চড় থেকে ভালোবাসা

চড় থেকে ভালোবাসা

রাত তিনটার সময় ফোন দিয়ে –
—— কি করছিস জানু? ( আরোহি)
—— নাগীন ডান্স দিচ্ছি আমার বউয়ের সাথে! (আমি)
—– ও তাই বুজি!(আরোহি)
—— ওই শালী, রাত তিনটার সময় মানুষ কি করে?(আমি)
—— আমি জানবো কিভাবে? (আরোহি)
—–ওই তোর মাথা ঠিক আছে? রাতে ভাত খাস নাই??(আমি)
—— খাইছি, আসলে তোকে খুব মিস করছিলাম তাই আর কি ফোন দিলাম। ( আরোহি)
—— তাই বলে এখন! আচ্ছা যাই হোক কিছু বলবি?(আমি)
——- না। কাল আসবি কলেজে?(আরোহি)
——– না। (আমি)
—— কেনো?(আরোহি)
——– কাল ঘুরতে যাবো (আমি)
—— ও তাই! তো কোথায় যাবি? আর কে যাবে?(আরোহি)
——- আমি আর আমার ফ্রেন্ড সুমাইয়া (আমি)
——ওই হারামি তোরে না বলছি সুমাইয়ার সাথে কথা না বলার জন্য! তার উপরে তুই ঘুরতে যাবি?(চিৎকার দিয়ে কথাটা বলল আরোহি)
—— কেনো? তাতে তোর সমস্যা কি? আর আমার ওকে ভালোই লাগে। কালকে আমি আর সুমাইয়া ঘুরতে যাচ্ছি এটাই ফাইনাল! (আমি)
—— তোর যা ভালো লাগে কর! (কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলো আরোহি)
### কি আর করার দিলাম এক ঘুম।এক ঘুমেই বাকি রাত কাবার।সকালে উঠে দেখি বাহ নাস্তা হাজির ভাবলাম কে দিয়ে গেলো?
হঠাৎ কে কান ধরে বলে উঠলো
—– কিরে যাবিনা ঘুরতে??
বুঝলাম এটা আরোহি ছাড়া আর কেউ না! তখনি আবার বলে উঠলো-
—– কি হলো, ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলোনা সুমাইয়ার সাথে??
—— আহ ব্যাথা লাগছে। ছাড়না,,, আহ আরোহি ব্যথা পাচ্ছি। (আমি)
—– ব্যথা পাওয়ার জন্যই ধরছি।(আরোহি)
বাহ আজতো বেশ সেজেগুজেই আসছে। অনেক সুন্দর লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করায় যাবেনা।
—– ওই হা করে কি দেখছিস মশা ডুকে যাবে। আমি জানি আমি যথেষ্ট সুন্দরি আপনি হা করে তাকিয়ে আছেন আপনি কি আমার উপর ক্রাশ খাইছেন নাকি?(আরোহি)
—–আরে ধুর! আমি ভাবছি কোনো পেতনি আসছে (আমি)
—– কি আমি পেতনি?????????(আরোহি)
ওরে বাবা এবার কানটা বোধহয় ছিড়েই নিয়ে যাবে
—— আহ না আসলে। আজ হলুদ শাড়িতে তোকে পরীর মতো লাগছে। দুষ্টামি করে বলছি! (আমি)
—— সত্যি?? (কানটা ছেড়ে দিয়ে)
——- আরে নাহ! পেত্নির মতোই লাগছে কানে ব্যথা পাচ্ছিলাম তাই এ কথা বলছি।( আমি)
—— আচ্ছা থাক লাগোক পেত্নির মতো।নুডুলস খেয়ে নে (আরোহি)
—— থ্যাংকস মাই ডিয়ার, আমার জন্য নুডুলস বানানোর কারণে!
—— হুম, ওয়েলকাম!(আরোহি)
——- আচ্ছা তুই খাবি???
—— শালা সব খাই এখন বলছিস তুই খাবি??( আরোহি)
——- আরে তুই জানিস ইতো আমি তোর হাতে বানানো নুডুলস কাউকে দেই না এমনকি তোকেও না।(আমি)
——- হুম বলতে হবেনা জানি(মুখ বেঁকিয়ে)
খাওয়া শেষ। ও হঠাৎ করে বলে উঠলো
——–চল আজ ঘুরতে যাবো! ( আরোহি)
——— চল।(আমি)
——– রিকশায় করে যাবো আজ(আরোহি)
——- ওকে তোর যেমন ভালো লাগে! (আমি)
তখন হঠাৎ ও একজন রিকশাওয়ালা কে ডাক দিয়ে বলল
——- মামা চলো ( একটা জায়গার নাম বলল)
দুইজনেই উঠে পড়লাম, আমার কাঁধে মাথা দিয়ে চুপ করে রইলো।
ও স্যরি আপনাদের তো এখনো আমার পরিচয় ই দেইনাই। আমি অন্তর আর আমার পাশের মহারানী হচ্ছেন আরোহি। উনি আমার সাথেই পড়েন। উনি বড়লোক বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আর কোনো ভাইও নাই ওনার আর উনি যথেষ্ট সুন্দরি অনেকেই ওনাকে পছন্দ করেন কিন্তু ওনার বাবার ভয়ে কেউই আগায় না কারণ ওনার বাবা প্রচুর টাকার মালিক আর প্রচুর ক্ষমতার অধিকারী। তবে আজ পর্যন্ত তিনি তার পাওয়ার এর কোনো অপব্যাবহার করেন নি। আমার বাবা মা কেউই নেই আমি এতিম। বাবা মারা যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা বাড়ি করে গেছেন বাড়িটা ছোট্ট হলেও অনেক সুন্দর মন কাড়ার মতো।এটা ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই। ও মা বোধহয় ব্যাংক এ তার অংশ বিক্রি করে আমার জন্য ৩৪ (চৌত্রিশ লক্ষ) টাকা রেখে গেছেন। বাবা ক্লাস সিক্স এ থাকতেই ইন্তেকাল করেছেন আর মা নাইনে থাকাকালীন এক্সিডেন্ট এ মারা যান। আমার এই দুনিয়াতে কোনো আত্বীয় স্বজন নেই।তাই প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে ৩৪ হাজার টাকা পাই।আর আমার মতো একজনের জন্য সেটা অনেক বড় আকারের টাকা। অনেক সুখেই আমি চলছি।
ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়ার কারণে আমি কোনো টিউশনি করতাম না। আমার খরচ চলে যায় সে টাকা দিয়ে। আমি বাহিরে থেকে যতই সুখে থাকতাম কিন্তু আমি তো বড়ই একা। পৃথিবী তে আমার কেউ নেই।আমার তখন আত্বীয় বলতে ছিলো নদী। নদীর পাড়েই সবসময় বেড়াতাম।কিন্তু আমি এখন অনেক সুখিই আছি। যদি ব্যাংক এর মেনাজার আংকেল আমার হক আমায় না দিতেন তাইলে আমি হয়তো কোনো ওয়ার্কশপ এ কাজ করতাম বা কোনো বাসে হেল্পার হিসেবে কাজ করতাম। হঠাৎ কারো ডাকে আমার হুশ আসলো।তখন আরোহি বলে উঠলো
—–আমরা পৌছে গেছি
——- হুম।(আমি)
ভাড়া দিয়ে দিলাম।আর আমরা হাটছি নদীর পাড় দিয়ে।একসময় আমি আর আরোহি ছিলাম একজন আরেক জনের রাইবাল। রাইবাল বলতে ও আমাকে ছোটো করতে না পারলে ওর রাতে ঘুম হতোনা । আমি তো এমনিতেই ছোটোলোক ছিলাম তাই আর আরোহিকে ছোট করতে পারতাম না ।আমাদের বন্ধুত্ব হলো কিভাবে তা বলছি —
## আমি যখন ম্যাট্রিক পাস করি তখন আমার জিপিএ ছিলো – ৪.৯৬ কিন্তু ওই কলেজে প্লাস ছাড়া কোনো ছাত্রদের নিতোনা। আমি একজন স্যার এর সাহাজ্যে ডুকি কোনো ঘুষ ছাড়াই। অনেকেই ছিলো ৪.৫০ এর নিচে তারাও টাকার সাহায্য নিয়ে ডুকতে পেরেছিল।
কলেজের প্রথম দিন যাচ্ছি তখনি একটা গাড়ি ডুকে মার্সিডিজ কার।( ব্ল্যাক কালার মার্সিডিজ)
অন্য দশজনের মতো আমিও এত সুন্দর গাড়ী দেখে হা করে তাকিয়ে ছিলাম গাড়িতে কে ছিলো খেয়ালই করিনি। হঠাৎ কেউ বলে উঠলো-
—— এই যে রাস্তা থেকে সরেন। রাস্তার মাঝখানে দাড়াই আছে যত্তসব আউল পাউল লোক।
আবার বলে উঠলো
—— ওই সরিস না কেনো?
আমি ছোটো বেলা থেকে একঘেয়ে টাইপের তাই আমিও উত্তর দিলাম
——– ওই রাস্তা কি তোর বাপের আর তুই তুকারি করছিস কার সাথে আমি এখানে স্থানীয়।
——– তো আমি কি রোহিঙ্গা?? আমরা এখানে থাকিনা ঠিকই কিন্তু আমিও স্থানীয় আর এ কলেজের জন্য পুরা যায়গাটা দিছে আমার বাবা আর আমার কাকারা। সো এটা আমারই কলেজ।আর তুই আমাকে স্থানগত ধমক দিচ্ছিস।
(আরোহি)
আমি মনে মনে ভয় পেয়ে যাই। ভাবলাম আমার একে তো জিপিএ কম তার উপরে কলেজের প্রেসিডেন্ট এর মেয়ের সাথে পাঙা নিচ্ছি।
—— আমি স্যরি বলে কেটে পড়লাম।
—— ওই যাচ্ছিস কোথায় এদিকে আয় স্থানীয় এর বাচ্ছা??? ওই যাচ্ছিস কই?(আরোহি)
আমি পিছনে না তাকিয়ে সোজা কেটে পড়লাম।পরে দেখলাম মেয়েটা আমাদের ক্লাস এই ডুকছে। বুঝলাম ও আমাদের ক্লাস এর।কত্তগুলো মেয়ে এসে ঝাপটে পড়লো ওর সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য। অবশ্য অনেক ছেলেও ফ্রেন্ডশিপ করার জন্য বোধ হয় আজ যারা আসেনাই তারা ছাড়া শুধু আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে ফ্রেন্ডশিপ করার জন্য যাই নাই
ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর স্যার আসলেন। বোধহয় প্রেসিডেন্ট কে এগিয়ে দিতে দেরি হয়ে গেলো। একে একে সবাইকে জিজ্ঞাস করলেন নাম আর জিপিএ
——— আরোহি তোমার জিপিএ কতো??(স্যার)
——— স্যার ৫.০০।
—— গোল্ডেন পাইছো?(স্যার)
——– হুম স্যার (আরোহি)
বুঝলাম মেয়েটার নাম আরোহি। আর অনেক ট্যালেন্ট ছাত্রী। ঠিক তখনি স্যার বলে ঊঠল—
——- এ হচ্ছে আরোহি। কলেজের প্রেসিডেন্ট এর মেয়ে স্কলারশিপ পাওয়া সত্ত্বেও সে দেশে থেকে পড়াশোনা করছে। একেই বলে দেশপ্রেম। অনেক হাওয়া মারলো স্যার।
অত:পর আমার কাছে জিজ্ঞেস করলেন?
——- এইই হিরো তোমার নাম কি?(স্যার)
আমি দুই পাশে তাকিয়ে বললাম
——স্যার আমাকে বলছেন?(আমি)
——- হুম তোমায়। তোমার নাম কি??
আমি জানতাম স্যার আমায় ইচ্ছে করেই হিরো বলছেন আসলে আমার চুল গুলো একটু কোঁকড়া। হাল্কা। আর আমি চুল আছড়াতাম না।তাই হয়তো বলদের মতো লাগছিলো
——- অন্তর (আমি)
——- জিপিএ????(স্যার)
—— ৪.৯৬ স্যার
——- ডোনেশান কতো লাগছে??? (সবার সাম্নেই এ কথাটা বলে ফেললেন স্যার)
——- লাগে নাই স্যার (মাথা নিচু করে)
——- তাহলে কিভাবে ভর্তি হলে???
——– স্যার মুক্তিযোদ্ধা কৌটায়!
——– ওয়েল। সিট ডাউন
প্রথম দিন স্যার দের সাথে পরিচিত হতে হতেই কেটে গেলো।
পরের দিন আমি স্কুল এ আসার সময় হঠাৎ করে একটা সাদা কালারের কার এসে ব্রেক করল। আমি অন্যমনস্ক ছিলাম তাই সরে না যাওয়ায় ব্রেক মারলো। তখনি দেখলাম প্রেসিডেন্ট এর মাইয়া মানে আরোহি. দেখলাম মাথা ফাটা। রক্ত ঝরছে।
-** হঠাত করে একজন টিচার এসে আমায় থাপ্পড় দিয়ে দিলেন।
—— দেখে হাটতে পারোনা?? (স্যার)
আমি গালে হাত দিয়ে
—— স্যার আসলে গাড়িটা হঠাৎ করে আসায় আমি সরে উঠতে পারি নাই। আর উনিই তো জোরে চালাচ্ছিলেন।
**** আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন
—— মুখে মুখে তর্ক করছ আবার।(স্যার)
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। তখন আর কয়েক জন স্যার আদিক্ষেতা দেখাতে এগিয়ে এসে গেছেন অনারা ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছেন।।
তবে আমার চোখ থেকে পানি পড়বেই মনে হচ্ছে কারণ স্কুল লাইফেও আমি কারো হাতে চড় খাইনি। তাই চোখের আর তর সইছে না।
——- গেট আউট অফ দা ক্যাম্পাস (স্যার)
আমি সোজা মাথা নিচু করেই বেরিয়ে গেলাম।সোজা বাসায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন। আবার ক্লাসে গেলাম সবাই কেমন যেনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বুঝলাম। কালকে যে চড় খাইলাম বোধহয় সবাই দেখছে।
সোজা ক্লাসে চুপ করে বসে পড়লাম।
——– গুড মর্নিং। স্টুডেন্টস।
——- মর্নিং স্যার
——– ক্লাস করালেন।আমায় হঠাৎ অফিসে ডাকা হলো দেখলাম প্রিঞ্চিপাল, আরোহি,তার বাবা(প্রেসিডেন্ট).,ওই বজ্জাৎ স্যার টা,,
আমাকে স্যার বলল মাফ চাওয়ার জন্য
—–স্যার আমি কেনো মাফ চাইবো? (আমি)
—— যা বলছি তাই করো। নাহলে তোমায় কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হবে (স্যার)
আরোহির বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন । আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। আমি সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠি–
——- আমি এরকম কোনো কলেজে পড়তেও চাইনা যেখানে স্যার রা চামচামি করবে প্রেসিডেন্ট এর। যেই কলেজের মদ্ধে কোনো রুল্স নেই আমি এমন কলেজ থেকে পড়ে কিছু হতেও চাইনা। এখানে কোনো শিক্ষক ই নাই সবগুলা হচ্ছে চামচা। যাহ আমাকে টিসি ই তো দিবি দে।(এক নিশ্বাসে সব বলে দিলাম)
## সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে বোধহয় কেউ আমার এই রুপ দেখে তাকিয়ে কেউ রেগে তাকিয়ে আছেন।।
আমি বেরিয়ে এলাম আর মনে মনে চিন্তা করছি আমিতো শেষ আমায় তো বাহির কইরা দিবো। হায় আল্লাহ কেনযে নিজেরে কন্ট্রল করতে পারলাম না।
আর দুই দিন গেলাম না কলেজে। ঘুম থেকে ১১ টা বাজে উঠে দেখি বাহ প্রিন্সিপ্যাল, প্রেসিডেন্ট, আরোহি আমার ঘরে হাজির নিজেরাই ফ্যান চালিয়ে বসে আছেন বোধহয় অনেক আগেই এসেছেন।।।
মনে মনে ভাবছি টিসি দিতে তো তিনজন আসা লাগেনা, বেপারটায় গোলমাল আছে!

আর দুইদিন গেলাম না কলেজে। ১১ টা বাজে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাহ প্রিন্সিপাল, আরোহি, আর প্রেসিডেন্ট (আরোহির বাবা) আমার ঘরে হাজির। বাহ তারা ফ্যান চালিয়ে বাতাস খাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে অনেক আগেই এসেছে। প্রেসিডেন্ট এর মুড দেখে মনে হচ্ছে যেনো- নিজের মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। নিশ্চয় কোনো গোলমাল আছে। মনে মনে ভাবছি টিসি দিতে তো তিনজন আসার কথা না। হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট বলে উঠলো –
—– কেমন আছো অন্তর??(প্রেসিডেন্ট/সভাপতি )
—– জি স্যার ভালো. (আমি)
—– আমাদের দেখে অবাক হচ্ছো!তাইতো?(সভাপতি)
চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি
—– আমি তোমার বেপারে সব শুনছি।তোমার কারো কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না।তুমি নিয়মিত কলেজে আস ক্লাস কর।কোনো সমস্যা হলে আমার অফিসে এসে যোগাযোগ করবা (সভাপতি)।
—– জি স্যার (আমি)
—– আমি জানতাম অন্তর খুবই বাধ্য একটা ছেলে। ওকে যা বলি ও অমান্য করে না (প্রিন্সিপ্যাল)
আমিতো রীতিমত অবাক এত সুনাম। এক্সট্রা হাওয়া মারছে কোনো উদ্দেশ্য নাইতো আবার। না মনে হয় না।
—– জি স্যার। (আমি)
অতঃপর আমি প্রতিদিন যেতাম কলেজে ক্লাস করতাম।পড়া শিখতাম। সব স্যারই আমায় কেমন যেনো জামাই আদর করা শুরু করে। আর আমি সবসময় আরোহি কে এড়িয়ে চলতাম।যদিও ভয়ে এমনিতে উপর থেকে পুরুষত্ব দেখাতাম। কিছুদিন পরেই ক্লাস পার্টি আসলো। ক্লাস পার্টি এর দিন সবাই নিউ নিউ ব্লেজার, শার্ট,টি-শার্ট, জিন্স,কনভার্স, পরে আসলো। স্যার রাও অনেক স্টাইলিশ ভাবে আসলো।আমার মনেই ছিলোনা আজ যে ক্লাস পার্টি নাহলে আসতাম ইনা। আমি সিম্পল ভাবে আসছি। তাই ভাবলাম যদি আরোহি প্ল্যান করে আজ আমায় অপমান করে। তার চেয়ে আমি এখানে নাই বা থাকি।সোজা নদীর পাড়ে চলে গেলাম। বসে আছি নদীর পাড়ে তাকিয়ে আছি নদীর দিকে।
হটাৎ একটা হাত আমার পিছনে পড়ে
—– আমায় এভয়েড করছো কেনো অন্তর?
আমি চমকে যাই আর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আরোহি। আমি চুপ করে রইলাম।
—– কী হলো। এভয়েড করো ভালো কিন্তু কথা ও বলতে চাওনা (আরোহি)
—–…………আমি চুপ।
ধপাস করে পাশে বসে নদীর ডেউ দেখছে। দুইজনই চুপ অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর আমি বললাম –
—– ক্লাস পার্টি হচ্ছে তুমি যাচ্ছনা কেনো?(আমি)
আমার দিকে তাকালো আর বলল –
—– ক্লাস পার্টি টা সবার তুমি যাওনাই কেনো?(আরোহি)
—– আমার পার্টি ভালো লাগেনা। (আমি)
ও চুপ করে কি ভাবতে লাগলো।
—– আচ্ছা অন্তর আমার অপরাধ টা কী??(আরোহি)
—– মানে??(আমি)
—– অন্তর শুনো! কথা না বলা এক জিনিস। ভালো লাগে না তাই কথা বলবানা। কিন্তু এভয়েড কেনো করছো? (এক নিশ্বাসে সব বলে দিলো আরোহি)
$$$$$ তাও আমি চুপ। $$$$
—– এখনো চুপ করে আছো কেনো??? আমি তোমাকে ফ্রেন্ড হওয়ার কথা বলছিনা।কিন্তু হাসি মুখে কথা বলতে পারো।তুমি নিজেকে কি মনে করো??
—– এতিম (আমি)
অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
—– এ দুনিয়ায় আমার কেউ নেই। তাই আমার ফ্রেন্ডশিপ রিলেশনশিপ এসব ভালো লাগেনা।।তাই একা একা কলেজে আসি যাই খাই পড়ি ঘুমাই এটাই আমার দৈনন্দিন রুটিন হয়ে গেছে। আর আমার ভয় লাগে কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে যদি তাকে হারাই ফেলি! (আমি)
—–……. চুপ…..
কিছুক্ষণ দুইজনেই চুপ হঠাৎ সে হাত বাড়িয়ে বলে
—– ফ্রেন্ডস?
—– না (আমি)
—– কথা দিলাম কখনো হারাবোনা(আরোহি)
আমি হাতটা ধরলাম আর একটা শর্ত দিলাম তুই করে কথা বলার জন্য। এরপর দুইজনেই কেমন যেনো বদলে গেলাম। ওর মধ্যে অহংকার এর কোনো ছিটেফোঁটা ও নেই।এর পর আমরা একসাথে ঘুরতাম খাইতাম। একসাথে H .S.C.দিলাম দুইজনেই ভালো ভাবে পাস করলাম। এখন আমরা দুইজনেই অনার্স ২য় বর্ষের। ওর বাবাও আমায় নিজের ছেলের মতোই আদর করে।আগের এসব কথা ভাবতে ভাবতেই
হঠাৎ আরোহি বলে উঠলো
—– কিরে কি ভাবিস? (আরোহি)
—– না কিছুনা। তোর সাথে কিভাবে বন্ধুত্ব হলো সেটা।(আমি)
—– ও মনে আছে তাহলে।(আরোহি)
—– হুম।(আমি)
হঠাৎ করেই কেউ আমার চুল ধরেই টান দিলো খুব জোরেই।পিছনে তাকিয়ে দেখি সুমাইয়া।
—– ওই তুমি না আমার সাথে আজ ঘুরতে যাবা। (সুমাইয়া)
—– ওই মাইয়া তোরে না মানা করছি অন্তররে তুমি তুমি করে না বলার জন্য(আরোহি খুব রেগে)
—– ওই তুই কে আমাদের মাঝে আসার ( সুমাইয়া চিৎকার দিয়ে)
—– আমি কে মানে! আমি ওর সব।আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড। তোর কোনো সমস্যা?? (আরোহি)
—– তাহলে আমিও ওর জি,এফ। কয়দিন পর আমরা বিয়ে করছি!(সুমাইয়া)
—–অন্তর! মানে কি এসবের? (আরোহি)
—–মানে কিছুনা (বিলাইএর মতো কথাটা বলেই হাটা ধরলাম আমি)
পিছন থেকে দুইজনে দুই কান ধরে ফেললো।আমি দোড় দিতেও পারছিনা।হঠাৎ সুমাইয়া বলে ঊঠলো-
—- অন্তর আমাদের দুইজনের মধ্যে একজন কে এখনি বেছে নিতে হবে! তুমি ডিসাইড করো।কাকে নিবা(সুমাইয়া)
এ কথাটা শুনে আরোহি কেমন যেনো ভয় পেয়ে গেলো।তবুও সুমাইয়ার সাথে তালমিলিয়ে বললো হ্যা এখনি ডিসাইড করবি।
—– কান তো ছাড়বি তাহলে আমি বলছি(আমি)
কান ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই দিলাম এক দৌড়। একটা জুতা রয়ে গেছে। তবুও থামলামনা। সুমাইয়া সাথে সাথে তার পার্সটা ছুড়ে মারলো আমি সুমাইয়ার পার্স খুলে ১০০ টাকা নিয়ে আবার ওর কাছে মারলাম সোজা CNG তে উঠে গেলাম। আসোলে মানিব্যাগ এ ভাংতি নাই আমি জানি, কালই আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলছি খালি ৪ টাকা আছে। এবার
সুমাইয়ার হিস্টোরি দিচ্ছি।আমি আমার কলেজ লাইফে কোনোদিন এসাইনমেন্ট করি নাই সব আরোহি বা ছোটো ভাইরা করে দিতো। তবে কয়েক মাস আগে আরোহি খুব অসুস্থ ছিল। তাই ও বলা সত্ত্বেও আমি তাকে দিইনাই।তখন আমার ফেসবুক এ গল্প পড়ে একটা মেয়ে মেসেজ দেয়!আইডির নাম Angel Sumaiya।
—– হ্যালো (sumaiya)
—– excuse me(sumaiya)
—– জি বলেন!(আমি)
—– আপনার লিখা গল্প গুলি অনেক সুন্দর। আপনি এতোসুন্দর গল্প লিখতে পারেন!(সুমাইয়া)
—– হাওয়া মারছেন। ধন্যবাদ হাওয়া মারার জন্য।
—– সিরিয়াসলি আমি হাওয়া মারছি না কমেন্ট দেখেন।(সুমাইয়া)
তখন মনে মনে লুঙি ডান্স দিচ্ছিলাম।বাহ আমার গল্প সত্যিই খারাপ না। আসলে কিছু কমেন্ট অনেক ভালো ছিলো।
তখন সে আবার বলে উঠলো
—– আছেন না কি মরে গেছেন!(সুমাইয়া)
—– না মরি নাই (আমি)
সুমাইয়া চ্যাট এর কালার রেড করল
——কি হলো আপনি চ্যাট এর কালার রেড করলেন কেনো? (আমি বললাম)
—– আসলে রেড ভালোবাসার প্রতীক তাই (সুমাইয়া)
—– হুম।(আমি)
—– আচ্ছা আপনার পরিচয় পেতে পারি? (সুমাইয়া)
—– জি আমি অন্তর। ফুল নেম এটাই মানে আইডির নাম। হাইট ৫:৮”।কালার উজ্জ্বল শ্যামবর্ন মানুষ সুন্দর ই বলে। চেহার গড়ন অতো ভালো না। বাড়ি নিজের গাড়ি নেই। কোনো ইনকাম নাই। ব্যাংক এর টাকায় খাই। ফ্যাভারিট খাবার নুডুলস।নদীর পাড় ভালো লাগে। এবার প্লিজ আপনার পরিচয় দেন। (আমি)
—– আমি সুমাইয়া বাবা বর্তমানে দিনাজপুর জেলার ডিসি(D.C.)।হাইট -৫.৩” কালার -ফর্সা সুন্দর কিনা জানিনা। ফেভারিট ফুস্কা।নিকনেম – ইতি।(সুমাইয়া)
—- হুম.(আমি)
—- আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি?(সুমাইয়া)
—- এখনোতো ফ্রেন্ড। (আমি)
—- আরে ওটা তো ফেইসবুক ফ্রেন্ড। রিয়েল লাইফ ফ্রেন্ড হবো!আমি আপনার সাথেই পড়ি অনার্স ২য় বর্ষে। আর আমি আপনাকে চিনি। লম্বা করে চুল একটু কোঁকড়ানো সুন্দর। একটা মেয়ের সাথে সারাক্ষন বসে থাকেন।ও যা বলে আপনি তাই করেন তাই না।এখন বলেন ফ্রেন্ড হওয়া যাবে?(সুমাইয়া)
আমার তো আরোহির কথা মনেই ছিলোনা। ও যদি শুনে আমি কোনো মেয়ের সাথে ক্লোজ হইছি তাও আবার একই কলেজ এ।আমার চুল টাইনা ছিড়বো।তার উপরে এই মাইয়ার বাপ ডিসি। পুলিশ এর ডান্ডার বাড়ি খাওয়ার ইচ্ছা নাই।তাই কেটে পড়াটাই শ্রেয়।
—– আপু আমি এসাইনমেন্ট করব তাই এখন কথা বলবনা। (আমি)
—– ও তাইলে গল্প লিখে এসাইনমেন্ট করবেন??(সুমাইয়া)
হায় আল্লাহ এই মেয়ে তো সব জেনে খেলতে নামছে
—– আরে না। আসলে যে আমার এসাইনমেন্ট করে দেয় সে অসুস্থ। তাই কাউকে বলতে হবে এখন ওইটার কথা চিন্তা করতে হবে বায়(আমি)
—– যদি আমি করে দেই!তাহলে কথা বলবেন? (সুমাইয়া)
—– কিছু না ভেবে বললাম ঠিক আছে বাট কিভাবে করবেন।?? (আমি)
—– কাল কলেজে আসেন ক্যাফে আড্ডা তে আমি বসব।(সুমাইয়া)
—–ওকে ডান(আমি)
এভাবে কয়েকদিন মেয়েটা এসাইনমেন্ট করে দিছে আর আরোহি ও সুস্থ হয়ে গেছে।
আরোহি সব শুনে আমায় এসে বলে-
—– তুই কী নাটক শুরু করছস?কি এতো খাতিল ওই সুমাইয়ার সাথে? (আরোহি)
—– আরে নাহ দোস্ত আসলে ও আমার এসাইনমেন্ট করে দিছে তুই যখন অসুস্থ ছিলি।(আমি)
—– অন্তর কথা বল ভালো কিন্তু লিমিট ক্রস করিস না।(আরোহি)
—– ওকে। বুজছি তোর আজকে মন ভালো নাই!চল ঘুরতে যাবো!(আমি)
—– না। অন্তর আমি তোকে জিবনেও হারাতে চাইনা।(আরোহি অনেকটা কেঁদে কেঁদে)
এর পর থেকে আরোহি আর সুমাইয়ার একটু না একটু ঝগড়া লেয়ল্গেই থাকে।দুই জনে পারে না আমারে কাইটা অর্ধেক করে ফেলতে।
আর আজ তো দেখলেন ই।আর আমি আমার বাসায় চলে আসছি। CNG থেকে নেমে বাসায় আসলাম।OMG ৪৩ টা মিসড কল।আজ সত্যিই আমায় ছাড়বোনা আরোহি।আবার আগের জায়গায় চলে যাই-
আমি এই দুইজনের মাঝে ধন্ধ থামানোর জন্য ভাবলাম আরোহি আমায় ভালোবাসে। চিন্তা করলাম আমি খুব হেন্ডসাম।নাহলে দু দুটো মেয়ে আমার জন্য এতো ইয়ে করতো না।তাই আমি কিছুদিন আগে আরোহিকে প্রপোজ করি ভাবলাম৫ বছরের বন্ধুত্ব আরোহির অধিকার বেশি।কিন্তু আরোহি আমায় কসাই একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে তোরে আমি বন্ধু ভাবচিলাম আর তুইই আমায় এখন প্রপোজ করলি আমি গালে হাত দিয়ে মনে মনে ভাবি ধুরর যদি হেন্ডসাম হইতাম তাইলে আরোহি আমায় থাপ্পড় দিতোনা। আমি চুল আচড়াই ফ্রেশ হয়ে সুমাইয়া কে প্রপোজ করলাম সাথে সাথে এক্সেপ্ট।সুমাইয়া বলল
—– আমি অনেক আগ থেকে তোমায় পছন্দ করতাম অন্তর। (সুমাইয়া)
সব আরোহিকে বলার পর আমি আরো একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে
——সুমাইয়ার সাহস হয় কিভাবে ও তোর প্রপোজ এক্সেপ্ট করার। (আরোহি)
সেই থেকে আমি প্যারার মধ্যে আছি। কাল আসলে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ এর ৫ বছর পূর্ন হবে -।

—— সুমাইয়ার সাহস হয় কিভাবে তোর প্রপোজ এক্সেপ্ট করার (আরোহি)
আর কাল আমার আর আরোহির ফ্রেন্ডশিপ এর ৫ বছর পুর্ণ হবে।তাই ভয়ে আছি কাল আমায় ফাইনালি দুইজনকেই কিছুনা কিছুতো বলতে হবে। আমি ভয়ে ভয়ে আছি। আমি ভাবতেই পারছিনা একজন ৪ বছর ১১মাস৩০ দিনের বন্ধু। আরেকজন আমাকে ভালোবাসে।আমি কি যে করি!
সকাল বেলা ঘুম ঘুম থেকে উঠে দেখি কতোগুলো ভয়েসমেইল।একটা চালু করলাম –
—–এই শালা এতোগুলো ফোন দিচ্ছি ধরিস না কেনো?আল্লাহ জানে মরে গেছিস নাকি? আর সুমাইয়ার লগে তুই ক্যাফে জিল এ দেখা করবি! না!আয় তোদের দেখা আমি করাচ্ছি। ওই তুই আমাকে একবার জানানোর কথাও মনে করিস নি??আমি তোর বাসায় আসছি। (আরোহি)
—– Omg আজ সুমাইয়ার সাথে দেখা করার কথা ছিলো বাট আর অল্প কিছুক্ষণ সময় আছে। আমিতো ভুলেই গেছি! (আমি মনে মনে)
না আরোহি আসবেনা, রাগের মাথায় হয়তো বলেছে আসবে। আপনাদের তো বলতেই ভুলে গেছি আসলে আজ সুমাইয়া কে আমি এজন্য ক্যাফে ঝিল এ ডেকেছি কারণ আমি যদি সুমাইয়ার সাথে রিলেশন এ জড়াই তাহলে তাহলে আরোহির সাথে কথা বলতে দিবে না। আর আমি জানি আরোহিকে ছাড়া আমি বাচবো ও না। তাই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাইছি যে সুমাইয়ার সাথে সব কিছু কাট করে দিবো।
রেডি হচ্ছি আর মনে খুব দু:খ একটা মেয়েকে হারাই ফেলতে হবে। আচ্ছা থাক যাই হোক।আমি যেই মাত্র বাথরুম এ গোসল করার জন্য ডুকছি ওই মুহুর্তে দেখি কে দরজা চাপড়ানো শুরু করে। আরে আমার ঘরে এসময় কে আসবে তার উপরে এতো ইমারজেন্সি যে টয়লেট এর দরজা চাপড়ানো শুরু করছে। আমি টয়লেট থেকে
—— কে রে?? (আমি)
—— তোর বৌ। (আরোহি)
আমি একটু দরজা ফাঁক করে দেখি আরোহি। ও মা গো। আমি শেষ। এতো সিরিয়াসলি চলে আসছে।
—— বাহ এক্কেবারে গোসল করে সেজেগুজে উনি দেখা করতে যাবে। মনে হচ্ছে নিজের পিয়ান্সির(হবু বউ/বিয়ে ঠিক হয়েছে এমন মানুষ) সাথে দেখা করতে যাবেন! (আরোহি জোরে জোরে
—— ওই তুই টয়লেট থেকে বাহির হবি নাকি আমি বাহির থেকে দরজা আটকাই দিবো! (আরোহি)
—— দোস্ত কিভাবে বাহির হইতাম টয়লেট এ টাওয়াল ছাড়া আর কিছু নাই। ওখানে আমার গেঞ্জি আন্ডারঅয়ার আর প্যান্ট আছে তুই এসে দিয়া যা।(আমি)
—— ছি! ছি! তোর লজ্জা ও করেনা আমায় তোর আন্ডারঅয়ার আনতে বলছিস।(আরোহি)
—— লজ্জা কিসের! তুই ইতো। কয়দিন পর তো আমার বউ হবি। তাই আগে থেকে প্র্যাক্টিস করছি।(আমি)
—— ওই তুই বাহির হ।
—— কিভাবে বাহির হবো? তুই এনে দে না!
—— এই নে তোর আন্ডারঅয়ার।ওয়াক!! lol
!
—— এতো ডং করিস না। এটা নতুন। আর তুই কিন্তু আমার আন্ডারয়ার এর মান ইজ্জত নষ্ট করছিস। (আমি)
—— চুপ কর রোহিঙ্গা। তোর নিজের ইজ্জত নাই আবার আন্ডারঅয়ার এর ইজ্জত চাইতেছে। (আরোহি)
বাহির হতে না হতেই দুম দাম পিঠের উপর পড়তে লাগলো।
—— ও মা গো। আমি শেষ।(আমি)
——চলেন আমিও যাবো। আপনার সাবেক গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করার জন্য।(আরোহি)
—— চল।
গেলাম যাই বসে আছি সুমাইয়া সেজেগুজে আসছে আমি বললাম –
—— সুমাইয়া তুমি ও জানো আজ আমাদের ফ্রেন্ডশিপ এর ৫ম বছর। আমি আসলে তোমায় যে কথাটা বলার জন্য আসছি সেটা হচ্ছে আমি চাচ্ছি তুমি আমার সাথে যোগাযোগ না রাখো।আমি দুষ্টুমি করেই প্রপোজ টা করছিলাম। আর তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিছো।তাই আমি জানি আরোহি আমার জন্য কতোটা ইম্পরট্যান্ট। সো –
কিছু বলার আগেই সুমাইয়া অনেকটাই কেঁদে কেঁদে বলে উঠলো —
—— অন্তর আমি বুঝে গেছি। আমার জন্য তুমি চিন্তা করোনা। আমি ভালো থাকবো আর এটাই বলব- Congratulation , তোমাদের বন্ধুত্বের ৫ম বছর উপলক্ষে! দুজন এভাবেই হাসিখুশি থেকো।সারাজীবন একসাথে থেকো।আর আরোহি, অন্তর অনেক মিষ্টি একটা ছেলে অনেক ভালো একটা ছেলে ওকে দেখে রেখো।
আমায় একটা অনুরোধ করলো সুমাইয়া –
—— আচ্ছা অন্তর আমি আর কখনো তোমার সামনে আসবোনা তাই একটা হাগ করবে প্লিজ! লাস্ট!
আমি কিছু না ভেবেই করলাম।আরোহি ও কিছু বলল না। খুব জোর করে ধরে রাখলো।অতঃপর বাম গালে আলতো করে চুমু দিয়ে চলে গেলো। তবে একফোঁটা চোখের পানি ও আমার জন্য ফেলে গেলো। কেন জানি খুব কস্ট হচ্ছিলো।ওই দিন আরোহিকে বলে বাসায় চলে আসলাম। কিচ্ছু ভালো লাগছিলোনা।সাথে সাথেই সুমাইয়াকে ফোন দিলাম -Not reachable বলছে। শুয়ে পড়ি বিকেল বেলায়। রাত তিন্টায় উঠি। এরপর আর ঘুম আসলো না তাই কম্পিউটার এ যাবতীয় কিছু কাজ করলাম।
-এর পর আবার সব আগের মতোই হয়ে গেল। তবে মাঝেমধ্যে সুমাইয়াকে খুব মনে পড়তো কেনো? নিজেও জানিনা।
এভাবে ৯ মাস চলে গেলো।প্রায় আগের মতোই দিন কাটাচ্ছিলাম।শুনাল আরোহির বিয়ে ঠিক করেছে এ ভয়ে আমি আরোহিকেও প্রপোজ করলাম যদি হারিয়ে ফেলি- আরোহি সাথে সাথে একটা চড় দিয়ে বলে –
—— তোর সাহস হয় কিভাবে আমায় প্রপোজ করার আগে আগে তুই ফান করে করতি সেটা বুঝা যাইতো। বাট আজ তোর চোখে সিরিয়াসনেস কাজ করছে। তুই ভাবলি কিভাবে তোর মতো এতিম এর বউ হবো। তোর ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখ আর আমার ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখ। আমার বাবা এখান কার শিল্পপতি। তার কথায়(ডিসি),(এস,পি) রাও উঠে বসে।সো একবার ভেবে দেখ।
আমি এই প্রথম আরোহির চড়ে ব্যথা পেলাম যদিও জোরে মারেনি তবুও কেনো জানি কষ্ট হচ্ছিলো আমি নিজেও জানি না আমি তো অবাক আরোহির এ রুপ এ দেখে। কোথা থেকে আসলো এ অহংকার আবার বলে উঠলো —
—–আমি জানি অন্তর তুই অনেকটাই অবাক হচ্ছিস। আর কষ্ট ও পাচ্ছিস সেজন্য স্যরি বাট তোর মনে আমি না সুমাইয়া বসে আছে। সেটাই সত্যি এই নয় মাসে তুই অনেকটাই বদলে গেছিস। জানিনা সুমাইয়া তোকে জাস্ট একটা হাগ করে কিভাবে এতোটাই বদলে দিলো! এখনো সময় আছে ওর কাছে যাহ। আমার কাছে সুমাইয়ার ঠিকানা আছে। হুম ও তোকে খুব ভালোবাসে সেই Angel Sumaiya থেকে একটা সত্যিকারের গল্প লিখেছিলো কয়েকদিন আগে অনেক ভাইরাল ও হয়েছিলো। সেই গল্প টায় ওর পরিচয় দেয়া আছে। ওই গল্পটার মূলত তোকে কেন্দ্র করেই আমাদের তিনজনের অনির্দিষ্ট জিবনের কথা গুলো লিখছে। আর আমি বুঝতে পারি ও তোকে কতোটা ভালোবাসে। আর শুন এসব কথা তোকে এজন্য বলছি নাহলে তো কুকুরের মতো আমার পিছনে ঘুরবি।আর তোকে আমার থেকে বেশি কেউ চিনে না। তুই কখনো আমার পিছু ছাড়বিনা কারণ তুই কুকুরের মতোই।তবে তোর জন্য আমার দরজা খোলা তবে সেটা ফ্রেন্ডশিপ পর্যন্তই।
আমার তখন খুব রাগ হয়। ইচ্ছে করছিলো একটা চড় বসিয়ে দেই। বেষ্ট ফ্রেন্ড তো তাই। চলে আসি। বাসায় আসি শুয়ে পড়লাম দেখলাম চোখ ভিজে আছে। কাঁদি নাই তবুও চোখ ভিজা।
আমি আমার ফ্রেন্ড সিফাত এর থেকে আইডি লগ ইন করে ডুকলাম Angel sumaiya দিয়ে সার্চ দিলাম। বাহ সেই আগের প্রোফাইল পিকচার শুধু বাড়তি কিছু কবিতা লিখছে। আর কিছু পোস্ট করছে। আমি সেই গল্প টা দেখলাম 11k like এবং 8.6k comment আমি অবাক সুমাইয়া আমাকে এজন্য ব্লক মারছে যাতে আমি গল্প টা পড়ে ইমোশনাল হয়ে না যাই।তার পর পড়লাম – আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো বাট নিজেকে কন্ট্রোল করছি। বাবা মা ফুরুত হওয়ার পর এ চোখ থেকে পানি মাটিতে পড়েনাই। কিন্তু পোস্ট টা পড়ে কেমনে জানি চোখ থেখে কয়েক ফোটা নোনা জল বালিশে পড়ে গেলো। আমি এর পর ঠিকানা লিখে নিয়ে কোনোকিছু না ভেবে নোয়াখালি থেকে রাজশাহির টিকিট নিলাম। সকালে নিয়ে বাসায় আসলাম।আমি ধৈর্য ধরতে পারলাম না টিকিট টাকে সোজা কমোডে ফেলে দিয়ে আমার ফ্যাভারিট ব্যাগ নিয়ে লোকাল বাসে উঠে পড়লাম। মাসের শেষের দিকে হাত পুরা খালি আপনারা তো জানেনই ব্যাংক থেকে নতুন মাসের ৩-৭ তারিখে মুনাফা দেয়। সো আমি মাস শেষে ৩৪ হাজার টাকা পাবো কিন্তু এখন পুরাই খালি।নোয়াখালী থেকে চিটাগং। ওখান থেকে ঢাকা গেলাম মানিব্যাগ এ টাকা ছিলো ৯৪৮ টাকা। ৩৫০ টাকা ঢাকাতে যেতেই শেষ খূব খিদা ও লাগছে। খাই নিসি ৪০০ টাকা আর বাকি ১৯৮ টাকা।বাহ ক্রেডিট কার্ডটা ও আনি নাই। বিকাশ account ও নাই সো মাথাটা হ্যাং করছিলো। আমি ব্যাগে উলটা পালটা টাকা রাখি। তাই ভাব্লাম এতো মাসে আমি নিশ্চই অনেক টাকাই জমা থাকবে হয়তো ৫/৬ হাজার টাকা হবেই।
তাই ব্যাগে হাত দেই হাত দেওয়ার পর একটা রিং আর কিছু টাকা সাথে আর একটা চিঠি খুললাম-
——অন্তর আমার নাম শুনেই প্লিজ চিঠিটা ফেলে দিসনা এমন কি টাকা গুলো আমার না তোর।
তোর মাথা গরম বাট তোর টাকা, তুই ফেলে দিলে তোরি ক্ষতি হবে। এখানে তোর ৭ হাজার ২১১ টাকা আছে। তুই যখন আজ সকালে টিকিট কিনতে গেছিলি আমি তোর টাকা গুলো গুছিয়ে ব্যাগে রেখে দেই।
—– অন্তর আমি তোকে খুব ভালোবাসিরে। তোকে ওই চড়টা মারার কারণেই তুই তোর প্রকৃত ভালোবাসার মানুষের কাছে যেতে পারছিস। না হয় তুই আমার কথা ভেবেই আর যাইতিনা।একটা চড়ই তোকে তোর ভালোবাসাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আর এই রিংটা ভাবছিলাম আমি পরব তোর হাতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না সুমাইয়াকে প্লিজ নিজের হাতে পরিয়ে দিস পারলে রাজশাহী থেকে বিয়ে করে আনিস হয়তো এখানে বিয়ে করতে চাইলে আমার কারণেই পারবিনা। তাই প্লিজ বিয়ে করে আনিস।তোর সাথে ওকে খুব মানাবে আর সত্যিই সুমাইয়া Angel ই। — বাকি সব আয় তোকে বলবো।আর হ্যা ব্যাগে পাওয়ার ব্যাংক আছে তিন চারবার চার্জ দিতে পারবি তোর মোবাইল এ মাত্র ২৩ % চার্জ আছে।।ক্রেডিট কার্ড শেষ ব্যাগে
—— ইতি তোর জানু আরোহি।সুমাইয়ার সাথে একটু কথা বলাবি।
আমি আরোহির চিঠিটা পড়ে সত্যিই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে চিনতেই পারিনাই।ওর কাছে সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ। সব ব্যবস্থা করে দিসে ও। একেই বলে বেস্ট ফ্রেন্ড।
অতঃপর আমি এসি বাস বুকিং করে সোজা রাজশাহি চলে যাই।একটা বাজারে যাওয়ার পর মোবাইল এর ঠিকানা রিকশাচালক কে দেখালাম উনি বললেন ৮০ দেওয়া লাগবো
—– আচ্ছা চলেন!(আমি)
—– মামা আপনি মনে হয় নতুন। (রিকশাচালক)
—– কেনো?
—– ভাড়া ৪০ টাকা আপনি কোনো কথাই কইলেন না। (উনি)
—– একটা হাসি দিলাম।
নামিয়ে দিলো। আর বলল
—– ডিসি সাবের বাড়ি(উনি)
আমি মনে মনে ভাবলাম আমার হবু শ্বশুর মশাই তো ঘুষ খান নাহলে এতো দারুন বাড়ি আমি দেখিনাই।শালার নোয়াখালিতে একটা এখানে একটা এটা অবশ্য সুমুর দাদার বাড়ি। মনে হয় বাপ-দাদারা অনেক প্রভাবশালী ছিলেন
হঠাৎ একজন লোক আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। ৫২- ৫৫ ভিতরে বয়স হবে এমন তবে হেন্ডসাম। উনি বললেন
—–তোমার নাম অন্তর না???(উনি)
—–জি আমি অন্তর! (আমি)
—– ইতি উপরে আছে! যাও বাবা।(উনি)
—– জি আমি সুমাইয়ার ফ্রেন্ড! ইতি?(আমি)
উনি হেসে বলেন –
—– শুধু ফ্রেন্ড না অন্যকিছু? আর সুমাইয়ার ডাক নাম ইতি। আমি ওর বাবা।(উনি)
—– আংকেল আসসালামু আলাইকুম! (আমি)
—– উত্তর নিলেন আর বললেন তাড়াতাড়ি যাও!(বাবা)
আমি সোজা দোতালায় উঠলাম দেখি একটা রুমের দরজা খোলা। একটা মেয়ে শুয়ে আছে পিছন দিক দেখা যায়। ডুকে গেলাম আমি তো অবাক।
এই রুমে আমার এতো ছবি।আমি ছবি গুলো দেখলাম। তারপর মেয়েটা এপাশ করে শুলো চেহারা দেখা যাচ্ছে। দরজা আরেকটু ফাঁক করলাম আলোতে স্পষ্ট দেখছি এ তো আমার সুমাইয়া। টেবিলের উপর আমার একটা ছবি।যদিও আমার ছবি সুন্দর আসেনা তাই আমি ছবি তুলতাম না। কিন্তু এতো ছবি পেলো কই??সুমাইয়া হঠাৎ জেগে উঠলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের নিচে কালি পড়েগেছে পুরা শুকাই গেছে কিছুটা রোগা মনে হচ্ছে। সে বেড থেকে উঠে দাড়ালো। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় ৪৪০ ভোল্টের শক খেলো।আমি কাছে গিয়ে কসাই দিলাম এক থাপ্পড়। তাও গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমি বলি –
—– ওই সিমটা ফেলছো কেনো?
—–………
—– আমায় ব্লক মারছো কেনো??
—–………
কিছুক্ষন পর হঠাৎ আমায় জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।আমিও জোরে জড়িয়ে ধরে আছি। জড়িয়ে ধরেই কথা বলছে –
—- আচ্ছা তুমি ম্যারিড তাইনা???(সুমাইয়া)
—– না.(আমি)
—– মানে! আরোহি কো-কো-কোথায়?(কি
ছুটা তোতলিয়ে)
—– আমি যাকে ভালো বাসি তাকেই তো বিয়ে করব।নাকি??(আমি)
—–…… চুপ করে ধরে আছে।
হঠাৎ একটা পিচ্ছি এসে বলল –
—– আন্তি এইতা ওই পচা আংকেলতা?(পিচ্ছি)
—– না আব্বু এটা ভালো আংকেল।(সুমাইয়া)
দুপুরে হবু শ্বশুর বাড়িতে পেটভরে খেলাম।এর পর আমি শ্বশুর মশাইকে বললাম –
—– আংকেল আমার মা বাবা কেউই দুনিয়াতে নাই নাই কোনো অভিভাবক। আমি আপনাদের পরিবারে সদশ্য হতে চাই। আমি ও সুমাইয়ার বাবার মতো একজন বাবা চাই। তার মায়ের মতো একজন মা চাই। হবেন আপনারা। আমি হয়তো আপনার মেয়েকে আপনার মতো সুখে রাখতে পারবোনা। তবে ওকে কোনো কস্ট পেতে দিবোনা।আর সুমাইয়াকে আমি আমানত হিশেবে নিতে চাই।(আমি)

সুমাইয়ার বাবা কেঁদেই ফেললেন। আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন-
—– আমার মেয়েকে যদি পৃথিবীর কেউ সুখে রাখতে পারে তাহলে সেটা তুমি। আমার থেকেও ভালো রাখতে পারবে তুমি।জানো ইতি আমায় ওই দিন বলে। ” বাবা তুমি আমায় একটা হেল্প করবা।আমি অন্তরের বাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে চাই তাহলে তো প্রতিদিন ওর দেখা পাবো সেদিন আমি বুঝে যাই বাবা আমার মেয়ে তোমায় কতটা ভালোবাসে। যে মেয়ে কখনো নিজের চা বানাই খাইতো না সে প্রতিদিন নুডুলস বানায়। বলে অন্তর নুডুলস খুব পছন্দ করে।আমি তোমাকে আমার মেয়ের জন্য ভিক্ষা চাইছি। তুমি কেনো আমার মেয়েকে চাইতেছো!
-আমি সুমুর দিকে তাকাই আছি। ও নিচের দিকে তাকাই আছে।
আমরা বিকালে ঘুরতে যাই। সুমাইয়া বলে –
——অন্তর ক্যাফে ঝিল এর কথা মনে আছে??(সুমু)
—— হুম কেনো?(আমি)
—— ওই দিন তোমায় যখন হাগ করছিলাম তখন কেনো জানি মনে হইছে তুমি আমায় ভালো বাসো! কেনো জানি আশা পাইছিলাম তোমায় আবার ফিরে পাবো।তাই আজো বেচে আছি নাহলে আরো আগেই সুইসাইড করতাম।(সুমাইয়া)
—— এসব কথা বলেনা! (আমি)
—— তুমি আমায় প্রপোজ করবা এখন! (সুমাইয়া)
—— এই সবার সামনে??(আমি)
—— হুম সবার সামনে! (সুমু)
—— আমি আরোহির দেওয়া ওই রিংটা হাতে নিয়ে এই বালিকা তুমি কি আমার কাপড় ধোয়ার দায়িত্ব নিবা? নিবা প্রতিদিন ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব?নিবা দুষ্টুমিষ্টি শাসন করার দায়িত্ব? নিবা আমার হাড়ি পাতিল ধোয়ার দায়িত্ব? তুমি প্রত্যেকটা দিন আমার জন্য নুডুলস বানানো হতে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিবা।(আমি)
ও হাতের আঙুল বাড়িয়ে দিয়ে বলে
—— how sweet propose!(সুমাইয়া)
—— আরে ভাই সিনা ব্যথা হইগেছে। তাড়াতাড়ি এক্সেপ্ট কর।(আমি)
—— অন্তর তুমি ফাজলামো শুরু করতেছো!(সুমাইয়া)
অতঃপর রিং পরিয়ে নোয়াখালি আনলাম ও ওদের বাসায় থাকে আমি আমার এখানে। এখনো সুমাইয়া আর আরোহির মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকে তবে তা দুষ্টুমিষ্টি। আরোহি এখনো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। যদি আরোহির সাথে ঘুরতে যাই সুমাইয়া কোনো রাগ করেনা। আরোহি প্রায়ই সুমাইয়ার বাসায় আসে। সুমাইয়া ও আরোহিদের বাসায় যায়।
আরোহি মাঝে মাঝে বলে ওই তোদের মিল টা আমার কারণেই হইছে। পাঁচ বছর আগে যখন আমাদের কলেজের স্যার আন্তরকে চড় দেয় তখন আমি বুজছি চড় দিলে অন্তর এর মাথাটা গরম হয় যায়। তাই যেদিন অন্তর আমায় প্রপোজ করে ওইদিন আমি চড় মারছি যার কারণে তোদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাইছে। সো বলতে গেলে চড় থেকেই তোদের ভালোবাসাড় উৎপত্তি।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
কপি করবেন না প্লিজ
আপনারা পাঠকরা প্রশ্ন করবেন যে আরোহির সাথে মিল দিতে। অনেকে মেসেজ ও করছে যাতে আরোহির সাথে মিল দেই। মিল কিন্তু তিনজনের সাথেই হয়েছে।
আপনাদের ভালো লাগলে মতামত জানাবেন।কারণ-
আপনার মতামতই একজন লেখক কে অনুপ্রেরণা জোগায়। আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
# আগের পর্ব দুটো আমার টাইমলাইন এ আছে। তাহলে আপনারা গল্পটা পুরোপুরি বুঝতে পারবেন।
# Shahriar Prince Antor
না পড়লে মিস করবেন।
# চড় থেকে ভালোবাসা ৩ (শেষ পার্ট)
লেখক : শাহরিয়ার প্রিন্স অন্তর
#
—— সুমাইয়ার সাহস হয় কিভাবে তোর প্রপোজ এক্সেপ্ট করার (আরোহি)
আর কাল আমার আর আরোহির ফ্রেন্ডশিপ এর ৫ বছর পুর্ণ হবে।তাই ভয়ে আছি কাল আমায় ফাইনালি দুইজনকেই কিছুনা কিছুতো বলতে হবে। আমি ভয়ে ভয়ে আছি। আমি ভাবতেই পারছিনা একজন ৪ বছর ১১মাস৩০ দিনের বন্ধু। আরেকজন আমাকে ভালোবাসে।আমি কি যে করি!
সকাল বেলা ঘুম ঘুম থেকে উঠে দেখি কতোগুলো ভয়েসমেইল।একটা চালু করলাম –
—–এই শালা এতোগুলো ফোন দিচ্ছি ধরিস না কেনো?আল্লাহ জানে মরে গেছিস নাকি? আর সুমাইয়ার লগে তুই ক্যাফে জিল এ দেখা করবি! না!আয় তোদের দেখা আমি করাচ্ছি। ওই তুই আমাকে একবার জানানোর কথাও মনে করিস নি??আমি তোর বাসায় আসছি। (আরোহি)
—– Omg আজ সুমাইয়ার সাথে দেখা করার কথা ছিলো বাট আর অল্প কিছুক্ষণ সময় আছে। আমিতো ভুলেই গেছি! (আমি মনে মনে)
না আরোহি আসবেনা, রাগের মাথায় হয়তো বলেছে আসবে। আপনাদের তো বলতেই ভুলে গেছি আসলে আজ সুমাইয়া কে আমি এজন্য ক্যাফে ঝিল এ ডেকেছি কারণ আমি যদি সুমাইয়ার সাথে রিলেশন এ জড়াই তাহলে তাহলে আরোহির সাথে কথা বলতে দিবে না। আর আমি জানি আরোহিকে ছাড়া আমি বাচবো ও না। তাই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাইছি যে সুমাইয়ার সাথে সব কিছু কাট করে দিবো।
রেডি হচ্ছি আর মনে খুব দু:খ একটা মেয়েকে হারাই ফেলতে হবে। আচ্ছা থাক যাই হোক।আমি যেই মাত্র বাথরুম এ গোসল করার জন্য ডুকছি ওই মুহুর্তে দেখি কে দরজা চাপড়ানো শুরু করে। আরে আমার ঘরে এসময় কে আসবে তার উপরে এতো ইমারজেন্সি যে টয়লেট এর দরজা চাপড়ানো শুরু করছে। আমি টয়লেট থেকে
—— কে রে?? (আমি)
—— তোর বৌ। (আরোহি)
আমি একটু দরজা ফাঁক করে দেখি আরোহি। ও মা গো। আমি শেষ। এতো সিরিয়াসলি চলে আসছে।
—— বাহ এক্কেবারে গোসল করে সেজেগুজে উনি দেখা করতে যাবে। মনে হচ্ছে নিজের পিয়ান্সির(হবু বউ/বিয়ে ঠিক হয়েছে এমন মানুষ) সাথে দেখা করতে যাবেন! (আরোহি জোরে জোরে
—— ওই তুই টয়লেট থেকে বাহির হবি নাকি আমি বাহির থেকে দরজা আটকাই দিবো! (আরোহি)
—— দোস্ত কিভাবে বাহির হইতাম টয়লেট এ টাওয়াল ছাড়া আর কিছু নাই। ওখানে আমার গেঞ্জি আন্ডারঅয়ার আর প্যান্ট আছে তুই এসে দিয়া যা।(আমি)
—— ছি! ছি! তোর লজ্জা ও করেনা আমায় তোর আন্ডারঅয়ার আনতে বলছিস।(আরোহি)
—— লজ্জা কিসের! তুই ইতো। কয়দিন পর তো আমার বউ হবি। তাই আগে থেকে প্র্যাক্টিস করছি।(আমি)
—— ওই তুই বাহির হ।
—— কিভাবে বাহির হবো? তুই এনে দে না!
—— এই নে তোর আন্ডারঅয়ার।ওয়াক!! lol
!
—— এতো ডং করিস না। এটা নতুন। আর তুই কিন্তু আমার আন্ডারয়ার এর মান ইজ্জত নষ্ট করছিস। (আমি)
—— চুপ কর রোহিঙ্গা। তোর নিজের ইজ্জত নাই আবার আন্ডারঅয়ার এর ইজ্জত চাইতেছে। (আরোহি)
বাহির হতে না হতেই দুম দাম পিঠের উপর পড়তে লাগলো।
—— ও মা গো। আমি শেষ।(আমি)
——চলেন আমিও যাবো। আপনার সাবেক গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করার জন্য।(আরোহি)
—— চল।
গেলাম যাই বসে আছি সুমাইয়া সেজেগুজে আসছে আমি বললাম –
—— সুমাইয়া তুমি ও জানো আজ আমাদের ফ্রেন্ডশিপ এর ৫ম বছর। আমি আসলে তোমায় যে কথাটা বলার জন্য আসছি সেটা হচ্ছে আমি চাচ্ছি তুমি আমার সাথে যোগাযোগ না রাখো।আমি দুষ্টুমি করেই প্রপোজ টা করছিলাম। আর তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিছো।তাই আমি জানি আরোহি আমার জন্য কতোটা ইম্পরট্যান্ট। সো –
কিছু বলার আগেই সুমাইয়া অনেকটাই কেঁদে কেঁদে বলে উঠলো —
—— অন্তর আমি বুঝে গেছি। আমার জন্য তুমি চিন্তা করোনা। আমি ভালো থাকবো আর এটাই বলব- Congratulation , তোমাদের বন্ধুত্বের ৫ম বছর উপলক্ষে! দুজন এভাবেই হাসিখুশি থেকো।সারাজীবন একসাথে থেকো।আর আরোহি, অন্তর অনেক মিষ্টি একটা ছেলে অনেক ভালো একটা ছেলে ওকে দেখে রেখো।
আমায় একটা অনুরোধ করলো সুমাইয়া –
—— আচ্ছা অন্তর আমি আর কখনো তোমার সামনে আসবোনা তাই একটা হাগ করবে প্লিজ! লাস্ট!
আমি কিছু না ভেবেই করলাম।আরোহি ও কিছু বলল না। খুব জোর করে ধরে রাখলো।অতঃপর বাম গালে আলতো করে চুমু দিয়ে চলে গেলো। তবে একফোঁটা চোখের পানি ও আমার জন্য ফেলে গেলো। কেন জানি খুব কস্ট হচ্ছিলো।ওই দিন আরোহিকে বলে বাসায় চলে আসলাম। কিচ্ছু ভালো লাগছিলোনা।সাথে সাথেই সুমাইয়াকে ফোন দিলাম -Not reachable বলছে। শুয়ে পড়ি বিকেল বেলায়। রাত তিন্টায় উঠি। এরপর আর ঘুম আসলো না তাই কম্পিউটার এ যাবতীয় কিছু কাজ করলাম।
-এর পর আবার সব আগের মতোই হয়ে গেল। তবে মাঝেমধ্যে সুমাইয়াকে খুব মনে পড়তো কেনো? নিজেও জানিনা।
এভাবে ৯ মাস চলে গেলো।প্রায় আগের মতোই দিন কাটাচ্ছিলাম।শুনাল আরোহির বিয়ে ঠিক করেছে এ ভয়ে আমি আরোহিকেও প্রপোজ করলাম যদি হারিয়ে ফেলি- আরোহি সাথে সাথে একটা চড় দিয়ে বলে –
—— তোর সাহস হয় কিভাবে আমায় প্রপোজ করার আগে আগে তুই ফান করে করতি সেটা বুঝা যাইতো। বাট আজ তোর চোখে সিরিয়াসনেস কাজ করছে। তুই ভাবলি কিভাবে তোর মতো এতিম এর বউ হবো। তোর ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখ আর আমার ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখ। আমার বাবা এখান কার শিল্পপতি। তার কথায়(ডিসি),(এস,পি) রাও উঠে বসে।সো একবার ভেবে দেখ।
আমি এই প্রথম আরোহির চড়ে ব্যথা পেলাম যদিও জোরে মারেনি তবুও কেনো জানি কষ্ট হচ্ছিলো আমি নিজেও জানি না আমি তো অবাক আরোহির এ রুপ এ দেখে। কোথা থেকে আসলো এ অহংকার আবার বলে উঠলো —
—–আমি জানি অন্তর তুই অনেকটাই অবাক হচ্ছিস। আর কষ্ট ও পাচ্ছিস সেজন্য স্যরি বাট তোর মনে আমি না সুমাইয়া বসে আছে। সেটাই সত্যি এই নয় মাসে তুই অনেকটাই বদলে গেছিস। জানিনা সুমাইয়া তোকে জাস্ট একটা হাগ করে কিভাবে এতোটাই বদলে দিলো! এখনো সময় আছে ওর কাছে যাহ। আমার কাছে সুমাইয়ার ঠিকানা আছে। হুম ও তোকে খুব ভালোবাসে সেই Angel Sumaiya থেকে একটা সত্যিকারের গল্প লিখেছিলো কয়েকদিন আগে অনেক ভাইরাল ও হয়েছিলো। সেই গল্প টায় ওর পরিচয় দেয়া আছে। ওই গল্পটার মূলত তোকে কেন্দ্র করেই আমাদের তিনজনের অনির্দিষ্ট জিবনের কথা গুলো লিখছে। আর আমি বুঝতে পারি ও তোকে কতোটা ভালোবাসে। আর শুন এসব কথা তোকে এজন্য বলছি নাহলে তো কুকুরের মতো আমার পিছনে ঘুরবি।আর তোকে আমার থেকে বেশি কেউ চিনে না। তুই কখনো আমার পিছু ছাড়বিনা কারণ তুই কুকুরের মতোই।তবে তোর জন্য আমার দরজা খোলা তবে সেটা ফ্রেন্ডশিপ পর্যন্তই।
আমার তখন খুব রাগ হয়। ইচ্ছে করছিলো একটা চড় বসিয়ে দেই। বেষ্ট ফ্রেন্ড তো তাই। চলে আসি। বাসায় আসি শুয়ে পড়লাম দেখলাম চোখ ভিজে আছে। কাঁদি নাই তবুও চোখ ভিজা।
আমি আমার ফ্রেন্ড সিফাত এর থেকে আইডি লগ ইন করে ডুকলাম Angel sumaiya দিয়ে সার্চ দিলাম। বাহ সেই আগের প্রোফাইল পিকচার শুধু বাড়তি কিছু কবিতা লিখছে। আর কিছু পোস্ট করছে। আমি সেই গল্প টা দেখলাম 11k like এবং 8.6k comment আমি অবাক সুমাইয়া আমাকে এজন্য ব্লক মারছে যাতে আমি গল্প টা পড়ে ইমোশনাল হয়ে না যাই।তার পর পড়লাম – আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো বাট নিজেকে কন্ট্রোল করছি। বাবা মা ফুরুত হওয়ার পর এ চোখ থেকে পানি মাটিতে পড়েনাই। কিন্তু পোস্ট টা পড়ে কেমনে জানি চোখ থেখে কয়েক ফোটা নোনা জল বালিশে পড়ে গেলো। আমি এর পর ঠিকানা লিখে নিয়ে কোনোকিছু না ভেবে নোয়াখালি থেকে রাজশাহির টিকিট নিলাম। সকালে নিয়ে বাসায় আসলাম।আমি ধৈর্য ধরতে পারলাম না টিকিট টাকে সোজা কমোডে ফেলে দিয়ে আমার ফ্যাভারিট ব্যাগ নিয়ে লোকাল বাসে উঠে পড়লাম। মাসের শেষের দিকে হাত পুরা খালি আপনারা তো জানেনই ব্যাংক থেকে নতুন মাসের ৩-৭ তারিখে মুনাফা দেয়। সো আমি মাস শেষে ৩৪ হাজার টাকা পাবো কিন্তু এখন পুরাই খালি।নোয়াখালী থেকে চিটাগং। ওখান থেকে ঢাকা গেলাম মানিব্যাগ এ টাকা ছিলো ৯৪৮ টাকা। ৩৫০ টাকা ঢাকাতে যেতেই শেষ খূব খিদা ও লাগছে। খাই নিসি ৪০০ টাকা আর বাকি ১৯৮ টাকা।বাহ ক্রেডিট কার্ডটা ও আনি নাই। বিকাশ account ও নাই সো মাথাটা হ্যাং করছিলো। আমি ব্যাগে উলটা পালটা টাকা রাখি। তাই ভাব্লাম এতো মাসে আমি নিশ্চই অনেক টাকাই জমা থাকবে হয়তো ৫/৬ হাজার টাকা হবেই।
তাই ব্যাগে হাত দেই হাত দেওয়ার পর একটা রিং আর কিছু টাকা সাথে আর একটা চিঠি খুললাম-
——অন্তর আমার নাম শুনেই প্লিজ চিঠিটা ফেলে দিসনা এমন কি টাকা গুলো আমার না তোর।
তোর মাথা গরম বাট তোর টাকা, তুই ফেলে দিলে তোরি ক্ষতি হবে। এখানে তোর ৭ হাজার ২১১ টাকা আছে। তুই যখন আজ সকালে টিকিট কিনতে গেছিলি আমি তোর টাকা গুলো গুছিয়ে ব্যাগে রেখে দেই।
—– অন্তর আমি তোকে খুব ভালোবাসিরে। তোকে ওই চড়টা মারার কারণেই তুই তোর প্রকৃত ভালোবাসার মানুষের কাছে যেতে পারছিস। না হয় তুই আমার কথা ভেবেই আর যাইতিনা।একটা চড়ই তোকে তোর ভালোবাসাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আর এই রিংটা ভাবছিলাম আমি পরব তোর হাতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না সুমাইয়াকে প্লিজ নিজের হাতে পরিয়ে দিস পারলে রাজশাহী থেকে বিয়ে করে আনিস হয়তো এখানে বিয়ে করতে চাইলে আমার কারণেই পারবিনা। তাই প্লিজ বিয়ে করে আনিস।তোর সাথে ওকে খুব মানাবে আর সত্যিই সুমাইয়া Angel ই। — বাকি সব আয় তোকে বলবো।আর হ্যা ব্যাগে পাওয়ার ব্যাংক আছে তিন চারবার চার্জ দিতে পারবি তোর মোবাইল এ মাত্র ২৩ % চার্জ আছে।।ক্রেডিট কার্ড শেষ ব্যাগে
—— ইতি তোর জানু আরোহি।সুমাইয়ার সাথে একটু কথা বলাবি।
আমি আরোহির চিঠিটা পড়ে সত্যিই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে চিনতেই পারিনাই।ওর কাছে সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ। সব ব্যবস্থা করে দিসে ও। একেই বলে বেস্ট ফ্রেন্ড।
অতঃপর আমি এসি বাস বুকিং করে সোজা রাজশাহি চলে যাই।একটা বাজারে যাওয়ার পর মোবাইল এর ঠিকানা রিকশাচালক কে দেখালাম উনি বললেন ৮০ দেওয়া লাগবো
—– আচ্ছা চলেন!(আমি)
—– মামা আপনি মনে হয় নতুন। (রিকশাচালক)
—– কেনো?
—– ভাড়া ৪০ টাকা আপনি কোনো কথাই কইলেন না। (উনি)
—– একটা হাসি দিলাম।
নামিয়ে দিলো। আর বলল
—– ডিসি সাবের বাড়ি(উনি)
আমি মনে মনে ভাবলাম আমার হবু শ্বশুর মশাই তো ঘুষ খান নাহলে এতো দারুন বাড়ি আমি দেখিনাই।শালার নোয়াখালিতে একটা এখানে একটা এটা অবশ্য সুমুর দাদার বাড়ি। মনে হয় বাপ-দাদারা অনেক প্রভাবশালী ছিলেন
হঠাৎ একজন লোক আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। ৫২- ৫৫ ভিতরে বয়স হবে এমন তবে হেন্ডসাম। উনি বললেন
—–তোমার নাম অন্তর না???(উনি)
—–জি আমি অন্তর! (আমি)
—– ইতি উপরে আছে! যাও বাবা।(উনি)
—– জি আমি সুমাইয়ার ফ্রেন্ড! ইতি?(আমি)
উনি হেসে বলেন –
—– শুধু ফ্রেন্ড না অন্যকিছু? আর সুমাইয়ার ডাক নাম ইতি। আমি ওর বাবা।(উনি)
—– আংকেল আসসালামু আলাইকুম! (আমি)
—– উত্তর নিলেন আর বললেন তাড়াতাড়ি যাও!(বাবা)
আমি সোজা দোতালায় উঠলাম দেখি একটা রুমের দরজা খোলা। একটা মেয়ে শুয়ে আছে পিছন দিক দেখা যায়। ডুকে গেলাম আমি তো অবাক।
এই রুমে আমার এতো ছবি।আমি ছবি গুলো দেখলাম। তারপর মেয়েটা এপাশ করে শুলো চেহারা দেখা যাচ্ছে। দরজা আরেকটু ফাঁক করলাম আলোতে স্পষ্ট দেখছি এ তো আমার সুমাইয়া। টেবিলের উপর আমার একটা ছবি।যদিও আমার ছবি সুন্দর আসেনা তাই আমি ছবি তুলতাম না। কিন্তু এতো ছবি পেলো কই??সুমাইয়া হঠাৎ জেগে উঠলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের নিচে কালি পড়েগেছে পুরা শুকাই গেছে কিছুটা রোগা মনে হচ্ছে। সে বেড থেকে উঠে দাড়ালো। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় ৪৪০ ভোল্টের শক খেলো।আমি কাছে গিয়ে কসাই দিলাম এক থাপ্পড়। তাও গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমি বলি –
—– ওই সিমটা ফেলছো কেনো?
—–………
—– আমায় ব্লক মারছো কেনো??
—–………
কিছুক্ষন পর হঠাৎ আমায় জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।আমিও জোরে জড়িয়ে ধরে আছি। জড়িয়ে ধরেই কথা বলছে –
—- আচ্ছা তুমি ম্যারিড তাইনা???(সুমাইয়া)
—– না.(আমি)
—– মানে! আরোহি কো-কো-কোথায়?(কি
ছুটা তোতলিয়ে)
—– আমি যাকে ভালো বাসি তাকেই তো বিয়ে করব।নাকি??(আমি)
—–…… চুপ করে ধরে আছে।
হঠাৎ একটা পিচ্ছি এসে বলল –
—– আন্তি এইতা ওই পচা আংকেলতা?(পিচ্ছি)
—– না আব্বু এটা ভালো আংকেল।(সুমাইয়া)
দুপুরে হবু শ্বশুর বাড়িতে পেটভরে খেলাম।এর পর আমি শ্বশুর মশাইকে বললাম –
—– আংকেল আমার মা বাবা কেউই দুনিয়াতে নাই নাই কোনো অভিভাবক। আমি আপনাদের পরিবারে সদশ্য হতে চাই। আমি ও সুমাইয়ার বাবার মতো একজন বাবা চাই। তার মায়ের মতো একজন মা চাই। হবেন আপনারা। আমি হয়তো আপনার মেয়েকে আপনার মতো সুখে রাখতে পারবোনা। তবে ওকে কোনো কস্ট পেতে দিবোনা।আর সুমাইয়াকে আমি আমানত হিশেবে নিতে চাই।(আমি)

সুমাইয়ার বাবা কেঁদেই ফেললেন। আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন-
—– আমার মেয়েকে যদি পৃথিবীর কেউ সুখে রাখতে পারে তাহলে সেটা তুমি। আমার থেকেও ভালো রাখতে পারবে তুমি।জানো ইতি আমায় ওই দিন বলে। ” বাবা তুমি আমায় একটা হেল্প করবা।আমি অন্তরের বাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে চাই তাহলে তো প্রতিদিন ওর দেখা পাবো সেদিন আমি বুঝে যাই বাবা আমার মেয়ে তোমায় কতটা ভালোবাসে। যে মেয়ে কখনো নিজের চা বানাই খাইতো না সে প্রতিদিন নুডুলস বানায়। বলে অন্তর নুডুলস খুব পছন্দ করে।আমি তোমাকে আমার মেয়ের জন্য ভিক্ষা চাইছি। তুমি কেনো আমার মেয়েকে চাইতেছো!
-আমি সুমুর দিকে তাকাই আছি। ও নিচের দিকে তাকাই আছে।
আমরা বিকালে ঘুরতে যাই। সুমাইয়া বলে –
——অন্তর ক্যাফে ঝিল এর কথা মনে আছে??(সুমু)
—— হুম কেনো?(আমি)
—— ওই দিন তোমায় যখন হাগ করছিলাম তখন কেনো জানি মনে হইছে তুমি আমায় ভালো বাসো! কেনো জানি আশা পাইছিলাম তোমায় আবার ফিরে পাবো।তাই আজো বেচে আছি নাহলে আরো আগেই সুইসাইড করতাম।(সুমাইয়া)
—— এসব কথা বলেনা! (আমি)
—— তুমি আমায় প্রপোজ করবা এখন! (সুমাইয়া)
—— এই সবার সামনে??(আমি)
—— হুম সবার সামনে! (সুমু)
—— আমি আরোহির দেওয়া ওই রিংটা হাতে নিয়ে এই বালিকা তুমি কি আমার কাপড় ধোয়ার দায়িত্ব নিবা? নিবা প্রতিদিন ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব?নিবা দুষ্টুমিষ্টি শাসন করার দায়িত্ব? নিবা আমার হাড়ি পাতিল ধোয়ার দায়িত্ব? তুমি প্রত্যেকটা দিন আমার জন্য নুডুলস বানানো হতে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিবা।(আমি)
ও হাতের আঙুল বাড়িয়ে দিয়ে বলে
—— how sweet propose!(সুমাইয়া)
—— আরে ভাই সিনা ব্যথা হইগেছে। তাড়াতাড়ি এক্সেপ্ট কর।(আমি)
—— অন্তর তুমি ফাজলামো শুরু করতেছো!(সুমাইয়া)
অতঃপর রিং পরিয়ে নোয়াখালি আনলাম ও ওদের বাসায় থাকে আমি আমার এখানে। এখনো সুমাইয়া আর আরোহির মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকে তবে তা দুষ্টুমিষ্টি। আরোহি এখনো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। যদি আরোহির সাথে ঘুরতে যাই সুমাইয়া কোনো রাগ করেনা। আরোহি প্রায়ই সুমাইয়ার বাসায় আসে। সুমাইয়া ও আরোহিদের বাসায় যায়।
আরোহি মাঝে মাঝে বলে ওই তোদের মিল টা আমার কারণেই হইছে। পাঁচ বছর আগে যখন আমাদের কলেজের স্যার অন্তরকে চড় দেয় তখন আমি বুজছি চড় দিলে অন্তর এর মাথাটা গরম হয় যায়। তাই যেদিন অন্তর আমায় প্রপোজ করে ওইদিন আমি চড় মারছি যার কারণে তোদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাইছে। সো বলতে গেলে চড় থেকেই তোদের ভালোবাসার উৎপত্তি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত