একদা আরব দেশে এক রাজদরাবারে লাইলী-মজনুর দুঃখময় ব্যর্থ প্রেমের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল ধনকুবের পুত্র কায়েস তার প্রচুর ধন-সম্পদ, বিদ্যা-বুদ্ধি ও সামাজিক মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও একমাত্র লাইলীর প্রেমে পাগল হয়ে বলে-জংগএল বাস করেছে। একটা সামান্য নারীর অভাবে উন্মাত্ত হয়ে সে নিজের আত্ন-মর্যাদা, বুদ্ধি-বিবেচনা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে বসেছে। সব কিছু শুনে বাদশা মজনুকে হাজির করলেন এবং খুব রকম তিরষ্কার করে বললেনঃ ওরে উন্মাদ! সৃষ্টির সেরা মানব সামাজে কি এমন ক্রটি পেলে যে, মানুষের সংশ্রব বর্জন করে তুমি জংগলের জীব-জানোয়ারের সঙ্গে জীবন-যাপন করা শুরু করেছ?
মজনু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কেঁদে দিয়ে বললঃ
বন্ধুরা মোরে ভর্তসনা করে
কেন এত ভালোবাসি তারে
একবার তারে দেখিলে নজরে
দোষ কেহ দিত না আমারে
দেখিলে তোমার মুখ মুগ্ধ হত তার চোখ
যেই মোরে দেয় অপবাদ।
লেবুর বদলে হাত কাটিত সে নির্ঘাত দেখিত না মোর অপরাধ।
ক্রীতদাস ইউসুফের প্রেমে মাতোয়ারা হওয়ার দরুন মিশরের সম্ভ্রান্ত মহিলারা বিবি জুলেখার নিন্দা করত। হযরত ইউসুফকে তাদের সামনে হাজির করা হলে তার অতুলনীয় রূপ-সৌন্দর্য দর্শনে বিষ্ময়ে চেতনা হারা হয়ে লেবু কাটতে গিয়ে তারা নিজ নিজ হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলে ছিল। তোমরাও যদি লাইলীর অপূর্ব সৌন্দর্য একবার দেখতে তা হলে প্রবাহিত রহস্য অনুধাবন করে আমার সপক্ষে সাক্ষ্য দিতে এবং আমাকে অযথা তিরষ্কার করতে না।
মজনুর মন্তব্য শুনে বাদশার মনে কৌতূহল হল। তাহলে লাইলীকে একবার দেখা দরকার। কত আকর্ষনীয় তার রূপলাবণ্য। যার মোহে একটি অমূল্য জীবন বিনষ্ট হতে যাচ্ছে। লাইলীকে রাজ সকাশে হাজির করার জন্য তখনই লোক পাঠান হলো। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে অনুসন্ধানের পর পাওয়া গেল এবং রাজদরবারে এনে বসান হলো। খুব মনোযোগের সাথে বাদশা লাইলীর আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করলেন। কোন অসাধারণত্ব তার নজরে পড়লো না। বরং তার শাহী সৃষ্টিতে লাইলীর রূপ খুবই তুচ্ছ ও মামুলী মনে হল। কারণ তার চেয়ে অধিকতর রূপ-লাবণ্যবতী বহু মেয়ে তার দাসী বান্দীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।
মজনু তার প্রজ্ঞার আলোকে বাদশার মনোভাব বুজতে পেরে বললঃ
লাইলীর অতুলনীয় সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে হলে মজনুর মুগ্ধ নয়নের প্রয়োজন।
“ দয়া নাহি হয় কারো মোর বেদনায়,
ব্যথার দরদী মোর নাই কেহ হায়।
মোর মত ব্যথাহত পাইতাম যদি
কাষ্টসম জ্বলিতাম দেহে নিরবধি।”
শিক্ষাঃ যার মনে যার লাগে তারে কি আর ভোলা যায়। প্রেম এমন জিনিস যার দ্বারা উঁচু-নিচু, রাজা-প্রজা, দাস-দাসী, জাত-বর্ণে প্রভেদ করে না। চোখে যাকে ভালো লাগে সে যে জাতের হোক না কেন তাকে ছাড়া দুনিয়ার অন্য কেউ উত্তম নয়, প্রেমিকের চোখে প্রেমিকাকে যেভাবে দেখে অন্য মানুষ তাদেরকে সেভাবে দেখে না। কোন প্রেমিকা যদি কালো বা কুতসিতও হয়, প্রেমিকের চোখে সে সুন্দর।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা · শিক্ষনীয় গল্প