গোধূলি লক্ষণ তার দুচোখে।
যেনো সে সহস্র রাতের নিশাচর।
ক্লান্তি যেনো উপচে পরছে,আমি দেখছি অপলক নয়নে।
গত তিনদিন আগে লাগানো কাজলের রঙ ফিকে হয়ে বাঁ চোখের কোণায় লেগে আছে।
মেয়েটা কাঁদছে।
অনবরত বলা যায়না!
থেমে থেমে কান্না করছে।
হাক নিচ্ছে একটু পরপরই।
এটাকে অনবরত বলা যায় কিনা তা সঠিক জানিনা তবে তার কান্না চলছে তেত্রিশ মিনিট যাবৎ!
আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিচু হয়ে মৃদু কম্পনে ভোকাল বাজিয়ে কাঁদে।
আমি দেখছি তো দেখছি।
মনে মনে ভাবছি,”বাহ্!বেশ সুন্দর তো!এত সুন্দর করে কেউ কাঁদতে পারে!”
খানিকটা কান্না উপভোগ করার মত বিষয়।
তবে আমি তার নয়নের জলের ভাষা বুঝতে পারি।
সে বুঝাতে চায়,আমি ছারা সে নিশ্চল।
আমার বাঁহাত দিয়ে তার ডানহাত ধরার জন্য এগিয়ে দেই।
আমার চোখের ছোট মণিতে তার বিশাল অরণ্য,যেখানে তাকে ঘিরে তুমিময়!
সুদীর্ঘ পথ খুঁজে সে আমার নয়নের পানে চেয়ে।
তার নয়নের জলে সে আমারে কাছে টানে।
যেনো তাকে আলতো করে টেনে চোখের পানি মুছে একবার,”ভালোবাসি”বলি।
কিন্তু আমি কি বলবো!
ভালোই তো লাগছে তার কান্নার ধরণ।
চলুক না কিছু সময়,চলে যাই সেদিনে।
যেদিন সকাল….
.
আমি বাসায় অচেনা কারো উপস্থিতি টের পাই ঠিক সূর্যোদয়ের সময়ে।
দাঁত ব্রাশ করতে করতে ছাদে উঠে গেছি।
সামনে কেউ দাঁড়িয়ে।
এত সকালে অবশ্য কেউ আসেনা ছাদে।
একটু বিভ্রান্ত অনুভূত হলো,কে হতে পারে!
মেয়েটা হুট করে কোথা থেকে চলে আসলো।
যাইহোক,ব্রাশ হাতে মেয়েটার কাছে চলে আসলাম।
কিছু বলবো বলে ভাবছি,আবার কি বলবো তা নিয়েও ভাবছি!
মেয়েদের সাথে খুববেশি মেশা হয়নি আর কথোপকথন তো দূরে থাকলো।
যাইহোক,অপরিচিতার সাথে কথা বলাটা একটু জরুরি।
কারণ,নিজের সরি বাপের বাসায় অচেনা কেউ আসলে তা অজানা থাকা কেমনজানি ক্ষুৎ!
ছোট ছোট ক্ষুৎ বড় আকার ধারণ করলে পরবর্তীতে মনের ভিতরে প্রশ্ন থেকেই যায়,যা আমাদের মাঝে হয়ে থাকে।
তো মেয়েটাকে কি বলা যায় ভাবতে ভাবতে মেয়েটা আমায় দেখে নিচে চলে যেতে লাগলো!
যাক বাবা!
এ কেমন মেয়ে!?
ছেলে দেখলে এলার্জি নাকি!?
যাই হোক,ব্রাশ করা শেষ।
ছাদের পূর্ব পার্শে লাগানো ফুলগুলোর দেখতে বেশ লাগছে।
শীত নামতে শুরু করেছে,শিশিরে ভেজা ফুলগুলোর গায়ে যেনো মুক্ত লেগে আছে।
আমি দানা মুক্তোর সৌন্দর্য বিলাস করি,তাদের দেখি আবার হাতে ছুঁয়ে দিতে চাই।
কিন্তু মুক্তোদানা যদি ঝরে পরে!
তবে কি আর সৌন্দর্য থাকবে!?
কাছে গেলে মাধুর্য মরে,
দূর হতে প্রিয়তা বাড়ে।
.
সকাল সাতটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।
নিচে নেমে আসলাম।
মা সকালের নাস্তা তৈরি করেছে এতক্ষণে।
রুমের পাশ দিয়ে মা যাবার সময় উঁকি দিয়ে গেলো।
আমি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসলাম।
খাবার সময়…
.
মা:নাজিম।
আমি:জ্বী মা।
— ছাদে উঠছিলি?
— হ্যাঁ মা,কেনো?
— কাওকে দেখেছিস?
— হ্যাঁ।
— ওরা বাসায় নতুন।
— আচ্ছা।
— হ্যাঁ।
.
মা চুপ হয়ে গেলো।
আর কোন কথা হল না।
নাস্তা শেষ করে সোজা অফিসের দিকে রওনা দিলাম।
বাবার অবর্তমানে বিজন্যাস আর পরিবারের ভাড় আমার ওপরে।
অফিস হতে সোজা বাসায়,পুরোদিন প্রায় ধকল যায় তবে ছাদে গিয়ে এক স্ট্রে সবুজ চা পান করলেই সব দুর্বলতা দূরে যায়।
প্রতিদিনের মত গোধূলির ঠিক আগে ছাদে উঠলাম কিন্তু!
এখনো সেই মেয়েটি!
যাক,এবার কিছু বলা যায়।
আবারো সামনে এগিয়ে যেতেই মেয়েটা কিছু না বলে চলে গেলো!!!
বাহ্…!
ভালো তো!
আমার বাড়িতে আমিই পাত্তা পাইনা।
এটাকে কি বলবো!
যাইহোক,আপাতত কিছু বলতে পারবোনা তবে!
.
চলতে লাগলো এমন করে বেশ কিছুদিন।
আমি তার কাছে পাত্তাই পাইনা,তবে ইতিমধ্যে তার নাম জেনে ফেলছি ছোটবোন ছাবিহার কাছে।
নিরু নামটা মন্দ নয়।
আমার কাছে কেমনযেন আলাদা নাম!
খুব কমজনের নামই নিরু আবার আমার নামের সাথে মিল রয়েছে।
সে যা কিছু হোক,তা দিয়ে লাভ নাই,
যদিনা তার কাছে কোন পাত্তা পাই।
মাঝে মাঝে মনেরে বুঝাই,
পাত্তা নাই তো কি হয়,
পাশেই তো তার বসত হয়!
আর কি তারে বলবো হায়!
মন যে তারে বলতে চায়!
হ্যাঁ,আমি মেয়েটির মায়ায় পরে গেছি।
প্রথমবারের মত কারো মায়ায় পরেছি,তারে বিহনে ঘুমেতে অসস্তি!
ছাদ হতে চলে আসলে বিরক্তি!
কেমনজানি আলাদা এক অনুভূতি!
তারে কি ভালোবাসিনি!?
জানিনা আমি কিছুই বুঝিনা,
তারে ছারা আমি যেনো অচেনা!
সত্যিই সে যেনো শতাব্দীর চিরচেনা,
ভাবা যায়না কিছু তারে ছারা,
আমি যেনো তার মাঝে আত্নহারা!
তুমি কি আপনি তার জন্যই আমার ছুটাফিরা…!
.
যদিও সে আদৌ জানে কিনা সন্দেহ্!
তবে আজকাল বেশিই মনেপড়ে তাকে।
প্রায় তিনমাস হলো কিন্তু খুব বেশি কথা হয়নি,তুমি আপনি পর্যন্তই শেষ।
আজকাল নিরু আর ছাদ হতে নেমে যায়না,দূরত্ব বজায় রেখে ছাদেই সময় কাটিয়ে দেয়!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য!
কিন্তু আমার চোখ তার দিকে নিজের অগোচর হতে চলে যায় তার দিকে।
মাঝে মাঝে নিরুও আমার দিকে তাকায় কিন্তু চোখে চোখ পরতেই চোখ নামিয়ে নেয়।
বোধ হয়,সে লজ্জা পায়!
কিন্তু বুঝে আসেনা আমার,কেনো লজ্জা আর কি কারন তাকানোর।
বুঝিনা কিছুই।
অনার্সের তৃতীয় বর্ষে পড়া মেয়েটিকে দেখলে বুঝা যায়না সে এমন।
কেমনজানি আলাদা ধরণ তার।
চলাফেরা থেকে শুরুকরে সবকিছু।
আর এসবই হয়তো আমায় দুর্বল করে দিয়েছে।
সে যাই হোক,মেয়েটি দেখতে খুব বেশি সুন্দর নয়।
কালো বর্ণ বলবো!
নাহ্,কালো বলা যায়না!
ফিকে কালোকে কে জানি শ্যামা বলেছিল,নিরু ঠিক শ্যামা বর্ণের।
শ্যামা বর্ণের মেয়েদের প্রতি প্রায়জনেরই দুর্বলতা থাকে,বিশেষকরে তাদের হাসিটা!
এত সুন্দর হয় যে,যে কেউ প্রেমে পরতে বাধ্য।
তবে প্রেম আর ভালোবাসাটা কি এক তা আমার বুঝে আসেনা!
তার হাসি কিংবা রুপ দেখে জন্মায়নি,জন্মিয়েছে তার প্রতিটা অাচরণের ভালোলাগা হতে।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালোলাগা ভালোবাসায় জন্মায়,যার বিপরীত আমার ক্ষেত্রে ঘটেনি।
তার প্রতিটা আচরণ তার প্রতি আমায় টানে,আমি যেনো তার মাঝে হারিয়েছি!
নিজের অজান্তেই তাতে তার!
তবে কি করে জানাবো আমি তার!
.
কদিন হতে নিরু আর ছাদে আসেনা।
একদিন,দুইদিন করে চলে গেলো নয়দিন।
কারনটা অজানা,উদঘাটন্ করতে পারিনি এখনো।
ভাবছি তাদের বাসায় একবার যাবো,কিন্তু যাবার পর কি বলবো!
এমনিতেও তো গত সাঁড়ে তিনমাসে তেমনকিছু বলার সাহস জুটেনি আর…!
.
সবুজ চা হাতে স্ট্রের দিকে তাকিয়ে নিরুরে কল্পনা করছি,ভালোলাগছেনা কিছু।
হুট করে ছাবিহা এসে…
— ভাইয়া…
— হ্যাঁ বল।
— নিরুরা বাসা ছেরে দিয়েছে।
— ওহ্!(মাথায় যেনো বাজ ভেঙে পড়লো!!!)
— ওহ্ মানে!?
বুঝিনা কিছু ভাবছিস?
— হু,কি হইছে তাতে?
— কিছুনা,তোর মুখটা এমন হলো কেনো?
— এমনিতেই।
— ও,আচ্ছা যাই…
— শোন…
— হ্যাঁ বল।
— ওরা কি সত্যিই বাসা ছেরেছে?
— হু।
— আচ্ছা যা।
— ছেরেছে তাতে তোর কি?
— এমনিতেই জানতে চাইলাম।
— ভালো!
— হয়তো!!
.
ছাবিহা চলে গেলো,কিন্তু নিরু…….!!!
কিছু মাথায় আসছেনা।
খুব দেরি করে ফেলেছি হয়তো!
নয়তো এমনটা হবার ছিলনা!
মনকে বুঝানোর ভাষা পাচ্ছিনা,কি বলবো তারে!
সে তো ছিলই কাছে,কত কত কত কাছে!!!
আজ সে কত দূর,দহনে পুঁড়ি,পুঁড়ে মরি রে!
যেনো শিখা জীবন্ত আমি জ্বলন্ত!
কত কথা বলার ছিল,বলতে বলতে চুপ-ই রইল।
আজ আমি কি চুপ হইনি!?
বাক রুদ্ধ মন শুভ্রতা হারিয়েছে এক মহুর্তে,তারে যে হয়নি বলা কিছু কথা।
বলবো কি!
সুযোগই হয়নি শুনবে আর কি বা!
দোষ দিবো কারে,দন্ড করেছি নিজের ভুলে।
নাহ্,কিছু ভালোলাগছেনা।
নীলাকাশ কেবল ঘোলাটে হতে শুরু করেছে,অন্ধকার ফিকে চারপাশ!
আর থাকা যায়না,স্বস্তি চাই আমি।
অম্লতা-তিক্ততা-বিষন্নতার সুর ডেকেছে মৌনতাকে,গোধূলি লগনে লাল শিখা জ্বলছে বুকের ঠিক বাঁ পাশে।
চিনচিনে ব্যথা জাগিয়েছে আমার,ঠিক মন্দিরে ভাঙা দেবির চিহ্নের মত!
খন্ডন প্রপাত,খন্ডিত বানানো শহর,মনের ভিতর জন্ম নেওয়া লাল গোলাপেরা কষ্ট ঝরায়।
কালো কষ্ট,লাল কষ্ট!
বাহারী রঙের কষ্ট,কি রঙ দিবো তার!
সে যে বর্ণহীন,চোখের জল কি আর রঙ আনে!?
তার মাঝেই যে হাজার রঙের ধরণ,একেকবার একেক রূপ ধরণ করে,তারে যে সীমা নেই!
হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ যদি হয় চোখের জল তবে হৃদয়ে ভাসা সহস্র স্বপ্নের করা যায় কি বর্ণনা!
তাই হয়তো কষ্টের রঙ বর্ণহীন!!
বর্ণহীন কষ্টেরা চলে আসে চোখের পাতাজুরে,বাঁ চোখ হতে একফোঁটা পানি আঁছরে পরে বুকের ওপর,তারপর ডান চোখ।
দুচোখ হতে গড়িয়ে পরছে পানি,অঝোর শ্রাবণ নেমেছে।
কূলহারা তরী,মন্দিরের পূজারী,চাঁদের বুড়ীর চর্কা আজ লঙ্ঘন।
মাঝি দোটানায়,পূজারী ভাঙা দেবীর প্রার্থনায় আর চাঁদের বুড়ি কষ্টের গীত গায়!
আজ নেমেছে ঢল,কষ্টের ঢল।
সীমা নেই আজ কারো,কেউ কারো সাথে তুলনা করেনি,সবারই কষ্ট!
সবাই দিয়েছে আমায়,তুলনা করবো কি তাদের!
কষ্টের ভাগ কি আর দেওয়া যায় রে!?
কাঁন্নায় বিলাপ হয়না,এ কষ্টে মুখ খোলেনা,শুধু চলে আসে একরাশ কষ্টেভরা শ্বাস,যার নাম কেউ দিয়েছে,”দীর্ঘশ্বাস”
নাহ্ কিছু ভালোলাগছেনা,চাই ঘুম!
একটা ঘুম,একটু ঘুম!!!
.
সোজা রুমে চলে আসলাম।
একটা ঘুম দরকার,প্রশান্তির ঘুম!
অতিরিক্ত ডিপ্রেশনে মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যায় কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম।
আমি যেনো প্রকৃতির বিপরীতে নিজের অবস্থান টের পাই আবার মাঝে মাঝে ভাবি,”প্রকৃতি তার নিয়ম পরিবর্তন করলো না তো!”
সব হিসেব তালগোল পাকানো।
ঘুম দরকার,একটা ঘুম!
টেবিলের পুরো কাগজপত্র হাতরিয়ে ঠিক ডান কোণায় আবিষ্কার করি এক পাতা ঘুমের ট্যাবলেট।
এক গ্লাস নাহ্ এক গ্লাসে তৃষ্ণা মিটবেনা।
আজকের তৃষ্ণা কেবলই মাত্রাতিরিক্ত,আজ আমার গলা ভিজবেনা,পানি চাই অঢেল পানি!
মা কে ডেকে দিলাম পানির জন্য,কিছুক্ষণের অপেক্ষা শেষ হয়না!
মা চলে আসলো এক জগ পানি হাতে।
জগটা পুরো হাতে নিয়ে ট্যাবলেট গুলো মুখে পুরে দিয়ে এক ঢোকে পুরো পানির জগ শেষ!
এখন সোজা বিছানায় চলে আসলাম,গা এলিয়ে দিলাম বালিশে।
আমার চোখের পাতাজুরে সমস্ত ক্লান্তির ভাড়!
কে যেনো আসছে,আমায় হাত নেড়ে ডাকছে!
আমি সায় দেই ডান হাত এগিয়ে,আমায় ধরে নিয়ে যায় অজানা জগতে!
যেখানে প্রশান্তির মেঘমালা!
নিরুর পদধ্বনি বাজে,আমার ঘুম চলে আসে।
আহহহহহহ্……!
ঘুম…….!!!
.
বেশ কদিন হয়ে গেছে।
চেহারায় বিশ্রি ভাব চলে এসেছে।
ঠিক নেই কোনকিছু,আর ছাদে যাওয়া হয়নি।
মনখারাপের প্রতিটা রাত কাটে নিশাচর বেশে।
কেমনযেন আমি আগের মত নেই!
প্রায় তেরো দিন হলো নিরুরা নেই।
আর গত চারদিনে আমার অবস্থা ঠিক নেই।
সব চলছে ঠিকঠাক,শুধু থমকে গেছি আমি।
স্রোতের ঠিকানা পাল্টে গেছে আমার,নিজের ভেতর থেকে মনেহয় আমি মৃত!
আমার মাঝে কি যেনো নেই!
অফিস,কাজ সবকিছু থেকে দূরে এসেছি।
মা হুট হাট করে প্রশ্ন করে,আমি জবাবে চুপ!
ছাবিহা চেয়ে চেয়ে দেখে আমায়,ওর চোখের ভাষা দেখে মনেহয় কিছু বলতে চায়!
তবে আমি কিছু বুঝছিনা!
রুমবন্দী হয়ে থাকতেই বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করি।
বের হওয়াটা হয়না আর খুব!
.
খুব বেশিই খারাপ লাগছে আজকাল,ছাদে যাবো!?
কিন্তু গিয়ে কি লাভ!?
মন কি আর আগের মত হবে!?
জানিনা,তবে যাওয়াটাই মনেহয় আমার জন্য ভালো!
যদি মনটা ভালো হয়!!!
.
ছাদে চলে আসলাম,আগের মত হাতে সবুজ চা নেই তবে শরীরজুড়ে অসাড়তা,মনজুড়ে মৌনতা!
গুটি গুটি পায়ে ছাদের দিকে চলছি!
বিকেলটা কেমনজানি ঝাপসা হয়ে আসছে,আলো পড়ছে কিবা না পড়ছে!
নারকেল পাতার ফাক দিয়ে কিরণপাত হয় ছাদের বা কোণায়,ঝরে যাওয়া ফুলগুলোর পাপড়ি এখনো ছরিয়ে ছিটিয়ে।
বেলী ফুলের সুবাস আর নেই বললেই চলে,সব কেমন এলো মেলো।
কেউ তাদের দেখেনা,খেয়াল রাখেনা কারো।
বঞ্চিতরা কেবলই বঞ্চিত!
না পায় কোন ঠাঁই,না পায় চলার গতি!
তারা শ্লথ,তারা ফিকে,তাদের দুর্গন্ধ!
তারা মন্দ,তারা অগ্রাহ্য,তাদের স্থান নিম্ন!!
বঞ্চিতরা কেবলই বঞ্চিত…..!!!
সবাই ব্যস্ত!
শুধু আমিই একা..!
ছাদের কোণায় ঠাঁই নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি!
নাহ্,ছাদের উপরে যেতে আর মনচাচ্ছেনা।
নিচে নামবো!?
হ্যাঁ,নামা যেতে পারে।
.
ছাদ হতে নিচে নামার সময়েই কার যেনো ডাক!
চেনা চেনা!নাহ্,খুবকরে চেনা তার কণ্ঠ!
অবাক নয়ন পানে পিছনে ঘাড় ফিরায়ে তার দিকে!
হ্যাঁ,এ তো সে…
ইনি তো সেজন,
যেজন দিয়াছে সিংহাসন,দিয়াছে অমবস্যার ডাক,নিয়াছে সিংহাসনের বস্তুত চিত্ত!
আমি অবাক,শতবার অবাক,
চোখ অবিশ্বাসের ডাক দেয়!
আমি অবিশ্বাসী চোখের বিশ্বাস পাইনা,নিচের দিকে তাকাই ফের আবার তার দিকে!
আমি কি আসলেই তারে দেখছি!?
নাকি এ আমার মিছে ভুল,ভ্রান্তির নতুন খেল!
বুঝে আসেনা আমার,আমি দেখছি…
জলে ভাসা পদ্ম,কালের বিবর্তনে ফিরে পাওয়া সম্রাজ্য।
দুর্বলের শরীরে ফিরে পাওয়া শক্তির চিহ্ন,সে হাঁসছে,ঘায়েল করছে তাদের,তাদের কষ্টকে!
সে ফিরিয়ে আনছে শান্তি,আনছে তাদের প্রশান্তি!!
হ্যাঁ,আমি এখনো দেখছি,তাকেই দেখছি!
যাকে ভালোবাসি,যাকে নিজের চেয়েও বেশি কাছে টানি!
যার জন্য জীবন্ত আমি,আমি তার জন্যই রেখেছি কোমল শুভ্রতা,অম্লতা হ্রাস।
আজ আমার নিমন্ত্রন,সে অতিথি,এসেছে রঙের সারথি!
নিরু ডেকেছে,আমায় ডেকেছে।
আমি কি বলবো তারে!?
আমি চুপ,একদম চুপ…
নিশ্চুপ আমি নিশ্চুপ সে,নিরবতা ভাঙে না।
চুপ চাপ তিন মিনিট অতিবাহিত হবার পরপরই…
.
নিরু: হ্যালো স্যার..
আমি: হ্যাঁ বলুন!
— এ কয়দিনেই এমন!?
— বুঝলাম না!!
— কি বুঝেন না?
— যা বলছেন।
— ওহ্,আচ্ছা।
— জ্বী।
— এত ভালোবাসেন কেনো?
— চুপ আমি।
— উত্তর পাবোনা?
— চুপ।
— ওকে বাই,এবার সত্যিই চলে যাবো।
— কি বলবো!?
— কি বলবেন মানে!?
ভালোবাসেন?
— জানেন না!?
— বলতে কষ্ট হয়!?
— হুমম।
— আচ্ছা।
— আচ্ছা কেনো?
— এমনি।
— ভালো!
— হুম,তাহলে গেলাম।
.
নিশ্চুপ আবারো আমি,কি বলবো!
কিছু বলার মত খুঁজে পাচ্ছিনা,মেয়েটা কি আসলেই যাবে!?
যেই হাঁটা দিছে,কয়েক সেকেন্ডও তার দম নেই।
নাহ্,কিছু বলতে হবে!
কিন্তু কি বলবো!?
অাজ অভিজ্ঞতা নেই বলে..!!
মেয়েটা যাচ্ছে মনখারাপ করে,শুনতে চাচ্ছে আমি “ভালোবাসি”
কিন্তু কিভাবে বলবো বুঝতাছিনা!
মেয়েটা ছাদের কোণায় দাঁড়িয়েছে।
নিচে নামছেনা,বরং আমার দিকে চেয়ে আছে।
সে দেখছে আমার মুখের পানে,অপলক নয়নে দেখছে সে।
তার চোখজুড়ে কেবলই ক্লান্তি,আমি উপলব্ধি করছি নিরু আমায় ভালোবাসে।
কতটা বাসে তার পরিমাপ করতে পারছিনা,কিন্তু সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে চেয়ে আছে অনেকক্ষণ যাবৎ!
যেনো গোধূলি লক্ষণ তার দুচোখে।
যেনো সে সহস্র রাতের নিশাচর।
ক্লান্তি যেনো উপচে পরছে,আমি দেখছি অপলক নয়নে।
গত তিনদিন আগে লাগানো কাজলের রঙ ফিকে হয়ে বাঁ চোখের কোণায় লেগে আছে।
মেয়েটা কাঁদছে।
অনবরত বলা যায়না!
থেমে থেমে কান্না করছে।
হাক নিচ্ছে একটু পরপরই।
এটাকে অনবরত বলা যায় কিনা তা সঠিক জানিনা তবে তার কান্না চলছে ৩৩মিনিট যাবৎ!
আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিচু হয়ে মৃদু কম্পনে ভোকাল বাজিয়ে কাঁদে।
আমি দেখছি তো দেখছি।
মনে মনে ভাবছি,”বাহ্!বেশ সুন্দর তো!এত সুন্দর করে কেউ কাঁদতে পারে!”
খানিকটা কান্না উপভোগ করার মত বিষয়।
তবে আমি তার নয়নের জলের ভাষা বুঝতে পারি।
সে বুঝাতে চায়,আমি ছারা সে নিশ্চল।
আমার বাঁহাত দিয়ে তার ডানহাত ধরার জন্য এগিয়ে দেই।
আমার চোখের ছোট মণিতে তার বিশাল অরণ্য,যেখানে তাকে ঘিরে তুমিময়!
সুদীর্ঘ পথ খুঁজে সে আমার নয়নের পানে চেয়ে।
তার নয়নের জলে সে আমারে কাছে টানে।
যেনো তাকে আলতো করে টেনে চোখের পানি মুছে একবার,”ভালোবাসি”বলি।
কিন্তু আমি কি বলবো!
.
আশে পাশে তাকাতেই গোলাপ গাছের দিকে নজর গেলো,টাটকা গোলাপ ফুল।
এটাকে যদি নিরুর চুলের ফাঁকে গুজে দেই তবে সে কি অবাক হবেনা!?
হবে কিনা জানিনা,তবে ফুলটা নিরুর জন্যই ছিল।
একটা ফুল,একজন নিরু!
দুইজন মানুষ অপার ভালোবাসা,
মন আজ বলছে….
আমি তাহারেই দেখিয়াছি,
তাহারই নয়ন পানে চাহিয়াছি,
দেখিয়াছি নিজের অতল সমুদ্র,
আমি চিনিয়াছি সীমানা নির্মূলিত,
তাহার নয়নে আমার অরণ্য,
ভেদন কারী সূখ অপার বিস্তৃত,
আমি আমারি মাঝে তাহারে দেখিতেছি,
তাহারি নিকটে নিজেরে দেখিয়াছি,
আমার আমি তবে নিজের মাঝে নেই আমি,
কবে কবে করিতে করিতে তাহারই হয়ে গেছি।
.
গোলাপ তার চুলের মাঝে স্থাপন করতে এক চিমটি ভুলও হয়নি।
মা দেখছে,ছাবিহা হাসছে।
আমি অবাক,পুরো অবাক!
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম অবাক মানুষ হয়ে নিরুর সামনে দাঁড়িয়ে।
চুলের গোজে মেয়েটা ফুলের ওপর হাত নাড়াচ্ছে,আমায় দেখছে।
জড়িয়ে ধরবে বলে ঠিক করেছে,সাহস কিংবা লজ্জা দুটোর মাঝে নিরু সীমাবদ্ধ,আমি তারে ধরেছি,শক্ত করে ধরেছি।
সবাই হা হা করে হেসে উঠেছে।
বুঝতে বাকি নেই,সবারই প্লান ছিল এমনটা করার।
সে যাইহোক,আমি বলছি,”ভালোবাসি”
একগুচ্ছ কোমল পদ্মের কোমলতা দিয়েছি তোমায়।
আমার বাঁ বক্ষের জোরে তোমায় রেখেছি,
ভুলবেনা কেউ ভুলেও আজকের সময়।
আমি তোমারি,তোমারি নিকটে অবস্থান করি,
আমি বলছি,”নিরু,তোমায় বড় ভালোবাসি”
.
মেয়েটা জলে ভরা নয়ন নিয়ে উত্তর করে বসলো,”তোমাতে আমি তোমারি”
তোমাতে আমি তোমারি…