অসমাপ্ত সমীকরণ

অসমাপ্ত সমীকরণ

-আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি….
-নাহ, কি চাই তোর যা এখান থেকে একা থাকতে দে আমাকে।।
কথাটা আদিবের মুখের উপর বলে দিলো নাম না জানা লোকটা (মেঘ) ।

আদিব, ভার্সিটির স্টুডেন্ট।সাইকোলোজি নিয়ে পড়ালেখা করছে।রোজকার মতো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরছিলো।বাসায় ফেরার সময় আজো দেখা হয়ে গেলো সেই নাম না জানা লোকটার সাথে।।নাম না জানা লোক বল্লে ভুল হবে।লোকটার নাম ছিল মেঘ।রোজকার মতো সেই একি জাগায় বসে বসে লোকটা একটা কাঠি দিয়ে মাটিতে কি যেনো আঁকিবুকি করছিলো।লোকটাকে সবাই পাগল বলে,কিন্তু আদিবের কোনো একটা দিক থেকে মনে হয়েছিল, লোকটি পুরোপুরি পাগল না।তো আজ আদিব ভাবলো লোকটির সাথে কথা বলবে।।

এগিয়ে গিয়ে,,
কিছুক্ষণ লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকার পর,আদিব বললো..
-এইযে শুনছেন,,আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি…
-লোকটি হাতের কাঠিটা পাশে রেখে,সিগারেটে টান দিয়ে বিরক্তির স্বরে একপ্রকার খেকিয়েই উঠলো আদিবের সাথে।ধুরছাই করে তাড়িয়ে দেয় আদিবকে।
আদিব সেদিনের মতো আশা ছেড়ে দিয়ে বাসায় চলে আশে।
সেদিন রাতে লোকটাকে নিয়ে ভাবে আদিব আর ঠিক করে পরেরদিন সন্ধ্যায় ফেরার পথে কথা বলেই ছাড়বে।।
তো কথামতো পরেরদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে ভাবছিলো আজকে যেভাবেই হোক লোকটার সাথে খাতির জমিয়ে জানবো কেন তার আজ এই হাল।

আগেই বলেছিলাম আদিব সাইকোলোজির স্টুডেন্ট তাই আগ্রহটাও বেশি এসব নিয়ে।তো ফেরার পথে লোকটার সাথে দেখা হয়ে যায় সেই একই জাগাটায়।আদিব লোকটির সামনে গিয়ে দাড়ায়,কিছু বলার আগেই লোকটি বলে উঠলো…
-কিরে আজকেউ এসেছিস,কি চাই তোর ?
আদিব বললো তেমন কিছু না এই আপনার সাথে বসে একটু গল্প করতাম।লোকটা অট্টহাসি হেসে উঠে,আদিবও চেষ্টা করলো লোকটির সাথে হাসার।লোকটি বলে উঠলো তুই আমার সাথে বসলে লোকে তোকেও পাগল বলবে।।আদিব সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে পাশে গিয়ে বসলো লোকটির মনের মধ্যে একটু ভয় ভয় নিয়ে।।

আদিব বললো আচ্ছা আপনি এভাবে প্রতিদিন এখানে এই ল্যাম্পপোষ্টের নিচে বসে বসে একটা কাঠি নিয়ে কি আঁকিবুকি করেন ? আচ্ছা আপনি বিয়ে করেননি ?
প্রশ্নটা করে যেনো লোকটাকে বিপাকে ফেলে দিলো আদিব।কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর লোকটা বলতে শুরু করলো…আর দশটা লোকের মতো আমিও সাধারণ একটা জীবন অতিবাহিত করতাম।।জীবনে একটা প্রেম করেছিলাম বয়স তখন অতোটাও ছিলোনা।দুর্ভাগ্য বসত সম্পর্কটা টিকে নি।তারপর কেটে যায় ৪ টা বছর আমি আর এসবের মধ্যে নিজেকে জড়াতে চাইনি।

কিন্তু এই নিকৃষ্ট মনে কেউ একজন দাগ কেটেছিলো।হুম,যার কথা বলছি তার নাম নীলা।ফেসবুকে পরিচয় হয় আমাদের।কথা হতো আমাদের প্রতিদিন ফেসবুকে।নীলাকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসতাম।তবে নীলার একটা রিলেশন ছিলো,যার জন্য মুখ ফুটে কিছু বলতে পারিনি।মজার ব্যাপার হচ্ছে নীলা আমার থেকে ২ বছরের বড়।তবুও আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ত্ব ছিলো।
হঠাৎ একদিন নীলার মেসেজ তার রিলেশন ব্রেকাপ হয়ে গেছে।নীলা খুব ভেংগে পড়ে,খাওয়া দাওয়াটাও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলো।রাতদিন ভর কান্না করতো,রাতে ঘুমাতো না জেগে থেকে কেদে কেদে বালিশ ভিজাতো।এই বিষয়গুলো নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলাম খানিকটা।।

কথাগুলো বলতে বলতে মেঘ আদিবকে বললো তোর কাছে সিগারেট আছে ? আদিব পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে সেখান থেকে একটা সিগারেট মেঘের হাতে দেয়।কাঁপা কাঁপা হাতে সিগারেট টা জ্বালিয়ে আবার বলতে শুরু করে মেঘ।।
নীলার রিলেশনটা ব্রেকাপের পর মানুসিক ভাবে ভেঙে পড়ে নীলা,তাই ভাবলাম আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।।নীলার কাছে ওর নাম্বারটা চেয়ে নিলাম।
ফোন দিয়ে নীলাকে বুঝালাম অনেক্ষণ।খুবই জেদি ছিলো মেয়েটা।নীলার যত্নের দায়িত্ত্ব নিলাম নীলাকে বলেই।
ওকে রুটিন করে দিয়েছিলাম সময়মতো খাওয়া-দাওয়া,ঘুম।আর ওকে বাইরে ডেকে গল্প করতাম যেনো একাকিত্ত্ব নামক সাপটা ওকে ঠোকরাতে না পারে।।অনেকগুলো মাস কেটে গেছে,নীলার খেয়াল রেখে,যত্ন নিয়ে ওকে পুড়োপুড়ি সারিয়ে তুল্লাম।

এরই মাঝে বন্ধুদের জোড়াজোড়িতে নীলাকে প্রপোজ করে বসলাম,যেহেতু নীলা আমার থেকে ২ বছরের বড় ছিলো তাই ও রাজি হয়নি।আমিও আর এ নিয়ে কথা বলিনি।কারণ আমি কোনো মতেই নীলাকে হারাতে চাইছিলাম না।তাই বন্ধুত্বটা ঠিক রেখেছিলাম।
হঠাৎ একদিন সকালে নীলাকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু ফোনটা ধরছে না।নীলা হঠাৎ করেই বললো আর কখনো ফোনে যোগাযোগ করবেনা দেখাও করবেনা।
অনেক অনুরোধ করেছিলাম ওকে এমনটা না করতে কিন্তু নীলা আমার কোনো কথাই শোনেনি।
সেদিন খুব কেদেছিলাম।নিজেকে শেষ ও করে দিতে গিয়েছিলাম।বেছে নিয়েছিলাম আত্মহত্যার পথ।ভাগ্যের জোড়ে সে যাত্রায় বেঁচে যাই।এর জন্য পরে অবশ্য নীলার কাছে একগাদা বকাও খেতে হয়েছিল।

কাটছিলো ভালোই দিনগুলো বন্ধুত্বের।কিন্
তু তখনো ভিতরে ভিতরে নীলাকে ভালোবাসতাম।মাঝখানে কোনো একটা কারণে নীলার সাথে আমার ঝগড়া হয়।পাঁচদিন যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিলাম।অবশেষে ৬ষ্ট দিন মুখোমুখি দেখা হয়ে যায় নীলার সাথে।দ্বিতীয় বারের মতো আলতো কান্না ভরা কণ্ঠে বকেছিলো নীলা আমাকে।
ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম জন্য কেঁদেছিল খুব ও।তারপর আর কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলিনি।
বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে কেটে যায় আরো কিছু মাস।নীলা হয়তো আমার ভালোবাসাটা কখনো বুঝে উঠতে পারেনি।গতো তিন দিন ধরে নীলার ফোনটা বন্ধ।ফেসবুকেও আসেনা।
৪র্থ দিন জানতে পারলাম আজ নীলার বিয়ে।কারণ বিয়ের দাওয়াতটা নীলা নিজেই আমাকে ফোন করে দিয়েছিলো।আমাকে শাড়ি পড়া বৌ সাজে দেখতে হলে কিন্তু আসতেই হবে তোমাকে।
আমি শেষবারের মতো অভিনন্দন বলে ফোনটা কেটে দেই।।

আদিব হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করলো লোকটাকে..
-আপনি গিয়েছিলেন বিয়েতে ?
লোকটি বললো হ্যা গিয়েছিলাম,তবে গেটের বাহিরে দুরে দাড়িয়ে ছিলাম।আমার এক পরিচিত বন্ধুকে দেখতে পেয়ে হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলেছিলাম নীলার কাছে চিরকুট টা পৌছে দিতে।আর দেরি করিনি সেইরাতেই বেড়িয়ে আসলাম বাসা থেকে চলে এলাম এখানে,আমার পছন্দের জাগাটায় নিস্তব্ধ এই পথের ল্যাম্পপোষ্টগুলোর কান্না শুনতে দাড়ুন লাগে কিন্তু।।
আদিব কথাগুলো শুনতে শুনতে নিজের অজান্তেই চোখের পানি ঝরাচ্ছে খেয়ালি করেনি।
আদিব জিজ্ঞাসা করলো আপনি কখনো খোঁজ করেননি তার বা সে আপনার খোঁজে এসেছিলো কখনো ?

মেঘ এবার উঠে দাড়ায় হাঁটতে থাকে আর বলে এতোদিনে হয়তো সন্তানের মা হয়েছে,সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
আমার কথা হয়তো ভুলেই গেছে এতোদিনে,বলেই হাঁটতে শুরু করলো।আদিব আর পিছু নেয়নি লোকটার।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলো লোকটির চলে যাওয়া।লোকটা আসলেই খুব অদ্ভুত।হয়তো কোনো একদিন মরে পড়ে থাকবে এই ল্যাম্পপোষ্টের নিচেই।
লোকে পাগলের দেহ ভেবে দুরে কোথাও পুতে রেখে আসবে।কেউ জানবেউ না লোকটা আসলেই পাগল ছিলো নাকি…!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত