কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি মধ্য বয়সী একজন মহিলা ! আমি জিজ্ঞাস করলাম “” কাকে চাই ?
— স্যার,আফা বাসায় নাই?
“” আছে , কিন্তু কেন?
— দেশি মুরগী আনছিলাম ,গেছে সপ্তায় আফা কইছেলে দেশি মুরগী আনতে !
আমি আর কোন কথা না বলে মাহিকে ডাকলাম , এই,শুনছো এদিকে এসো একটু ।
মাহি রান্নাঘর থেকে দরজার পাশে এসে দাড়ালো ! আমি আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে এলাম ।
***
কিছুক্ষণ পর মাহি রুমে এলো ,তার হাতে দুইটা মুরগি । এসে বলে, মুরগি দুটো নিয়েছি , ওনাকে গিয়ে ৬০০ টাকা দিয়ে আসো !
অামি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম, তার কাছে এসে
বললাম, এই পিচ্চি সাইজের দুইটা মুরগীর দাম ৬০০ টাকা। তুমি তো আমাকে মুরগী কিনে ফকির বানিয়ে ফেলবা?
মাহি কার্টুন হাসি দিয়ে বললো ,
— এগুলো দেশি মুরগি!
“” তো , দেশি মুরগি দেখে কি হয়ছে!
— এতো তো তো করছো কেনো ? বাজারে যেতে বললে তো তোমার পা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়,আমি বাসা থেকে কিনছি তাতেও তোমার সমস্যা?
“” আজব মানুষের পাল্লায় পড়লাম ,তাই বলে এতো দাম দিয়ে মুরগী কিনবে?
— আমার কানের কাছে বক বক করবে নাতো !
চুপচাপ মুরগির টাকাটা দিয়ে অাসো!
এই বলে মুখে ভেংচি কেটে রুম থেকে বের হয় কিচেনে চলে যায় মাহি ।
——–
অামি মুরগির টাকা দিতে মহিলার কাছে এসে বললাম ‘
“” মনে হয় আমারো মুরগীর ব্যাবসা শুরু করতে হবে !
মহিলা হেসে বলল,
–কেনো স্যার!
অামি কেচিন রুমের দিকে মুখটা এগিয়ে একটু উঁচু গলায় বললাম ,
“”মানুষ যেই ভাবে টাকা উড়িয়ে মুরগী কিনছে,তাতে করে ভবিষ্যতে মুরগীর ব্যাবসা করেই আমাকে বড় লোক হতে হবে! এই ছাড়া অার কোনো উপায় নাই!
অামার কথা শুনে মাহি কেচিনের দরজার পাশে এসে মুচকি হাসতে লাগলো।অামি মুরগির টাকা গুলো দিয়ে মহিলা কে বিদায় দিলাম।
****
জরুরী একটা কাজে আমাকে বাইরে যেতে হবে ,
তাই জলদি করে দুপুরের খাবার খেতে বসলাম !
আমি আর মাহি সব সময় এক সাথে খেতে বসি , আজ আমার তাড়া দেখে মাহি বললো তুমি খেয়ে নেও আমি পরে খাবো আমার হাতে এখনো কিছু কাজ বাকি আছে!
একথা বলেই মাহি চলে যায় ,আর আমি খেতে
শুরু করলাম !
মুরগি মাংস রান্না টা অনেক দারুন হয়েছে । মায়ের হাতের রান্না আর মাহির হাতের রান্না একি রকম । দুইজনের রান্না অনেক মজাদার।
তুলনা হয়না তাদের রান্নার , তাদের হাতের রান্না খেয়ে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার খেয়েছি ।
আমি ইচ্ছেমত পেট ভরে খেলাম আমার খাওয়া শেষ হলে মাহি খাবার টেবিলে আসে !
আমার মাথায় তখন দুষ্টু বুদ্ধি এলো ,ভাবলাম এতো মজাদার রান্নার জন্য তাকে একটু রাগিয়ে দেওয়া যায় ।
তাই আমি একটু রেগে গিয়ে বললাম এগুলো কি রান্না করলা , এগুলো মানুষে খায় । এগুলো
মাংস নাকি অন্য কিছু ,তোমার মা তোমাকে রান্না
করানো শিখিয়ে দেয়নি । আমার এখন জরুরি কাজে যেতে হবে বলে এই বাজে রান্না খেতে হলো , নয়তো হোটেল থেকে খাবার এনে
খেতাম । মুরগি কিনে শুধু শুধু আমার টাকা গুলো নষ্ট !
মাহি কিছু বলতে চেয়েছিল আমি তাকে বলতে না দিয়ে বললাম , আমি গেলাম ফিরতে রাত হবে
এই বলে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম ।
****
রাতে বাসায় ফিরলাম রুমে ঢুকে দেখি মাহি টিভি দেখছে আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম কিন্তু কোনো কথা বললো না । আমি জিজ্ঞেস করলাম
রাতে কি রান্না করবে ?
মাহি রেগে বলে , আমার মাথা রান্না করবো ,
খাবে দিবো নাকি !
এই বলে সেখান থেকে উঠে চলে যায় । আমি বুঝতে পারি , সে এখনো রেগে আছে ।
অামিও অার কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম, ল্যাপটব নিয়ে বসে পড়লাম, কিছু কাজ অাছে সেটা করতে লাগলাম।
—-
প্রায় এক ঘন্টা পর মাহি অামার রুমে এলো। হাসি মুখে বললো খাবার রেডি খেতে অাসো।
আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে অবাক হয়ে গেলাম । অনেক রকমের খাবার রান্না করছে ! হয়তো দুপুরে তার রান্নার বদনাম করছিলাম ,এই জন্য এখন এতো কিছু !
আমি কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম । মনে মনে ভাবলাম বউটা আমার কতো কষ্ট করে এতো রান্না করছে শুধু আমার জন্য ।
মাহি বলে কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন ,নেও খাওয়া শুরু করো ।
***
আমি আর কোন কথা না বলে খাওয়া শুরু করলাম,সে জিজ্ঞেস করলো কেমন হলো রান্না ।
সত্যিটা হলো একদম বাজে রান্না কোন স্বাদ বলতে কিছু নেই । দুপুরে খাবার অনেক ভাল ছিল কিন্তু তার রাগ কমানোর জন্য আমি মিথ্যে বললাম ,আমি বললাম !
“” অনেক ভালো হয়েছে fantastic সুপার মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু জিনিস খাচ্ছি । আরো অনেক মিথ্যে তারিফ করে দিলাম । এরপর দুইজনে খাওয়া শেষ করলাম ।
—
খাওয়া শেষ করে দুইজনে রুমে এসে বসলে ।
মাহি বললো ,
— এই শুনছো !
“” হ্যাঁ শুনছি বলো !
— এখন থেকে মানিব্যাগে সব সময় টাকা রাখবে ?!
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম ,
“” মানিব্যাগে সব সময় টাকা রাখতে হবে কেনো !
— হোটেল থেকে সুস্বাদু খাবার এনে তোমাকে যাতে খাওয়াতে পারি !
“” এই থামো থামো , এখন যে খাবার খেলাম ,
সেগুলো কি হোটেল থেকে এনেছো ?!
আমার কথা শুনে সে হাসতে লাগল ,
আমি তাড়াতাড়ি উঠে আমার মানিব্যাক চেক করলাম । ৫ হাজার টাকার মতো ছিলো , এখন দেখি একটা টাকাও নেই একদম শুন্য ।!
“” এই মানিব্যাগের টাকা গুলো গেলো কোথায় ?
— একটু আগে যে খাবারগুলো খেয়েছ সেই খাবারগুলো মানিব্যাগের টাকা দ্বারা এসেছে !
“” ৫ হাজার টাকার মত ছিল , এই সামান্য খাবারের দাম এতো টাকা ?!
— জনাব , আসলে তা না , এখন থেকে ৫ দিনের জন্য খাবার অর্ডার করে দিয়েছি । এখন থেকে রোজ দুপুরে রাতে হোটেল থেকে খাবার পৌঁছে যাবে বাসায় !
“” আরে তুমি কি পাগল হয়ে গেলে ,এমন
কেনো করলে !
— দুপুরে আমার রান্না করা খাবার খেয়ে বলছিলে আমি রান্না করতে পারি না। আমার হাতের রান্না ভাল হয় না ।আমার মা আমাকে রান্না করা শিখিয়ে দেয়নি। তাই এখন থেকে
আমি আর রান্না করবো না । হোটেল থেকে খাবার এনে তোমাকে খাওয়াবো ।
তাই এখন থেকে মানিব্যাগে সব সময় টাকা রাখবে ,যাতে করে খাবারের বিল পরিশোধ করতে পারি !!
তার কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম
আমি বললাম ,
“” আল্লাহ এ কেমন বউ দিলে আমার কপালে ,
সামান্য একটু রান্নার বদনাম করলাম , তাতে আমার মানিব্যাগ শূন্য ।?
— এখন থেকে আমার রান্না যেমনি হয় , কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে খাবে ! নয়তো আজকের মতো তার পরিণাম হবে ।
এই বলে সে হাসতে লাগলো !
—
এরপর যা হবার তাই হলো ,৫ দিন ধরে সে কোনো রান্না করেনি । ৫ দিন ধরে হোটেলের
স্বাস্থ্য হীন খাবার গুলো খেতে হলো । আর এদিকে আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম , মেয়েদের রান্না নিয়ে আর কখনো বাজে মন্তব্য করবো না । তাদের রান্নার বদনাম কখনো করবো না ।!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা