প্রথম ভাললাগার প্রথম ছ্যাকা

প্রথম ভাললাগার প্রথম ছ্যাকা

কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হয়েছিল।এখন এতটাই রোদ পড়েছে, যে বুঝা যাচ্ছে একটু আগে বৃষ্টিই হয়নি।যদি কাঁচা কাঠ রেখে দেওয়া যায় এই রোদে তাহলে নির্ঘাত শুকিয়ে যাবে।যাকে বলে কাঁঠপোড়া রোদ।তামিম কাঁঠ পোড়া রোদের ভেতরেই হেঁটে যাচ্ছে উদ্দেশ্য জেনিয়াদের বাসা। জিসান নামক একটা ছাত্র আছে তাকে পড়াতে।আসলে ছাত্র বললে ভুল হবে কুত্র বলাই ভাল।কুত্র হচ্ছে ছাত্রের নেগেটিভ সাইড।এই ছেলেটা আজও ছাত্র কিনা বা অতিথে ছাত্র ছিলা কিনা,বা ভবিষ্যতে ছাত্র হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তামিম।কেননা এর মত ইবলিশ ছাত্র টিউশনি জীবনে খুব কম পেয়েছে তামিম।টিউশনিটা পেশা না কিন্তু নেশার মত হয়েগেছে।জিসান একদিন বলে “স্যার আপনার নাকি দশটা গার্লফ্রেন্ড? “এরকম প্রশ্নে তামিম গাবরে যায়।তবোও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে “কথা বাদ দিয়ে তোমার পড়া পড়ো।”তারপর জিসান আবার বলে “স্যার পড়াতো অনেক পড়ি,তবে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন না কেনো।তাহলে আমি ভাববো আমার স্যারের দশটা গার্লফ্রেন্ড “আসলে জিসান একদিন লুকিয়ে তামিমের ফোন নিয়েছিল আর সেখানে তামিমকে দশটা মেয়ের সাথে ছবিতে দেখছিল।এজন্যই বলছে দশটা গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু এগুলো সব তামিমের স্টুডেন্ট। একটা কোচিং এ একটা ক্লাস নিতো।সেই ক্লাসের ছাত্রী এরা।ভালো ফলাফল করাতে তামিমের সাথে এক ফ্রেমে স্মৃতি বন্ধি করে রেখেছে।কিন্তু আদতে তামিমের কোন গার্লফ্রেন্ড নাই।জীবনে একটা মেয়েকে পছন্দ করেছিল।কিন্তু জানাতে পারেনি আর যোগাযোগও নাই।তাও সেটা বহু বছর আগে।
আর এই ছেলে বলেকিনা গার্লফ্রেন্ড। এছাড়াও প্রতিদিন ঘেনর ঘেনর ফেনর ফেনর তো আছেই।স্যার আজকে এই মেয়ে আমাকে ফুল দিয়েছে, এই মেয়েকে চোখ টিপি দিয়েছে।এই মেয়ে বলেছে আমার বডি নাকি জাম্বুর মত।আবার তামিমের ফোন নিয়ে গেম খেলা।অনেক ধরনের ফাজলামু করে।কিন্তু পড়ার নামে কিছুই না।তবোও তামিম টিউশনি ছাড়েনা।এসবি তার কাছে ভাল লাগে। কাঁঠপোড়া রোদে হাটছে হঠাৎ কে যেন ডাক দিলো “এই শামিম” ।এই ডাকে তামিম একটু ধমকে দাঁড়ালো কারণ কন্ঠ একটু পরিচিত মনে হচ্ছে।আর তামিমের আরেক নাম শামিম।যা তার মা বাবা ডাকে।আর যখন হালুয়াঘাট থাকতো, তখন স্কুলে নাম।শামিম ছিল।তাছাড়া সচারচর শামিম কেউ ডাকেনা।তামিম পেছনে না ফিরে আবার হাটতে শুরু করলো।আবার ডাক দিলো এই শামিম আশ্চর্য হলেও সত্য কন্ঠটা একটা মেয়ের।মেয়ে কন্ঠ বলেই পেছনে তাকাইনি।কারণ দিন দুপুরে অপরিচিত মেয়েদের বিশ্বাস করাটা বোকামি।হাঁটা শুরু করলো আবার
এবারও এক নাগারে ডাকছে এই শামিম এই শামিম। কথা শোনছ না নাকি।এবার একটু পিছনে ঘাড় ফিরে তাকালো।পেছনে ফিরতেই দেখছে একটু দূরে কয়েরি কালার কালো পাড়ের একটা শাড়ি পড়ে,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক হাতে রেশমী চুড়ি পড়িহিত একটা মেয়ে। স্পৃষ্ট বুঝতে পারছেনা কে।তবে খুব চেনা চেনা লাগছে।আশ পাশ তাকিয়ে দেখলো তামিম যে তার আশেপাশে কেউ আছে কিনা।
এই শামিম কি খুঁজছো, আমি তোমাকেই ডাকছি ।মেয়েটি বললো।মেয়েটি এবার দূঢ় পায়ে এগিয়ে এসে বললো “কেমন আছো শামিম? সহজ করে উত্তর দিলো জ্বি ভালো।কিন্তু আপনাকে তো ঠিক! এই কথার বলার পর মেয়েটি বলছে তুমি শামিম রাইট! হ্যাঁ কিন্তু এই শামিম নামটা তো সবাই জানেনা।কিন্তু আপনি?
–আমি জানি,কারণ তোমাকে অনেক আগে থেকেই চিনি আমি।
—কীভাবে চিনেন?
-তুমি ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট ছিলেনা।
-হুম কিন্ত আপনি জানলেন কি ভাবে?
-তুমি তখন ক্লাস থ্রীয়ে পড়তে,হালুয়াঘাট মধ্যম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাইট?
–হা- কিন্তু আপনি?
-তুমি পূজা,মিম,রোমা,স্বজল,আজহারুল এদের কথা মনে আছে।
-হ্যাঁ খুব মনে আছে?
-তুমি মিমকে চিনো?
–হাঁ
-তাহলে চিনতে পারছো না কেনো? আমিই সেই মিম।
এবার তামিমের কাছে সব খুলাসা হলো।তামিম ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানায় ছিলো।তখন সে ক্লাস থ্রীয়ে পড়ত।কিন্তু এখন ২০১৮ সাল
প্রায় বারো বছর আগের কথা।তবে তামিম মিমকে ঠিকেই চিনে ছিল।কিন্তু একটু সত্যটা পলোখ করার জন্যে এমন করছে।চিনবেনা কেনো এই মিমের প্রতি তো তামিম উয়িক ছিল।হাসবেন না আপনারা।হ্যাঁ ঐ সময় তামিম মিমকে মনে মনে পছন্দ করতো।কিন্তু সেটাকে ভালবাসা বলে কিনা তাতো জানতো না।কারণ ঐসময়টাতে এখনকার মত এতো বুঝ ছিলনা।ভাল লাগা নাকি ভালবাসা তা বুঝে উঠার জ্ঞান তখন হয়নি।কিন্তু হাঁ মিমের আশে পাশে থাকলে ভালো লাগত।তার সাথে দুষ্টুমি করত।ক্লাসে অনেক ছাত্র ছাত্রী ছিলো।সবাই অন্য একটা ভাল নজরে দেখতো তামিমকে।ম্যাডাম স্যার সবাই খুব ভালো বাসতো। তামিম ছিল ক্লাসের সেকেন্ড বয়,মানে রোল ছিল দুই।আর এক ছিল পূজার আর তিন ছিল মিমের।সেই স্মৃতিগুলো তামিমের মনে এখনও কড়া নাড়ে।২০০৭ সালের শেষের দিকে ওখান থেকে চলে আসে তামিম এবং তার পরিবার।কিন্তু মিম ২০০৬ সালেই ঐ স্কুল থেকে চলে যাই।অন্য একটা মাদ্রাসাতে ভর্তি হয়।তামিম বুঝতো না,সেটা ভালবাসা নাকি অন্য কিছু।তবে অনেক দিন তামিম তামিমের বন্ধু আল-আমিন মিমের পিছু নিয়ে ছিল।যে মিম কোথায় ভর্তি হইছে।পিছু নিয়ে একদিন মিমের মাদ্রাসার সামনেও যায়।তাদের স্কুল থেকে বেশি দূরে নয়,হাফ কিঃমি বা একটু কাছের একটা মাদ্রাসাতে ভূর্তি হয়।তার তামিম সাতের শেষ দিকে কিশোরগঞ্জ চলে আসারপর আর যোগাযোগ হয়নি কারো সাথে।কেননা তখন এতো মোবাইলের চল ছিলনা।সবার হাতে হাতে মোবাইল ছিলনা।তাই ভুলে মিমকে ভুলে যাইনি।বারো বছর পরেও মনে রেখেছে,কারণ প্রথম ভাল লাগা ছিল।হয়তো একটু ভালবাসাও ছিল। ফেসবুবের যৃগে নাম লিখেও তামিম অনেক বার চার্চ করেছে।কিন্তু নামের তো অভাব নেই,কোনটা মিম তাতো জানেনা।আর এড্রেসও নাই।তাই আর যোগাযোগও হয়নি।
-এই শামিম কি ভাবছো এতক্ষণ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে? মিম বললো।না কিছু ভাবছি না।তা তোমার খবর কি বলো।ভালো আছো? কি করছো।আচ্ছা তুমি যদি এতকিছু একসাথে প্রশ্ন করো তাহলে কোনটার উত্তর আমি দিবো বলো তো।মিম বললো।
—আচ্ছা ঠিকাছে একটা করেই বলো।কেমন আছো?
