শুকলা/চিকলা

শুকলা/চিকলা

:-আপনি আমার ঘুড়ি কাটলেন কেনো?
:-আজবতো!আমি আপনার ঘুড়ি কাটলাম কখন?
:-আপনি না কাটলে কে কাটলো শুনি?পাশাপাশি ছাঁদে আমি আর আপনি ছাড়া আর কেউ ঘুড়ি উড়াচ্ছেনা।সো আপনিই কেটেছেন।
:-কোনো প্রমান আছে আমি আপনার ঘুড়ি কেটেছি?
:-হ্যা আছে। আপনি আপনার ঘুড়ি দিয়ে আমার ঘুড়ি কেটেছেন।
:-এটাতো আপনার মুখের কথা।
:-আমি অতকিছু বুঝিনা।আপনি আমার ঘুড়ি কেটেছেন এখন আমার ঘুড়ি এনে দেন।
:-আপনি আগে প্রমান দেন তারপর দিবো।
:-দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।ভালো মানুষের মত আমার ঘুড়ি এনে দেন নয়তো আপনার খবর আছে।
:-আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।আমি আপনার ঘুড়ি কাটিনি।আর আপনার মত শুকলাকে আমি ভয় পাইনা।
:-কী বললেন?আমি শুকলা।আপনি শুকলা।আপনার চৌদ্দগুষ্টি শুকলা।
:-আপনার চৌদ্দগুষ্টি শুকলা।
:-আপনি একটা ঝগড়াটে। আপনার মত ঝগড়াটে ছেলে আমি জীবনেও দেখিনি।
:-আপনার মত ঝগড়াটে মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি।
:-উহু।আপনার সাথে কথা বলাই ভুল হয়েছে।তবে মনে রাখবেন এক মাঘে শীত যায়না।
:-এক মাঘে না গেলে দুই মাঘে যাবে।সমস্যা নাই।তাছাড়া আমার শীতই ভালো লাগে।
মেয়েটি আর কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।আমি বিজয়ের হাসি দিলাম একটা।মেয়েটির নাম অবনী।আমরা পাশাপাশি বাসায় থাকি।কয়েকদিন আগেও মেয়েটিকে দেখলে বাচ্চা বাচ্চা মনে হতো কিন্তু হঠাৎ করে এই বাচ্চা মেয়েটা পরী হলো কিভাবে সেটা আমার মাথায় ঢোকেনা।
গত ১৫ দিন আগের কথা।
কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠান চলছে।নতুনদের আগমনে কলেজ আজ মুখরিত।একটা গাছে ফুল ফোটার পর যেমন ফুল গাছটাকে পরিপুর্ণ দেখায় তেমনি নতুনদের আগমনে কলেজটাকে আজ পরিপুর্ণ লাগছে।অনেকেই নতুনদের মাঝখান থেকে গালফ্রেন্ড খুজতে ব্যস্ত।আমার এসবে মাথা ব্যথা নেই।গালফ্রেন্ড মানে একটা প্যারা মনে হয় আমার কাছে।আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে আছি।শুধু দাঁড়িয়ে আছি বললে ভুল হবে,কলেজের সিনিয়র হওয়ার সুবাধে সবকিছুর দেখভাল আমাদের করতে হচ্ছে।স্যারদের বক্তব্য শেষে নতুনদের মাঝখান থেকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য স্টেজে ডাকা হলো।ছেলেদের মধ্যে থেকে একজন আর মেয়েদের মধ্যে থেকে একজন ওঠে এলো।যারা বক্তব্য দিতে স্টেজে এসেছে তাদের দিকে তখনো আমি তাকায় নি।মাইকে কবিতা শুনে তাকালাম।তাকাতে আমি বাধ্য।কারণ কেউ এতটা সুন্দর করে কবিতা আবৃতি করতে পারে আমার জানা ছিলো না।সবার মনেই সম্ভবত আমার মত প্রশ্ন জেগেছে,কেউ এত সুন্দর করে কিভাবে কবিতা আবৃতি করে?কয়েক লাইন কবিতা আবৃতি করার পর বক্তব্য শুরু করলো।যে এত সুন্দর কবিতা আবৃতি করলো সে একটা মেয়ে।পড়লে লাল শাড়ি,চোখে কাগজ,খোলা চুল।স্টেজে থাকা ফ্যানের বাতাসে মেয়েটির চুল উড়ছে।মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে নেমে আসা এক পরী।আমার মনে হঠাৎ করেই মেয়েটির জন্য ভালোলাগা ঢেও খেলে গেলো।মনের মধ্যে আরেকটা আফসোস হচ্ছে।কেনো এতদিন এই পরীটা আমার সামনে দিয়ে ঘুরার পরেও চোখে পড়েনি।হ্যাঁ আমি মেয়েটিকে চিনি।আমার বাসার পাশেই ওদের বাসা।মেয়েটিকে আগে বাচ্চা মনে হতো কিন্তু শাড়ি পড়ায় আজ বড় বড় লাগছে।
সেদিনের পর থেকে অবনীকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি।এই ভাবনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এক টুকরো ভালোবাসার।তবে অদ্ভুত ব্যাপর হলো ওর সাথে আমার যখনি দেখা হয় তখনি একটা না একটা ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া লাগবেই।যত ভাবি ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবো ততই বেশি ঝগড়া করি।
এই যেমন আজ বিনা কারণে ওর ঘুড়ি কেটে দিলাম।তবে রাগলে অবনীকে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগে।অবনীর রাগী চেহারা যদি কাজী নজরুল কিংবা হুমায়ন আহম্মেদ দেখতো তাহলে একটা উপন্যাসের বই লিখে ফেলতে পারতো।আমিও লেখতে পারি,কিন্তু আমি উপন্যাস লেখলে আগের সব কবিদের নাম সবাই ভুলে যাবে।চারদিকে শুধু সবাই আমার নাম বলবে।তাই লিখিনা।হি হি হি হি হি হি।
যাই অনেক ফাজলামি হয়েছে,কাল পরীক্ষা আছে পড়তে হবে।

সকাল ৯:৩৫
রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও রিক্সা পাচ্ছিনা।যেদিন দরকারি কাজ থাকে সেদিনই সব ঝামেলা বাঁধে।প্রতিদিন রিক্সার অভাব হয়না।আর আজকে আমার পরীক্ষা বিধায় একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা।তার উপর প্রচন্ড গরম।মেজাজটা প্রচন্ড রকমের খারাপ হচ্ছে।অবশেষ একটা রিক্সার দেখা পেলাম।হাত নেড়ে রিক্সা ওলাকে তাড়াতাড়ি আসতে বললাম।কিন্তু একী?অবনীদের গেটের সামনে আসতেই অবনী ভেতর থেকে বের হয়ে রিক্সায় ওঠে বসলো।মেজাজটা এবার আরো বেশি খারাপ হলো। আমি রিক্সাওলার কাছে এগিয়ে গেলাম
:-মামা আপনিতো অদ্ভুত লোক।আমি আগে আপনাকে ডাকলাম আর আপনি এই মেয়েকে আগে তুললেন।(আমি)
:-আনি ওঠাইনি।এই আপা দৌঁড়ে এসে ওঠে পড়েছে।(রিক্সাওয়ালা)
:-তাহলে উনাকে নামিয়ে দেন।
:-আপনি বললেই আমি নামবো নাকি?আমি আগে ওঠেছি আমি যাবো। (অবনী)
:-মগের মুল্লুক পাইছেন।আমি আগে ডেকেছি আমি যাবো।নামুন।
:-দেখুন আমার ক্লাসে দেরী হয়ে যাচ্ছে।এখন ঝগড়া করার মুড নেই।
:-ঝগড়াতো আপনি করছেন।আমি রিক্সা আগে ডেকেছি আমি যাবো।নামুন আপনি।
:-আপনারা থামেন।আপনাদের কাউকেই আমি নিবোনা।(রিক্সাওয়ালা)
:-আরে মামা বলেন কি?আমার ১০টা থেকে পরীক্ষা।রাস্তায় একটা রিক্সাও নেই আর আপনি বলছেন নিবেন না।
:-আমরা শেয়ার করে যেতে পারি।(অবনী)
আমার মনে হলো আমি ভুল শুনলাম।যেই মেয়ে আমাকে দেখলেই ঝগড়া শুরু করে দেয় সেকিনা আমার সাথে একই রিক্সায় যেতে চাইছে।ডালহে কুচ কালা হে।
:-আপনি শিউর?(আমি)
:-হ্যা।কারণ আপনার ১০টা থেকে পরীক্ষা আর আমার একটা ইমপটেন্ট ক্লাস আছে।রাস্তায় কোনো রিক্সাও নেই।
:-বিশ্বাস হচ্ছেনা।
:-আপনার বিশ্বাস নিয়ে আপনি থাকুন।যেতে চাইলে চলেন নাহলে পথ ছাড়েন।
উপর উপর রাগ দেখালেও মনে মনে আমি খুব খুশিই হয়েছি।অবনীকে কাছ থেকে কিছুটা সময় দেখতে পাবো এটা ভেবেই ভালো লাগছে।রিক্সায় ওঠে বসলাম।
:-মামা চলুন।(আমি)
রিক্সা চলতে শুরু করলো।অবনী রাস্তার অন্যপাশে তাকিয়ে আছে।আমি মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখছি ওকে।অবনী নীল রঙের স্কাপ বেঁধেছে মাথায়।অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।আমার যতদুর মনে হয় সুন্দরী মেয়েরা যে পোশাকই পড়ুক না কেনো তাতেই তাদের ভালো লাগবে।
:-সরি।(অবনী)
:-বুঝলাম না।(আমি)
:-ঝগড়া করার জন্য সরি।
:-আমিও সরি।
এরপর সারাপথ কেউ আর একটা কথাও বলিনি।কলেজের সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে যে যার মত চলে এলাম।

পরীক্ষা শেষ করে কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে আছি রিক্সার জন্য।হঠাৎ অবনীর আগমন।
:-পরীক্ষা শেষ?(অবনী)
:-হুম শেষ।(আমি)
:-এখন কী বাসায় যাবেন?
:-হ্যাঁ।আপনি?
:-আমিও।পরীক্ষা কেমন হলো?
:-ভালো।
একটা রিক্সা আমাদের সামনে এসে থামলো।আমি অবনীকে উদ্দেশ্য করে বললাম
:-আপনি এটাতে যান আমি পরেরটাতে যাবো।(আমি)
:-না। তা কী করে হয়।আপনি আমার আগে থেকে অপেক্ষা করছেন আপনি যান।আমি পরে যাবো।
:-ধন্যবাদ।
আমি রিক্সায় ওঠে বসলাম।হঠাৎ করে বলে বসলাম
:-চাইলে আপনিও যেতে পারেন।
আমার কেনো জানি মনে হলো অবনী এই কথাটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।আমি বলার সাথে সাথে ও রিক্সাতে এসে বসলো।কেউ কোনো কথা বলছিনা।আসলে কী বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।অবনীও সম্ভবত আমার মত ভাবছে।
:-বিকেলবেলা ছাদে আসবেন??(অবনী)
:-জানিনা।যদি কোনো কাজ না থাকে তাহলে আসবো।(আমি)
:-ও।
:-আপনি?
:-আমিতো প্রতিদিনই ওঠি।বিকেলবেলার পরিবেশটা ছাদ থেকে দেখতে খুব ভালো লাগে।
:-হুম।
:-যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি?
:-বলেন?
:-না থাক।
:-আরে বলুনতো।
:-না কিছুনা।

উরিম্মা বলে চিৎকার করে ওঠলাম।কে যেনো আমার মাথার চুল ধরে খুব জোরে টান দিয়েছে।পিছন ফিরে দেখি অবনী দাঁড়িয়ে আছে।
:-এভাবে রাক্ষসের মত চুল ধরে টান দিলে কেনো?(আমি)
:-বেশ করেছি।সেই কখন থেকে ডাকছি আর উনি গভীর ধ্যানে মগ্ন।(অবনী)
হুম এতসময় পুরনো কথাগুলো ভাবছিলাম।এখন অবনী আমার বউ।৩মাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়েছে।সেদিন কলেজ থেকে একসাথে ফেরার পর থেকে শুরু হয়েছিলো আমাদের নতুন একটা গল্পের।যেই গল্পটা একসময় রুপ নিয়েছিলো ভালোবাসায়।
:-তাই বলে এত জোরে চুল ধরে টান দিবে?
:-আরেকটু জোরে দেওয়া উচিত ছিলো।
:-দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি।
আমি বিছানা থেকে ওঠে অবনীকে জরিয়ে ধরলাম।
:-এবার মজা দেখাচ্ছি।(আমি)
:-তুমি আমার কিচ্ছু করতে পারবেনা।কারণ তুমি রোজা আছো। হি হি হি হি।(অবনী)
অসহায়ের মত অবনীকে ছেড়ে দিলাম।অবনী আমার এই অবস্থা দেখে হাসছে।আমি চোখ গরম করে বললাম
:-ওই হাসবেনা বলে দিলাম।(আমি)
আমাকে রাগতে দেখে অবনী চুপ হয়ে গেলো।আমি রেগে কথা বললে অবনী খুব ভয় পাই।অবনী মাথা নিচু করে অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছে।অবনীকে এখন ছোট বাচ্চার মত লাগছে।অবনীর এই অবস্থা দেখে এবার আমি হাসতে শুরু করলাম।আমাকে হাসতে অবনীও হাসতে শুরু করলো।
:-শুকলা।হি হি হি হি।
এইযা কী বলে ফেললাম?অবনীকে শুকলা বলে ফেলেছি।আজ আমার রক্ষা নাই।অবনীর হাসি মুখে মুহুর্তেই অগ্নীরুপে ধারণ করলো।কিছুক্ষণের ঝড় শুরু হবে। আমি বেশিকিছু না বলে দিলাম এক দৌঁড়। অবনীও আমি পিছু পিছু ছুটছে আর বলছে আজ তোকে হাতের কাছে পাই সব চুল ছিড়ে ফেলবো।আর আমি মনে মনে বলছি আমি কিছুতেই ধরা দিবোনা।
……………………………………………….সমাপ্ত…………………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত