাগলাম।ভর্তির পর ঢাকা আন্টির বাসায় বেড়াতে গেলে হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২ মাস আর কলেজে আস্তে পারিনি।আজ প্রথম কলেজে আসলাম( যদি ও সবার ২ মাস পার হয়ে গেছে)
–এই যে এটা আপনার ক্লাস ( অন্যমনস্ক ছিলাম তখন কথা টি বললো)
— জি ধন্যবাদ, যদি কিছু মনে না করে আরেক টা help করতে পারবেন।
— আবার কি? (মেয়েটি)
— ফার্স্ট ইয়ার এর পদার্থ শিক্ষক নিজাম স্যার এর রুম তা একটু দেখিয়ে দিতে পারবেন(আমি)
–কেনো,,,,,,, আচ্ছা চলেন(মেয়েটি)
আমি ও কোন কথা না বলে পূর্বেকার মত কোন কথা না বলে নিরবে পদানুসরণ করতে লাগলাম।কিছুক্ষন পর একটা রুমের সামনে এসে বললো,,
— এটা শিক্ষক দের রুম,আর ঐ যে উনি নিজাম স্যার।( একজনকে দেখিয়ে)
— ধন্যবাদ,, আপনার নাম টা কি জানতে পারি?(আমি)
–,,,,,,, আমি লুবনা( কিছুক্ষণ চুপ থেকে)
জি আচ্ছা,, বলে আমি,রুম এ ডুকে স্যার এর কাছে গেলাম,সে ও চলে গেল।
— আস সালামুয়ালাইকুম স্যার।
— ও আলাইকুমুস সালাম,কে তুমি? ( স্যার)
— স্যার আমি সিয়াম,আব্বু আপনার সাথে দেখা করতে বলে ছিলো।(আমি)
— ও তুমিই সিয়াম,আমানত স্যার এর ছেলে,ভালো আছো।
–জি স্যার আল্লাহর রহঅমতে ভালো আছি।
— আচ্ছা আমই পিওন কে বলে দিচ্ছি তোমাকে ক্লাস এ নিয়ে যেতে,আজ তোমাদের সাথে ক্লাস আছে তখন কথা বলবো।(এই বলে পিওন কে ডাকতে যাচ্ছিলেন)
— থাক স্যার আমিমি যেতে পারবো,যাই স্যার, আস সালামুয়ালাইকুম
— আচ্ছা ও আলাইকুমুস সালাম
২
ক্লাসে এসে দেখলাম মাসাল্লাহ সব্বাই কথা বলছে আর শয়তানি করছে,আমি একটু ইনোসেন্ট ভাব নিয়া চতুর্থ সারির দিকে যেয়ে একটা সিটে বসলাম( যদি ও আমি এতটা ইনোসেন্ট না)
— তোমাকে তো চিনলাম না,নতুন নাকি?( পাশের একটা ছেলে)
–জি হ্যা আমি নতুন, যদি অ ২ মাস আগেই ভর্তি হইছি।(আমি)
— আচ্ছা বাদ দাও আমি আফনান তুমি?
— আমি সিয়াম
আফনানের সাথে এই সেই কথা বলতে বলতে কেন জানি পিছনে তাকালাম,অবাক হয়ে দেখলাম লুবনা দাড়িয়ে।
— এই যে লুবনায়ায়ায়া(আমি)
কিছুক্ষণ পরে এ দিকে এসে বললো
— কিছু বলবে?( লুবনা)
— আপ্নি যে আমার ক্লাসে আগে বলেন নি যে?(আমি)
— এমনিতেই
— আচ্ছা বাদ দিন, এই যে এ হলো আফনান(আফনান কে দেখিয়ে)
— আমি তোমার মতো নতুন না এইডারে চিনি।।বলে হেসে দিলো
এমন সময় স্যার আসলেন ক্লাসে, আমরা ও যথারিতী ক্লাস করতে লাগলাম।প্রায় সাত, আট মিনিট পর রুমের দরজার পাশে একটা মেয়ে হাপাতে হাপাতে এসে বললো
— may i come in sir?
সবার মত আমি ও কৌতুহলবসতো দরজার দিকে তাকালাম, দরজার অপর পাশের মুখটার উপর চোখ পড়তেই ঘর্মাক্ত,ক্লান্ত আর একটু করুন চাহনিওয়ালা মুখটার উপর অজান্তেই ক্রাস খেয়ে গেলাম
— আরে মা,এতো দেরি হলো যে?(স্যার)
–স্যার একটু কাজ ছিলো(হাপাতে হাপাতে বললো মেয়েটি)
— আচ্ছা ঠিক আছে ভিতরে এসে বসো।(স্যার)
তাড়াতড়ি হেটে ভিতরে বসতে যাচ্ছিলো আর আমি হা করে দেখছি,আমার বাম পাশের ষষ্ঠ সারিতে একটা সিতে গিয়ে বসলো ঠিক লুবনার পাশে
— মেয়ে টা কে রে? (আমি আফনান রে জিজ্ঞাস করলাম)
— নাম সুমাইয়া, বাবা শিক্ষক,৩ ভাই বোন সে ২ নাম্বার,,,,,
— ওই শালা থাম,তোরে নাম জিজ্ঞাস করছি, ১৪ গোষ্ঠির পরিচয় দিতে বলি নাই(আমি)
— হি হি হি,,,,,,,, তবে তবে ভুলে ও সামনে আগাইও না,ব্লু কালারের হালকা মোটা ফ্রেমের চশমার সামনে কোন ছেলেই চোখে পড়ে না
— চিন্তা করিস না
— হয় হয়,,,আরেকটা কথা শুইনা রাখেন,তার পুরা নাম সুমাইয়া বিনতে নিজাম,আমগো নিজাম স্যার এর মাইয়া
— কি ক,,,,,,,,,,,,,,
শেষ করার আগেই স্যার ধমক দিয়ে ক্লাসে মনযোগী হতে বললেন।অগত্যা সোজা হইয়া বসে ক্লাস শুরু করলাম যদি ও মন টা আগের যায়গায়,,১,২,৩ বিষয় শেষ করার পর এক সময় নিজাম স্যার ক্লাসে আসলেন। এসেই প্রথমে আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ক্লাস শুরু করলেন।পদার্থের ৩য় অধ্যায় “নিউটনিয় বলবিদ্যা” পড়াচ্ছিলেন,এক সময় একটা প্রশ্ন করলেন সবাইকে অভাগ্যবসত কেউ পারে নাই প্রশ্ন টা,।আমি একটু জড়তার সহিত হাত টা উপরে তুললাম।
— কিছু বলবে(নিজাম স্যার)
— জি স্যার, আমি উত্তর টা পারি
সবাই একটু অন্যরকম চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিলো, স্যার ও
— বলো(স্যার)
ঠিক ঠাক উত্তর টা দিলাম
— তুমি তো ২ মাস কলেজে আসনি,আর পড়া টা ও তো গত ক্লাসে দিয়েছিলাম(স্যার)
— আসলে স্যার আমি ঢাকায় যাওয়ার সময় বই গুলো সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম,এবং এগুলা পড়েছিলাম।(আমি)
স্যার আমাকে দোয়া করলেন, আর বিভিন্ন কথা বলে যথারিতী ক্লাস টা আবার শুরু এবং শেষ করলেন।আর আমি উনার মেয়ের কথা।
৩
নতুন নতুন অনেক বন্ধু পেলাম,প্রতিদিন পড়া গুলো ভালো ভাবে করার চেষ্টা করতাম তাই স্যার রা ও খুব ভালো জানতেন। এসবের মধ্য দিয়েই সুমাইয়া কে ফলো করতাম,,মাঝে মাঝে তার সাথে কথা বলতে যেতাম কিন্তু অতি লজ্জার কারনে সেটা সম্ভব হয়ে উঠে নাই,তবু ও পিছু ছাড়তাম না।লুবনা আর আফনান এর সাহায্যে সব খোজ রাখতাম।দেখতে দেখতে ফার্স্ট ইয়ার তা শেষ হয়ে গেলো সবার মধ্যে খুব ভালো রেজাল্ট করে সেকেন্ড ইয়ার এ উঠলাম সবাই।সেকেন্ড ইয়ার এর মাঝের একটা সময় এ লুবনা আর আফনান এর সহযোগিতায় প্রথম প্রফোজ টা করলাম,,কিন্তু বালিকা কিছু না বলিয়া প্রস্থান করলো।ভাবলাম বাঙালি মেয়ে দুই একদিন মৌনাবলম্বন করিয়া তার পর কবুল বলবে।কিন্তু ভাগ্য খারাপ পর পর দুইবার করার পর বুঝতে পারলাম,গুনি জনের কথা টা আমারে পালন করতে হবে”একবার না পারিলে দেখ শতবার” তার পর আমি প্রতি সাপ্তাহে একবার করে প্রেম নিবেদন শুরু করলাম।সাত,আট বার যাওয়ার পর বালিকা মুখ খুলিলো
— দেখ আমি এই সময় কোন রিলেশনে যাবো না।
— কিন্তু কেনো????
— আমি পড়ালেখা শেষ করতে চাই
বলে বালিকা হেটে চলে গেলো।কিন্তু আমি ও দমবার পাত্র নয়।সময়সীমা আগের থেকে কময়ে তিন চার দিন পর পর ই প্রফোজ করতে লাগলাম। আর ঠিক এমনি এক সময় ভবিষ্যৎ শশুর মশায় এর দরবারে বিচার পড়িল।নিয়ম অনুযায়ী বিচার কার্য সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ডেকে পাঠালেন।অনেক বুঝিয়ে, বকা ঝকা দিয়ে এবার এর মতো বিদায় করলেন।কিন্তু ভুত মাথা থেকে গেলো না,সময়সীমা আরো কময়ে কাজ শুরু করলাম এর মাঝে আরো দুইবার বিচার হয়ে গেছে।তো একদিন তার ক্লাস শেষে সুমাইয়া কে দাড় করালাম
— দেখো এটাই আমার তোমাকে করা লাস্ট প্রফোজ আর করবো না,পিছু আসবো না শেষ বারই বলছি” দেবে কি তোমার নিল ফ্রেমের চশমাটা চোখ থেকে খুলে নিয়ে কাচের ধুলো মুছে দেওয়ার সুযোগ,দেবে কি ক্লান্ত অবসাদের সময় ভালোবেসে ক্লান্তি দূর করার সুযোগ ” বলে আর দাড়িয়ে না থেকে চলে আসলাম।
আর এর পরই চতুর্থ বারের মতো বিচার পড়লো,তবে এবার তাদের বাড়িতে বিচারালয়।একটু ভয়ে ভয়ে গেলাম।বাসায় যেয়ে দেখি শাশুড়ি আম্মা নাই,তবে ছোট শালা আর সুমাইয়া রে নিয়া, শশুর সোফায় বসে আছেন।
— তোমাকে কতো বার না করতেছি তবু কেনো বেহায়ার মতো পিছনে পড়ে আছ (সুমাইয়া)
–,,,,,,,,,,,,, মুখ টা নিচু,,,,,,
— আমাকে ভালোবাসতে হলে অনেক অপেক্ষা করতে হবে আমার পড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত, পারবে প্রথিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে(ভাঙা ভাঙা গলায় কথা গউউলো বলল
নিচু করা মুখটা উপরে তুলে পাশের দিকে তাকাল,স্যার একটা মুচকি হাসি দিলেন হয়তো এটাই ভবিষ্যৎএর কোন ভালো আভাস।আবার সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
— পারবো
আর এইই” পারবো” দিয়েই শুরু নতুন সম্পর্কের
………………………………………………….(সমাপ্ত)……………………………………………….