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন –আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
-আমিও ভালো! তা কি করছো এখন?
-অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ছি।তুমি?
-এইতো চলছে কোনোরকম।হঠাৎ করে কোথা থেকে আর আমার শহরেই বা কেনো তুমি? আমাকেই বা চিনলে কি করে।
-হঠাৎ করেনা,অনেকদিন ধরেই আছি।আর চিনবোনা কেনো? না চেনার কারণ তো নেই।
-ওহ।আমি টিউশনিতে যাব।অন্য দিন আবার কথা হবে।
-ঠিকাছে ফোন নম্বরটা দাও
–018271765** এটা নাম্বার।
–ঠিকাছে ।তুমি টিউশনিতে যাও,আমি একটু শপিং করবো।
.
অতঃপর তামিম চললো টিউশনিতে। মিম গেল শপিং করতে।তামিমের মনে এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে।জীবনের প্রথম ভাল লাগা ভালবাসার মানুষটির সাথে হঠাৎ এমনে দেখা হবে ভাবতেই পারেনি।তামিমকে মনেও রেখেছে। তার মানে তামিমের জন্য মিমেরও তার মনে কিছু একটা ছিলো বা আছে।তামিম ভাবছে অন্য আরেকদিন দেখা হলে তার ভাললাগার কথা বলবে। বলবে সেই প্রথম ভালবাসার কথা।যা এখনো মনের ঘরে ঘন্টা বাজাই।একটু আলতো ছোয়াতে কাছে পেতে চাই।এক মুহূর্তেই তামিম তার মনের ভেতর হাজারো রঙের তুলিতে ভালবাসার আলপনা এঁকে ফেললো মিমের জন্য।যেখানে এখন শুধু মিমের রাজ্যত্ব বিরাজ করছে।খুশি মন নিয়ে
তামিম হাটছে উদ্দেশ্য টিউশনি। ভালো মনে ছাত্র জিসানকে পড়াবে আজ।জিসানের আবদারগুলোও রাখবে
হঠাৎ একটা মেসেজ আসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে। তামিম আমি মিম।আগামিকাল সন্ধ্যায় তোমার ইফাতারের দাওয়াত রইলো আমাদের বাসায়।তোমাকে আমার ছেলের বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।আগামিকাল চলে এসে।হঠাৎ করেই যেন তামিমের হাসি মুখটা মলিন হয়েগেল।হঠাৎ করেই এমন হবে ভাবতে পারেনি।জীবনের প্রথম ভাললাগার মানুষটি সামনে এসেছে।ভাবছিলো মনের কথা বলবে।কিন্তু সব উল্ট পালট হয়েগেল। কি ভেবে রেখে ছিল আর কি হলো।প্রথম ভালবাসার প্রথম ছ্যাকা বারো বছর পরে খেল।না আর টিউশনি যাওয়া যাবেনা।উল্টো পথে হাটা শুরু করলো।আকাশে মেঘ।জমেছে জৈষ্ঠ্য মাস।যে কোন সময় বৃষ্টি হতে পারে।উদ্দেশ্য বড় পুকুর পাড়।একলা নিরিবিলি সময় কাটানো।মোবাইল থেকে সিমটা খুলে ফেললো। যেন মিম ফোন দিতে না পারে।জীবনে প্রথম প্রেমের ছ্যাকা খাইছে আর দেখা করতে হবেনা।ভালো থাকোক মিম।ফুলের কলি ফোঁটার আগেই ভমর এসে নিয়ে গেল।আজকেই কষ্ট হবে পরে আবার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু প্রথম ভাললাগা ভালবাসার ছ্যাকাটা যে বারো বছর পর খাবে,তা ভাবতে পারেনি তামিম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত